অশরীরী

IMG_20230406_174233.jpg

অশরীরী
joydip727 (25)in #golpo • 18 hours ago
অশরীরী

IMG_20230406_174233.jpg

“স্যার এই নিন চাবি” সুব্রত চাবির গোছা এগিয়ে দিলো। চাবি নিয়ে রাজশেখর বললেন “তুমি ছাড়া এই বাড়িতে আর কে কে আছে কাজ করা দেখাশোনা করার জন্য?”

“আমিই আপাতত কেয়ারটেকারের ভূমিকা পালন করছি। চম্পা আর গৌর এই বাড়ি ঝেড়ে পুঁছে গুছিয়ে রাখে। যারা পিকনিকের জন্য আসে চম্পা তাদের রান্নাবান্নাও করে দেয়। তবে রাতে কেউ থাকে না তো আমরাও কেউ রাতে থাকি না। সন্ধ্যের মধ্যে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে যাই। আমাদের বাড়ি অবশ্য খুব দূরে নয়। এই বাড়ির বাউন্ডারির ঠিক বাইরেই কিছু ঘর আছে সেখানেই থাকি। আসলে বাড়ির যিনি প্রথম মালিক ছিলেন তিনি এই ব্যবস্থাই করেছিলেন”

“ঠিক আছে। তোমাকে ডাকলে যাতে পাওয়া যায় তার কি কোন ব্যবস্থা আছে?”

“হ্যাঁ আছে স্যার। যে ঘরে আপনারা শোবেন সেই ঘরে একটা দড়ি ঝুলতে দেখবেন। সেটা টানলে আমার ঘরের ঘণ্টাটা বেজে উঠবে, আমি জানতে পারবো আপনারা ডাকছেন”

“তুমি তো আমাকে সেই আদ্যিকালের গল্প শোনাচ্ছ। তোমার মোবাইল নেই যাতে ফোন করলে তুমি জানতে পারবে?”

“হ্যাঁ আছে স্যার। তবে বুঝতেই তো পারছেন গ্রামাঞ্চল তো সন্ধ্যার পর ভালোভাবে টাওয়ার কানেকশন পাওয়া যায় না”

“ওঃ ঠিক আছে। তা তুমি কি এখনি চলে যাবে?”

“তা কেন স্যার। আপনারা রাতে কি খাবেন সেটা বলে দিলে চম্পাকে দিয়ে বানিয়ে ঘণ্টাখানেক পরে এসে পৌঁছে দিয়ে যাবো”

রাজ ওর বন্ধু অনিমেষের দিকে তাকিয়ে বললেন “কি হে রাতে কি খাবে? এরকম ব্যাপার জানলে খাবার কিনেই নিয়ে আসতাম আসার পথে”

অনি বললেন “আরে অত চিন্তা কীসের। ও তো বলছে রান্না করিয়ে দিয়ে যাবে”

“তাহলে বলো কি খাবে?”

“বেশি আর কি লুচি আর পাঁঠার কষা মাংস, আর একটু গা গরম করার পানীয়” তারপর সুব্রতর দিকে তাকিয়ে বলল “কি হে হবে তো?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ। আমিই নিয়ে আসবো”

“ঠিক আছে তাহলে এসো। আমরা একটু ঘুরে দেখি বাড়িটা কেমন। আর যে ঘরে শোব তা কেমন সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছো তোমরা”

সুব্রত চলে যাওয়ার পর রাজ আর অনি নীচের ড্রয়িংরুম থেকে পায়ে পায়ে উঠে আসে দোতলায়। পুরনোদিনের জমিদারদের বাড়ি গঙ্গার পাড়ে। এক কালে নাকি জমিদাররা এখানে থাকতো তারপর কোন এক পুরুষ শহরের দিকে বাড়ি করে ওখানে সপরিবারে চলে যান। তারপর থেকে বাড়িটা পড়ে ছিল। কয়েক পুরুষ পর এক ছেলে যে বর্তমানে বাড়ির মালিক বাড়িটা ভাড়া দিচ্ছেন পিকনিক করার জন্য। এতো বড় বাড়ি দেখাশোনা করে রাখার খরচ প্রচুর। বাড়ি ভাড়া দিলে কিছু টাকা তো উঠে আসে। তাই এই ব্যবস্থা।

বাড়ির ভেতরে পা দেওয়ার পর ওদের দুজনেরই মনে হচ্ছিলো যেন সত্যি জমিদার আমলে এসে উপস্থিত হয়েছেন। ওদের ঘরে এসে উপস্থিত হলেন ওরা দুজনে। বেশ উঁচু রাজকীয় খাটে শুভ্র সফেন বিছানা পাতা। তার সাথে বালিশ কোলবালিশ, সব আছে। ঝাড়বাতিটা জ্বলছে, এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাখার সুইচ দিতে পাখা বেশ জোরে ঘুরতে শুরু করলো। ওরা ঘরের লাগোয়া বাথরুমে এক এক করে ফ্রেশ হয়ে এলেন। রাজ দোতলার লাগোয়া বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর হাত দিয়ে দরজার ছিটকিনি খুললেন। কিন্তু দরজা খুলল না। বেশ চাপ দিতে হল ওটাকে ঠেলে খুলতে। অবশ্য দরজা খুলে যেতেই এক ঝলক ঠাণ্ডা হাওয়া এলো ঘরে। ততক্ষণে বাথরুম থেকে অনিও বেরিয়ে এসেছেন। বললেন “রাজ তোমার জন্য একদিনের জন্য নিজেকে জমিদার বাড়ির সদস্য মনে হচ্ছে”

রাজ হাসলেন “তবেই বল, তুমি তো ভাই আসতেই চাইছিলে না”

“তখন কি আর বুঝেছি এতো সুখ কপালে নাচছে”

হঠাৎ দরজায় এসে উপস্থিত হল সুব্রত। বলল “স্যার আপনাদের খাবার নিয়ে এসেছি। নীচে ডাইনিঙে খাবেন না এখানে দিয়ে যাবো”

“নীচেই চলো, বিছানায় বসে কি আর খাওয়া যায়?”

“চলুন” বলেই সুব্রতর চোখে পড়লো বারান্দার দিকে খোলা দরজার ওপরে, বলল “এটা কে খুলল?”

রাজ উত্তর দিলেন “আমি। ঘরের গরম হাওয়াটা বেরিয়ে যাবে”

সুব্রত আর কোন কথা ও বিষয়ে না তুলে বলল “তাহলে আসুন নীচে। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি”

নীচে ডাইনিঙে এসে ওদের চক্ষু ছানাবড়া। যা বিশাল এক ডাইনিং টেবিল পাতা মনে হয় একসাথে জনা তিরিশ লোক বসে খেতে পারবেন। তবে অত লোক এখন না খেলেও টেবিল কিন্তু আগের আমলের মতোই সাজানো। ওরা দুজন এসে মুখোমুখি বসতেই সুব্রত খুব সুন্দর করে সব সাজিয়ে দিলো। তারপর বসে বসে খাওয়া তদারকিও করলো। খাওয়া শেষ করে উঠতে ও বলল “আপনারা হাত ধুয়ে বসার ঘরে আসুন আপনাদের পানীয় ঢেলে দিচ্ছি”

দুজনে এসে বসতে সুব্রত পরিমাণ মতো সব মিলিয়ে গ্লাস এগিয়ে দিলো দুজনের দিকে। রাজ বললেন “অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। অনেক করেছ আমাদের জন্য। আর থাকতে হবে না। রাত তো অনেক হল এবার তুমি এসো। দরকার পড়লে তোমাকে পাবো তো?”

“হ্যাঁ স্যার পাবেন। আমি আসি তাহলে। শুভরাত্রি” সুব্রত চলে গেলো। ওরা একটু করে পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছেন আর গল্প করছেন। হঠাৎ অনি বললেন “বুঝলে রাজ সব ব্যবস্থা যখন করলে তখন জমিদারের নাচঘরের বাইজির ব্যবস্থাও করতে আরও আনন্দ পেতাম। কোনদিন তো সামনে থেকে ওসব দেখার সুযোগ ঘটলো না”

“হুম এটা বেড়ে বলেছ কিন্তু আগে বললে হত এখন আর কি হবে”

“সুব্রতকে বললেই হত”

“ও কি এতো তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা করতে পারতো, মনে হয় না”

“আহা ওই চম্পা না কে ও’ই আসতে পারতো আমাদের মনোরঞ্জন করতে”

এই গল্পের মাঝেই হঠাৎ ঘরের আলো নিভে গেলো। রাজ বললেন “যাহ্‌ লোডশেডিং! সুব্রত তো আগে বলেনি যে আলোও হঠাৎ হঠাৎ যেতে পারে। নাহলে ওকে দিয়ে দু তিনটে মোম আনিয়ে রাখতাম”

“হুম! এরকম বাড়িতে আলো চলে গেলে কেমন যেন অনুভূতি হয়”

“কি হে তোমার ভয় করছে নাকি?”

“ঠিক ভয় নয়”

“তুমি সেই আগের মতোই ভীতু রয়ে গেছ জানতাম না” কথার মাঝে কীসের যেন শব্দ হল ঘরের মধ্যে। অনিমেষ জিজ্ঞেস করলো “কীসের শব্দ ওটা?”

“কোথায় শব্দ?”

“তুমি শুনতে পাচ্ছ না? কিন্তু আমি যে পাচ্ছি ঘুঙুরের শব্দ”

“কোথায়?”

“ওই শোন” এবার রাজও শুনতে পেলেন। অন্ধকারের মধ্যে দুজনেই এদিকওদিক তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন শব্দের উৎস কোথায়। খানিক অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্ধকার যখন চোখে ষয়ে এলো তখন দুজনেই দেখতে পেলেন এক সাদা পোশাক পরা মহিলা সিঁড়ি বেয়ে নীচে আসছে। আর ওর নামার তালে তালে নুপুরের আওয়াজ উঠছে। দুজনেই চমকে উঠলেন। সুব্রত তো বলেছিল এ বাড়িতে কেউ থাকে না তাহলে এই মহিলা এলো কোথা থেকে। মহিলা এগিয়ে এলো কাছে। রাজ ভয়কে পাত্তা না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো “কে আপনি?” কিন্তু প্রশ্ন করতে করতেই টের পেলো ওর নিজেরই আওয়াজ অত চেষ্টার পরেও কেঁপে উঠলো। মহিলার হাসি শোনা গেলো। “সে কি তোমরা নর্তকীকে আহ্বান করলে আর এখন চিনতে পারছো না?”

“তোমাকে কে ডাকলো, আমরা তো ডাকিনি”

“ডেকেছ তো। তা কি নাচ দেখবে, কত্থক নাকি আধুনিক কিছু”

“তুমি যাও তোমায় আমরা ডাকিনি”

“এখন ডাকোনি কিন্তু তখন তো ডেকেছিলে আর আমি আমার শিশু সন্তানকে ছেড়ে আসতে চাইনি বলে জোর করে ধরে এনেছিলে। আর যাতে ভবিষ্যতেও একই সন্তানের দোহাই না দিতে পারি তাই ওকে মেরেই দিলে”

“কি সব বলছ আজগুবি, আমরা তোমাকে চিনিই না”

“চেনো চেনো। তোমাদের রক্তে আছে নারীদের নিয়ে ফুর্তি করা বদমায়েশি করা আর তোমাদের কথামতো না চললে তাদের পৃথিবী থেকেই হাপিস করে দেওয়া। সেই দুষিত রক্ত এখনো শরীরে বয়েই চলেছে তাই তো এতদিন পরেও এ বাড়িতে এসেই নর্তকীর কথা মনে পড়লো। সেবার ক্ষমতার অভাবে প্রতিশোধ নিতে পারিনি। এবার তো ছাড়া যায় না” বলেই দুটো হাত এগিয়ে গেলো দুজনের গলা লক্ষ্য করে। এতটাই আকস্মিক আর এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো সব কিছু যে ওরা পালানোরও সুযোগ পেলো না। সুব্রত সুব্রত করে আওয়াজ তুলতে চেষ্টা করেছিলেন রাজ কিন্তু গলায় স্বর ফুটলো না।

ওদিকে আঙ্গুলের চাপ বেড়ে চলল গলার ওপর। দুহাতে ধরেও ছাড়ানো গেলো না। অনি আর রাজ দুজনের কথাই আটকে গেলো। দুজনেই গোঁ গোঁ করতে লাগলো, কিন্তু গলার ওপর চেপে বসা হাত দুটোকে ছাড়াতে পারলো না। খানিক
IMG_20230406_174233.jpg
পরে দুজনেই গড়িয়ে পড়লো মাটিতে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58679.35
ETH 3155.04
USDT 1.00
SBD 2.44