তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রতিযোগিতা: "স্মৃতিকথামূলক রচনা"
নমস্কার
প্রথমে কোথা থেকে শুরু করবো এবং কোথায় গিয়ে শেষ করবো বুঝে উঠতে পারছি না।কারন এই বাংলা ব্লগকে নিয়ে অনেক স্মৃতি যুক্ত হয়েছে জীবনের এই খাতায়।তবুও চেষ্টা করেছি নিজের মনের মুক্ত অনুভূতি দিয়ে কিছুটা প্রকাশ করার।তো চলুন শুরু করা যাক---
স্মৃতিকথামূলক রচনা: "প্রানের আমার বাংলা ব্লগ"
আমার বাংলা ব্লগ এই শব্দটি যতবারই উচ্চারণ করা হয় ততবারই একজন বাঙালি হওয়ার দরুন স্বপ্ন একে যায় মনে।হৃদয়ে গর্বের সাগর উত্তোলিত হয় ঢেউয়ের মতো।যখন বাংলা ভাষা দিন দিন মিশে যাচ্ছে দ্বিভাষীদের সাগরে।আমাদের বাংলার মধ্যেও হিন্দি কিংবা পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন ভাষা বিস্তার লাভ করছে,তখন একদল বাঙালি আবার নিজ বাংলা ভাষা বলতেই লজ্জাবোধ করছে।সেখানে বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে আমার বাংলা ব্লগ একটি নব জোয়ার,নতুন প্রানের ছন্দ এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম।
দেখতে দেখতে তিনটি বছর পাড়ি দিয়ে ফেললাম আমার বাংলা ব্লগের সঙ্গে।আমার বাংলা ব্লগ ১১ই জুন তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে ।আর মাত্র একটি দিনের অপেক্ষা তাই আলাদাই একটা ভালো লাগা কাজ করছে।
আমার বাংলা ব্লগে আমার প্রথম যাত্রা:
স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে 2018 সালের 3-ই জানুয়ারি মাসে যুক্ত হলেও আমি কখনোই নিয়মিত ছিলাম না।প্রথমে বেশ কয়েকটি কমিউনিটিতে অনিয়মিত কাজ করা হয়েছিলো কয়েক দিন।তারপর যখন করোনাকালীন সময় চলছিলো তখন আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও শেষ হয়ে গিয়েছিল।ঘরবন্দি হয়ে যখন মনে একরাশ বিষণ্নতা ও একঘেয়েমি কাজ করছিলো।ঠিক তখনই আমার দাদার মুখে আমার বাংলা ব্লগের কথা জানতে পারি।যেখানে শ্রদ্ধেয় বড় দাদার ভূমিকা এককথায় অনবদ্য।বড় দাদা ও ছোট দাদার হাত ধরেই একপ্রকার আমার প্রবেশ এখানে।এটি ভাবলেই গর্বে আমার মন ভরে যায়।আর আমার দাদার পক্ষ থেকে আমার জন্য ছিল এটি বড় উপহার।এইজন্য দাদাদের কাছে আমি সবসময় কৃতজ্ঞ।আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি খোলার দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই আমি পরিচিতিমূলক পোষ্ট শেয়ার করে এখানে যুক্ত হয়ে যাই, সেই থেকে অনেক টানাপোড়েনের মাঝে এখনো আমার অবিরত পথ চলা।
আমার বাংলা ব্লগে ভেরিফাইড মেম্বার হওয়ার স্মৃতি:
বাংলা ব্লগ শুরুর প্রথম দিকে তেমন কোনো নিয়ম ছিল না।মাতৃভাষায় মন খুলে আমরা লিখতাম তো বটে,তবে কম শব্দে আবার সাপোর্টও ছিল কম।কোনো বড়কাজ যেমন একদিনে সফল হয় না,সেই তুলনায় আমার বাংলা ব্লগের কাজ খুবই দ্রুত চলতে থাকে হাফিজ ভাইয়া, আরিফ ভাইয়া,সুমন ভাইয়াসহ সকলের প্রচেষ্টায়।আর দাদার ভূমিকা তো মুখে বলে বা লিখে বিশ্লেষণ করা যাবে না ,তিনি ছাড়া এটা অচল।ধীরে ধীরে নিয়ম চালু হলো এবং যারা কাজ করছিলেন তাদের সঙ্গে আমাকেও ভেরিফাইড মেম্বার ট্যাগ দেওয়া হলো।আর প্রথমে নামের পাশে ভেরিফাইড মেম্বার ট্যাগ দেখে আলাদাই আনন্দ ও উদ্দীপনার কাজ করতো মনে।যদিও এটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা আমাকে করতে হয়নি,তবে এই অর্জন ছিল সেরা।
এবিবি স্কুল নিয়ে কিছু অনুভূতি:
একজন ভেরিফাইড মেম্বার গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বদা এবিবি স্কুলের ভূমিকা অপরিসীম।প্রথমত কাজ করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এতটা সহজভাবে মডারেটর এবং এডমিন ভাইয়ারা বুঝিয়ে দিতেন যেটা হয়তো ওই ক্লাসগুলি না করলে বোঝানো সম্ভব নয়।প্রথম ক্লাস ও মার্কডাউন শেখার ক্লাসগুলি করতে বেশি মজা লাগতো।মানুষ ব্যক্তিজীবনে যেমন পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে তেমনি লেখার জগতে পরিপাটি থাকাটা যে কতটা প্রয়োজনীয় সেটা হয়তো এবিবি স্কুল আমাকে খুব ভালোভাবে জানতে শিখিয়েছিল।
জীবনের পরিবর্তনে প্রানের বাংলা ব্লগ:
মানুষ সবসময় পরিবর্তনশীল।কিন্তু নিজের জীবনের পরিবর্তন আনা একটি মানুষের সফলতা কিংবা বিফলতার নির্দেশ করে থাকে।তেমনি আমার বাংলা ব্লগ আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।ছোটবেলা থেকেই নিজ থেকেই আঁকিবুকি কিংবা কবিতা লেখার ইচ্ছা ছিল আমার।ভাবতাম এগুলো হয়তোবা চিরদিন বাক্সবন্দী হয়ে অন্ধকূপে পড়ে থাকবে।কিন্তু বাংলা ব্লগ সেই প্রানের জায়গা সেখানে সেগুলো প্রকাশ পেয়েছে ,প্রাধান্য পেয়েছে সকলের উদ্দীপনায়।আমি সকলের থেকে পেয়েছি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা।এই আলাদা জগৎ আমার চিন্তাকে করেছে সুদৃঢ়, যেটা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট।জীবনের ভালো সময় কিংবা খারাপ সময় আমার বাংলা ব্লগ সমান গুরুত্ব রাখে।
লাজুক-খ্যাকের ভোট পাওয়ার স্মৃতি:
আমি প্রথম shy-fox এর ভোট পেয়েছিলাম আমার তৈরি একটি রেসিপিতে।মজার বিষয় হচ্ছে ,প্রথম দিকে একটি স্ট্রীটফুড রিভিউ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল।কিন্তু আমি একটু লাজুক স্বভাবের মেয়ে।তাই স্ট্রীটফুডের দোকানে গিয়েও কিছু খেতে পারিনি।কারন মানুষের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেতে আমি খুব একটা পছন্দ করি না।তাই বাড়ি ফিরে রাতে আমি নিজেই তৈরি করেছিলাম রসুনের চপ।আর সেটাই প্রথম লাজুক -খ্যাকের ভোট পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলাম এটা ভেবে যে,আমার কষ্ট বৃথা যায় নি।সেই থেকে প্রতিনিয়ত রাতে যখনই ঘুম ভেঙে যেত তখনই ফোন খুলে চেক করতাম shy-fox এর ভোট পড়েছে কিনা।এটা একদমই ব্যতিক্রমধর্মী অনুভূতি ছিল।আর লাজুক খ্যাকের প্রতি ভালোবাসা সবসময়-ই জীবন্ত।
মেয়েদের ক্ষেত্রে আমার বাংলা ব্লগের অবদান:
আমি বিশ্বাস করি, এমন অনেক পরিবার রয়েছেন যারা বর্তমান সময়ে এসেও মেয়েদের বাইরে বের হয়ে কাজ করাটা পছন্দ করেন না।তাছাড়া অনেকের ইচ্ছে থাকলেও সংসার সামলাতে সামলাতে বাইরে কাজ করার ইচ্ছেটাই চলে যায়।সেক্ষেত্রে ঘরে বসে নিজের মায়ের ভাষায় লিখতে পারাটা যে কতটা স্বস্তিদায়ক বিষয় সেটা হয়তো এখানে যুক্ত সকল মেয়েই অনুধাবন করতে পারছেন।মন খুলে লেখার মাঝে নিজের সুখ -দুঃখের অনুভূতি শেয়ার করতে পারলে যেন একরাশ জমাট বাঁধা চাপানো বোঝা মাথা থেকে নেমে যায়। দেশ-বিদেশের মানুষের চ্যাটিং এর মাধ্যমে খবর নিয়েও যেন আলাদা একটা ভালোলাগা এবং বাঙালির প্রতি ভালোবাসা কাজ করে মনে।আমি যেহেতু একটু ঘরকুনো স্বভাবের সেক্ষেত্রে আমার বাংলা ব্লগের ভূমিকা আমার জীবনে অত্যন্ত মধুর একটি বার্তা আর সেটাই থাকবে।
যদিও আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ করার পর একবার মাত্র টাকা তুলেছিলাম প্রায় দুই বছর আগে।এর মাঝে অনেক কষ্টে কাটলেও দাম কম থাকায় টাকা তোলা হয়নি।তবে এটা আমার জীবনে ভবিষ্যতে অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি।
ছুঁয়ে যাক বিশ্বে আমার বাংলা ব্লগের ছোঁয়া:
বিশ্বের সকল বাঙালির কাছে আমার বাংলা ব্লগ পৌঁছে যাক।বাংলা ভাষা আরো বিস্তার লাভ করুক এটাই প্রত্যাশা করি আমি।মায়ের ভাষা পূর্ণতা পাক বিশ্বের দরবারে সেরার সেরা হয়ে।আজীবন টিকে থাকুক আমাদের প্রানের বাংলা ব্লগ।আর আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদাও সর্বদা সুস্থ থাকুন সেটাই কামনা করি।তাছাড়া আমার সেমিস্টারগুলো ফাইনাল পরীক্ষা থাকার দিনগুলোতেও কখনো আমি আমার বাংলা ব্লগ থেকে দূরে সরে যায় নি।আশা করি ভবিষ্যতেও শত ব্যস্ততার মাঝেও আপনাদের সঙ্গে এভাবেই বাকি পথগুলি পাড়ি দিতে পারবো।
পোষ্ট বিবরণ:
বিষয় | তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিশেষ প্রতিযোগিতা: স্মৃতিকথামূলক রচনা |
---|---|
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thanks.
আসলে আমার বাংলা ব্লগকে নিয়ে যত কিছুই বলবো না কেন, ততই কম হবে। বিশেষ করে এখানে দাদার অবদানকে নিয়ে কি বলবো এটাই বলতে পারছি না। কারণ যতই বলি না কেন ততই কম পড়ে যাবে। আমার বাংলা ব্লগ চালু হওয়ার শুরু থেকেই আপনি এখানে কাজ করতেছেন এটা শুনেই ভালো লেগেছে। আমার বাংলা ব্লগ আসলেই আমাদের জীবনে অনেক বড় অবদান রেখেছে। এখানের সবকিছু নিয়ে আপনি স্মৃতি কথাগুলো তুলে ধরেছেন দেখে ভালো লাগলো।
আসলেই দাদার অবদান মুখে বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না।অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন, ধন্যবাদ আপু।
আপু আপনি আজকে আমাদের মাঝে দারুণ একটি পোস্ট লিখে শেয়ার করেছেন। সত্যি বলতে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে যদি স্মৃতিচারণ করা যায় হয়তো লিখে শেষ করা যাবে না। আপনার মত প্রত্যেকের জীবন আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে জয়েন করার পর পাল্টে গেছে। সত্যি বলতে আমাদের একজন পরিপূর্ণ ব্লগার হিসাবে গড়ে তুলতে এবিবি স্কুলের ভূমিকা অনেক বেশি। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, বাংলা ব্লগে যুক্ত হওয়ার পর সবার জীবনেই পরিবর্তন এসেছে।ধন্যবাদ আপনাকে ও।
স্মৃতিকথা মূলক রচনা নিয়ে তৃতীয় বর্ষপূর্তির এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে অসম্ভব ভালো লেগেছে দিদি। নিজের প্রত্যেকটা অনুভূতিকে আপনি অনেক সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। শুরু থেকে এই পর্যন্ত আপনি আমার বাংলা ব্লগের সাথে রয়েছেন, এটা দেখে খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। আসলে আমরা এই কমিউনিটি সম্পর্কে যতই বলি না কেন, ততই আমাদের কম হয়ে যাবে। এখানে দাদার গুরুত্বটা সবথেকে বেশি রয়েছে। যেটা আমরা বলে কখনো শেষ করতে পারবো না, বললেও কম হয়ে যাবে।
একদম-ই তাই।দাদার অবদান মুখে বলে শেষ করা যাবে না, ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
আপনি দেখছি অনেক আগে জয়েন করেছিলেন স্টিমিট এ। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগে আসার পর থেকে পুরো প্রেক্ষাপট বদলে যায়। দারুণ কিছু মূহূর্ত শেয়ার করেছেন আপনি। সত্যি প্রথম দিকে এতো নিয়ম ছিল না। দিন যতই গিয়েছে এটা একটু বেশি হয়েছে। প্রথমবার shy-fox এর ভোট পাওয়ার অনূভুতি টা সত্যি অন্যরকম ছিল। দারুণ লিখেছেন আপু পোস্ট টা। ধন্যবাদ আপনাকে।।
হ্যাঁ ভাইয়া, অনেক আগে জয়েন করেছি কিন্তু নিয়মিত ছিলাম না।