৫ টি ছোট কবিতা ও গল্প এক সাথে

in #story3 months ago

আশ্বিনেতে ঝড় হাঁকিল, বাও ডাকিল জোরে, গ্রামভরা-ভর ছুটল ঝাপট লট্‌পটা সব করে। রূপার বাড়ির রুশাই-ঘরের ছুটল চালের ছানি, গোয়াল ঘরের খাম' থুয়ে তার চাল যে নিল টানি । ওগাঁর বাঁশ দশটা টাকায়, সে গায় টাকায় তেরো, মধ্যে আছে জলীর বিল কিইবা তাহে গেরো। বাঁশ কাটিতে চল্ল রূপাই কোঁচায় বেঁধে চিঁড়া, দুপুর বেলায় খায় যেন সে –মায় দিয়াছে কিরা। মাজায় গোঁজা রাম-কাটারী চক্‌চকাচক্ ধার, কাঁধে রঙিন গামছাখানি দুলছে যেন হার মোল্লা-বাড়ির বাঁশ ভাল, তার ফাঁপগুলি নয় বড়; খাঁ-বাড়ির বাঁশ ঢোলা ঢোলা, করছে কড়মড় ৷ সৰ্ব্বশেষে পছন্দ হয় শেখের বাড়ির বাঁশ; ফাঁপগুলি তার কাঠের মত, চেকন-চোকন আঁশ ।

“খড়ি কুড়াও সোনার মেয়ে ! শুকনো গাছের ডাল, শুকনো আমার প্রাণ নিয়ে যাও, দিও আখার জ্বাল । শুকনো খড়ি কুড়াও মেয়ে ! কোমল হাতে লাগে, তোমায় যারা পাঠায় বনে বোঝেনি কেন আগে ?” এমনিতর কত কথাই উঠে রূপার মনে, লজ্জাতে সে হয় যে রঙিন পাছে বা কেউ শোনে । মেয়েটিও ডাগর চোখে চেয়ে তাহার পানে, কি কথা সে ভাবল মনে সেই জানে তার মানে ! এমন সময় পিছন হতে তাহার মায়ে ডাকে, “ওলো সাজু ! আয় দেখি তোর নথ বেঁধে দেই নাকে ! ওমা ! ও কে বেগান' মানুষ বসে বাঁশের ঝাড়ে !” মাথায় দিয়ে ঘোমটা টানি দেখছে বারে বারে।

IMG_0047.JPG

রূপাই বলে, “মা দিয়েছেন কোঁচায় বেঁধে চিঁড়া” “ওমা ! ও তুই বলিস কিরে ? মুখখানা তোর ফিরা ! আমি হেথা থাকতে খালা, তুই থাকবি ভুখে, শুনলে পরে তোর মা মোরে দুষবে কত রুখে ! ও সাজু, তুই বড় মোরগ ধরগে যেয়ে বাড়ি, ওই গাঁ হতে আমি এদিক দুধ আনি এক হাঁড়ি ।” চল সাজু বাড়ির দিকে, মা গেল ওই পাড়া । বাঁশ কাটিতে রূপাই এদিক মারল বাঁশে নাড়া । বাঁশ কাটিতে রূপার বুকে ফেটে বেরোয় গান, নলী বাঁশের বাঁশীতে কে মারছে যেন টান ! বেছে বেছে কাটল রূপাই ওড়া-বাঁশের গোড়া, তল্লা-বাঁশের কাটল আগা, কালধোয়ানির জোড়া; বাল্‌কে কাটে আল্‌কে কাটে কঞ্চি কাটে শত, ওদিক বসে রূপার খালা রান্ধে মনের মত ।

যাহোক রূপাই বাঁশ কাটিয়া এল খালার বাড়ি, বসতে তারে দিলেন খালা শীতল পাটি পাড়ি। বদনা ভরা জল দিয়ে আর খড়ম দিল মেলে, পাও দুখানি ধুয়ে রূপাই বসল বামে হেলে। খেতে খেতে রূপাই কেবল খালার তারিফ করে, “অনেক দিনই এমন ছালুন' খাইনি কারো ঘরে।” খালায় বলে “আমি ত নয় রেঁধেছে তোর বোনে, ” লাজে সাজুর ইচ্ছা করে লুকায় আঁচল-কোণে । এমনি নানা কথায় রূপার আহার হল সারা, সন্ধ্যা বেলায় চল ঘরে মাথায় বাঁশের ভারা। খালার বাড়ির এত খাওয়া, তবুও তার মুখ, দেখলে মনে হয় যে সেথা অনেক লেখা দুখ । ঘরে যখন ফিরল রূপা লাগল তাহার মনে, কি যেন তার হয়েছে আজ বাঁশ কাটিতে বনে। মা বলিল, “বাছারে, কেন মলিন মুখে চাও ?” রূপাই কহে, “বাঁশ কাটিতে হারিয়ে এলেম দাও।”

এর প্রাণ হতে ওর প্রাণে যেয়ে লাগিল কিসের ঢেউ, বিভোল কুমার, বিভোল কুমারী, তারা বুঝিল না কেউ। –তারা বুঝল না, পাড়ার লোকেরা বুঝিল অনেকখানি, এখানে ওখানে ছেলে বুড়ো মিলে শুরু হল কানাকানি । সেদিন রূপাই হাট-ফেরা পথে আসিল খালার বাড়ি, খালা তার আজ কথা কয়নাক, মুখখানি যেন হাঁড়ি । “রূপা ভাই এলে ?” এই বলে সাজু কাছে আসছিল তাই, মায় কয়, “ওরে ধাড়ী মেয়ে, তোর লজ্জা শরম নাই ?” চুল ধরে তারে গুড় ম গুড় ম মারিল দু'তিন কিল, বুঝিল রূপাই এই পথে কোন হইয়াছে গরমিল ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57328.77
ETH 3111.24
USDT 1.00
SBD 2.42