শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ৩১
গল্পের বাকি অংশ সুরু করা যাক ......
.
ঘুমঘুম চোখেই ফোনটা হাতে নিল নিলয়। টুংটাং না করলে এখন ফোনের দিকে তাকানোরও কথা না। মায়ের কল। টুপ করে কেটে দিয়ে আবার চোখ বুঝল। কিছুক্ষণ বাদেই আবার কল। নিলয়ও ঘটাল—একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ঘুমে গলে পড়া কান একটু একটু করে যেন অনেক অনেক দূর থেকে ভেসে আসা কোনো সুর শুনছে। চোখ দুটো একটু খোলার ব্যর্থ চেষ্টা চালাল। এমন সময় মস্তিষ্ক বলল, “নাহ, এখনো তো কাছের মসজিদের কণ্ঠ কানে আসেনি। এই তো দু মিনিট...'হাত পালন করল মস্তিষ্কের কমান্ড। চাদরটায় নিজেকে ঢেকে স্বপ্নের ট্রেনে ছুট দিল মুখটা। আহা... অমন শান্তির, আরামের ঘুম যেন এ জন্মে ঘুমোয়নি নিলয়... যেন কেউ আয়েশ করে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। আহা... আহা... রোজকার ঘটনা।
For Photos I use:
Camera |
Iphone 12 Mini |
Lens |
Wide 26 mm-Equivalent |
Photographer |
@fxsajol |
Location |
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh |
Processing photos |
Outdoor |
কিছু নিয়ামত আছে যেগুলোকে মানুষ নামের প্রাণীগুলো একেবারেই গোনায় ধরে না। এই ‘পরিবার’ নামের নিয়ামতও তার মধ্যে অন্যতম। এ পৃথিবীর সব অবহেলা যেন এ মানুষগুলোরই প্রাপ্য। হোস্টেলে এসে একটু স্বাধীন হবে ভেবেছিল নিলয়। তা আর হলো কই। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন। ‘ফজরের সালাত পড়েছিস? দুপুরে খেয়েছিস? বেশি রাত জাগিস না যেন।' কলটা এলেই খুব বিরক্তি লাগে নিলয়ের। এত কল দেওয়ার কী আছে। মানুষ কী না খেয়ে বসে থাকবে নাকি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় খোঁজ নেওয়ারই বা কী আছে। হয়তো বন্ধুদের সাথে উত্তাল আড্ডায় মত্ত নিলয়। এমন সময় কল। সুযোগ পেয়ে বন্ধুরাও পচানিতে তলিয়ে দিল। ‘মাম্মিজ বয়।’ ‘ওরে খোকা।’ আরও কত কী!
হোস্টেলের জীবনটা বেশ উপভোগ করছে নিলয়। অসাধারণ ফুরফুরে একটা জীবন। কোনো চাপ নেই। বাবার বকা নেই। মায়ের শাসন নেই। বড় আপার বাড়াবাড়ি নেই। চারদিকে শুধু শান্তি আর শান্তি। ও হ্যাঁ, শান্তি থেকেই মনে পড়ল। ক্লাসের শান্তি নামের মেয়েটা ইদানীং আড় চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশ মজাই লাগে নিলয়ের। এক দৃষ্টিতে হোয়াইট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকা নিলয়ের নয়ন রঙিন সব স্বপ্ন বুনে
আর সন্ধ্যার পর চলে ফুচকা দোকানে গিটারের আড্ডা। এমনি একদিন আড্ডার মাঝে কল এল বড় আপার। বিরক্তি মুখে কল কেটে গিটারে মন দিল নিলয়। কেটে দিয়েও লাভ হলো না। ঝড়ের মতো কল আসতেই লাগল। নিলয়ও প্রতিবারই কলগুলো কেটে দিতে লাগল। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে দিল। ‘যার যা আছে তার তাতে কদর নেই।' পাশ থেকে বিশাল দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে দার্শনিক ভঙ্গিতে বলল তাহমিদ। এই ছেলেটা হুটহাট কী বলে কারও মাথায়ই ঢুকে না। অবশ্য কেউ তেমন পাত্তাও দেয় না। এবার যেহেতু নিলয়ের একেবারেই পাশে বসে কথাটা বলেছে, তাই হয়তো কথাটা নিলয়ের মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে। একটু পরপর পুনরাবৃত্তি হতে লাগল কথাটা
রাতের আড্ডা শেষে নিজের রুমে ফিরে ফোন হাতে নিল নিলয়। ৭২টা মিস কল। বড় আপার। বিরক্তি নিয়ে এবার কল ব্যাক করল। মনে মনে কী কী ঝাড়ি দিবে তাও ঠিক করে নিল। দ্বিতীয় বার কল দেওয়া হলো কেউ রিসিভ করেনি। মেজাজ আরও চড়ে গেছে এবার। এতক্ষণ জ্বালিয়ে মহারানি নিশ্চয় এখন ঘুমিয়ে পড়েছে। আর কলই দিবে না নিলয়। ধ্যাত! তাও মনের কোণে কে যেন ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, ‘আর একবার চেষ্টা করে দেখা' মনের কথা মনে রেখেই কল দিল আবার। এবার কলটা রিসিভ করা হলো। রাশভারী কণ্ঠের মধ্যবয়সি কোনো পুরুষ রিসিভ করেছে। নিলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিসিভ করেই অনর্গল বলে দিল, ‘এই ফোনের মালিক আজ সন্ধ্যায় রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে। লাশ থানায় আছে। এসে নিয়ে যান।' নিলয়ের মাথাটা যেন হঠাৎ বরফের মতো জমে গেল। ভেতরে কিছুই ঢুকছে না। পাথরের মূর্তির মতো বসে রইল নিলয়। আর মাথার ভেতরে পুনরাবৃত্তি হতে লাগল তাহমিদের বলা সেই কথাটার, ‘যার যা আছে তার তাতে কদর নেই।'
For Photos I use:
Camera |
Iphone 12 Mini |
Lens |
Wide 26 mm-Equivalent |
Photographer |
@fxsajol |
Location |
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh |
Processing photos |
Outdoor |
এই রাতও তো সে একই রাতগুলোর মতোই। বাইরে মৃদু মন্দ বাতাসের খেলা। শহুরে আলোর চিকমিকিতে ম্লান চেয়ে আছে আকাশের তারা। তবে এই রাতটা খুব খুব আলাদা। আর কখনই নিলয়ের ফোনের স্ক্রিনে বড় আপার নামটা ভাসবে না। এবার সত্যিই স্বাধীন নিলয়। আর নেই বড় আপার বাড়াবাড়ি।
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 9.18105494674339 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.