রিয়া !!! আমার টাই টা খুঁজে পাচ্ছিনা। -- দাঁড়ান আমি খুঁজে দিচ্ছি।

in #partiko6 years ago

-- রিয়া !!!
আমার টাই টা খুঁজে পাচ্ছিনা।
-- দাঁড়ান আমি খুঁজে দিচ্ছি।
আজ অফিস যেতে অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে সাব্বিরের।
খুব তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে টাই পড়তে ভুলে গিয়েছে সে।
-- এই তো। পেয়েছি দাঁড়ান আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
এই বলে সাব্বিরের পাশে যেতেই সে রিয়ার হাত ধরে ফেলে।
-- না প্রয়োজন নেয়। আমি পড়ে নিব, বাই টেইক কেয়ার।
সাব্বির অফিসের কাজে বের হয়ে গেল।
এদিকে রিয়া মুখ নিচু করে এখনো সাব্বিরের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু একটু ঝাপসা লাগছে সামনের সিঁড়িটা।
হয়ত নিয়মিত আজও তার চোখের কোণে পানিগুলো খেলে বেড়াচ্ছে।
পেছনে কারো হাত তার ঘাড়ে অনুভব করতে পারল সে।
চমকে গিয়ে চোখের পানি মুছতে গিয়ে পুরোটা মুছতে সক্ষম হলনা।
-- বৌমা।
-- হ...হ্যা আম্মা। কিছু বলবেন. ???
-- তোমার চোখে পানি কেন মা ???
কি হয়েছে ???
-- ও কিছুনা। হয়ত পোকা পড়েছে।
-- মা রে....
আমি সব বুঝি.....!!!
তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।
আজ আমার জন্যে তোর এই অবস্থা।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন রিয়ার শাশুড়ি।
-- ছিঃছিঃ মা আপনি এসব কি বলছেন. ???
-- হুম ঠিকই বলছি।
তবে একটা কথা মাথায় রাখ, এত তাড়া ভেঙ্গে পরলে চলবেনা।
একটা ছেলেকে মেয়েরাই ভাল হ্যান্ডেল করতে পারে।
তুই একদম ভেঙ্গে পরবিনা। আমি আছি তো।
-- অবশ্যই আম্মা।
আপনি দোয়া করবেন, আমার জন্যে।


জানালার পাশে চায়ের কাপ হাতে বসে আছে রিয়া।
সামনে গল্পের বই।
আর টিভি ও চলছে।
সিরিয়াল দেখার ফাঁকে ফাঁকে হিরু-হিরুইন এর রোমাঞ্চ গুলো বেশ ভাল ভাবেই লক্ষ করছে সে।
মূহুর্তেই মন টা খারাপ হয়ে গেল তার।
কারণ বিয়ে হয়েছে আজ তিন মাস। সাব্বির কখনো টিভির ঐ হিরুর মতো করে রিয়ালে জড়িয়ে ধরেনি।
সাব্বিরের বাবা- মা এবং রিয়ার বাবা-মা তখন একই গ্রামে বসবাস করত।
তাদের দুই পরিবারের মধ্যে বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল বিশেষ করে সাব্বিরের মা আর রিয়ার মা, এরা ছিল একে অপরের শুধু বান্ধবী না। একে বারে বোনের মতো।
সাব্বিরের বাবার চাকরির সুবাদে সাব্বিরের পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে গেলেও রিয়ার পরিবার গ্রামেই থেকে যায়।
আর সাব্বির ভাল পড়ালেখা করার জন্যে বাইরে চলে যায়।
পড়া শেষ করে বাংলাদেশে আসার পর থেকেই তাকে বিয়ের জন্যে চাপ দেওয়া হয়।
রিয়া ছোট বেলা থেকেই বেশ কিউট এবং সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল।
তখন থেকেই রিয়ার মা কে আগে ভাগেই সাব্বিরের সাথেই ওর বিয়ের কথা বলে রেখেছিলেন সাব্বিরের মা।
এখন সব কিছু ঠিকই ছিল।
কিন্তু বিদেশ থেকে আসার পর যে ধরনের মেয়েদের প্রতি সাব্বির আকৃষ্ট ছিল, রিয়া সে ধরনের মেয়ে নয়।
আর এতে সাব্বিরের অমত থাকা সত্বেও মায়ের আদেশে তাকে এই বিয়ে করতে হয়।
তাই আজ পর্যন্ত রিয়ার দিকে ভাল করে ফিরেও তাকায়না সে।
রিয়া খুব সাদাসিধা একটা গ্রাম্য মেয়ে।
লেখাপড়াও করেছে ভাল মত।
কিন্তু অন্যদের মত কোন প্রকার চঞ্চলতা তার মাঝে উপস্থিত নেয়। যা সাব্বির সবসময় ওর মাঝে খুঁজে বেড়ায়।
সাব্বিরের ফ্রেন্ডদের মতে রিয়া একটা খ্যাত।
ওর মত মেয়ে বিয়ে করা মানে নিজের জীবন নিজেই শেষ করে দেওয়া।
ফ্রেন্ডদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় রিয়া অনেক বার দেখে ফেলেছিল আর আড়ালে কাঁদত।


বিকেল পার হতেই কাজ কর্ম শেষ করে আবারও গল্পের বই এর দিকে মন দিল সে।
একটু পর কি মনে করে আলমারিত দিকে চোখ পরল তার।
কিছুদিন আগে একটা ছবির এলবাম দেখেছিল সে।
সেখানে সাব্বিরের বেশ কিছু ছবি আছে, যেগুলাতে ওদের ছোট বেলার ছবিও থাকার কথা সাথে সাথে চাবিটা নিয়ে আলমারি খোলে ফটোর এলবাম টা হাতে নিল সে।
সাব্বিরের ছবি গুলো বেশ সুন্দরই লাগছে।
সব ছবিতে কিউট একটা হাসি বিদ্যমান। বিয়ের পর থেকে এই টাইপের হাসি কখনো দেখেনি সে।
সারাক্ষণ কেমন জানি মুখটা ভার হয়ে থাকে তার।
এলবাম টা বেশ বড় ছিল।
ছবি গুলা দেখে শেষ হওয়ার পথে, তাই সেটা ঠিক স্থানে আবার রেখে দিতে গেলে সেখান থেকে ছোট একটা ডায়েরী রিয়ার চোখে পরে।
এলবামটা আলমারি তে রেখে দিয়েই ডায়েরীটা হাতে নিয়েই পড়তে থাকে সে।
বেশ পুরানো ডায়েরী, এটাতে সাব্বিরের অনেক মনের কথা লিখা আছে।
কিছু ইন্টারেস্টিং লেখাও ছিল।
স্পষ্ট লিখা আছে শান্তা নামক এক মেয়ের সাথে সাব্বিরের ভাল রিলেশন ছিল, পড়ার উদ্দেশ্যে বাইরে চলে যাওয়ার সময় সাব্বির শান্তাকে কথা দিয়েছিল পড়া শেষ করে এসেই তাকে তার ঘরের বৌ করে আনবে।
কিন্তু সাব্বির দেশে ফেরার আগেই শান্তার বিয়ে হয়ে যায়।
-- আহারে বেচারা, শেষ মেস ছ্যাঁকা !!!
হিহিহি করে হাসতে লাগল রিয়া।
আবারও ডায়েরীর লেখার দিকে মন দিল সে।

Posted using Partiko Android

Sort:  

Thank you so much for being an awesome Partiko user! You have received a 1.30% upvote from us for your 195 Partiko Points! Together, let's change the world!

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.21
JST 0.035
BTC 98789.27
ETH 3346.59
USDT 1.00
SBD 3.08