সেই ঝড়ের রাত - ( শেষ পর্ব)।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
রাস্তায় আসার পরে দেখি প্রত্যেকটা স্ট্রিটলাইট বন্ধ। রাস্তায় কোন গাড়ি তো দূরের কথা একটা কুকুর পযর্ন্ত নেই। চারিদিক একেবারে শব্দহীন নিশ্চুপ। মনে হচ্ছে এই শহরের বুক থেকে মানুষ যেন একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। ভাবলাম হয়তো হাইওয়ে তে গিয়ে কোন গাড়ি অবশ্যই পাব। কিন্তু না সে গুড়ে যেন বালি। কোন গাড়ি নেই। কী আর করার ফোনের টচ অন করে হাঁটা শুরু করলাম। আর যাইহোক এখানে দাঁড়িয়ে তো থাকা যাবে না। এখান থেকে আমার বাড়ি প্রায় ১৬-১৭ কিলোমিটার। কিছুদূর হেঁটে যেতেই আমার ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল কারণ চার্জ নেই। চারিদিকে ধুধু অন্ধকার। একটা পা ফেলতে গেলেও হিসেব করে ফেলতে হচ্ছে আমাকে। না জানি কী বিপদ অপেক্ষা করছে। মোটামুটি আরও মিনিট বিশ হাঁটলাম।
এরপর আমি যা দেখলাম সেটা যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ যেন আমাবস্যায় চাঁদের উদয়। হঠাৎ একটা আলো একটু খেয়াল করে দেখতেই দেখি একটা মালবাহী ট্রাক। সম্ভবত সবজি দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। কোন উপায় নেই। যেভাবে হোক এটাকে থামাতেই হবে। হাত দেখিয়ে কোনরকম থামালাম। প্রথম দিকে ট্রাকচালক এবং তার সহকারী আমাকে নিতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। পরবর্তীতে সবকিছু বুঝিয়ে বলার পরে রাজি হলো তারা। উঠে বসলাম তাদের পাশে ট্রাকের সামনে। এই ঝড় বাদলের রাতে কোথাও গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ে আছে তার ঠিক নেই। এইজন্য অবশ্য উনি খুবই আস্তে চালাচ্ছিল। ব্যাপার টা আমার বেশ ভালো লেগেছিল। কিন্তু কথা আছে না অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়।
কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ একটা বিকট শব্দ এবং তারপর ট্রাকটা থেমে গেল। আমাদের তিনজনের চোখে মুখে তখন আতঙ্ক যে কী হলো। উনারা নেমে দেখলেন ট্রাকের সামনের একটা চাকা গেছে। এটা স্বাভাবিক হতেই পারে। কিন্তু তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো যখন উনারা বলল উনাদের কাছে কোন অতিরিক্ত চাকা এখন নেই। সুতরাং সকাল পযর্ন্ত এখানে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু আমি তো এখানে অপেক্ষা করতে পারব না। অগত্যা কোন উপায় না দেখে আবার হাঁটা শুরু করলাম। তখনও প্রায় বাড়ি থেকে আমি ৬-৭ কিলোমিটার দূরে। যদি কাছে আলো থাকত তাহলে এই দূরত্ব জোরে হেঁটে যেতে সময় লাগত দেড় ঘন্টা মতো। কিন্তু কাছে কোন আলো নেই। আবার শুরু করলাম হাঁটা যতটা পারা যায় এগিয়ে যায়। এদিকে রাত তখন মোটামুটি আড়াই টা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।
ঐসময় অনেক কিছু মনে আসছিল। যদিও আমি ঐসবে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আধার রাত কোন আলো নেই কাছে মনে হচ্ছিল আমার পেছনে কেউ আছে। একেবারে আমার থেকে ঠিক হাত খানেক দূরে কেউ আমাকে অনূসরণ করে হাঁটছে। শরীরের মধ্যে একটা ভয় একটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়ে গেল মূহূর্তের মধ্যে। অবশেষে কোন উপায় না দেখে আরও জোরে হাঁটা শুরু করলাম। তবে ঐটা সত্যি আমার মনের ভুল ছিল। ঐরকম নিঃশব্দ অন্ধকার রাতে ঐভাবে একা হাঁটতে এমন কিছু মনে হওয়া স্বাভাবিক। শেষমেশ যখন নিজের এলাকায় আসলাম একটা নিশ্বাস ছাড়লাম। মনে হচ্ছিল আমি যেন হাজার বছর হেঁটে বাড়ি ফিরলাম। কী একটা দুঃসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়েছিলাম আমি এখনও সেটা মনে হলে শরীর কেঁপে উঠে। তবে জীবনে এমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
রাত আড়াই টা অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর, এমন গভীর রাতে যদি এরকমটা মনে হয় যে, কেউ পিছনে অনুসরণ করে হাঁটছে তাহলে তো ভিতরে আতঙ্ক চলে আসাটাই স্বাভাবিক ভাই। তবে এই ব্যাপারগুলো অধিকাংশ সময়ই মনের ভুলের কারণে হয় । এই ধরনের একটা ঘটনা অনেক আগে আমার সাথেও ঘটেছিল, তবে পরে বুঝতে পেরেছিলাম সবকিছুই মনের ভুল ছিল।