শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ৪৭

in #storylast month
আসসালামুআলাইকুম

গল্পের বাকি অংশ সুরু করা যাক ......

.

রোদেলার ব্লাড টেস্ট করাতে চান। তারা নিজেরাও নাকি সতর্কতাস্বরূপ পাত্রের ব্লাড টেস্ট করবে। রোদেলার পরিবার কোনো টু শব্দটি না করে টেস্টগুলো করে। টেস্ট করে ফেলার পরে পাত্রপক্ষ আরও ২টা নতুন টেস্টের নাম বলে। কিন্তু এবার মেঘলা আপু পাত্রপক্ষকে বলে যে রোদেলা মাত্র ব্লাড টেস্ট করেছে এই ২টা টেস্ট এখন আর করা হবে না। করলে কয়েক সপ্তাহ পরে করতে হবে। রোদেলার ব্লাড টেস্টের সব রিপোর্ট নরমাল, আলহামদুলিল্লাহ। পাত্রপক্ষকে ব্লাড রিপোর্ট ই-মেইল করা হয়। পাত্রপক্ষ রিপোর্ট পাওয়ার পরে পাত্রীদের বাসায় আসার দিনক্ষণ ঠিক হয়। এর মাঝে তো সেকেন্ড মিটিং-এ রোদেলার আংটির মাপও নিয়ে রেখেছিল পাত্রপক্ষ।

Screenshot 2024-07-31 at 10.45.51 PM.png

দেখতে দেখতে কখন যে ৩ মাস কেটে গেছে—দিন গুনতে গুনতে! অপেক্ষার প্রহর মনে হয় শেষ হয়ে এলো বলে। পুরা বাড়ি ঈদের আগেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল। এখন আরেক দফা সব পরিপাটি করে গোছানোর পালা। সব ব্যস্ততা সামলে রোদেলা তাদের সাধ্যমতো অ্যারেঞ্জমেন্ট করে। পাত্রপক্ষ ১০-১৫ জন ধরে সেভাবে খাবার অর্ডার করা হয়। বাসায় স্বল্প সময়ে এতজনের অ্যারেঞ্জমেন্ট করা অনেক ঝামেলার ব্যাপার । নির্দিষ্ট দিনে পাত্রপক্ষ আসে। ‘কোথায় সালাত পড়ব? বাসায় তো কোনো জায়গা-ই নাই!'

ঢুকেই বলেন পাত্রের মা পাত্রের মায়ের আচরণে রোদেলার মনে কেমন যেন অস্বস্তি কাজ করে। পুরুষ গেস্টরা একঘরে জামাত করে সালাত আদায় করে, আর মহিলা গেস্টরা আরেক ঘরে বিছানায় সালাত আদায় করে। এরপরে নাস্তাপর্ব শেষ হয়। এর মাঝে কাবিন, মোহরানা আর বিয়ের সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে কথা পাকাপাকি হয়। বিয়ের তারিখটা ফিক্স না হলেও বলা হয় সামনের শুক্রবার বা তার পরের শুক্রবারে। পাত্র যেহেতু জব পেয়েছে বেশিদিন হয়নি,

পাত্রের বাবা জানায় পাত্র নিজের সামর্থ্য অনুসারে মোহরানা দিতে চায়৷ পাত্রীপক্ষ তাতেও কোনো আপত্তি করে না। একদিন পরে পাত্রীর পরিবারের সকলেই পাত্রপক্ষের বাসায় যাবে, কথা ঠিক হয়। যাওয়ার আগে মেঘলা আপুকে পাশে ডেকে পাত্রের মা কানে কানে বলেন— ‘আমি তো আসলে খুবই লজ্জায় পড়ে গেছি। আমি আংটি আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। সবাই আমাকে বকাবকি করছে। তোমরা কিছু মনে করো না।' মেঘলা আপু আন্টিকে বোঝায় ইসলামে অ্যাংগেজমেন্টের প্রথা নেই।

সরাসরি কাবিন করে বিয়ে হওয়াই বেস্ট। এরপর পাত্রপক্ষ সেদিনের মতো চলে যায়। পরের দিন রাতের বেলা পাত্রের মা ফোন দেয় মেঘলা আপুকে। মেঘলা আপু তখন তাদের বাসায় কতজন যেতে পারে তা জানায়। কিন্তু পাত্রের মা তখন কিছু অবজারভেশানের কথা জানাতে চান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আসলে ভুল হয়ে গেছে, তোমাদের বাসা আরও আগেই আমাদের দেখে আসা উচিত ছিল। আমরা তোমার আব্বুর জব, তোমার জব, তোমার হাজব্যান্ডের জব দেখে মনে করেছিলাম তোমাদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড অনেক হাই ক্লাস না হলেও এটলিস্ট আপ টু দ্য মার্ক হবে। কিন্তু তোমাদের বাসায় যেয়ে আমাদের ভুল ভেঙে গেছে। তোমাদের বাসা ছোট, ফার্নিচার কম, সব ফার্নিচার চিপ। আমার ছেলে বিয়ের পরে সেই বাসায় যেয়ে থাকবে, আমার আত্মীয়স্বজনরা গিয়ে দাওয়াত খাবে, তোমাদের ওরকম বাসায় কীভাবে যাবে সবাই? তোমরা বরং এক কাজ করো। তোমরা আমাদের বাসায় এসো, এসে আমাদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড দেখে যাও, এরপরে তোমরা তোমাদের ফার্নিচার আপগ্রেড করো, লিভিং স্ট্যান্ডার্ড আপগ্রেড করো। তারপরে আমরা চিন্তা করব।” স্তব্ধ হয়ে যায় মেঘলা আপু।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘আন্টি, আমাদের বাসায় সব ফার্নিচার আমার আব্বুর স্মৃতিবহুল ফার্নিচার। আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে এই ফার্নিচারগুলোতে আব্বুর স্মৃতি রয়ে গেছে। আমার আম্মুর অনেক বয়স হয়ে গেছে। এই বয়সে সবকিছু চেঞ্জ করা সম্ভব হবে না, আর আম্মু সেটা চাইবেনও না। কেননা, প্রতিটি ফার্নিচারেই আব্বু-আম্মুর ৪০ বছরের সংসারের স্মৃতি আছে। আপনি বললে বিয়ের পরে আপনার ছেলের এসে থাকার জন্য আমরা আলাদা করে একটা রুম ডেকোরেট করে দিতে পারি। কিন্তু পুরা বাসার সেটআপ তো চেইঞ্জ করা সম্ভব হবে না।' “তাহলে তোমরা জানাও যে তোমরা কী করতে চাও।' নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন আন্টি। ‘জি, আমরা আলোচনা করে জানাচ্ছি।' বলে ফোন রেখে দেয় মেঘলা আপু। বৃষ্টির দিনে রোদেলার মনটা কেমন যেন উশখুশ করে। কেমন একটা গুমোট ভাব যেন।

ধূসর আকাশ যেন অনেক গল্প করে যায়। যেন জন্মের কান্না কেঁদে নেয় ধরনী। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, এই প্রস্তাবে না আগানোই ভালো হবে। তারা পাত্রপক্ষকে জানিয়ে দিলো, ‘প্রস্তাবের শুরু থেকে আমাদের একটাই প্রায়োরিটি ছিল তা হলো পাত্রের দ্বীনদারিতা। কিন্তু আপনাদের প্রায়োরিটি মনে হচ্ছে ‘সোশ্যাল স্ট্যাটাস'। তাই এই প্রস্তাবে আমাদের না আগানোই ভালো হবে বলে মনে করছি। নো হার্ড ফিলিংস।’ জানালার গ্রিল ভেঙে একমনে বৃষ্টি দেখে রোদেলা। রোদেলা জানে এমন বৃষ্টির দিন একদিন কেটে যাবে। রোদেলার জীবনেও একদিন ঝিলমিলিয়ে রোদ উঠবে। আকাশ তার ধূসর রং পালটে নেবে। খিলখিল করা সাদা মেঘেরা খেলা করবে সূর্যির সাথে। তাই এই বৃষ্টির দিনে রোদেলা কাঁদে না। কৃতজ্ঞতা জানায় তার রবকে। কে জানে কোন অদেখা, অজানা, অদৃশ্য অকল্যাণ থেকে তার রব তাকে এভাবে হেফাজত করলেন। অভিভাবক হিসেবে কি আল্লাহই যথেষ্ট নন?

This is original content by @fxsajol . Stay with me and get more post about travel, photography, life, story, technology and motivation etc. Please upvote, comment and resteem my post. Again thank you so much 😊
সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
Sort:  

Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 9.09458633798181 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 54166.76
ETH 2272.15
USDT 1.00
SBD 2.34