"এসো নিজে করি" মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি।
বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম
আসসালামু আলাইকুম
শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি।
প্রিয়, আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম। আজ আমি আপনাদের, কৃষি বিষয় নিয়ে কথা বলবো। তা হলো কুমড়া কিভাবে আমি উৎপাদন করছি সেই সম্পর্কে বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।
আসুন শুরু করি
কুমড়া চাষাবাদ করতে আমার যেসব উপকরণ সমূহ প্রয়োজন হয়েছে তা হলো:-
১ - জমি
২ - বীজ
৩ -কোদাল
৪ -রাসায়নিক সার ( ইউরিয়া, টিএসপি,এমপি বা, পটাশ, ফসফেট সার।
৫ -জৈব সার ( গরুর গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, তরু তরকারী কাটার পর অবশিষ্ট অংশ, ছাই- লারকি জ্বালানোর পর অবশিষ্ট অংশ।
৬ -লাঠি (মাটির বড় অংশ ভাঙ্গার জন্য)।
৭-পানি
৮- বালতি এবং জগ ইত্যাদি।
আমি যেভাবে কুমড়া উৎপাদন করেছি তার বিবরণ :-
↘️ধাপ :- ১↙️
- প্রথমে আমি আমাদের ২ শতাংশ জমিতে কুমড়ার বীজ বপন করার জন্য কোদাল দিয়ে মাটি কেটে একটু উঁচু করে নিলাম । দুই ফুট গোলাকার করে মাটির স্তুপ তৈরি করি। মাটির স্তুপ কে আঞ্চলিক ভাষায় মুয়া বলে থাকে । আমি দশটি মুয়া তৈরি করে নিলাম। পরে মাটির যে অংশ গুলো বড় রয়েছে তা লাঠি দিয়ে ভেঙ্গে ছোট করে নিলাম।
↘️ধাপ :- ২↙️
- পরবর্তীতে আমি মুয়ার মধ্যে জৈব সার গরুর গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, তরু তরকারী কাটার পর অবশিষ্ট অংশ ছারি লারকি জ্বালানোর পর অবশিষ্ট অংশ মুয়ার মাটির সাথে মিশিয়ে দিলাম।
↘️ধাপ :- ৩↙️
- এখন আমি কুমড়ার মুয়াতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছি। আমি রাসায়নিক সার এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি,এমপি বা পটাশ, ফসফেট সার ইত্যাদি জমি প্রয়োগ করি। আমি সার গুলোকে পরিমাণ মতো একটি পাত্রে একসাথে রাখি । তারপর মিশ্রন করি এবং মুয়া গুলোতে সমানভাবে ছিটিয়ে প্রয়োগ করি।
↘️ধাপ :- ৪↙️
- এই পর্যায়ে আমি কুমড়া বীজগুলোকে ১২ ঘন্টা যাবত পানিতে ভিজিয়ে রাখি। অর্থাৎ সন্ধ্যা ছয়টা পানিতে রাখলাম এবং পরদিন সকাল ছয়টা পানি থেকে উঠিয়ে নিলাম। পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণ হলো তাড়াতাড়ি অঙ্কুরোদ্গম বের হওয়া। কারণ মাটি শুষ্ক থাকলে বীজের অঙ্কুরোদগম বের হতে অনেক দিন সময় লাগে। তারপর সকাল সাতটার দিকে মুয়াতে বীজ গুলো বপন করলাম। প্রতি মুয়াতে তিনটি করে বীজ বপন করেছি।
↘️ধাপ :- ৫↙️
- বীজ বপনের কিছুদিন পর কুমড়ার চারা উঠলো। আমার কাঙ্খিত কুমড়ার চারা গুলো উঠেছে দেখে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো।
↘️ধাপ :- ৬↙️
- ধীরে ধীরে আমার কুমড়া গাছ গুলো বড় হতে লাগল। জমিতে কুমড়ার চারা উঠার কিছুদিন পর মাটির আদ্রতা কমে গেছে। অর্থাৎ মাটি শুকিয়ে গেছে। তাই আমি মুয়াতে কয়দিন পরপর মোটর দিয়ে পানি দিয়েছি। নিয়মিত পানি দিলে ফসল ভালো হয়ে থাকে।
↘️ধাপ :- ৭↙️
- এখন আমি মুয়ার চারপাশের আগাছা পরিষ্কার এবং মুয়ার পরিচর্যা করছি। কুমড়া গাছ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।
↘️ধাপ :- ৮↙️
কুমড়ার গাছ দ্রুত বৃদ্ধি এবং ফলন ভালো হওয়ার জন্য আমি কুমড়া গাছে ফ্লোরা নাইট্রোবেনজিন ৫ লিটার পানির সাথে ১০মি.লি মিশিয়ে ভালো করে দশ দিন পর পর দুই বার স্প্রে করি। ফ্লোরা নাইট্রোবেনজিন ব্যবহারের ফলে গাছের শিকড় কান্ড পাতার খাদ্য সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। উদ্ভিদের ফুল এবং ফল এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফুল ঝরে পড়া রোধ হয়। অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন হয়।
↘️ধাপ :- ৯↙️
- কুমড়া ফুলে সমস্ত ক্ষেত ভরে গেলো। কুমড়া গাছে যখন ফুল আসলো তা দেখে আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।
↘️ধাপ :- ১০↙️
- গাছে কুমড়া ধরা আরাম্ভ করছে। গাছে কুমড়া ধরতেছে দেখে আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।
↘️সর্বশেষ ধাপ↙️
কুমড়া গুলো দিনে দিনে বড় হলো। আজ সকালে আমি নিজেদের রানার জন্য এবং কিছু আত্মীয় স্বজনদের দেওয়ার জন্য ক্ষেত থেকে কুমড়া সংগ্রহ করি। আমি নিজের হাতে কুমড়া তুলেছি বেশ ভালো লেগেছে আমার কাছে। নিজের জমিতে চাষকৃত কুমড়া তোলার অনুভূতি অন্যরকম মনে হচ্ছে। সত্যি মুহূর্তগুলোকে অসাধারণ ছিলো।
আজকের এই মুহুর্তের জন্য প্রায় দুই মাস বিশ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে আমায়। আজকে মনে হচ্ছে যেন এতদিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। কারণ আমি খুব দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে ছিলাম যে কুমড়া উৎপাদন ঠিকমতো হবে কি না। কারণ বিভিন্ন সময় দেখা যায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বা,চারা নষ্ট হয়ে গেলে ।ঠিকমতো ফসল উৎপাদন হয় না। তাই আমার কাছে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের দিনটি খুব অন্যরকম ছিল। সত্যিই আজকের দিনটা আমার কাছে খুব আনন্দের নিজের হাতে উৎপাদন করা ফসল সংগ্রহ করতে পেরে।
পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
পোস্ট বিবরণ :-
শ্রেণী | কৃষি (শাকসবজি উৎপাদন) |
---|---|
ক্যামেরা | realme C55 |
পোস্ট তৈরি | @ah-agim |
লোকেশন | ফেনী, বাংলাদেশ |
- অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।
আমার পরিচিতি
আমি আওলাদ হোসেন আজিম ।আর আমার ইউজার নাম @ah-agim আমি একজন বাংলাদেশী। মাতৃভাষা বাংলায় বলে - আমি খুব গর্বিত। আমার মনে ভাষা বাংলা এর প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সন্মানীত এডমিন মডারেটর সহ সকল সদস্যদের প্রতি আমার অফুরন্ত ভালোবাসা বিরাজমান। আমি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগে। তাছাড়া আমি বিভিন্ন ধরনের কাগজের ( কারুকাজ ) এবং বিভিন্ন রকমের রান্না ( রেসিপি ) করতে পছন্দ করি। আমি ফটোগ্রাফি করে থাকি। ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে অনেক অনেক বেশি ভালো লাগে।বিশেষ করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য সমূহ ফটোগ্রাফি করতে আমার কাছে ভালো লাগে।
আপনি আজকে খুবই চমৎকার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে। আসলে বর্তমান সময়ে নিজের বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে খাওয়া খুবই জরুরী। পুষ্টিগত দিক দিয়ে বলেন, আর বর্তমানে সবজির বাজারে দাম বেশি বলেই বলেন। আপনি মিষ্টি কুমড়ার চাষের পদ্ধতি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আর মিষ্টি কুমড়া গুলো কিন্তু ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। সব মিলে খুব চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
জি ভাই, বসতবাড়ির আঙ্গিনাই মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে বেশ ভালো হয়। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার এ ধরনের চাষ বিষয়ে পোস্টগুলো আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। আপনি একদম সবকিছু গুছিয়ে নিখুঁতভাবে বীজথেকে শুরু করে কিভাবে মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হল সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমাদের দেখালেন। এর সাথে সাথে কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয় এবং যত্নের বিষয়গুলো চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন। আর সবশেষে সুন্দর মিষ্টি কুমড়া গুলো দেখে মনটা ভরে গেল। অনেক ধন্যবাদ ভাই অসাধারণ একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
এত দুর্দান্ত মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আমার মনে হয় মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে হলে আপনার এই পোস্ট ভালোভাবে পড়া উচিত। কিভাবে মিষ্টি কুমড়ার রোপন করতে হয় কোন সময়ে পানি দিতে হয় আবার কোন সময় ঔষধ দিতে হয় সবকিছুই যেন আজকের এই পোস্টে তুলে ধরেছেন। আমাদেরকে কিছু মিষ্টি কুমড়া পাঠিয়ে দিয়েন আমরা খেয়ে আপনার জন্য দোয়া করব হা হা হা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
সত্যিই রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গেলাম যে আপনি এই একটা পোস্ট করার জন্য কতটা দিন অপেক্ষা করেছেন। এরকম ইউনিক ইউনিক বুদ্ধি দেখে সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগছে। আপনি খুবই চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি তুলে ধরেছেন আমরাও মিষ্টি কুমড়া চাষ করে থাকি। মিষ্টি কুমড়া চাষের এই পদ্ধতিটা আপনি আমাদের মাঝে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
আপনারা মিষ্টি কুমড়া চাষ করেন জেনে খুব ভালো লাগলো ভাই। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
বাহ!! ভালো লাগলো ভাই নিজ হাতে কুমড়ার বিচ জমি চাষ করে সার প্রয়োগ করে তারপর বিজ বপন ৷ আসলে এসব সবজি চাষ নিজের মতো করে চাষ করে খাওয়ার মজাই আলাদা ৷ ভালো লাগলো যে আপনার কষ্টের সুফল হয়েছে ৷
এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
https://twitter.com/MdAgim17/status/1766514074374852952?t=AiiA5Ir_itN3hUWvWq-ZJg&s=19
বেশ দারুণ একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এই পোস্টটি পড়ে আমার অনেক উপকার হলো কারণ গাছ লাগাতে আমার অনেক ভালো লাগে। অনেক কিছু শিখতে পারলাম আপনার পোস্টটি পড়ে। মিষ্টি কুমড়ো গুলো দেখতে যেমন সতেজ তেমনি খুব সুন্দর লাগছে। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া দারুন একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
বাড়ির আঙিনায় এভাবে যে কোন কিছু চাষ করতে বেশ আনন্দ পাওয়া যায়। বিশেষ করে যদি শাকসবজি হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই। আপনি মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন দেখে এটা অনেক ভালো লাগলো। মিষ্টি কুমড়া চাষের পদ্ধতিটি আমাদের মাঝে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শেয়ার করেছেন যা পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই পোস্ট টি পড়ে অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।