নূরু স্যার ---- এক হ্যামিলিওনের বাঁশি ওয়ালা।
প্রথম পর্বঃ
আমার বর্নমালা শেখার কথাগুলো তেমন মনে পড়ে না। বাড়িতে কেউ শিখিয়েছেন কিনা তা আমার স্মৃতিতে অপরিস্কার। স্মৃতি হাতড়ালে শুধু একটি লোকের ছবি ও কন্ঠস্বর ভাসে। তিনি আমাদের প্রিয় নূরু স্যার। ভাল নাম সম্ভবত মোঃ নূরুল ইসলাম। আমরা তাকে এখনো নূরু স্যার নামেই চিনি। আমাদের শৈশবের আইডল, এক পুস্প সম্ভার দিয়ে সাজানো হৃদের মানুষ। যার হৃদয়ের খোলা মাঠে আমরা বিচরণ করতাম, খেলার ছলে পড়া করতাম।
আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই সময় নাবিস্কো কোম্পানির এক ধরনের চক্লেট ছিল, ৪ আনা করে দাম, আহ! যার স্বাদ এখনো জিবে লেগে আছে! তখন আমরা শিশু শ্রেণীতে পড়ি। পড়ি বললে ভুল হবে, স্কুলে যাই, খেলি আর মারামারি করি। আমাদের কোন এটেন্ডেন্স ছিল না, থাকবে কি করে? আমাদের কোন ক্লাস রুম ই ছিল না! মাঠ ই আমাদের ক্লাস রুম! আমাদের জন্য কোন এ্যসাইন্ড শিক্ষকও ছিল না। যখন অন্য স্যারেরা সকালে স্কুলে এসে কলের পানিতে চুবিয়ে নোনতা বিস্কিট খেত, তখন স্যার আসতেন আমাদের কাছে, এক হ্যামিলিওনের বাশিওয়ালা হয়ে। বাজাতেন প্রিয় সুর " অই তরা আইরো"। দলে দলে জরো হতাম তার পিছনে! হাতে একটা পরিত্যাক্ত বেত নিয়ে শুরু করতেন গান "
আইজকালের পোলাপান বাপেরে কয় উক্কা আন, মায়েরে কয় কুটনা বুড়ি, বওয়েরে কয় সোনার চান"। আমারা সুর মিলাতাম। তিনি হাটতেন আর আমরা মাঠের পাতা, বড়ইয়ের বিচি, ময়লা টুকাতাম। মুহুর্তে মাঠ পরিস্কার ঝকঝকে হয়ে উঠত! আমরা ক্লান্ত হইনি কখনো!
এর পর শুরু হত আমাদের ক্লাস। গাছের ছায়ায় মাটিতে বসতাম আমরা। আমাদের কোন বই খাতা ছিল না। স্যার পড়াতেন " ক(বল)----- স্ব-রে ও, স্ব-রে আ! কি যাদুকরী কাব্য, আমরা গলা ফাটিয়ে বলতাম " স্ব- রে ও, স্ব-রে আ"!
এইবার ৪ আনার নাবিস্কো চক্লেটের কথায় আসি! স্যার আমাদের হোমওয়ার্ক দিতেন 'যারা কালকে স্বরবর্ণ সবগুলু বলতে পারবে তারা পাবে ২ টা চক্লেট, যারা অর্ধেক বলতে পারবে তারা পাবে ১ টি চক্লেট, আর যারা অ থেকে ঈ পর্যন্ত বলতে পারবে তারা পাবে ১/২ টি চক্লেট। বলার অপেক্ষা রাখেনা- অই চক্লেট ছিলো আমাদের গ্রামের পোলা মাইয়্যাদের জন্য আরাধ্য! আমরা বাড়িতে বসে পড়তাম, বিরামহীন! চক্লেট পাইতেই হবে। পরেরদিন ঠিক ই আমরা পেয়ে যেতাম শর্ত অনুযায়ী চক্লেট। এই ব্যাপারে কোনদিন স্যার কমিটমেন্ট ভংগ করেন নি।
ছবিঃ প্রিয় নূরু স্যার।
প্রথম পর্বের সমাপ্তি।