"মুরগি সমাচার"
নমস্কার
মুরগি সমাচার:
বন্ধুরা,প্রতিনিয়ত আমি ভিন্ন ভিন্ন পোষ্ট করতে ও লিখতে ভালোবাসি।তাই আজ আমি আপনাদের সামনে আবারো উপস্থিত হয়েছি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি পোস্ট নিয়ে। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা সম্পর্কে আমার নিজস্ব অনুভূতি শেয়ার করবো।আসলে সব মানুষ সমান হয় না,তবুও তাদের নিয়েই চলতে হয় আমাদের।এক্ষেত্রে কারো কারো মত ভিন্ন হতে পারে তবে আমি শুধুমাত্র আমার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করছি।আশা করি অনুভূতিটি ভালো লাগবে আপনাদের সকলের কাছে।যাইহোক তো চলুন শুরু করা যাক----
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব অর্থাৎ সমাজের মধ্যেই আমাদের বসবাস।তাই সমাজের ভালো ও খারাপ মানুষের সংস্পর্শে আমাদের থাকতে হয়।সকল মানুষ একই সমান বা একই মনমানসিকতার হয় না।যেমনটি-আমাদের হাতের পাঁচটি আঙুল সমান নয় তেমনি।সেটা হোক পরিবারের মধ্যে ,হোক প্রতিবেশীর মধ্যে, হোক আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কিংবা হোক গোটা সমাজের মধ্যেই।ভালো-খারাপের মধ্যে দিয়েই চলতে হয় আমাদের।তো আমাদের সঙ্গে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া সেইরকম ঘটনায় তুলে ধরবো আজ।যদিও আমি কাউকে দোষারোপ করছি না,আপনারাই ঘটনাটি পড়ে বিবেচনা করে নিবেন।
আমাদের বাড়ির একদম পাশে নয় 5 প্লট রেখে এক স্থানীয় লোকের বাড়ি।অর্থাৎ তারা বাঙালি জাতি নয় তাই আবার বলা চলে বাঙাল বিদ্বেষী মনোভাব তাদের ভিতরে বেশ রয়েছে।এমন মনে হয়, তারা আধিপত্য বিস্তার করতে এসেছে বাঙালিদের উপর।যাইহোক আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তাটি কাঁচা হলেও দুই মিনিট হাঁটলেই বাস,লরি চলাচল করা বড় পিচের রাস্তা।আর আমাদের কাঁচা রাস্তার সীমানা পেরিয়েই অন্য একটি মুসলিম গ্রাম।আমাদের এখানে কোনো মুসলিম না থাকলেও আশেপাশের জমিগুলো সবই মুসলিমদের।তাদের সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে।তো ওই গ্রামে অনেক মুসলিম কাকু বাইরে থেকে এসে ব্যবসা করে থাকেন নানা কিছু।তার মধ্যে কেউ কেউ আবার মুরগি বিক্রির ব্যবসা করে থাকেন।ছোট,বড় এবং মাঝারি সাইজের মুরগি নিয়ে তারা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেন সকাল বিকেল।তারপর অন্য গ্রামে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন।
আমাদের একদম আশেপাশে বাঙাল বাড়িগুলোতে এবং আমাদের বাড়িতে কোনো হাস-মুরগি নেই।শিয়ালের উপদ্রব তাই পোষা হয় না।কিন্তু আমাদের বাড়ির থেকে একটু দূরে ওই স্থানীয়রা হাস,মুরগি ,গরু এবং ছাগল পুষে থাকেন।আর তার কিছুটা দূরে আমাদের এক বাঙাল বাড়িতে এর সবই আছে অর্থাৎ তারাও সবকিছু পুষে থাকে।
সময়টা ছিল সকাল 10 টা কিংবা সাড়ে 10 টার কাছাকাছি।আশেপাশের লোকজন কেউ বাড়িতে নেই অর্থাৎ তারা কাজের জন্য দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে থাকে।হঠাৎ আমার চোখে পড়লো আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে একটি মাঝারি সাইজের মুরগি দাঁড়িয়ে আছে।অথচ ওই স্থানীয় লোকেদের মুরগি আমাদের বাড়ি কখনোই আসে না।তারপরও আমার মা-বাবা বললো---ওদের যেহেতু মুরগি রয়েছে সেহেতু ওদের হতে পারে।যাও গিয়ে ডেকে নিয়ে এসো,আমি গেলাম ওদেরকে ডাকতে।
যদিও ওদের সঙ্গে তেমন একটা কথা বলা হয় না।তারপরও ওদের বাড়ি গিয়ে আমি বলতেই ওদের বাড়ির দুই ছেলেকে পাঠিয়ে দিলো।দুই ছেলে অনেক বড় নই তাই বলে বাড়ির মুরগি ঠিক তারা চিনতে পারবে।ওরা আমাদের বাড়ি এসে মুরগি দেখেই বললো---এই মুরগি আমাদের নয়।তবুও আমার বাবা বললো---তোমার বাড়ির বড় কাউকে পাঠিয়ে দাও।কারন তোমাদের ভুল হতে পারে।
তবুও ছেলে দুটি বললো--এটা আমাদের নয়,তখন আমার বাবা বললো---তোমার বাড়ির বড় কেউ যদি বলে এটা আমাদের নয় তাহলে থাক আমরা পোষ মানাবো।
কিছুক্ষণ পর ওই ছেলেদের ঠাকুরমা অর্থাৎ বাবার মা আমাদের বাড়িতে আসলো।তারপর আমার বাবা বলতেই,ছেলেগুলির ঠাকুরমা বললো----এটা আমাদের মুরগি নয় তো কাদের হবে?এটা আমাদের-ই মুরগি।ততক্ষনে মুরগি আমাদের বাড়ির উঠানে এসে গিয়েছে।আসলে প্রথমে আমার দাদা ও আমি মুরগির কাছে যেতেই কোনো ডাকাডাকি না করেই মুরগিটি ধরা দিচ্ছিলো।যেন অনেক পরিচিত আমাদের, কিন্তু ওই বাড়ির লোকজন আসতেই মুরগিটি ছুটে পালিয়ে যাচ্ছিলো আর খুবই ডাকাডাকি করছিলো।কিছুতেই ধরা না দেওয়া সত্বেও মিথ্যে বলে জোর করে তারা মুরগিটি নিয়ে গেল বাড়িতে।তারপর শুরু হলো নানান রাজনীতি।
ওই স্থানীয় প্রতিবেশীরা তাদের গরু ছাগল দিয়ে আমাদের বাড়ির সবজি গাছ ইচ্ছে করেই খাওয়াই আর নানাভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করে।একবার ওই বাড়ির ছেলে অর্থাৎ ওই ছেলেদের বাবাকে ডেকে আনা হলো আমাদের বাড়িতে প্রমান দেখাতে।তারপর আমার বাবা সরল মনে মুরগির কথা বলতেই ছেলেটি বললো---ওই মুরগীটি আমাদের নয়,আমরা ওটা ছেড়ে দিয়েছি।কারন ওটা ওই পাশের বাঙাল বাড়ির মুরগি ছিল।
আপনারাই ভাবুন-- আমরা কি এতটাই বোকা যে,ছেলেটার মা ও তার বাচ্চারা এসে মুরগিটি জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেবে এটা বিশ্বাস করা যায়।কারন বাচ্চা ছেলেদের চিনতে ভুল হয়নি অথচ তার ঠাকুরমার মুরগি চিনতে কিভাবে ভুল হলো! তো মিথ্যে বললে মানুষ এভাবেই ধরা খায়---আরকি।
শেষমেষ আমরা অনুধাবন করলাম যে,,ওদের মুরগি যেহেতু কখনোই আমাদের বাড়িতে আসে না সেহেতু এইবারও আসে নি ।আর আমাদের ওই বাঙাল বাড়ি তো আরও দূরে তাই ওখান থেকেও মুরগীটি আসে নি।আসলে প্রতিনিয়ত অনেক মুরগি ব্যবসায়ী মুসলিম কাকুরা সকাল-বিকেল এখান থেকে মুরগি নিয়ে যায় তাদের ঝুড়ি থেকেই কখন জাল ফসকে বের হয়ে গিয়েছে।তবে কি আর করার,মিথ্যে বলে তো নিয়েই গেল তাইনা!তো এটাই ছিল আমার মুরগি সমাচার ঘটনা।।
পোষ্ট বিবরণ:
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | poco m2 |
অভিবাদন্তে | @green015 |
লোকেশন | বর্ধমান |
আমার পরিচয় |
---|
আমি সবসময় ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করি নিজের মতো করে।কবিতা লেখা ও ফুলের বাগান করা আমার শখ।এছাড়া ব্লগিং, রান্না করতে, ছবি আঁকতে,গল্পের বই পড়তে এবং প্রকৃতির নানা ফটোগ্রাফি করতে আমি খুবই ভালোবাসি।
টুইটার লিংক
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thanks.
এরকম অনেকেই আছে যে অন্যের হারিয়ে যাওয়া কোনকিছু নিজের বলে লুফে নেয়।সেরকম ওই অবাঙ্গালীদের অবস্থা। অবশ্যই ওই মুরগী মুরগি ব্যাবসায়ীদের খাঁচা থেকে পড়ে হারিয়ে গিয়েছিল।বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।ধন্যবাদ আপনাকে সত্যি ঘটনা গল্পটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
একদম ঠিক কথা বলেছেন দিদি।এই মিথ্যুকদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল।ধন্যবাদ আপনাকে।
এই টাইপের কিছু লোক হয়তো সব জায়গাতেই আছে দিদি।এরা বেশি চালাকি করতে গিয়ে কিন্তু শেষ মেস নিজেরাই ধরা খেয়ে যায়।দারুন লিখেছেন পরে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
খারাপ ধরনের মানুষ সবজায়গায় থাকে,একদম-ই তাই।ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর মতামতের জন্য।
আমারও প্রথমে সেটাই মনে হচ্ছিল যে, যারা মুরগি কিনতে আসে হয়তো তাদের খাঁচা থেকে মুরগিটা বেরিয়ে তোমাদের বাড়ির আঙিনায় চলে এসেছিল। তবে যারা মিথ্যা কথা বলে মুরগিটা নিয়ে গেছে, ওরা মোটেই ভালো মানুষ মনে হলো না আমার কাছে। তবে তোমরা এত লোকের কাছে জিজ্ঞাসা করতে গেলে কেন, ধরে এনে রান্না করে খেয়ে ফেলে দিলে ঝামেলা শেষ হয়ে যেত। হা হা হা...😁 আমি হলে তো কারো কাছে জিজ্ঞাসা করতাম না, আগে নিয়ে রান্না করে খেয়ে ফেলতাম।🤭🤭
দাদা এটা শুধু তুমি নয়,অন্য যেকোনো মানুষ অর্থাৎ আমাদের আশেপাশের মানুষেরা পেলেও সেটাই করতো।কিন্তু ওই যে বললাম, আশেপাশে কারো মুরগি নেই তাই শোনাটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।আর না বলে রেখে পুষলেও আরেক মুশকিল তার উপরে আবার আমরা তো মাংস খাই না।