আমার লেখা নতুন ৪ টি ছোট কবিতা একসাথে শেয়ার করলাম

in #story2 months ago

মাঠের রাখাল, বেদনা তাহার আমরা কি অত বুঝি ? মিছেই মোদের সুখ-দুখ দিয়ে তার সুখ-দুখ খুঁজি । আমাদের ব্যথা কেতাবেতে লেখা, পড়িলেই বোঝা যায়; যে লেখে বেদনা বে-বুঝ বাঁশীতে কেমন দেখাব তায় ? অনন্তকাল যাদের বেদনা রহিয়াছে শুধু বুকে, এ দেশের কবি রাখে নাই যাহা মুখের ভাষায় টুকে; সে ব্যথাকে আমি কেমনে জানাব ? তবুও মাটিতে কান; পেতে রহি যদি কভু শোনা যায় কি কহে মাটির প্রাণ ! মোরা জানি খোঁজ বৃন্দাবনেতে ভগবান করে খেলা, রাজা-বাদশার সুখ-দুঃখ দিয়ে গড়েছি কথার মেলা। পল্লীর কোলে নির্ব্বাসিত এ ভাইবোনগুলো হায়, যাহাদের কথা আধ বোঝা যায়, আধ নাহি বোঝা যায়; তাহাদেরই এক বিরহিয়া বুকে কি ব্যথা দিতেছে দোল, কি করিয়া আমি দেখাইব তাহা, কোথা পাব সেই বোল ? —সে বন-বিহগ কাঁদিতে জানে না, বেদনার ভাষা নাই, ব্যাধের শায়ক বুকে বিঁধিয়াছে জানে তার বেদনাই ।

IMG_0033.JPG

বাজে বাঁশী বাজে, তারি সাথে সাথে দুলিছে সাঁজের আলো; নাচে তালে তালে জোনাকীর হারে কালো মেঘে রাত-কালো । বাজাইল বাঁশী ভাটিয়ালী সুরে বাজাল উদাস সুরে, সুর হতে সুর ব্যথা তার যেন চলে যায় কোন্ দূরে ! আপনার ভাবে বিভোল পরাণ, অনন্ত মেঘ-লোকে, বাঁশী হতে সুরে ভেসে যায় যেন, দেখে রূপা দুই চোখে । সেই সুর বেয়ে চলেছে তরুণী, আউলা মাথার চুল, শিথিল দুখান বাহু বাড়াইয়া ছিঁড়িছে মালার ফুল । রাঙা ভাল্ হতে যতই মুছিছে ততই সিঁদুর জ্বলে; কখনও সে মেয়ে আগে আগে চলে, কখনও বা পাছে চলে । খানিক চলিয়া থামিল তরুণী আঁচলে ঢাকিয়া চোখ, মুছিতে মুছিতে মুছিতে পারে না, কি যেন অসহ শোক ! করুণ তাহার করুণ কান্না আকাশ ছাইয়া যায়, কি যেন মোহের রঙ ভাসে মেঘে তাহার বেদন-ঘায়। পুনরায় যেন খিলখিল করে একগাল হাসি হাসে, তারি ঢেউ লাগি গগনে গগনে তড়িতের রেখা ভাসে।

কান্-কানা-কান্ ছুটল কথা গুন-গুনা-গুন্ তানে, শোন্-শোনা-শোন্ সবাই শোনে, কিন্তু কানে কানে ৷ “কি করগো রূপার মাতা ? খাইছ কানের মাথা ? ও-দিক যে তোর রূপার নামে রটছে গাঁয়ে যা তা ! আমরা বলি রূপাই এমন সোনার-কলি ছেলে, তার নামে হয় এমন কথা দেখব কি কাল গেলে ? এই বলিয়া বড়াই বুড়ী বসল বেড়ি দোর, রূপার মা কয়, “বুঝিনে বোন কি তোর কথার ঘোর !” বুড়ী যেন আচমকা হায় আকাশ হতে পড়ে, “সবাই জানে তুই না জানিস যে কথা তোর ঘরে ?” ও-পাড়ার ও ডাগর ছুঁড়ী, শেখের বাড়ির ‘সাজু', তারে নাকি তোর ছেলে সে গড়িয়ে দেছে বাজু । ঢাকাই শাড়ী কিন্যা দিছে, হাঁসলী দিছে নাকি, এত করে এখন কেন শাদীর রাখিস বাকি ?” রূপার মা কয়, “রূপা আমার এক-রত্তি ছেলে, আজও তাহার মুখ শুঁকিলে দুধের ঘিরাণ মেলে । তার নামে যে এমন কথা রটায় গায়ে গায়ে, সে যেন তার বেটার মাথা চিবায় বাড়ি যায়ে।”

শেখ বাড়িতে যেয়ে ঘটক বেকী-বেড়ার কাছে, দাঁড়িয়ে বলে, “সাজুর মাগো, একটু কথা আছে।” সাজুর মায়ে বসতে তারে এনে দিলেন পিঁড়ে, ডাব্বা হুঁকা লাগিয়ে বলে, আস্তে টান ধীরে।” ঘটক বলে, ‘সাজুর মাগো মেয়ে তোমার বড়, বিয়ের বয়স হলো এখন ভাবনা কিছু কর।' সাজুর মা কয় “তোমরা আছ ময়-মুরব্বি ভাই, মেয়ে মানুষ অত শত বুঝি কি আর ছাই ! তোমরা যা কও ঠেলতে কি আর সাধ্য আছে মোর ?” ঘটক বলে, “এই ত কথা, লাগবে না আর ঘোর । ও-পাড়ার ও রূপারে ত চেনই তুমি বোন্, তার সাথে দাও মেয়ের বিয়ে ঠিক করিয়ে মন।” সাজুর মা কয়, “জান ত ভাই ! রটছে গাঁয়ে যা তা, রূপার সাথে বিয়ে দিলে থাকবে না আর মাথা।”

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 69633.73
ETH 3805.56
USDT 1.00
SBD 3.74