রাতের বাঁশিওয়ালা ( শেষ পর্ব )।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
পরের দিন ছিল বুধবার। বাঁশিওয়ালা এর সঙ্গে কথা বলে বাড়ি ফেরার পরে ঘুমিয়েছিল দিপু। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসল "Happy Birthday Day, My dear Love, জয়ীতা ম্যাসেজ করেছে। তখন দিপুর মনে পড়লো হ্যা আজ ১২ ই এপ্রিল তার জন্মদিন। আজই তার মুক্তির দিন। আজ এই জন্মদিনে তার আবার নতুন করে জন্ম হবে। জয়ীতার ম্যাসেজের ছোট করে একটা ধন্যবাদ দিল দিপু। কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই দিপু জয়ীতা কে ফোন দিল
আজ দেখা করতে পারবি।
কখন দেখা করবি।
এই চারটা'র দিকে পার্কে।
ঠিক আছে চলে আসব। আর হ্যা তোর কী গিফট চাই জন্মদিনে।
কিছু লাগবে না। তুই চলে আসিস।
নিজের রুমেই বসে আছে দিপু। দিপুর মা রুমে আসল। দিপুর মা হাসিমাখা মুখে বলল
হ্যা রে বাবা আজ তো তোর জন্মদিন।তোর সব পছন্দের খাবার তৈরি করব। সারাদিন বাড়িতে থাকবি। তোর বন্ধুদের এবং জয়ীতা কে আসতে বলবি।
না মা তোমাকে ওসব করতে হবে না। আর কেউ আসবে না। ওসবের দরকার নেই।
ছেলের এইরকম কথা মোটেও স্বাভাবিকভাবে নেয়নি দিপুর মা। দিপু তার ছোটবেলার ছবির অ্যালবাম গুলো দেখছিল। ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি দেখে সে আফসোস করছিল। ফেলে আসা দিনগুলো এখন যেন তার মিথ্যা মনে হয়। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। একেবারেই স্বাভাবিকভাবে জয়ীতার সঙ্গে দেখা করতে যায় দিপু।
দিপু আগে গিয়ে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষণ জয়ীতা একটা ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে আসলো। আবার উইস করল। শুভ জন্মদিন দিপু। মুখে একটা চোরা হাসি দিয়ে দিপু বলল ধন্যবাদ। দুজনই চুপ হয়ে রয়েছে। আজ জয়ীতাও কিছু বলছে না। আজ দিপু তার জীবনের সবচাইতে বিবর্ণ জন্মদিন অতিবাহিত করছে।
জয়ীতা!! তুমি কী আমাকে ভালোবাসো।
এতদিনে তুমি এই প্রশ্ন করছ যে। এতে তোমার কোন সন্দেহ আছে।
না সেটা নেই। যদি আমাকে ভালোবাস তাহলে আমাকে ভুলে যাও। সেটাই তোমার জন্য ভালো হবে। কোন কারণ জিজ্ঞেস করবে না। আমাদের আর কথা হবে না।
তুমি কী ব্রেকাপ করছ।
হ্যা ধরো তাই।
ঠিক আছে তাহলে তাই হোক। বলে জয়ীতাও চলে গেল।
এর আগে বেশ কয়েকবার দিপু এমনটা করেছে। আর নিজের জন্মদিনে দিপু হয়তো মজা করছে এটা ভেবে জয়ীতাও ব্যাপার টা সিরিয়াসলি নেয়নি এবং চলে গিয়েছে। কিন্তু এটাই যে দিপুর সঙ্গে জয়ীতার শেষ দেখা ছিল সেটা সে আন্দাজও করতে পারেনি।
সন্ধ্যার পরে বাবার ঘরে গেল দিপু। দিপুর বাবা শুয়ে আছে তার কাঠের চেয়ার টাই। হঠাৎ দিপুর আগমন বুঝতে পেরে বলল
কী রে এসেছিস।
হ্যা বাবা।
কিছু বলবি।
না।
ঠিক আছে ঘরে যা বিশ্রাম কর।
নিজের বাবার মুখটাও যেন শেষবারের মতো দেখে ফেলল দিপু। ক্রমেই রাত গভীর হচ্ছে। এবং দিপুর বিদায়ের ঘন্টা বাজছে। ইতিমধ্যে দিপু তার মোবাইল ফোনটা বন্ধ করে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে। ঐ টা আর তার কোন দরকার নেই। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল দিপু। ঘড়িতে সময় তখন ঠিক একটা। পুরো শহর নিস্তব্ধ। শহরটা যেন আজ একটু বেশিই প্রাণহীণ লাগছে। কিন্তু সত্যি সত্যি যে আজ এই শহর থেকে একটা প্রাণ হারিয়ে যাবে তার খবর কী কেউ রাখে! হঠাৎ সেই বাঁশির সুর। হ্যা বাঁশিওয়ালা এসেছে। দিপু আর দেরি করেনি। আজ তার মুক্তির দিন। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে বাঁশিওয়ালার পেছন পেছন যেতে থাকে সে। কিছুদূর যাওয়ার পর যেখানে লোকালয় শেষ। রাতের নিস্তব্ধতা এবং হালকা উড়ে আসা সাদা রঙের কুয়াশা আলাদাই একটা শিহরণ সৃষ্টি করছে দিপুর শরীরে।
ভাই'সাহেব আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
আরে আপনি দেরি করে ফেললেন। আমার জন্মদিন ছিল গতকাল। মানে রাত ১২ টার আগ পযর্ন্ত।
একটা অট্টহাসি দিয়ে বাঁশিওয়ালা বলল ওটা তো আপনার মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসার দিন। কিন্তু আপনার নতুন জন্ম হলো আজ। এই নিন আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্মদিনের উপহার এটা বলে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ভায়োলিন বের করে দিল। এবং বলল বাজান।
কয়েক বছর ধরে মিউজিক ব্রান্ডে আছে সেজন্য এগুলো দিপু বাজাতে পারে। দিপু বেশ মন দিয়ে সেটা বাজাতে থাকল। এবং সেই সুরে যেন সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল। তারই সঙ্গে বাঁশিওয়ালা শুরু করল বাঁশি বাজানো এবং সামনের দিকে এগিয়ে গেল পেছন পেছন ভায়োলিন বাজাতে বাজাতে দিপু তার অনুকরণ করল। কিছুক্ষণ পর দুজনের অস্তিত্ব রাতের অন্ধকারে বিলীন হয়ে গেল। তাদের ছায়াগুলোও হারিয়ে গেল।
কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল দিপু। আর বাঁশিওয়ালাই বা কোথায় গেল। সেটা আমাদের জানা নেই। কিন্তু দিপুর মতো হাজার হাজার ডিপ্রেশনে থাকা বেকার ছেলে রয়েছে আমাদের আশেপাশে। যাদের কাছে জীবন মানে একটা বোঝা। পরিবারের চাপ, নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হয়ে যাবে সেই চাপ, নিজের ক্যারিয়ারের চাপ এগুলো ভাবতে ভাবতে তারা যেন বেঁচে থাকতেই ভুল যায়। এবং শেষমেশ বাঁশিওয়ালার অপেক্ষা করে। যে তাদের কে এই শহর থেকে নিয়ে যাবে কোন অজানাই কোনো নতুন ঠিকানায়।
.....
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গল্পের শেষটা এমন হবে ভাবিনি।দিপুর চলে যাওয়াটা অজানাই রয়ে গেলো।এতো এতো বোঝা মনে করে সে হারিয়ে গেলো বাঁশিওয়ালার সাথে। এমনটাই হয় আসলে। ছেলেগুলো নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে এভাবেই বিলীন হয়ে যায়। ধন্যবাদ সুন্দর এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।