ইমানে মুফাসসাল বিশ্বাসের বিস্তার ও বিস্তৃতি

in #steemit6 years ago

ইমান অর্থ বিশ্বাস, মুফাসসাল অর্থ বিস্তৃত বা বিস্তারিত; ‘ইমানে মুফাসসাল মানে হলো ইমান ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। এটি হলো: ‘আমানতু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রাসুলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কদরি খয়রিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তাআলা, ওয়াল বাআছি বাদাল মাউত।’ অর্থাৎ: আমি বিশ্বাস আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, কিয়ামতের দিনের প্রতি; তাকদিরের প্রতি, ভাগ্যের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে; মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি।’ (শুআবুল ইমান)।

93661ac001f24b59177674b4081f575e-58efc8588c196.gif

ইমানে মুফাসসালের বিশেষ তাৎপর্য

ইমানে মুফাসসালে অতীব গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সাতটি বিষয় বিবৃত হয়েছে, যা প্রতিটি বিশ্বাসী মোমিন বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করবেন। এই সাতটি বিষয় যথাক্রমে: (১) আল্লাহ, (২) ফেরেশতা, (৩) কিতাব, (৪) রাসুল, (৫) কিয়ামত, (৬) তাকদির ও (৭) পরকাল। কালিমা তাইয়েবাতে এবং কালিমা শাহাদাতে ইমান বলতে শুধু আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস করাকে বোঝানো হয়েছে। ইমানের মূল তিনটি বিষয় হলো: (১) তওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ, (২) রিসালাত বা নবী-রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস, (৩) আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস। এই মর্মে কোরআন করিমে বলা হয়েছে: ‘(মুত্তাকিন তথা সাবধানি মুমিন তারা) যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে, আমি যে রিজিক তাদের দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে, আর যারা বিশ্বাস করে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে, আর তারা পরকালে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩-৪)।
ইমানের প্রকার ও প্রকরণ

ইমান ও ইসলামের পরিপূর্ণ বিবরণের নির্দেশনা রয়েছে ইমানে মুফাসসালে। হাদিস শরিফে আছে: ইমানের ৭৭টি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর প্রথমটি হলো (কালিমা তাইয়েবা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’ (আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তাআলার রাসুল)। শেষটি হলো ‘রাস্তা বা পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।’ (বুখারি)। ইমান বা বিশ্বাসের ৭৭টি শাখা তিন ভাগে বিভক্ত। (ক) প্রথম ৭টি মুখ বা বাক্শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, (খ) দ্বিতীয় ৩০টি মন বা বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত; (গ) তৃতীয় ৪০টি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত।

মুখের জবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইমানের ৭টি বিষয়

(১) আল্লাহর একত্ব মুখে স্বীকার করা। (২) কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা। (৩) দিনি ইলম শিক্ষা করা। (৪) দিনি ইলম শিক্ষা দেওয়া ও দিনের প্রচার করা। (৫) দোয়া করা (নিজের ও অন্যের কল্যাণ কামনা করা)। (৬) জিকির করা (আল্লাহর গুণাবলি আলোচনা করা)। স্থান, কাল, পাত্র ও বিষয় নির্ধারিত সুনির্দিষ্ট মাছনুন দোয়াসমূহ অন্যতম জিকির। (৭) বাহুল্য কথাবার্তা বলা ও শোনা থেকে বিরত থাকা।

মনের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইমানের ৩০টি বিষয়

(১) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। (২) আল্লাহ ব্যতীত অন্য সবকিছুকে তাঁরই সৃষ্টি এই বিশ্বাস। (৩) ফেরেশতাদের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস। (৪) আসমানি কিতাবসমূহ বিশ্বাস। (৫) সকল নবী-রাসুলগণের (আ.) প্রতি বিশ্বাস। (৬) ভালো-মন্দ তাকদিরেরওপর বিশ্বাস। (৭) কিয়ামত ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস। (৮) জান্নাত বা বেহেশতের প্রতি বিশ্বাস। (৯) জাহান্নাম বা দোজখের প্রতি বিশ্বাস। (১০) আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও মহব্বত। (১১) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অন্যদের প্রতি ভালোবাসা। (১২) নবীজি (সা.)-কে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করা। (১৩) সকল কর্মে রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করা। (১৪) যেকোনো কাজ ইখলাছের সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা। (১৫) রিয়াকারী (আত্মপ্রদর্শন) ও মোনাফেকি পরিত্যাগ করা। (১৬) সর্বক্ষণ অন্তরে আল্লাহর ভয় রাখা। (১৭) আল্লাহর রহমতের আশা রাখা। (১৮) কখনো কোনো গুনাহের কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই তওবা করা। (১৯) সদা সর্বদা কথায় ও কাজে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতসমূহের শুকর করতে থাকা। (২০) বৈধ ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) পালন করা। (২১) শাহ্ওয়াত বর্জন (অর্থাৎ কাম রিপুকে নিয়ন্ত্রণ) করা। (২২) বিপদে ধৈর্য ধারণ করা। (২৩) আল্লাহ তাআলা যখন যেই অবস্থায় রাখেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা। (২৪) বিনয়ী হওয়া। (২৫) বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করা। (২৬) গর্ব ও অহংকার পরিত্যাগ করা। (২৭) হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করা। (২৮) রাগ-ক্রোধ দমন করা, কারও সঙ্গে মনোমালিন্য না রাখা। (২৯) দুনিয়ার (ধন-সম্পদের) মহব্বত না রাখা। (৩০) লজ্জা থাকা।

কর্মের সঙ্গে সংযুক্ত ইমানের ৪০টি বিষয়

(১) পাক-পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। (২) ছতর ঢাকা। (৩) নামাজ পড়া। (৪) জাকাত-উশর ও ছদকায়ে ফিতর (এবং দান-দক্ষিণা) প্রদান করা। (৫) দাস-দাসীকে মুক্তি দেওয়া। (৬) ছখী দানশীল বা উদার মনের অধিকারী হওয়া। (৭) কোরআন-হাদিস-ফিকাহ শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। (৮) রোজা রাখা। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা ও শবে কদর তালাশ করা। (৯) হজ করা, কাবা শরিফ তাওয়াফ করা এবং মদিনা শরিফ জিয়ারত করা। (১০) হিজরত করা। যে দেশে বা যে সমাজে থেকে দিন-ইমান রক্ষা করা যায় না, সে দেশ বা সমাজ ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়া বা পরিবর্তনের চেষ্টা করা। (১১) আল্লাহর ওয়াস্তে মানত করলে তা পূর্ণ করা। (১২) আল্লাহর নামে কোনো জায়েজ কাজে কছম করলে, তা পূরণ করা। (১৩) আল্লাহর নামে কছম করে তা ভঙ্গ করলে তার কাফ্ফারাহ আদায় করা। (নাজায়েজ কাজের কছম করলে তা ভঙ্গ করে কাফ্ফারাহ আদায় করা)। (১৪) কাম-রিপু প্রবল হলে বিবাহ করা। (১৫) স্ত্রী, সন্তানসন্ততি, পরিবার-পরিজন ও অধীনদের হক আদায়। (১৬) সন্তান প্রতিপালন করা এবং তাদের দিনি ইসলামের শিক্ষা দেওয়া। (১৭) আত্মীয়স্বজনের হক প্রদান করা ও তাদের সঙ্গে সদাচার করা। (১৮) আল্লাহর হুকুমের বিপরীত নয় এমন সব বিষয়ে মনিবের বা মালিকের অনুগত থাকা। (১৯) জায়েজ ও হালাল বিষয়ে ওস্তাদ, পীর, মুরব্বিদের অনুগত থাকা। (২০) পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার করা। (২১) চাকর-বাকর, কর্মচারী ও অধীনদের প্রতি সদয় ব্যবহার করা। (২২) নেতৃবৃন্দ ও দায়িত্বশীলদের ন্যায়পরায়ণ ও দয়ালু হওয়া। (২৩) আহলুস সুন্নত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত থাকা। (২৪) পরোপকার ও মানবকল্যাণে নিয়োজিত থাকা। (২৫) দায়িত্বশীলদের বৈধ নির্দেশ পালন করা। (২৬) সৎ কাজে সহযোগিতা করা ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা। (২৭) অধীনদের শরিয়ত মতো পরিচালনা করা। (২৮) রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করা। (২৯) আমানত রক্ষা করা। মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত আমানত। (৩০) অভাবগ্রস্তকে কর্জে হাছানা (লাভবিহীন ঋণ) দিয়ে সাহায্য করা। (৩১) ঋণ পরিশোধ করা এবং পরিশোধের পূর্বে তা পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা রাখা। (৩২) পাড়া-প্রতিবেশীর উপকার করা এবং তারা কোনো প্রকার কষ্ট দিলে বা ক্ষতি করলে তা অম্লান বদনে সহ্য করা। (৩৩) কাজ-কারবার, লেনদেন পরিষ্কার রাখা; পাওনা আদায় করতে কঠোরতা ও দেনা পরিশোধ করতে শিথিলতা না করা। (৩৪) মাপে বেশ-কম না করা; পণ্যে ভেজাল না দেওয়া। (৩৫) সুদ-ঘুষ ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকা। (৩৬) সম্পদের সদ্ব্যবহার (বৈধভাবে উপার্জন ও জায়েজ পন্থায় ব্যয়) করা। (৩৭) সালামের জবাব দেওয়া ও হাঁচির উত্তর দেওয়া (দোয়া পড়া)। (৩৮) অবৈধ খেলাধুলা, রং-তামাশা ইত্যাদি হতে দূরে থাকা। (৩৯) ঈদের নামাজ আদায় করা ও কোরবানি করা। (৪০) রাস্তায় কষ্টদায়ক কোনো কিছু থাকলে তা অপসারণ করা। (বুখারি ও মুসলিম)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্‌ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

Sort:  

Congratulations!

This post has been upvoted from Steemit Bangladesh, @steemitbd. It's the first steemit community project run by Bangladeshi steemians to empower youths from Bangladesh through STEEM blockchain. If you are from Bangladesh and looking for community support, Join Steemit Bangladesh Discord Server.

If you would like to delegate to the Steemit Bangladesh, you can do so by clicking on the following links:

50 SP, 100 SP, 250 SP, 500 SP, 1000 SP.

YOU ARE INVITED TO JOIN THE SERVER!

Your posts are a lot better.It's very well posted about Islam. Go ahead.

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। এগুলো জানা আমাদের খুবই প্রয়োজন তাই দিলাম। আল্লাহ সকলকে সঠিক জ্ঞান অর্জনের তৌফিক দান করুক।👍

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by sohelsarowar from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66027.93
ETH 3529.64
USDT 1.00
SBD 3.16