বাংলা ভাষার কিছু অপ্রচলিত শিশু ছড়া

in #writing6 months ago

4i88GgaV8qiFU89taP2MgKXzwntUGAvkoQiKU7VxyD37q967Kkz17yHJPJSf2Kve3E1yXtgCsGpo7VXeKrpw5fBsDRGDTRxgBsqNk978KLBKU3FZGFeXL9oxEi.jpg
দিন যায়, যুগ পাল্টায় । যুগের সাথে সাথে কত কিছুই যে হারিয়ে যায়, কত কিছুরই যে পরিবর্তন হয় তা একটু ভালো করে নিরীক্ষণ করলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় । বেশি দিন নয়, আমাদের ছোটবেলাতে মায়ের মুখে, দিদিমা-ঠাকুমার মুখে যেসব ছড়া শুনে বড় হয়েছি সেগুলোর অনেকই এখন বিলুপ্তির পথে । আবার কিছু কিছু ছড়া এখন টিকে রয়েছে কিন্তু, তার কিছু কিছু শব্দ, কিছু কিছু বাক্য পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে । এই পরিবর্তন কিন্তু, শুধুমাত্র এই যুগে সাধিত হয়নি, এই পরিবর্তন বহু যুগ ধরেই হয়ে আসছে । ভাষা একটা নিয়ত পরিবর্তনশীল । বাংলা ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয় । যুগে যুগে বাংলা ভাষার সমূহ পরিবর্তন সাধিত হয়ে আসছে । আগেকার বাংলা বানান রীতি, শব্দের গঠন এগুলো যেমন পরিবর্তিত হয়েছে ঠিক তেমনি বাক্য গঠনেও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে । আর তার প্রভাব পড়েছে বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন পুস্তকে । ফলশ্রুতিতে বাংলা ছড়াতেও এইসব পরিবর্তনের ছায়া লক্ষ্য করা গিয়েছে ।

একটা সময়ে গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে যেসব শিশু ভুলানো ছড়া মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল সেগুলোই পরে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হয় । প্রথমদিকে গ্রন্থকার এই সব লোকজ গ্রামীণ বাংলার শিশুদের ছড়াতে ব্যবহৃত ভাষার গাঁথুনি, শব্দের গঠন এবং মূল শব্দের ব্যবহার সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখেছিলেন । কিন্তু, কাল ক্রমে ভাষার নিয়ত পরিবর্তনশীলতার স্রোতে গা ভাসিয়েছেন পরবর্তী গ্রন্থকারেরা । তাঁরা এই সব লোকজ শিশু ছড়াতে ভাষার আমূল পরিবর্তন এনেছেন । অনেকাংশে ছড়ার শব্দ, বাক্য এমনকি ছন্দ পর্যন্ত পরিবর্তন করেছেন । এটাই নিয়ম, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বহু গ্রামীণ লোকজ ছড়া একদমই বাদ পড়ে গিয়েছে । আবার বহু পুরোনো লোকজ ছড়ার সামান্য কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়ে এখনো সেগুলো প্রচলিত রয়েছে এবং এই যুগেও সেই সব প্রাচীন ছড়া এখনও সমান ভাবে জনপ্রিয় ।

এই যেমন ধরুন "হাট্টিমা টীম টীম" ছড়াটি । এই ছড়াটির উৎপত্তি সাল অজানা । এটি একটি সুপ্রাচীন লোকজ ছড়া, যেটি এক সময় শুধুমাত্র মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল । সর্বপ্রথম ১৮৯৯ সালে যোগীন্দ্রনাথ সরকার তাঁর "খুকুমণির ছড়া" বইটির ১৩ নম্বর সংস্করণে "হাট্টিমা টীম টীম" ছড়াটি লিপিবদ্ধ করেন ।

বহু গবেষণা করে এই ছড়াটি'র হাট্টিমা টীম টীম কি শ্রেণীর জীব সে বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে । অবশ্য আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি হাট্টিমা এক ধরণের পাখি, কারণ সত্যিই হাট্টিমা নামে একপ্রকার পাখি আছে বাস্তবে । কিন্তু ছড়ার হাট্টিমা আসলে কোনো পাখি নয় । এটি "হাঁটি হাঁটি টিম টিম" বুঝিয়েছে যেটা মুখে মুখে বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে । গ্রাম বাংলার মাঠে একপ্রকার বড় বড় শামুক পাওয়া যেত, যেগুলোর মাথায় লম্বা লম্বা শিঙের মতো শুঁড় ছিল । হাঁটতো হাঁটতো টিম টিম করে, অর্থাৎ খুব ধীরগতিতে । আর মাঠের ঘাসে বা খড়ের গোড়ায় এক গাদা করে সাদা সাদা ডিম পাড়তো । এটাই হলো মূল ছড়ার প্রতিপাদ্য বিষয় । যদিও আমরা সবাই হাট্টিমা-কে পাখি হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করি যার মাথায় খাঁড়া খাঁড়া শিং আছে আর যাঁরা মাঠে ডিম পাড়তে ভালোবাসে ।
7b4bio5hobgskW8qdPdvSqcwwJTvbiCMpGmRey1Rtd8H5r3cpVAHKdXLULPN8Q9VzxyfWqTWNJKwSAk99n9cQVVy8joojFHRWGVRYvgZfdKZZhM8Fyfru39Np4EwsoCf9zvEBKVzKzU1vkAdffGkitszLSyk.png
দিন যায়, যুগ পাল্টায় । যুগের সাথে সাথে কত কিছুই যে হারিয়ে যায়, কত কিছুরই যে পরিবর্তন হয় তা একটু ভালো করে নিরীক্ষণ করলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় । বেশি দিন নয়, আমাদের ছোটবেলাতে মায়ের মুখে, দিদিমা-ঠাকুমার মুখে যেসব ছড়া শুনে বড় হয়েছি সেগুলোর অনেকই এখন বিলুপ্তির পথে । আবার কিছু কিছু ছড়া এখন টিকে রয়েছে কিন্তু, তার কিছু কিছু শব্দ, কিছু কিছু বাক্য পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে । এই পরিবর্তন কিন্তু, শুধুমাত্র এই যুগে সাধিত হয়নি, এই পরিবর্তন বহু যুগ ধরেই হয়ে আসছে । ভাষা একটা নিয়ত পরিবর্তনশীল । বাংলা ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয় । যুগে যুগে বাংলা ভাষার সমূহ পরিবর্তন সাধিত হয়ে আসছে । আগেকার বাংলা বানান রীতি, শব্দের গঠন এগুলো যেমন পরিবর্তিত হয়েছে ঠিক তেমনি বাক্য গঠনেও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে । আর তার প্রভাব পড়েছে বাংলা ভাষায় রচিত বিভিন্ন পুস্তকে । ফলশ্রুতিতে বাংলা ছড়াতেও এইসব পরিবর্তনের ছায়া লক্ষ্য করা গিয়েছে ।

একটা সময়ে গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে যেসব শিশু ভুলানো ছড়া মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল সেগুলোই পরে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হয় । প্রথমদিকে গ্রন্থকার এই সব লোকজ গ্রামীণ বাংলার শিশুদের ছড়াতে ব্যবহৃত ভাষার গাঁথুনি, শব্দের গঠন এবং মূল শব্দের ব্যবহার সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখেছিলেন । কিন্তু, কাল ক্রমে ভাষার নিয়ত পরিবর্তনশীলতার স্রোতে গা ভাসিয়েছেন পরবর্তী গ্রন্থকারেরা । তাঁরা এই সব লোকজ শিশু ছড়াতে ভাষার আমূল পরিবর্তন এনেছেন । অনেকাংশে ছড়ার শব্দ, বাক্য এমনকি ছন্দ পর্যন্ত পরিবর্তন করেছেন । এটাই নিয়ম, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে বহু গ্রামীণ লোকজ ছড়া একদমই বাদ পড়ে গিয়েছে । আবার বহু পুরোনো লোকজ ছড়ার সামান্য কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়ে এখনো সেগুলো প্রচলিত রয়েছে এবং এই যুগেও সেই সব প্রাচীন ছড়া এখনও সমান ভাবে জনপ্রিয় ।

এই যেমন ধরুন "হাট্টিমা টীম টীম" ছড়াটি । এই ছড়াটির উৎপত্তি সাল অজানা । এটি একটি সুপ্রাচীন লোকজ ছড়া, যেটি এক সময় শুধুমাত্র মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল । সর্বপ্রথম ১৮৯৯ সালে যোগীন্দ্রনাথ সরকার তাঁর "খুকুমণির ছড়া" বইটির ১৩ নম্বর সংস্করণে "হাট্টিমা টীম টীম" ছড়াটি লিপিবদ্ধ করেন ।

বহু গবেষণা করে এই ছড়াটি'র হাট্টিমা টীম টীম কি শ্রেণীর জীব সে বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে । অবশ্য আমরা ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি হাট্টিমা এক ধরণের পাখি, কারণ সত্যিই হাট্টিমা নামে একপ্রকার পাখি আছে বাস্তবে । কিন্তু ছড়ার হাট্টিমা আসলে কোনো পাখি নয় । এটি "হাঁটি হাঁটি টিম টিম" বুঝিয়েছে যেটা মুখে মুখে বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে । গ্রাম বাংলার মাঠে একপ্রকার বড় বড় শামুক পাওয়া যেত, যেগুলোর মাথায় লম্বা লম্বা শিঙের মতো শুঁড় ছিল । হাঁটতো হাঁটতো টিম টিম করে, অর্থাৎ খুব ধীরগতিতে । আর মাঠের ঘাসে বা খড়ের গোড়ায় এক গাদা করে সাদা সাদা ডিম পাড়তো । এটাই হলো মূল ছড়ার প্রতিপাদ্য বিষয় । যদিও আমরা সবাই হাট্টিমা-কে পাখি হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করি যার মাথায় খাঁড়া খাঁড়া শিং আছে আর যাঁরা মাঠে ডিম পাড়তে ভালোবাসে ।