বাস্তব কাহিনী: ব্যার্থ পিতা। || True Story: Failed Father.
ঘটনাটা সপ্তাহ খানেক আগের, আমার কলিগের একটা ফটোস্ট্যাট আর কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। সে যখন সময় পায় বসে নাহলে কর্মচারী দেখে। আমি একটা বিশেষ প্রয়োজনে তার দোকানে গেলাম। আমরা যখন কথা বলছিলাম, তখন মধ্য বয়সী একজন লোক আসলেন তার মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট জানার জন্য। আমার কলিগ চেষ্টা করলো রেজাল্ট দেখার জন্য কিন্তু তখনও প্রকাশ হয়নি রেজাল্ট। তখন আমার কলিগ তাকে কিছুক্ষণ পর আসতে বললেন, কিন্তু লোকটির চোখে মুখে ভীষণ দুশ্চিন্তার ভাজ কারন মেয়ের রেজাল্ট। তিনি বাসায় ফোন করে তার মেয়েকে জানালেন এখনো রেজাল্ট প্রকাশিত হয়নি।
তিনি চলে যাওয়ার পর আমরা আবারও আমাদের কাজের বিষয়ে কথা বলতে থাকি। কিছুক্ষণ পর সেই লোকটি ছুটতে ছুটতে এসে হাজির ভাই এবার দেখুনতো রেজাল্ট পাওয়া যায় কিনা। লোকটির চোখে মুখে প্রচন্ড চিন্তার ছাপ। আমার কলিগ রোল নাম্বার এবং যাবতীয় তথ্য দিয়ে সার্চ দেয়া মাত্রই রেজাল্ট হাতে পেয়ে যায়। আমি নিজেও কম্পিউটারের সামনে। অবাক করা বিষয় যতগুলো বিষয় রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেক ফেল আর যে তিনটিতে পাশ করেছে সেগুলো একদমই কোন রকম টেনেটুনে।
আমরা দুজন দুজনের দিকে চোখাচোখি করছি অবস্থা দেখে, কি আর করা আমার কলিগ লোকটিকে রেজাল্ট দেখালো। লোকটি ঘটনার আকস্মিকতায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। মানে ব্যাপারটা তার কাছে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মতো অবস্থা। সন্তানের এমন কাজে বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। আমার কলিগ লোকটিকে চিনতেন, তিনি তার প্রতিবেশী। সে বললো ভাই আপনার মেয়ে তো রেজাল্ট এতো খারাপ করার কথা না, আপনি তো তাকে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছেন। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে লোকটি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন এবং আমাদের সামনে ভীষণ লজ্জায় পরে গেছেন। একবার চিন্তা করুন তো এই পরিস্থিতিতে আপনি পরলে কি বলতেন?
তিনি বললেন ভাই মেয়েকে ভালো কলেজে পড়াতে গিয়ে নিজের অর্ধেক জমি বিক্রি করে দিয়েছি, তার শখ আহ্লাদ কোন কিছু অপূর্ন রাখিনি। যা চেয়েছে বরং তার থেকে বেশি দিয়েছি। কিন্তু সে যা ফলাফল করলো তাতে মনে হচ্ছে সে কোন পড়াশোনা করেনি। তার পেছনে ব্যায় করা আমার অর্থ এবং পরিশ্রম সম্পূর্ণ বিফলে গেল। আমি আজ ব্যার্থ পিতা হয়ে গেলাম। বিশ্বাস করতে পারবেন না তার চোখে জল চলে এসেছে। আমরা দুজনেই তার কথাগুলো শুনছিলাম আর হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ তার মেয়ে ফোন করে রেজাল্ট জানতে চাইলো, তিনি বললেন মা তুমি রেজাল্ট খারাপ করেছো। আর এতোটা খারাপ করেছো যা কোনদিন কল্পনাও করিনি। তুমি এটা কি করলে? সাথে সাথে অপর পাশ থেকে লাইন কেটে দিয়েছে মেয়েটা।
আমার কলিগ তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু তিনি কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারলেন না, এক পর্যায়ে সেখান থেকে উঠে চলে গেলেন। এরপর আমরা দুজনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলাম।
একবার একটু চিন্তা করুন তো যে পিতা তার মেয়ের জন্য নিজের অর্ধেক সম্পদ বিক্রি করে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে আর দিনশেষে তিনি যদি জানতে পারেন তার মেয়ে লেখাপড়া না করে অন্য কিছুর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে তখন ব্যাপারটা কতটুকু কষ্টদায়ক। এখনকার সমাজ, সংস্কৃতি এবং পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে এই পরিবর্তন যদি একজন পিতাকে ব্যার্থ পিতা হিসেবে পরিচিত করতে বাধ্য করে তাহলে এই পরিবর্তনের কি আদৌ প্রয়োজন আছে?
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি অবশ্যই বলবো না। আসলে আপনার লেখা গুলো পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। জানি না মেয়েটির বাবার কি অবস্থা। তবে আসলেই বাবাটি অনেক অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে। বাবা তার সেরাটা দিয়ে মেয়েটিকে সফল করতে চেয়েছিলেন। তবে মেয়েটির ভুলের কারনে একজন বাবাকে কষ্ট পেতে হলো। জানি না এখন সমাজে আর কত বাবাকে কষ্ট পেতে হবে। সকল বাবাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো ❣️
ভাই আপনার লেখাটি যখন পড়ছিলাম, শুরুতেই বুঝতে পারছিলাম যে একজন মেয়ের বাবা তার মেয়ের রেজাল্ট নেওয়ার জন্য এসেছিল। ভেবেছিলাম বর্তমানে অটো পাস হয়তো ভালো রেজাল্ট করবে। কিন্তু রেজাল্ট দেখার সময় যে ঘটনাটা আপনি বিবরণ দিয়েছেন তাতে শুনেই আমার মাথা ঘুরে গেল। না জানি ওই সময় ওই মেয়ের বাবার কি অবস্থা হয়েছিল। সবগুলোই ফেল টেনেটুনে তিনটা সাবজেক্ট এ পাশ। আমার মনে হচ্ছে ওই মেয়ে আদৌও পড়াশোনা করেছে না কি করেছে আল্লাহই ভাল জানে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যেখানে ভালো কিছু আর আশা করা যায় না। আর এভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনের বাংলাদেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। কারণ একটা জাতিকে ধ্বংস করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করলেই যথেষ্ট। আর বর্তমান শিক্ষানীতি সেই দিকেই আছে আশা করি সেদিনের জন্য আমরা প্রস্তুত যেদিনটা আমাদের খুবই সব নিকটে।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1731719488905830674?t=PXDyPGwKD36pEhND0R0J6Q&s=19
সত্যি বিষয়টা শুনে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে একজন বাবা কত কষ্ট করে না তার মেয়েকে পড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষে দেখা গেল সে রেজাল্ট এতটা খারাপ করেছে। অনেকে আছে সারা বছর না পড়েও তো অন্তত একটা দুইটা সাবজেক্টে ফেল করে আমার ভাগ্য ভালো থাকলে পাসও করে যায়। কিন্তু ওই মেয়েটার অতগুলো সাবজেক্টে ফেল করা স্বাভাবিক ব্যাপার না। জানিনা সে এত বিষয়ে কেন ফেল করেছিল। তবে তার বাবার কথা ভেবে হলেও তাঁকে পড়াশোনার পিছনে পরিশ্রম করা উচিত ছিল। কারণ তার বাবা তাকে পড়ানোর এতটাই ইচ্ছা করেছিল যে সে তার অর্ধেক সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছে। যাইহোক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এই ঘটনাটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
প্রতিটা বাবার স্বপ্ন থাকে তার সন্তানকে লেখা পড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবে কিন্তু সেটা সব ক্ষেত্রেই সফল হয় না যেমনটা এখানে আপনি তুলে ধরেছেন। তিনি তার জায়গা জমি বিক্রি করে তার মেয়েকে বড় আশা নিয়ে ক্যাডেট কলেজে পড়িয়েছে কিন্তু তার মেয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আসলে ভালো কলেজে বা স্কুলে পড়ালেখা করলেই যে সে ভালো রেজাল্ট করবে আসলে তা নয় আপনার পোষ্টে তা খুব সুন্দর ভাবে ফুঁটে উঠেছে। আসলে বাবা, মা সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করে সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে কিন্তুু যদি তা না হয়ে উল্টো হয় তখন কি অবস্থা হয় তা শুধু সেই ভুক্তভুগী বাবায় বুঝতে পারে।বাবা মায়ের কষ্ট না বুঝে অনেক সন্তান বিপথে চলে যায়।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে লোকটির জন্য অনেক খারাপ লাগলো। আসলে ভাইয়া মেয়েটি তাহলে হয়তো কোন পড়াশোনা করেনি।কারণ ক্যাডেট কলেজের বাচ্চাদের রেজাল্ট এমন হবার কথা নয়। যাইহোক যারা চাওয়ার আগেই সব পেয়ে যায় তাদের বেশির ভাগ এমনি হয়। সত্যি সন্তানদের অভাব শেখানো উচিত। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
একজন বাবা নিজের মেয়ের রেজাল্ট জানার জন্য অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু ওনার মেয়ের এরকম রেজাল্ট দেখে উনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল। নিজের মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এবং কি ভালো একটা কলেজে পড়ানোর জন্য তিনি নিজের অর্থ সম্পদ সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করেছিল। বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ভালোভাবে পড়ালেখা করানোর, কিন্তু মেয়েটা বাবার স্বপ্নটাই ভেঙে দিয়েছে। এই বিষয়টা বাস্তবে ঘটেছে এটা ভেবে আমার কাছে অনেক খারাপ লাগতেছে।