তোমাদের জীবনের কারো ঘটনার সাথে মিল হতে পারে যদি তাই হয় তাহলে অাপনরা ঘটনাটি পড়ে দেখবেন।
ট্রেন এ উঠে জানালার পাশে সিট টা পেয়ে গিয়ে বসে পড়ে মোবাইল টা বের করে হেড ফোনটা কানে দিয়ে গান শুনছিলাম । আমার সামনের সীটে একজন লোক বসেছিলেন । দুপুরের সময় ট্রেন এ যাত্রী খুব কমই ছিল । হঠাৎ ট্রেন টিকিট চেক করতে আসতে দেখে লোকটি বেশ ভয় পেয়ে গেলেন । তাঁর ভাব দেখে আমি জিজ্ঞাস করলাম , টিকিট কি কাটা হয় নি আপানার ?
লোকটি খুব শান্ত স্বরে বললেন , ট্রেন স্টেশনে ঢুকে যাওয়ায় টিকিট কাটার সময় পাইনি । আর আমার কাছে ফাইন দেওয়ার মতো টাকাও নাই ।
আমি তাঁকে অভয় দিয়ে বললাম , চিন্তা করবেন না , ফাইন এর টাকা টা আমি দিয়ে দেব ।
আমার কথা টা শুনে দেখলাম তিনি খুব আনন্দিত হলেন ।
কিন্তু টিটি কে দেখলাম কোন কারন বশত আমাদের কাছে টিকিট চেক করতে না এসে শান্তিনগর স্টেশন নেমে পড়লো ।
যাই হোক আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম , কোথায় যাবেন ?
লোকটি একটু ভাবনায় যেন পড়ে গেলেন । তারপর বললেন হাওড়া যাব ভেবেছিলাম , কিন্তু এবার ভাবছি এলাহিপুর যাব ।
তাঁর কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম ।
তিনি বললেন , জানো বাবা , আমার নাম নকিব শেখ একটা কোম্পানিতে কাজ করতাম । দুই ছেলে আর এক মেয়ে রেখে আমার স্ত্রী মারা যায় । আর বিয়ে করি নি এই ভয়ে যে , সতীন মা এসে আমার বাচ্ছাদের উপর অত্যাচার করতে পারে । বাবা হয়েও আমি তাদের মায়ের মতো খুব আদর যত্ন দিয়ে বড় করেছিলাম । যা টাকা রোজগার করতাম ছেলে দুটোর পড়াশুনার পেছনেই খরচ করে ফেলতাম । বড় ছেলে এখন স্কুল মাস্টার আর ছোট ছেলে ইঞ্জিনিয়ার । মেয়েটাও আমার পড়াশুনায় অনেক ভাল ছিল । কিন্তু তিন জনের পড়ার খরচ চালাতে পারছিলাম না বলে মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলাম । বড় ছেলে দাঁতন এ থাকে আর ছোট ছেলে হাওড়া তে ।
আমি বললাম , তাহলে আপনি ছোট ছেলের কাছে যাবেন ?
কথা টা শুনে তিনি খুব করুন সুরে বললেন , দুই ছেলে বিবাহিত , তাদের ছেলে- মেয়ে নিয়ে থাকে । আমাকে তারা ভাগ করে নিয়েছে ।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ‘ ভাগ করে নিয়েছে মানে’ ?
মাসে ৩০দিন বড় ছেলে আর পরের মাসের ৩০দিন ছোট ছেলের বাড়ীতে থাকি, তারা ভাগ করে এই বৃদ্ধ বাবার প্রতি ছেলে হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে ।
ছোট ছেলের বাড়ীতে ছিলাম । শরীর টা খুব খারাপ ছিল , কিন্তু ৩০দিন হয়ে গিয়েছিল । বউমা কে বললাম একদিন পরে যাব । কিন্তু বউ মা শুনল না , চলে যেতে বলল বড় ছেলের বাড়ীতে, তা নাহলে আর খাবার মিলবে না । অসুস্থ শরীর নিয়েই আমি বড় ছেলের বাড়ীতে এসে দেখি দরজায় তালা মারা । তারা জানে আমি আসবো ,তবুও কোথাও বেড়াতে চলে গিয়েছে পরিবার নিয়ে । আসলে তারা কেউ এই অসুস্থ বুড়োটার দেখভাল করার দায়িত্ব নিতে চায় না ।
কথা গুলো বলতে বলতে নকিব শেখের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল ।
আমি তাঁকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন , ছেলে দুটোর পরিবর্তে মেয়েটা কে যদি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতাম তাহলে খুব ভালো হতো । মেয়ে বাঁকুড়াতে থাকে । জামাই এর একটা দোকান আছে । আর্থিক অবস্থা ভালো নয় । মেয়ে আমার অঙ্গনওয়ারীতে একটা কাজ করে । অনেক বার ডেকেছে , বাবা তুমি আমাদের বাড়ীতে এসে থাকো । ছেলে থাকতে মেয়ের বাড়ীতে গিয়ে থাকা সমাজ ভালো চোখে দেখে না । তবুও মেয়ের বাড়িতেই যাব ভাবছি । আমার কাছে ভালো খাওয়া দাওয়ার চেয়ে একটু ভালোবাসাই অনেক বেশি মুল্যবান । মেয়ের কাছে গিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইব প্রথমে ... তার ভাই দের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য তার পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়ে তার জীবনের স্বপ্ন গুলো ধ্বংস করে দিয়েছি । তখন ভাবতাম , মেয়েরা তো বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ী চলে যাবে । বুড়ো বয়সে দেখাশোনা তো ছেলেরাই করবে । তাই মেয়েকে আর পড়ালাম না । তার স্বপ্ন গুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলাম ।নকিব শেখ কথা গুলো শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিল , মনে মনে বললাম , ‘ বাবা মা এর দায়িত্ব ছেলে মেয়ে যতদিন না সমান ভাবে বহন করতে শিখবে ততদিন হয়তো সমাজে নিজেদের ছেলে- মেয়ের প্রতি বাবা মা এর ধারনা নকিব শেখের মতই থাকবে।অাপনাদের কাছে প্রথমে ক্ষমা চেয়েনিচ্ছি কারন নাম এবং স্থান এটি কাল্পনিক। তবে ঘটনাটি সত্য হতে পারে হয়তো বা কারো জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে।
অনেক ভালো লিখেছেন ভাই আপনি।
it is a big post on steemit. thank you my bro........................