১৯৪৭ এর দেশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি (১)

in #politics7 years ago

বাংলাদেশ !! আমার প্রিয় মাতৃভূমি। আমার জন্মভূমি। এদেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠছে প্রতিদিন কয়েক কোটি শিশু, জন্ম নিচ্ছে কয়েক লাখ...।। জন্ম সুত্রে আমরা বাঙালি। বাংলা ভাষা ভাষী ৩০ কোটি বাঙ্গালির মধ্যে আমরাও আছি। তবে জাতীয়তা সুত্রে আমরা বাংলাদেশী। এক কথায় বোঝাতে গেলে আমরা বাংলাদেশী বাঙালি। বিষয় টা কেমন যেন, তাই না? বাঙালি বলতে গেলেও সাথে বাংলাদেশী বলতে হবে ? আসলে ৩০ কোটি বাঙ্গালীর কিছুটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়ে গেছে। পূর্বের বঙ্গ আজ বিভক্ত হয়েছে, হয়েছে পূর্ব আর পশ্চিমবঙ্গ।

আধুনিক বাংলার শুরু হয় ১৭১৭ সাল থেকে। মোঘল আমলের পতনের কিছু আগ থেকেই বাংলা স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে জায়গা করে নেয়। মোঘল সম্রাটের নিকট বাংলার বার ভুঁইয়াদের আনুগত্যের কারনে স্বাধীন বাংলা পুনরায় মোঘল দের অধীনে চলে যায়। পরবর্তীতে বাংলায় নবাবি শাসন শুরু হয়। পদতি মোঘল আমলে পুরুষানুক্রমিকভাবে নাজিম ও সুবেদা১৯৪৭ এর দেশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি (১)

বাংলাদেশ !! আমার প্রিয় মাতৃভূমি। আমার জন্মভূমি। এদেশের আলো বাতাসে বেড়ে উঠছে প্রতিদিন কয়েক কোটি শিশু, জন্ম নিচ্ছে কয়েক লাখ...।। জন্ম সুত্রে আমরা বাঙালি। বাংলা ভাষা ভাষী ৩০ কোটি বাঙ্গালির মধ্যে আমরাও আছি। তবে জাতীয়তা সুত্রে আমরা বাংলাদেশী। এক কথায় বোঝাতে গেলে আমরা বাংলাদেশী বাঙালি। বিষয় টা কেমন যেন, তাই না? বাঙালি বলতে গেলেও সাথে বাংলাদেশী বলতে হবে ? আসলে ৩০ কোটি বাঙ্গালীর কিছুটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়ে গেছে। পূর্বের বঙ্গ আজ বিভক্ত হয়েছে, হয়েছে পূর্ব আর পশ্চিমবঙ্গ।

আধুনিক বাংলার শুরু হয় ১৭১৭ সাল থেকে। মোঘল আমলের পতনের কিছু আগ থেকেই বাংলা স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে জায়গা করে নেয়। মোঘল সম্রাটের নিকট বাংলার বার ভুঁইয়াদের আনুগত্যের কারনে স্বাধীন বাংলা পুনরায় মোঘল দের অধীনে চলে যায়। পরবর্তীতে বাংলায় নবাবি শাসন শুরু হয়। পদতি মোঘল আমলে পুরুষানুক্রমিকভাবে নাজিম ও সুবেদার থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। এবং পরবর্তীতে তারা তাদের অধীনে থাকা সংশ্লিষ্ট এলাকাকে স্বাধীনভাবে শাসন শুরু করেন। নবাবি শাসনের সুচনা হয়েছিল ১৭১৭ সালে মুর্শিদ কুলি খানের আমল থেকে এবং শেষ হয় ১৮৮১ সালে মনসুর আলী খানের শাসনামলের শেষে।

তবে বাংলা স্বাধীনতা হারায় ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ উদ দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে। বাংলার বিশ্বাসঘাতক নামে পরিচিত মীর জাফর, মীর কাশিম এর বিশ্বাসঘাতকতার কারনে নবাব পলাশী নামক প্রান্তরে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন। এবং পরে ভগবানগোলায় খাদ্য সন্ধানে গিয়ে ধরা পড়েন এবং বন্দী হন। তারপর ৪ ঠা জুলাই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর মীর জাফর নবাব হলেও প্রকৃতপক্ষে সমস্ত শাসনভার চলে যায় ইংরেজদের হাতে। আর তখন থেকে বাংলার স্বাধীনতা ২০০ বছরের জন্য ইংরেজদের হাতে চলে যায়।

১৭৬৫ সাল থেকে বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারী প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে । বঙ্গ প্রদেশের আয়তন ছিল ১,৮৯,০০০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা ছিল ৭৮.৫ মিলিয়ন। বঙ্গের পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিক এবং অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে পশ্চিমাঞ্চল হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৩৬ সালে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোকে বঙ্গ থেকে পৃথক করে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্ণরের অধিনে ন্যস্ত করা হয় এবং ১৮৫৪ সালে বঙ্গের প্রশাসনিক দায়িত্ব হতে গভর্নর-জেনারেল-ইন-কাউন্সিলকে অব্যাহতি দিয়ে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উপর অর্পণ করা হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট সহ আসামকে বঙ্গ হতে বিচ্ছিন্ন করে চিফ-কমিশনারশীপ গঠন করা হয় এবং ১৮৯৮ সালে লুসাই পাহাড়কে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
১৯০৩ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করা হয়। তখন বঙ্গ হতে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাদ্বয়কে আসাম প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করার একটি প্রস্তাবও ছিল। তেমনিভাবে ছোট নাগপুরকে মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে আত্তিকরণেরও একটি প্রস্তাব ছিল। ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে সরকারীভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় এবং ফেব্রুয়ারিতে লর্ড কার্জন বঙ্গের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে এক সরকারি সফরের মাধ্যমে এই বিভক্তির ব্যাপারে জনমত যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। তিনি বিভিন্ন জেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে এই বিভক্তির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা দেন।

পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী (দার্জিলিং বাদে) বিভাগ এবং মালদা জেলা, আসাম প্রদেশের সঙ্গে একীভূত হয়ে এই নতুন প্রদেশ গঠন করবে। এর ফলে বঙ্গ শুধু তার বৃহৎ পূর্বাঞ্চলই হারাবে না, তাকে হিন্দীভাষী পাঁচটি রাজ্যও মধ্যপ্রদেশকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমে সম্বলপুর এবং মধ্যপ্রদেশের পাঁচটি ওড়িয়া -ভাষী রাজ্যের সামান্য অংশ বঙ্গকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। ফলে বঙ্গের আয়তন দাঁড়ায় ১,৪১,৫৮০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা ৫৪ মিলিয়ন যার মধ্যে ৪২ মিলিয়ন হিন্দু ও ৯ মিলিয়ন মুসলিম।
2000px-Partition_of_India-en.svg_.png
নতুন প্রদেশটির নামকরণ করা হয় “পূর্ব বঙ্গ ও আসাম” যার রাজধানী হবে ঢাকা এবং অনুষঙ্গী সদর দফতর হবে চট্টগ্রাম। এর আয়তন হবে ১,০৬,৫৪০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা হবে ৩১ মিলিয়ন যাদের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন মুসলিম ও ১২ মিলিয়ন হিন্দু। এর প্রশাসন একটি আইন পরিষদ ও দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি রাজস্ব বোর্ড নিয়ে গঠিত হবে এবং কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার বজায় থাকবে। সরকার নির্দেশ দেয় যে পূর্ব বঙ্গ ও আসামের পশ্চিম সীমানা স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট থাকবে সাথে সাথে এর ভৌগোলিক, জাতিক, ভাষিক ও সামাজিক বৈশিষ্টাবলিও নির্দিষ্ট থাকবে। সরকার তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ১৯শে জুলাই, ১৯০৫ সালে এবং বঙ্গ ভঙ্গ কার্যকর হয় একই বছরের ১৬ই অক্টোবর। প্রদেশের প্রথম গভর্ণরের বাসস্থান ছিল ঢাকার পুরোনো হাইকোর্ট বিল্ডিং।

কিন্তু বঙ্গ ভঙ্গ কে কলকাতার মানুষ সমর্থন করে নাই। এমন কি কবিগুরুও সমর্থন করেন নি। ফলে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। দাঙ্গা আর রক্তারক্তি অবস্থা। পরে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গ ভঙ্গ কে রোহিত করা হয়। এরপর ১৯৪৭ সালে চূড়ান্ত ভাবে করা হয় দেশ বিভাগ। ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে চলে যাবার সময় শাসন ভার ভারতীয়দের উপর দিয়ে যেতে সম্মত হন। এবং মুসলিম লীগ আর ভারতীয় কংগ্রেসের দলীয় কোন্দলের ভিতর ঠিক করা হয় ভারতীয় উপমহাদেশ কে ভেঙ্গে ২ টি রাষ্ট্র তৈরি হবে পাকিস্থান আর ভারত। এক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যা গরিষ্ঠতা কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠরা যাবে পাকিস্থানের দিকে আর হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠরা থাকবে ভারতে।
চলবে(......)

three-leaders.jpg

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64364.24
ETH 3416.30
USDT 1.00
SBD 2.48