বাংলাদেশ পাট শিল্পের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তথ্যচিত্র ও সম্ভাবনাময়ঃ
প্রানের ফসল পাট। গুন, মান আর গুত্বের বিবেচনায় সোনালি আশ হিসেবে পরিচিত এই অর্থকরি ফসলটি। এই সোনালি আশ থেকেই বঙ্গিও ভদ্বিপকে সোনার বাংলা হিসেবে নামকরন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বে প্রতিবছর গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টন পাট উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টন পাট উৎপাদিত এই বাংলাদেশে। পাট রপ্তানিতে বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম এবং উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে। এককালিন সর্বোচ্চ বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনকারী এই অর্থকরি ফসলটি সময় বেদে এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্মরণ রাখতে হবে পাট খাত থেকে অর্জিত ১ ডলার রপ্তানিকৃত পোশাক খাতের ৪ ডলারের সমান। কেননা পাটের কাচামাল, উৎপাদন ও শ্রম দেশের ভিতরেই সম্পাদিত হয়। আর এই খাত থেকে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হতে কোন অর্থই বিদেশে প্রেরিত না হওয়াটাই পাটের প্রধান অর্জন। বহূমুখী ব্যবহার উপযোগী পাট শুধু এশিয়া মহাদেশে নয় ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশে পাট ও পাটজাত পন্য রপ্তানি হচ্ছে।
ইতিহাসে ১৫৭৫ সাল থেকেই এই দেশে পাটের ব্যবহার দেখা যায়। আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, মিশর, সিরিয়া হয়ে এখানে আসলেও বাংলাদেশই সর্বোতকৃষ্ট পাট উৎপাদনে গৌরব অর্জন করে। পাটের হাত ধরে ১৯৫০ সাল থেকে ১০৭০ সাল পর্যন্ত দেশে ৭৭টি জোট মিল গড়ে ওঠে। এই সময়টাকে পাটের স্বর্ন যোগ হিসেবে বিবেচনা করেন বিশেষজ্ঞ্ররা। স্বাধীনতার পর ১০৭২/১৯৭৩ অর্থবছরে কাচা পাট ও পাটজাত পন্য রপ্তানি করে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মূদ্রা আয় হয়। এই আয় সেই সময় বিশ্বের উৎপাদিত পাটের ৮০ ভাগ দেশে হত এবং পাটের আন্তর্জাতিক বাজারের ৬২ শতাংশ ছিল বাংলাদেশের দখলে। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত হঠাৎ করেই পাট শিল্পে হতাশার গল্পে আলো আবাস ছড়াতে শুরু করে। তবে কেন এই শিল্প ধংসের মুখে পরেছিল এবং তা কত ধরনের বিপদ এনেছে তা নিয়ে আজও চলছে গবেষনা ও বিশ্লেষন। পাট শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের যে প্রতিস্থানের ওপর ভরসা ও মুখাপেক্ষী হয়েছিল সবাই সেই বিজিএমসি(বাংলাদেশ জোট মিলস কর্পোরেশন) স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত একটি লোকসানী প্রতিস্থান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এতসব দাড়াবাহিক প্রাতিস্থানের ব্যর্থতার আড়ালে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সরকারের উদ্যোগ আবার এই শিল্পের অনেক শ্রমিককে আশায় ভোগ বাদতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ১ লক্ষের বেশি শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারি বেসরকারি প্রায় ১৫০শত পাটকলে এসময় যুক্ত থেকে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে সচেষ্ঠ আছে যা টিকে গেলে আসলে পাট শিল্পেরই ভাগ্য ফিরবে। লাখ শ্রমিকের এবং সরকারের সম্মিলিত আশাবাদের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বেশ কিছু ইতিবাচক ফল আলোচিত হলেও এখনও স্থায়ী সাফল্যের জায়গাটি নিচ্চিত করতে বহুদূর পদ পাড়িদিতে হবে বলে এই শিল্পবোদ্ধাদের পর্যবেক্ষন। পাট শিল্পকে উৎসাহিত করতে পাটের সাড়ি পরছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই শিল্পে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার ছোয়া লাগছে। তৈরি হচ্ছে জোট টি নামে পাটের চা শুরু হয়েছে রপ্তানিও। গত অর্থবছর ২০১৫/১৬ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫০৬১.৪৬ কোটি টাকা।২০১৪/১৫ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭৭৩.৭১ কোটি টাকা। ২০১৩/১৪ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫২২৪.২১ কোটি টাকা। ২০১২/১৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬১৬২.৬২ কোটি টাকা। ২০১১/১২ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৮১৪.১৪ কোটি টাকা। ২০১০/১১ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫১০৪.৫৭ কোটি টাকা। পাট শিল্প যেন সৃজনশীলতা বিকাশের এক নতুন দিগন্ত। পাট শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজন উন্নত মানের বিপুল পাটের উতপাদন। পাট থেকে সুক্ষ সুতা তৈরির ক্ষেত্রেও যথেষ্ঠ অগ্রগতি হয়েছে যা দেশে তৈরি পোশাক খাতকে যথেষ্ঠ সহায়তা করবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের। ক্রমবর্ধমান বৈশিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে পাট স্বস্থির জায়গা। বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমির পাটগাছ বায়ুমন্ডল থেকে ১২ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষন করে আর বাতাসে ১১ মেট্রিক টন অক্সিজেন সরবরাহ করে। প্ল্যাস্টিক ও সিন্থেথিক থেকে মুক্তি পেতে পাটই একমাত্র বিকল্প। উন্নত দেশগুলোতে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির এমনিই ইঙ্গিত বহন করে। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন দ্বিতীয়। বিশ্ব বাজারে এখনও কাচা পাটের প্রধান যোগান দাতা বাংলাদেশ। তবে পাটজাত পন্য রপ্তানিতে শীর্ষে গেছে ভারত। তবে হারানো গৌরভ ফিরে পেতে কঠিন নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ্ররা। তাদের মতে প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি প্রতিটি পর্যায়ে প্রত্যেকের দাড়াবাহিক নিঃঅলস, ঐক্রান্তিক প্রচেষ্ঠা।