ঝরনা
শহর হয়ে কাইক্ষং ঝিড়িহতেট্রলারে চেপে ছবির মতো সুন্দর সাঙ্গু নদী পার হয়ে রুমা বাজারে পৌঁছলাম। রেস্ট হাউসেখানিকটা সময় বিশ্রাম নিয়ে সাঙ্গু নদীতে সাঁতারে মেতে উঠলাম। দুপুরের ভোজন শেষে রুমার বরুয়া পাড়ায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে আলাপচারিতায় সময় কাটালাম। এক পাড়াতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরবসবাস। অপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন। সন্ধ্যায় চা-চক্র ঘেরা গেস্ট হাউসের ছাদ হতে রুমা বাজারের চারপাশটাকে অদ্ভুত সুন্দর লেগেছে। অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা হলো। পরেরদিন খুবসকালে ফজরের নামাজ আদায় করে প্রস্তুতি নিতে হলো বগা লেকে যাওয়ার জন্য। রুমা বাজারে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময় মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে পারলে এক ধরনের অপার্থিব মানসিকতৃপ্তি পাওয়া যায়। ভাত, ডাল, আলু ভর্তা এই হলো সকালের নাস্তা। অতঃপর ব্রিটিশ আমলের চান্দের গাড়িতে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে বাংলার অহংকার বিস্ময়কর বগা লেকে পৌঁছালাম। বগা লেকের রূপ পর্যটকদের কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে আবিষ্কার হয়। যতবারই আপনি বগার প্রান্তরে যান না কেন বিন্দুমাত্র আকর্ষণের কমতি হবে না। তবে কষ্ট পাই যত্রতত্র নিত্য নতুন ঘরের উপস্থিতি দেখে। প্রকৃতির বিস্ময় ২৭০০ ফুট উচ্চতায় স্বচ্ছ টলটলে বগা লেক আমাদের গর্ব, সুতরাং প্রত্যেকেরই দায়িত্ব বগা লেককে রক্ষার করা। দুপুরের আহার শেষে দার্জিলিং পাড়ার দিকে যাই। এবার দু-পা আর দু-হাতই সম্বল। ছোট চিংড়ি বড় চিংড়ি ঝরনাসহ নাম না জানা অনেক ঝরনা, ঝিরির গড়িয়ে পড়া পানির কলকল শব্দ আর পেজো তুলার মতো মেঘের আলিঙ্গন, না চেনা অনেক পাখির কিচিরমিচির শব্দ উপভোগ করতে করতে পৌঁছে গেলাম ছবির মতো সুন্দর দার্জিলিং পাড়ায়। এতটাপথপায়ে হেঁটেও ক্লান্তি নেই এক ফোঁটা। পূর্ব পরিচিত মি. লেমন ও লাল জাই নতুনঘর তুলেছে। সেখানেই আড্ডা জমালাম। বন্ধু কালাম আমাদের ভোজন রসনা মেটানোর জন্য তরুণী লাল জাইকে সঙ্গে নিয়ে তন্দুরী চিকেন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাতে মজা করে উদর পূর্তি করে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে সুনসান পাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। মেঘে মেঘে ষোলকলার সাথে মিতালী করে পথিমধ্যে কেওক্রাডং পাহাড়ের চূড়ায় কিছুটা সময় ফটোসেশন, অতঃপর মি. লালা বমের রেস্টুরেন্টে নাস্তা পর্ব সারলাম। রেস্টুরেন্টটি তার ছেলেরুবেল, ছেলের বউ ও মিসেস লাল বম নিজেদের তদারকিতে পরিচালনা করেন, ফলে ক্লান্ত ভ্রমণপিপাসিরা মি. লাল বমের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে নব উদ্যমে মূল গন্তব্যে এগিয়ে যাই। কেওক্রাডং হতে কিছুক্ষণ হাঁটার পরই পাসিংপাড়া এসে হাজির হলাম। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গ্রাম পাসিংপাড়া। পায়ের নিচেই মেঘ আর বৃষ্টির লুটোপুটি। আচমকা হাওয়ায় মেঘে ঢেকে যায় শরীর। ওহ্! চোখে না দেখলে কারো সাধ্য নেই অন্যকে বুঝানো গরম চা পান করেই এবার গভীর গিরিখাদের দিকে 'দে ছুটের' অভিযান। প্রায় এক হাজার ফুট নিচে সুনসান পাড়ার দিকে যাত্রা শুরু করলাম। পাথুরে রাস্তা, দিগন্ত ছোঁয়া বৃক্ষরাজি, অরণ্যের সাপ, ব্যাঙের লুকোচুরি অবলোকন করতে করতে পাড়ায় এসে হাজির। আজকের দিন ও রাতে এ পাড়াতেই থাকব। পাড়ারকারবারি মি. রবার্টের ঘরে গিয়ে উঠলাম। তারুণ্যে ভরপুর হাস্যোজ্জ্বল মি. রবার্ট ও মিসেস রেবেক আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। শরতের বিকাল, পাহাড়ি বালিকা পাইতের সাথে পাড়া ঘুরে কাটিয়ে দিলাম। রাতের আবহাওয়া দারুণ। ঢাকায় যখন তীব্র গরম, তখন ওখানে তিনটি কম্বল মুড়ে ঘুমালাম। মাঘ মাসের শীতের আমেজ। সত্যিই সেলুকাস বিচিত্র এই দেশ! খুব সকালে জুমের পান্তা খেয়ে মূল অভিযানে বের হলাম। চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত সুনসান পাড়া পিছনে ফেলে গভীর অরণ্য আর ঝিরি মাড়িয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছি। দু-চারটা জোঁক কখন যে রক্ত চুষে নিয়েছে টেরই পাইনি। হুঁশ ফিরেছে যখন দুয়েকবার চিত্পটাং খেয়েছি। নাসিরুদ্দিন কচিকে উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য বললাম, রক্তাক্ত হয়েছে দেহতাতে কি? ডাবল ফলস্ তো দেখতে পাবি, যা তুই এগিয়ে যা। প্রায় দু'ঘণ্টা হাঁটার পর অবারিত পানি পড়ার রিমঝিম শব্দ কানে ভেসে এল। নব উদ্যমে পা দুটো চলল, ওয়াও! বাংলার অজস্র সৌন্দর্যের মধ্যে তুমি 'ডাবল ফলস্' অনন্য। 'দে-ছুটের' দল নিজেদের সমর্পণ করল ঝরনার স্বচ্ছ টলটলে জলে। প্রতিটি ঝরনাই তাদের নিজস্ব সৌন্দর্যে উজ্জ্বল। একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা চলে না। দু'টি ঝরনা পাশাপাশি। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র দ্বৈত ঝরনা। দীর্ঘ সময় ঝরনার পানিতে সৃষ্ট জলাশয়ে সাঁতার কাটলাম। সেইসাথে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ, গুটিকয়েক আকর্ষণীয় ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার পিছনের বন্ধুকে ফুলের শুভেচ্ছা। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন 'ডাবল ফলস্' অভিযান সমাপ্ত করে এবার ফেরার পালা। দু'দিন যাবত মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।আপন ঘরে যাওয়ার জন্যমন আনচান করছে। বিদায় সুনসান পাড়া, বিদায় মনে রং ধরানো বান্দরবান জেলা। স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রবে মি. রবার্ট, মিসে রেবকে চঞ্চলা কিশোরী পাইতে ও দার্জিলিং পাড়ার মি. লেমন এবং
Check out https://steemit.com/@a-0-0
This post has received a 0.52 % upvote from @drotto thanks to: @shadown.