"ফুটবল" যখন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাই।

in আমার বাংলা ব্লগlast year


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ বৃহস্পতিবার, ৩ রা আগষ্ট, ২০২৩।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


received_1339410879939030.jpeg

কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টে আমাদের টিমের একাদশ


সাল ১৯০৫,বঙ্গভঙ্গের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতবর্ষে। সেই সময় ব্রিটিশরা বিপ্লবীদের ধরে ফাঁসি দেওয়া নির্বিচারে হত‍্যা করা শুরু করল। যার স্বীকার হয় ক্ষুদিরাম, কানাইলাল সহ আরও অসংখ্য বালক কিশোর যুবক। বিপ্লবী নগেন্দ্র তার কিছু শিষ‍্য নিয়ে শুরু করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। নগেন্দ্র এর সবচেয়ে নিকট শিষ‍্য ছিল সত‍্যচরণ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বোমা মেরে বড়লাট বা ব্রিটিশ কাউন্সিলদের হত‍্যা করা। কিন্তু কোনোভাবেই কোনো ব্রিটিশ নারী শিশু বৃদ্ধকে হত‍্যা করা যাবে না। কিন্তু এভাবে বড়লাট মেরে কী, আর স্বাধীনতা পাওয়া যাবে এমন প্রশ্ন জাগে অনেক বিপ্লবীর মনে। বিপ্লবীদের প্রধান উদ্দেশ‍্য ছিল যেকোন ভাবে ব্রিটিশদের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিতে বাধ‍্য করা।

সেই সময়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে যুবসমাজের চোখ সরিয়ে আনতে ইংরেজরা নিয়ে এলো ফুটবল। ইংরেজরা আয়োজন করল IFA শিল্ড ফুটবল টুর্নামেন্ট। নামকরা ব্রিটিশ ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে একমাএ দেশী ক্লাব হিসেবে ঐ টুর্নামেন্টে অংশ নেয় কলকাতার ক্লাব মোহনবাগান। পায়ে জুতা নেই, খেলার সরঞ্জাম নেই তবুও ব্রিটিশ শক্তিশালী দলগুলো রেঞ্জার্স, সেন্ট জেভিয়ার্স, মিডেলসেক্সকে পরাজিত করে মোহনবাগান চলে গেল IFA শিল্ড এর ফাইনালে। ফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারতীয় ক্লাব মোহনবাগান এবং ব্রিটিশদের ক্লাব ইস্ট ইয়র্কশায়ার। সেই ম‍্যাচ দেখতে পূর্বাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ একএিত হয় মাঠে। ঢাকা, বরিশাল,যশোর, ময়মনসিংহ, বর্ধমান, মেদিনীপুর আরও দূর দূরান্ত থেকে মাঠে উপস্থিত হয় দর্শক। কারণ ইংরেজদের কাছে সেটা সামান্য ফুটবল ম‍্যাচ হলেও বাঙালিদের কাছে ছিল একটা সংগ্রাম। ফুটবল মাঠ ছিল রনক্ষেএ। বিশেষ করে শাসক ব্রিটিশদের ফুটবল মাঠে লাথি মারছে বাংলার ছেলেরা, সেটা দেখে বড়ই আনন্দ পেত ভারতীয়'রা।।


received_273713768384247.jpeg


তবে ফাইনালের দিন একজন ব্রিটিশ প্রমাণ করেছিলেন খেলার মধ্যে কখনো জাতি ধর্ম বর্ণ টানতে হয় না।তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ম‍্যাচ রেফারি পুলার। তিনি সততার সঙ্গে ম‍্যাচটি পরিচালনা করেন। মোহনবাগান দলের ক‍্যাপ্টেন ছিল সিবদাস ভাদুরী। শুরু হয় ফাইনাল ম‍্যাচ। প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রিটিশ দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ক‍্যাপ্টেন সিবদাস এর গোলে সমতায় ফেরে মোহনবাগান। এবং ম‍্যাচ শেষ হওয়ার আগে অভিলাষ ঘোষ আরেকটা গোল করে মোহনবাগানকে IFA শিল্ড এর শিরোপা জেতায়। ম‍্যাচ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিরা আনন্দে ফেটে পড়ে মাঠের চারিদিকে। মাঠে উপস্থিত সব দর্শক "বন্দে মাতারাম" হুংকার দিয়ে উঠে। মাঠে বাঙালিদের সেই উচ্ছাস প্রতিবাদ দেখে ইংরেজরা বুঝে যায় এখানে আর থাকা যাবে না। ইংরেজ'রা বুঝে গেল যে বাঙালি একবার জয়ের স্বাদ পেয়ে গেছে তাদের আর দমিয়ে রাখা যাবে না। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ইংরেজরা বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করলো। এবং সেই সঙ্গে রাজধানী কলকাতা থেকে সূদুর দিল্লিতে সরিয়ে নিতে বাধ‍্য হলো।

তবে ইতিহাস সেদিনের ঐ ফুটবল ম‍্যাচকে স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু বাঙালিরা, ভারতীয়রা ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম জয় পাই ঐ ফুটবল ম‍্যাচ এর মাধ‍্যমেই। তার আগেও সিপাহী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই। তবে সেদিনের সেই ফুটবল ম‍্যাচ ইংরেজদেরকে জানান দিয়েছিল বাঙালির লড়াই করার ক্ষমতা সম্পর্কে। স্বদেশী আন্দোলন বা বোম নিক্ষেপ করে বড়রাট মেরে যে কাজ হয়নি ঐ ফুটবলের মাধ্যমে সেটা সম্ভব হয়েছিল। তাই বলাই যায় ফুটবল বাঙালির স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেদিন ফুটবল কোন খেলা ছিল না, ফুটবল ছিল সিবদাস, অভিলাষদের প্রতিবাদের ভাষা। যেখানে ফুটবলই স্বাধীনতার কথা বলে দেয়। সেই থেকে বাঙালির হৃদয়ে গেঁথে গেছে ফুটবল। খেলা তো অনেক আছে কিন্তু ফুটবল টা সারাজীবন বাঙালির হৃদয়েই থাকবে। সেজন্যেই হয়তো উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে তার গানে বলে গেছেন "সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল"।




সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG_20230518_131529.JPG

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png



Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58589.32
ETH 2636.10
USDT 1.00
SBD 2.45