ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল যন্ত্রণা || জীবনের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

হ্যালো বন্ধুরা,

কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আছি এবং ভালো থাকার চেষ্টা করছি। যদি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতাগুলো জীবনের গতিকে নিদারুণভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আমরা চাইলেও সেটা আমাদের উপর প্রভাব ফেলছে আবার না চাইলেও সেটা হচ্ছে। সত্যি বলতে আধুনিক এই সভ্যতায় এতেও আমরা নানা কিছুর প্রভাব হতে মুক্ত হতে পারছি না, নানা সুযোগে নানা কিছুর মাধ্যমে যন্ত্রনা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের উপর এবং আমাদের জীবনের উপর। কি অবাক হচ্ছেন? একটু চিন্তা করে দেখুন এমন অনেক ইস্যু বা বিষয় আছে যা আপনি না চাইলেও আপনার জীবনের উপর প্রভাবি বিস্তার করছে দিনকে দিন।

একটু খোলাসা করেই বলছি, প্রযুক্তির এই যুগে সকল কিছুই করা হচ্ছে একটু বাড়তি সুবিধা দেয়ার জন্য, আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রা একটু বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো, সকল সুবিধার সুবিধা কি আমরা নিতে পারছি? নাকি কিছু কিছু সুবিধার কুফলে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, যা আমাদের জন্য যন্ত্রনার কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে! কি খুঁজে পাচ্ছেন না কিছু? নাকি বুঝতে পারছেন না কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলবেন? আমরা সত্যি এগিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু সেই সাথে সাথে সুবিধার আড়ালে নিজেদের যন্ত্রনাগুলোকে ভারি করছি, যা একটা সময় আমাদের জন্য আরো বেশী পেইনফুল হয়ে যাচ্ছে অথবা যাবে নিশ্চিতভাবে।

একটা সময় আমরা কোন কিছু কেনার সময় দোকানদার কর্তৃক ভাউচার বা বিক্রয় স্লিপ পেতাম। প্রযুক্তি সুবিধায় এখন ধীরে ধীরে সেটা উঠে যাচ্ছে। আপনাদের এই অভিজ্ঞতা আছে কিনা আমি জানি না, তবে আমার বেশ ভালোভাবেই হচ্ছে। সেদিন ছেলেকে নিয়ে শপিং এ গেলাম, ট্যুরে যাবো বুঝতেই পারছেন শপিং না করে উপাায় নেই। ছেলে বাটা জুতা পছন্দ করলো, টাকা পেমেন্ট করলাম কিন্তু উনি কোন রশিদ দিবেন না। বললেন আমাদের ডিজিটাল রশিদ, আপনার মোবাইল নাম্বার বলুন। মোবাইল নাম্বার দিলাম, মুহুর্তের মাঝে একটা মেসেজ চলে আসলো। ভদ্রলোক বললেন স্যার রশিদ চলে গেছে আপনার মোবাইলে।

iranian-architecture-5243948_1280.jpg

এরপর মেয়ের জন্য জুতা কিনতে গেলাম বে’ আউটলেটে। তারাও বললেন স্যার মোবাইল নাম্বার লাগবে। জিজ্ঞেস করলাম আপনারাও কি রশিদ বিহীন ডিজিটাল হয়ে গেছেন? উত্তরে বললেন না স্যার, আমরা রশিদ দিবো তবে তার জন্য মোবাইল নাম্বারটা লাগবে। কি আর করা জুতা না নিয়েতো আর ফিরে আসতে পারবো না, পরে না আবার বউ বাড়িতেই ঢুকা বন্ধ করে দেয় হি হি হি। বাধ্য হয়ে সেখানেও একই কাজ করলাম। এরপর ছেলের জন্য টিশার্ট কিনলাম, লাইফস্টাইল আউটলেট হতে। সেখানেও দেখি একই কান্ড কাগজের রশিদ দিবেন না তারা। তবে মোবাইল নাম্বার নিবেন। বললাম যদি কোন সমস্যা হয়, যদি আমি এটা পরবর্তীতে পরিবর্তন করতে চাই কোন কারনে?

তারা খুব সুন্দরভাবে উত্তর দিলেন আপনার মোবাইল নাম্বার বললেই হবে। ঠিক আছে সবটা মেনে নিলাম এবং শপিং সম্পন্ন করলাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো তারা যে নিজেদের প্রমোশনের নামে প্রতিদিন অজস্র এসএমএস এর মাধ্যমে আমার ঘুমের, সময়ের এবং জীবনের বারোটা বাজাবে সেটার দায়ভার কার? প্রযুক্তি সুবিধায় নিজেদের সুবিধা ভিন্নভাবে ঠিকই আদায় করে নিচ্ছেন আর বিপরীতে আমাদের জন্য যন্ত্রনার কারন হয়ে যাচ্ছে। নানাভাবে সেটা আমাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য সমস্যা তৈরী করছে এবং ভবিষ্যতেও সেটা করতে থাকবে। তাদের প্রমোশনের নিয়মিত যন্ত্রনার প্রভাব সহ্য করতে হবে আমাকে।

কি আশ্চার্য! কিভাবে আমরা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসায়ের পন্য হচ্ছি, অংশিদার হচ্ছি কিন্তু কোন সুবিধাভোগ করতে পারছি না। প্রযুক্তি কল্যাণে তাদের রশিদ দেয়া লাগছে না, খরচ অনেকটাই কমে যাচ্ছে। আবার উল্টো দিকে কোন বাড়তি খরচ ছাড়াই নিজেদের পন্যের প্রমোশন করে ফেলছেন ভিন্নভাবে। হয়তো ভবিষ্যতে অন্যদের প্রমোশনে সুবিধা করে দেয়ার জন্য আমাদের নাম্বারগুলোও তাদের কাছে সেল করে দিবেন পন্য হিসেবে! আফসুস, নাগরিক জীবনে নাগরিকের সঠিক সুবিধার কথা যেমন বলতে পারছি না, ডিজিটাল যুগের এই ডিজিটাল যন্ত্রণার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে আমরা বুঝাতে পারছি না!

Image taken from Pixabay

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 months ago 

ওয়াও ভাই বেশ দারুন একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট আপনি শেয়ার করেছেন পড়ে বেশ ভালো লাগলো। সত্যি বলেছেন ভাই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বিলম্ব না শেষ নেই বললেই চলে। একটা কাগজের রশিদ দিতে তো কিছুটা টাকা লাগে কিন্তু মেসেজ করতে তো টাকা লাগে না বললেই চলে। আসলে এগুলো বড় বড় কোম্পানির বিজনেস পলিসি। সত্যি বলেছেন ভাই আমাদেরকে ব্যবহার করে তারা তাদের বিজনেস চালিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আমরা এসব ডিজিটাল পদ্ধতির যন্ত্রণার কথা হয়তো কোনদিনই বোঝাতে পারবো না।

Posted using SteemPro Mobile

 5 months ago 

তাদের বিজনেস পলিসি লাভের জন্য আর আমাদেরকে যন্ত্রণা দেয়ার জন্য, তারা দিন দিন পয়াসার মালিক হয় আর আমরা হই যন্ত্রণার মালিক। অনেক ধন্যবাদ ।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

 5 months ago 

ভাই একেবারে সময়োপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আমি এবং আমার ওয়াইফ গতকালকে ঢাকা নয়া পল্টনের পলওয়েল মার্কেটে গিয়েছিলাম জুতা কিনতে। সেখানে মেয়েদের জুতার দোকান কম থাকায়, জুতা পছন্দ হয়নি। তারপর পলওয়েল মার্কেটের একেবারে পাশে, গাজী ভবন শপিং সেন্টার থেকে দুই জোড়া জুতা কিনলাম। কিন্তু তাদের কাছ থেকে রশিদ চাওয়ার পর বললো তাদের প্রিন্টারে সমস্যা এবং আমি চাইলে মোবাইল নম্বর দিয়ে ডিজিটাল রশিদ নিতে পারি। তখন আমি সরাসরি বলে দিয়েছি রশিদ লাগবে না। কারণ নম্বর দিলেই প্রমোশনাল ম্যাসেজ আসতে থাকবে নিয়মিত এবং এটা খুবই বিরক্তিকর। এটার বিরুদ্ধে আসলেই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাদের বিজনেস ডেভেলপ করার জন্য আমাদেরকে কেনো দুর্ভোগ পোহাতে হবে। যাইহোক এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57173.66
ETH 3067.89
USDT 1.00
SBD 2.39