তুমি এলে তাই

in #romantic2 years ago

হাতের গাছকৌটো, শাড়ির আঁচল আর মনের অনেকটা দ্বন্দ্ব সামলে যখন কনের সাজে বসলাম, তখন সন্ধ্যে নামছে। নতুন শাড়ী, গয়না, কত উপহার, কত লোকজন, হইহই, সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আমি, এটা দেখে মনে মনে যে আনন্দ হচ্ছিল না, সেটা বলা ভুল। কিন্তু অনেক আনন্দের মাঝেও একটা ভীষণ রকম অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। কারন একটাই, যে মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে যাচ্ছি, তাকে তো সেভাবে চিনিই না।


আমি রুমেলা, রুমি, ভবানীপুরের গাঙ্গুলী বাড়ির সবথেকে ছোট সদস্য। বাড়ির পরম্পরা মেনে দাদুর সামনে নিজের পছন্দকে আর দাঁড় করানোর সাহস জোটাতে পারিনি। তাই, প্রেম, ভালোবাসা, এসব কী তা কিছুই বুঝিনি। গ্র্যাজুয়েশন পাশ করতে না করতেই বিয়ের সম্বন্ধ দেখা শুরু। নাহ, বাড়ির কাউকে বলতে পারিনি, আমি এখন বিয়ে করতে চাই না, আমার জীবনটাকে আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই, পারিনি বলতে।

আর বিয়ের পর আমার জীবন যে আমার নয়, সেই শিক্ষা অনেক ছোট বয়স থেকেই মা কাকীমার থেকে পেয়েছি।

Romantic Love Story In Bengali_3790.jpg

প্রথম যেদিন দেখা করতে গেছিলাম, একটা কফিশপে, বাবার পছন্দ করা এই পাত্রটি আমার যাওয়ার খানিক আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায়।
যাদের কাছে সময়ের দাম নেই, তাদেরকে এতটুকুও ভালো লাগে না, যাক, সময়ের মূল্যবোধটা আছে তাহলে।
চোখে সানগ্লাস, টিশার্ট, হাতে ঘড়ি, ব্যাকব্রাশ চুলে, হ্যাঁ, মানছি ভাল লাগছিল, কিন্তু এভাবে কারো সাথে দেখা করে – কী যে বলবো, এটা ভেবেই আমার মাথা খারাপ হচ্ছিল।
তা সেই পাত্রের বাড়ির লোকজনগুলো ভারী ভালো মানুষ, শুধু যার সাথে আজীবন কাটানোর কথা সেটাই বোঝা দরকার, কিন্তু ২ঘন্টার সাক্ষাতে, আর ঠান্ডা ঘরের কফিতে একটা মানুষ মুখোশ পরে নাকি নয়, তা বুঝবে কার সাধ্যি? তায় চোখ দুটোও না দেখতে পাওয়ায় আমি সেই অকূল পাথারেই।
হ্যাঁ, ছেলেটি ভদ্র এটা বলতে হবে, চেয়ারটা এগিয়ে দেওয়া, বা রাস্তায় আমায় ভিতর দিকে রেখে হাঁটা, বা ক্যাবে ওঠার সময় দরজা খুলে দেয়া, এই ভদ্রতা বোধগুলো তার চরিত্রে বিদ্যমান দেখে ভাল লাগল।
আমায় সেভাবে কোন প্রশ্নই করল না, আমার কিছু পছন্দ অপছন্দ ছাড়া। একী রে? আমিও জানাতে চাইতে পারিনি কিছু। আপাত দৃষ্টিতে ভদ্র এই ধারণাটুকু নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলাম সেদিন।
জীবনটা নিয়ে যে জুয়া খেলতেই যাচ্ছি, এটা ধরেই নেওয়া যায়।
বাড়ির সকলের পছন্দের শাড়ী, গয়না, সাজ-সরঞ্জাম, ক্যাটারিং, পাত্র, সব মিলিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ আমার হয়েই গেছল।
ভবানীপুরের গাঙ্গুলী বাড়ি থেকে শোভাবাজারের চ্যাটার্জী বাড়ি, দক্ষিণ কলকাতার চওড়া রাস্তা থেকে উত্তর কলকাতার অলিগলি, আধুনিকতা থেকে বনেদিয়ানা, আমার রাস্তাটা এই পরিধিটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। পাশের মানুষটা কেমন হবে সেটার উপর সুতোয় বাঁধা আমার ভাগ্য, জীবনটা যন্ত্রের মতো হবে না মানুষের মত।
এসব এলোমেলো ভাবনার মাঝেই বিয়ের লগ্ন এসে উপস্থিত।


Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62639.70
ETH 2439.41
USDT 1.00
SBD 2.64