এক চরিত্রে দুই রূপ। সুন্দর সৃষ্টিতে যখন কুৎসিত রূপ বাসা বাঁধে।
♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমি @bristy1, আমার বাংলা ব্লগ এর একজন সদস্য। আর আমার এই প্রিয় কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷সবার সুস্থতা কামনা করেই আজকের পোস্টটি শুরু করতে যাচ্ছি।
আজকের পোস্টের টাইটেল দেখেই আপনারা বুঝতে পেরেছেন কি পোস্ট নিয়ে এসেছি। এই সপ্তাহে আমি কন্টেস্ট এর পোস্টটি নিয়েই এসেছি।আমরা সবাই কিন্তু এই প্রতিযোগিতাটা নিয়ে অনেক বেশি ইন্টারেস্টেড।এর কারণ হলো যেমন খুশি তেমন সাজে কে কি সাজবে তাইনা। আমরা অনেকেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম কন্টেস্টে জয়েন করি এবং অনেক কিছুই উপস্থাপন করি। তবে এবার তো একদমই ভিন্ন কিছু করতে হয়েছে। কারণ নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে একদমই ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করার সুযোগ এসেছে।এবার একদম ছোট বেলায় ফিরে যাবো সবাই। মানে ছোটবেলায় যেমন স্কুলের অনুষ্ঠানে আমরা নিজেদেরকে বিভিন্ন রূপে সাজাতাম ঠিক তেমনি এবারও সেই সুযোগ এসেছে।
তবে এক্ষেত্রে আমি নিজেকে প্রেজেন্ট করেছি আমার বোনকে সাজিয়ে।ওকে আমি আমার এক ভাবনার রূপে সাজিয়েছি। ভাবনা বলতে বাস্তবিক রূপ যেটা আমরা সচরাচর চোখে দেখতে পারি না সেটাই ফুটিয়ে তুললাম।বাস্তব রূপ বলতে একটা বিষয় চিন্তা করুন তো,আমরা আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ দেখি যারা বাহ্যিক দিক থেকে অনেক সুন্দর কিন্তু তাদের মন নোংরা কুৎসিত। আমরা এটা তখনই দেখবো যখন আমরা মানুষের সাথে চলাফেরা করব বা তার সাথে মিশবো।তখন অবশ্যই আমরা তার ভেতরকার রূপ সম্পর্কে জানতে পারবো।আমাদের সমাজ কিন্তু এরকম বহুরূপী মানুষের দ্বারাই কলুষিত।
কারণটা একটু বিশ্লেষণ করেই দেখুন না।তবে মজার বিষয় হলো এটা যে আপনি যখন তার বিষয়টা খুঁতিয়ে দেখতে যাবেন তখন আপনি খারাপ হয়ে যাবেন। কারণ তার আসল রূপ আপনি জেনে গেছেন সেটা কিন্তু সে বুঝে গেছে।আর অন্য কেউ সেই জঘন্য রূপ দেখুক সেটা অবশ্যই সে চাইবে না।ঐ যে সেদিন দাদার পোস্টে লিখেছিল কৃতজ্ঞ,অকৃতজ্ঞ আর কৃতঘ্ন ব্যক্তির কথা।আসলে আমাদের সমাজে এখন অকৃতজ্ঞ আর কৃতঘ্ন ব্যক্তির সংখ্যাটাই বেশি।আর আজকের মূল থিম এটাই,যে একজন কুৎসিত মানুষের সুন্দর রূপের পিছনেও তার অসুন্দর আর কুৎসিত মন আছে।উপরে উপরে বা বাহ্যিকভাবে সে খুব ভালো সাজে কিন্তু মঅনের মধ্যে তার যত রকম সয়তানি কাজ করে।তাই আমার বোনের মাধ্যমে আমি এটা প্রেজেন্ট করেছি। তার একপাশ হলো অনেক সুন্দর,মনোরম আর ভালো। কিন্তু অপরপাশ হলো তার নোংরা মনমানসিকতা, তার ভেতরকার আসল রূপ, যেটা একটা পেত্নির মত,হাহাহা।
আমি কিন্তু কয়েকটা ধাপেই আমার ছবি শেয়ার করে নিয়েছি,সাজানোর সময়। কারণ একদিনের বহুরূপী মেক আপ আর্টিস্ট হয়েছি তাই না,হিহি।আপনারা আশা করি এইরকম মানুষদের ভালো করেই চিনেন। এরকম রূপ কিন্তু আমরা চোখে দেখি না,সেটাই দৃশ্যমান করলাম।যাইহোক অনেক কথা তো বলেই ফেললাম,এবার পোস্টটা শুরু করি।যদিও অনেকগুলো ধাপ হয়ে যাচ্ছিলো তাই পোস্টটা বেশি ধাপে করিনি,অল্পের মধ্যেই সবকিছু ফুটিয়ে তুললাম। তবুও যেন অনেক লং হয়ে গেল।তবে আপনাদের সময় নষ্ট করে পোস্টটা পড়ার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ জানাই।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ |
---|
- মেকআপ বক্স
- ময়েশ্চারাইজার
- ফাউন্ডেশন
- কাজল
- মাস্কারা
- কন্সিলার
- এলোভেরা জেল
- বিউটি স্পঞ্জ
- লিপ লাইনার
- লিপস্টিক
- মেকআপ ব্রাশ
- পাউডার
- গলার হার,চুড়ি
- শাড়ী
- ওড়না
- খড়কুটো
প্রথম ধাপ |
---|
প্রথমে ছোট বোনকে একটা শাড়ী পড়িয়ে দিলাম। যেহেতু একপাশ হবে সুন্দর হবে তাই শাড়ী আগে পরিয়ে নিলাম।ও,হ্যা আগেই কিন্তু মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপ |
---|
এইধাপে টোনার লাগালাম।শুকিয়ে এলে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিলাম।
তৃতীয় ধাপ |
---|
প্রাইমার ছিলনা বিধায় এলোভেরা জেল দিয়ে প্রাইমার এর কাজ চালিয়ে নিলাম,হিহি।যাইহোক একটুখানি এলোভেরা জেল নিয়ে মুখে লাগিয়ে শুকানোর পর্যন্ত ওয়েট করলাম।
চতুর্থ ধাপ |
---|
তারপর ফাউন্ডেশন আমার হাতে নিয়ে একটু মেখে ওর মুখে দিয়ে দিলাম।একটা ভেজা বিউটি স্পঞ্জ নিয়ে মুখের মধ্যে ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করে দিলাম।প্রথমদিকে একটু হোয়াঈট কাস্ট দিচ্ছে পরে আবার নরমাল হয়ে এসেছে।
পঞ্চম ধাপ |
---|
এবার কনসিলার নিলাম।চোখের উপরে,কপালে,নাকে আর অন্যান্য কিছু অংশে প্রথমে কনসিলার লাগালাম।তারপর আবার বিউটি স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করলাম। এক্ষেত্রে পাউডার দিয়ে মুখে ব্রাশ করে সেট করে নিলাম।
ষষ্ঠ ধাপ |
---|
এইধাপে আই-স্যাডোর কাজ করব।সেজন্য কাপড়ের সাথে মিলিয়ে গোল্ডেন,ব্রাউন আর ব্রাইট পিংক কালার দিয়ে চোখের উপরে লাগালাম।সাদা গ্লিটার চোখের উপরে দিয়ে দিলাম
এই যে আমি সাজিয়ে দিচ্ছিলাম। একদিনের মেক আপ আর্টিস্ট হয়ে গেলাম,হিহিহি।
সপ্তম ধাপ |
---|
এইধাপে কাজল আর মাশকারা লাগিয়ে দিলাম।এরপর মুখে ব্লাশ এবং হাইলাইটার লাগালাম।মোটামুটি এক পাশের ৭০% কাজ শেষ করলাম।
অষ্টম ধাপ |
---|
এখন অপরপাশের কাজ ধরলাম।এজন্য কাজল দিয়ে চোখের উপরে আর্ট করলাম।তারপর কালো রঙের আই-স্যাডো দিয়ে চোখের উপরে আই-ব্রু পর্যন্ত লাগালাম।
নবম ধাপ |
---|
এখন কাজল দিয়ে চোখের বাইরের কোনে হালকা ডিজাইন করে দিলাম।চোখের নিচের দিকেও কালো স্যাডো দিলাম।তারপর পূর্বের পাশে লাল রঙের লিপস্টিক লাগালাম,আর অন্যপাশে কালো রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে দিলাম।
দশম ধাপ |
---|
এখানে কাজল দিয়ে মুখের কয়েকটা অংশে রঙ করে দিলাম।তারপর ডার্ক স্যাডো হাতে নিয়ে মুখের মধ্যে ছোপ ছোপ দাগের মত করে লাগিয়ে দিলাম।
একাদশ ধাপ |
---|
বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ডার্ক স্যাডো দিয়ে আবার হাত দিয়ে সেগুলো মুখের মধ্যে সেট করে নিলাম।লাল লিপস্টিক এর মধ্যে আমি একটা গ্লোস লাগিয়ে দিলাম।
দ্বাদশ ধাপ |
---|
পূর্বের অংশে মাথার চুল আচড়ে দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে নিলাম। তারপর প্লাস্টিকের গাজরা নিয়ে চুলের মাঝে সেট করে দিলাম।
ত্রয়োদশ ধাপ |
---|
অন্যপাশের চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিলাম। পাউডার দিয়ে সাদা এফেক্ট দিলাম।কিছু খড়কুটো দিয়ে চুল সেট করলাম।
উপস্থাপন |
---|
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। সবার জন্য আন্তরিক ভালোবাসা রইল। সম্পূর্ণ পোস্টে আমার ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। |
---|
♥️আল্লাহ হাফেজ♥️ |
---|
আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আসলেই কিছু কিছু মানুষকে উপর দিয়ে দেখে মনে হয় যে,খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে শয়তানের হাড্ডি, সেটা আমরা বাহির থেকে দেখে বুঝতে পারি না। দাদার সেই পোস্টটি পড়েছিলাম আমি। আসলেই বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ অকৃতজ্ঞ এবং কৃতঘ্ন। যাইহোক আপনি আপনার বোনকে চমৎকার ভাবে সাজিয়ে ভালো এবং খারাপ, দুটি রূপের ই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আপনি কিন্তু সেই লেভেলের মেকাপ আর্টিস্ট। যাইহোক এতো চমৎকার ভাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ওয়াও চমৎকার একটি আইডিয়া ছিল আপু।সুন্দর এবং কুৎসিৎ দুই রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন সাজের মাঝে।আইডিয়া টা জাস্ট দারুন ছিল।শুভকামনা রইল কনটেস্ট এর জন্য।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপু,আপনার মন্তব্য দেখে ভালো লাগলো।
আসলে এবারের প্রতিযোগিতার বিষয়টি একদমই ইউনিক ছিল। যাইহোক আপনার এই আইডিয়াটা অনেক সুন্দর হয়েছে এক চরিত্রে দুটি রূপ। আপনার বোন খুব সুন্দর ভাবেই ক্যারি করেছে।
"এক চরিত্রে দুই রূপ" এবারের প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে বেশ ইউনিক একটা বিষয় আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এবারের প্রতিযোগিতা নিয়ে আমরাও খুব এক্সাইটেড।আপনি একদিনের মেকআপ আর্টিস্ট হয়ে এক চরিত্রে দুটি রূপ খুব সুন্দর ভাবে বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপু।
আপনি একেবারে প্রফেশনাল আর্টিস্টদের মতই সাজিয়েছেন। আপনি দারুণভাবে সাজ ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেক সময় নিয়ে কাজ করছেন আপু।
আপনি হয়তো আমার এই কন্সেপ্টটা বুঝতেই পারেননি।আমরা কুৎসিত কিছু খোঁজার চেষ্টা না করলেও কুৎসিত মনের মানুষেরা কখনো না কখনো তাদের রূপ বিনা কারণেই প্রকাশ করে।সুন্দর কিছু আছে মানে সুন্দরের বিপরীতে কুৎসিতের অবস্থানও আছে আপু।টাইটেল দেখলেই কিন্তু বুঝে যাবেন আপু,আশা করি বুঝেছেন।
https://x.com/bristy110/status/1739176059902505028?s=20
প্রতিযোগিতার জন্য খুবই সুন্দর একটি বিষয় বাছাই করেছেন আপু।আমার খুবই ভালো লেগেছে। একজন মানুষ সুন্দর হলে আমরা ধরেই নেই মানুষটা অনেক ভালো হবে কিন্তু আসলে সেটি হয় না। যাই হোক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপু এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।সত্যিই এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা একদম ছোটবেলায় ফিরে যাবো। আপনি প্রতিযোগিতার জন্য খুব সুন্দর কনসেপ্ট বেছে নিয়েছেন। আপনার এই আইডিয়া আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ঠিক বলেছেন আপু আমাদের সমাজ এরকম বহুরূপী মানুষের দ্বারাই কলুষিত হচ্ছে। আপনার বোনকে খুব সুন্দর ভাবে বহুরূপী সাজে সজ্জিত করেছেন। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের উপর দিয়ে ভালো দেখা যায় কিন্তু যখন তাদের সাথে চলাফেরা করা হয় তখন বুঝা যায় তারা কতটা ভালো। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আপনার ছোট বোনকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আপনার ছোট বোনের সাজের সুন্দর সাইডটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। সাজটা একেবারে পারফেক্ট হয়েছে কিন্তু। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল।