রাতের বাঁশিওয়ালা ( দ্বিতীয় পর্ব )।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছে। দিপুর দরজার উপর বেশ কয়েকটা আঘাত করল দিপুর মা। বলল বাবা সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে এবার তো উঠ। দুপুরে এসেই ঘর বন্ধ করে শুয়ে ছিল দিপু কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে। মায়ের কন্ঠ শুনে উঠল দিপু।
হ্যা বলো কী হয়েছে।
হ্যা রে বাইরে থেকে এসে কিছু বললি না। এসেই শুয়ে পড়েছিস। দুপুরে কিছু খেলি না। কী হয়েছে।
কিছু হয়নি মা।
কী এবারেও চাকরি টা হয়নি তো।
হ্যা সেটা তো জানোই তো বলছ কেন।
আচ্ছা ঠিক আছে রাগ করিস না। আজ ক্লাবে যাবি না। আজ নাকী তোদের কোন গানের প্রথম রিয়ার্সেল শুরু হবে।
না ইচ্ছা নেই।
চা খাবি নিয়ে আসব।
হ্যা দাও তো একটু।
আচ্ছ নিয়ে আসছি ফ্রেশ হয়ে নে। ও হ্যা জয়ীতার কী খবর রে। অনেকদিন হলো আমাদের বাড়িতে আসেনি আর ফোনও দেয় না।
ও ভালো আছে একটু অন্যরকম ভাবে বলল দিপু।
গোসল করে ফ্রেশ হয়ে চা খাচ্ছে দিপু। এবং পিংক ফ্লয়েড এর "One of this These Days" গানটা শুনছে। পিংক ফ্লয়েড ব্যান্ডটা দিপুর অনেক পছন্দের। বলতে গেলে এদের গান শুনেই ওর গান লেখার আগ্রহ টা তৈরি হয়। যদিও দিপু বাংলা গান লিখে থাকে। গান শুনতে শুনতে ফেসবুক ক্রল করছিল দিপু। হঠাৎ একটা নিউজ চোখে পড়ল।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় নাকী এখন কোনো এক ব্যক্তি রাতে বাঁশি বাজিয়ে বেড়ায়। এটা বেশ কয়েক মাস ধরে হয়ে আসছে। এবং এই বাশির সুর নাকী সবাই শুনতে পাই না। কিন্তু যারা শুনতে পেয়ে দেখতে যায় কে এই বাঁশি বাজাচ্ছে তারা আর ফিরে আসে না। বিষয়টি বেশ হাস্যকর মনে হয় দিপুর। কমেন্ট বক্সে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে ব্যাপার টা নিয়ে। অথচ গতকাল রাতের ঐ বাঁশিওয়ালার ব্যাপার টা রীতিমতো ভুলে গিয়েছ দিপু।
কিছুক্ষণ পর দিপুর বাবা ঘরে আসলো। দিপুর বাবা বেশ ভালো মানুষ। ছোট থেকেই দিপুকে সবরকম সাপোর্ট দিয়ে আসছে। কখনো কোন কিছুতেই নিষেধ করে না। ঘরে ঢুকে দিপুর বাবা বলল
কী রে কী করছিস।
কিছু না এইতো বসে আছি।
পিংক ফ্লয়েড হা হা। তোর মনে আছে পিংক ফ্লয়েড এর অ্যালবাম কেনার জন্য তুই কতটা বায়না জুড়ে দিতিস।
হ্যা বাবা মনে আছে।
আজ অফিসে কী হলো। এবারে কী হবে।
না! মনে হয় না।
ঠিক আছে বাবা। তবে এবার একটা কিছু করতে হবে তো তোকে। আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে বুঝছিস তো সব।
চুপ হয়ে আছে দিপু।
ঠিক আছে রাতে দ্রুত খেয়ে ঘুমিয়ে যাস। বলে দিপুর বাবা চলে গেল। আগে দিপু বাবা মায়ের সঙ্গে খেতে বসলেও এখন ওর জানি কী হয়েছে। গভীর রাতে একা একা খাই। এরই মধ্যে জয়ীতার ম্যাসেজ এসেছে। সরি রে। তখন ব্যবহার টা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু দিপু কোনো রিপ্লাই করল না। কিছুক্ষণ পর জয়ীতার ফোন আসলো।
কী রে ম্যাসেজের রিপ্লাই করলি না যে।
ইচ্ছা করছে না।
দেখ দুপুরের বিষয়টা নিয়ে আমি দুঃখিত। আমার মাথা ঠিক ছিল না। একে অফিসের চাপ ঐদিকে বাবা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে এদিকে তুই যদি এমন করিস তাহলে আমি পারব কীভাবে বল তো।
কথাগুলো যেন গোগ্রাসে গিলে নিল দিপু। কোন উওর দিল না।
রাতে খেয়েছিস।
না। বলে চুপ করে থাকল দিপু।
আমাকে জিজ্ঞেস করবি না। আগে তো নিজে থেকেই সব জানতে চাইতি। এখন কী হয়েছে তোর। এমন আচরণ কেন করছিস।
কিছু না। যা ঘুমিয়ে যা। অনেক রাত হয়েছে।
রাত তখন প্রায় দুইটা। চারিদিকে নিস্তব্ধ। রোড লাইটের আলোয় রাস্তা টা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ দিপুর কানে আসলো ঐ বাঁশিটার আওয়াজ। এবং লম্বা একটা ছায়া। এটা দেখে হঠাৎ দিপুর ফেসবুকের ঐ ঘটনা টা মনে পড়ে গেল। অনেকদিন পর দিপুর যেন কোনো কিছু নিয়ে কৌতূহল হলো। ভয় না পেয়ে ও রাস্তায় চলে গেল। আহ কী বাঁশির সুর। সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল বাঁশিওয়ালা। বেশ লম্বা এবং চিকন গঠনের গায়ে বেশ রঙিন পোষাক এবং মুখে মুখোশ পড়া। একেবারে বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে বাঁশিওয়ালার পেছন পেছন যেতে থাকল দিপু। এ যেন হ্যামিলিওনের সেই বাঁশিওয়ালা। এই মফস্বলে চলে এসেছে। হঠাৎ বাঁশির সুর টা যেন থেমে গেল। এবং বাঁশিওয়ালা দিপুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল বলে উঠল;
কেমন আছেন ভাই'সাহেব।।
চলবে.....
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া আপনার প্রথম পর্ব পড়া হয়নি তবে দ্বিতীয় পর্ব পড়ে খুব ভালো লেগেছে। আমি তো ভেবেছিলাম এটা হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালা গল্প হবে কিন্তু পড়ে দেখলাম এর কাহিনী ভিন্ন। দিপু বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পিছনে যাচ্ছে আর বাঁশির সুর থামিয়ে বাঁশিওয়ালা দিপুর দিকে তাকিয়ে কেন হাসি দিল এবং এরপর কি হলো জানতে খুব ইচ্ছে করছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।
বাঁশিওয়ালা তবে সত্যি ই ছিল। বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে তবে সবাই কোথায় হারিয়ে যায়? পরের পর্বে জানতে পারবো আশাকরি।
আহা!! ভাই, গল্পে যখনই টুইস্ট এসে পড়ল তখনই যেন গল্পটি শেষ হয়ে গেল। যে এত সুন্দর বাঁশি বাজায়, তার বাঁশির সুর শুনে দীপু তাকে দেখার কৌতূহল বশত তার কাছে গিয়ে হাজির হয়েছে। আর সেই বাঁশিওয়ালা দিপুকে দেখে কেমন আছেন ভাইসাব, বলতেই গল্পটি শেষ হয়ে গেল। রাতের বাঁশিওয়ালা গল্পটির প্রথম পর্বটি আমি পড়েছিলাম, তাই দ্বিতীয় পর্বটি পড়েও আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই খুব সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। সেই সাথে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।