রাতের বাঁশিওয়ালা ( প্রথম পর্ব )।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
মানুষ অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী। একজন মানুষ হয়তো জানেই না সে কী চাই। আর এজন্যই সে কখনো খুশি হতে পারে না জীবনে। কিন্তু এই অসুখ কী সব মানুষ সারাজীবন বয়ে নিয়ে যেতে পারে। যারা পারে না তারা কী করে শেষে। আজ সেটাই জানব আমাদের এই গল্পের মাধ্যমে।
দিপুর বাড়িটা একেবারে শহরের বাইরের দিকে। বলতে গেলে সেটা গ্রামই বলা চলে। গ্রামের পরিবেশ কিন্তু শহরের সব সুযোগ সুবিধা আছে। রাত তখন ১ টা বাজে। দিপুর বাবা মা দুজনেই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু দিপুর চোখে ঘুম নেই। দিপুর ঘরের জানালা টা দিয়ে সামনের রাস্তাটা দেখা যায়। রোড লাইটের আলোয় পুরো আলোকিত হয়ে থাকে। দিপু বসে বসে জানালা টা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। জয়ীতা ম্যাসেজ করেছে, কী রে অনেক রাত হয়েছে এখনো ঘুমাস নি কেন। কাল ওখানে যেতে হবে সকাল সকাল, মনে আছে তো। মামা সব কথা বলে রেখেছে। তোর কোনো সমস্যা হবে না। শুধু তুই যাবি বাকি টা মামা দেখে নেবে। আর হ্যা দাঁড়িটা কেটে যাস। বুঝিসই তো চাকরির ব্যাপার। এতো'বড় ম্যাসেজ দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল দিপু। তারপর ফোনটা পাশে সরিয়ে রাখল। কোনো রিপ্লাই করল না।
জয়ীতা হলো দিপুর প্রেমিকা। ওদের বিয়ের বিষয়ে পারিবারিক সব কথাবার্তাও ঠিক। যদিও এটা সম্ভব হয়েছে জয়ীতার জন্য। দিপুর বয়স প্রায় ২৭ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনো চাকরি পাইনি সে। পাইনি বলতে চাকরি টা দিপু করেনি বললেই হয়। জয়ীতা দিপুর থেকে বছর দুই এর ছোট। সেই জয়ীতাও চাকরি করছে। সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ দিপুর কী যে হলো এই প্রশ্ন জয়ীতাকে চিন্তাই ফেলে দেয়। দিপুর পরিবারে শুধু তার বাবা মা রয়েছে। চেয়ারের উপর মাথা দিয়ে ভাবছে দিপু। হঠাৎ একটা বাঁশির সুর দিপুর কানে আসলো। খুব একটা গুরুত্ব দিল না দিপু। কিন্তু ক্রমেই বাঁশির সুর জোড়ালো হচ্ছে। দিপু ভাবলো এত রাতে হয়তো কেউ বাঁশি বাজাচ্ছে। এটা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামালো না সে। তার এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়।
ঐভাবে চেয়ারের উপরেই শুয়ে পড়েছিল দিপু। সকাল ৭ টার দিকে জয়ীতার ফোন।
কী রে উঠেছিস।
হ্যা।
আচ্ছা অফিসের ঠিকানা টা মনে আছে তো।
হ্যা।
দশটার আগেই পৌছে যাস।
আচ্ছা।
জয়ীতার কথাগুলোর কোনো রকম একটা উওর দিল দিপু। চাকরি টার বিষয়ে দিপুর থেকে জয়ীতা বেশি ব্যস্ত। এই চাকরি টার জন্যই ওদের দুজনেই বিয়েটা আটকে আছে। কিন্তু দিপুর চাকরি করার উপর একেবারেই কোনো ইচ্ছা নেই। লেখাপড়া শেষ করে টানা তিন বছর চাকরি খুজেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কোনো এক অজানা কারণে ইন্টারভিউ থেকে তাকে ফিরে আসতে হয়। বছর খানেক হলো দিপু একটা মিউজিক ব্রান্ডে যোগ দিয়েছে গান লেখক হিসেবে। গান লেখা সুর করার উপর আবার তার ঝোঁক একেবারে ছোট বেলা থেকেই। তবে এবারে এই চাকরির জন্য মনে হয় সবকিছুই ছাড়তে হবে। জয়ীতা পরিবারের বড় সন্তান। জয়ীতার বাবা তাদের সম্পর্ক টা মেনে নিলেও ছেলে বেকার এটা মেনে নেবেন না। এইজন্যই যত তাড়া জয়ীতার।
ঠিক সময়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছিল অফিসের উদ্দেশ্যে। আজ সে যাচ্ছে একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিতে। জয়ীতা তার মামাকে বলে একটা ব্যবস্থা করেছে। নাম মাএ ইন্টারভিউ এটা। শুধুমাত্র দিপু গেলেই চাকরি হয়ে যাবে অবস্থা টা এমন। কিন্তু এটা নিয়েও দিপু উদাসীন। আজকাল সে কিছু নিয়েই সিরিয়াস না। জয়ীতার দেওয়া ঠিকানা মতো পৌছেও গেল। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে ডাক আসলো।
তুমি দিপু তো।
জী হ্যা।
বসুন। আপনার সার্টিফিকেট গুলো দেখি।
অন্যমনস্ক হয়ে আছে দিপু। সে যেন কিছুই শোনে নি।
এই যে আপনার সার্টিফিকেট গুলো দেখি।
ও হ্যা এই যে স্যার।
বলছি তোমার রেজাল্ট তো ভালো। তো এতোদিন চাকরি পাওনি কেন।
কোনো উওর দিল না দিপু।
আচ্ছা আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন।
দিপু কিছু বলল না। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। অবস্থা এমন তাকে যেন পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন প্রশ্নটা করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর
আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন।
দিপুর এই অন্যমনস্ক স্বভাব টা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি তারা। ফলাফল এই চাকরি টাও হবে না। দিপু সেটা বুঝে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরতেই দিপুর কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে ঘরে চলে গেল।কিছুক্ষণ পরেই জয়ীতার ফোন।
দিপু!অফিসে গিয়ে কী করে এসেছিস তুই।
কোথায় কিছু করি নি তো। একটু উদাসীন ভাবে বলল দিপু।
তুই কোনো উওর ঠিকঠাকভাবে দিস নি। তার উপর দাঁড়িটাও কেটে যাস নি। ওরা তো মামাকে সরাসরি বলেছে তোকে তারা নিতে পারবে না। তুই নাকি কোনো কিছু নিয়েই সিরিয়াস না। এভাবে করলে কীভাবে হবে দিপু??
হুম। বলে চুপ হয়ে রইল দিপু।
এটা দেখে জয়ীতা বেশ রেগে গেল। এবং বেশ কিছু কথা শুনিয়ে ফোন টা কেটে দিল।
কিন্তু এগুলো তে যেন দিপুর কিছুই যায় আসে না।
চলবে.....
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দিপুর ব্যাপারটা একটু এলোমেলো হলেও গল্পের এই চরিত্রটা দারুন লেগেছে। তবে কেমন একটা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। জয়ীতার জন্য খারাপ লাগলো, তার হয়তো শেষ পর্যন্ত দিপুকে পাওয়া হবেনা। যাইহোক সামনে কি হয় পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আসলে দিপু চায় টা কি?? দিপু কি জব করবে না? নাকি গান নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে চায়? বুঝলাম না।এই বয়সে এতো উদাসীনতা মানায় না।যাই হোক পরের পর্বে দেখি কি হয়।সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
দিপু আসলে চায় টা কি? দিপু কি জব করতে চায় না?? গান নিয়ে থাকতে চায়??আসলে এই বয়সে এতো উদাসীনতা ভালো নয়।যাক পরের পর্বে জানা যাবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
আসলেই একটা বয়সের পর মেয়েদের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য কথাবার্তা চলে। সেই জন্যই জয়িতার এত ব্যস্ততা, কিন্তু দিপুর কোনো কিছু নিয়েই কোনো গুরুত্ব নেই দেখছি। জয়িতা চাকরির জন্য তার মামাকে দিয়ে একটা জায়গায় কথা বলিয়ে রেখেছিল ঠিকই, কিন্তু দিপু এতটাই উদাসীন যে সে সেখানে গিয়েও ঠিকঠাকভাবে উত্তর দিল না । দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয় ,গল্পটি বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো।
আমিও দিপুর আচরণ ঠিকঠাক ভাবে বুঝে উঠতে পারলাম না। কেননা জয়িতা যেখানে তার মামাকে বলে চাকরির একটা ব্যবস্থা করেই রেখেছে, সেখানে দিপুর এতটা উদাসীন হওয়া স্বাভাবিক ছিল না। আর হ্যাঁ যেহেতু জয়িতার বিয়েটা শুধুমাত্র দিপুর চাকরির জন্য আটকে ছিল, তাই হয়তো দিপুর চাকরির জন্য জয়ীতার এত তারা ছিল। যাইহোক দিপু ও জয়ীতার চরিত্র খুব সুন্দর ভাবে গল্পের মাঝে তুলে ধরেছেন পড়ে বেশ ভালই লাগলো। তাই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।