শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ৩৮

in #new5 days ago
আসসালামুআলাইকুম

গল্পের বাকি অংশ সুরু করা যাক ......

.
আগে কখনো দেখিনি৷ আমি নিজের অশ্রু লুকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কোনোভাবেই তাকে দেখাতে চাচ্ছিলাম না। হৃদয়টা ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যাচ্ছিল। জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল অন্তর। আর মস্তিষ্কের নিউরনে ছুটে বেড়াচ্ছিল নানান ধরনের চিন্তা। ভাবতে লাগলাম, এসব কী করে হতে পারে। একজন মানুষ যার সবকিছু আছে। সবকিছু সুন্দর করে গুছানো আছে। নিজেকে সামলে নিলাম। চাচ্ছিলাম না আমার কষ্টটা তাকে দেখাতে; আরও ভেঙে দিতে তাকে।

IMG_7491.jpg

For Photos I use:


Camera
Iphone 12 Mini
Lens
Wide 26 mm-Equivalent
Photographer
@fxsajol
Location
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh
Processing photos
Outdoor

এই ভাইকে আমি নিজের চোখের সামনে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখেছি। একটা সময় সে সব ভুলে যেতে শুরু করল। একই কথার পুনঃপুন উচ্চারণ করে যেত। ফাইনাল ইয়ারে এসে তাকে ভার্সিটি ড্রপ দিতে হলো। এ অবস্থায় ভার্সিটিতে টিকে থাকা যায় না। খুব মেধাবী ছিল আমার এই ভাইটি, কিন্তু সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেল।

তার কোনো চাকরি নেই; মূলত কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এ কারণে তার হবু বউয়ের পরিবার আর তার সাথে তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইল না। এটা মেনে নেওয়া তার জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমার মনে আছে, এই নিয়ে সে প্রচণ্ড কাঁদত। সে মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসত, কতটা কেয়ার করত, আর সে কতটা হতাশ হয়ে গিয়েছিল, সব বলত আমাকে। পরবর্তী সময়ে ভাইটার লিখতেও কষ্ট হতো, আর তার ডান চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল। টিউমরটা ব্রেইনের বাম পাশে ছিল, তাই শরীরের ডান দিকের সবকিছুকে এফ্যাক্ট করল। মেমোরি লসের কারণে ভাইটা খুব দ্রুতই সুরাগুলো ভুলে গেল। এমনকি কীভাবে সালাত আদায় করতে হয় তাও ভুলে গেল। এক বছরের মাথায় তার ডান হাত প্যারালাইজড হয়ে গেল। আর তার দৃষ্টিশক্তি তার থেকে কেড়ে নেওয়া হলো। এটা দেখা আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়াল। যে ভাইকে আমি এত্ত ভালোবাসি, সেই ভাইটা এত্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর আমি কিছুই করতে পারছি না।

আমি তার কাছে প্রতিদিন যেতে শুরু করলাম। তার সামনে সুরা পড়তে শুরু করলাম, যেন সেও আমার পড়া শুনে শুনে পড়তে পারে। যখন আমি সুরা ফাতিহা পড়তাম তখন সেও ধীরে ধীরে আমার সাথে সাথেই তা উচ্চারণ করত। আমি তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম, এই ভাইটি সেই একই ভাই, যে কিনা খুন মেধাবী ছিল। যে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় সূচনার অপেক্ষায় ছিল। সেই একই ভাই যে খুব ধনাঢ্য পরিবার থেকে এসেছিল। এই সেই একই ভাই যে তার বিয়ে নিয়ে দিনের পর দিন অবিরাম কথা বলে যেত। এই সেই একই ভাই যার সবকিছু ছিল। সবকিছু। কিন্তু এখন! এখন আমি তাকে ১০ মিনিট আগে কী বলেছি, এটাই সে খুব কষ্ট করে মনে করতে পারে। সে বিয়েও করতে পারবে না। আর এখন তার কুরআন পড়তেও প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়। আগে সে তেমন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ছিল না। তাই কুরআন পড়াটা তার কাছে বরাবরই কঠিন। কিন্তু এখন সে আল্লাহর দিকে ফিরে যাচ্ছে। সবকিছু পেছনে ফেলে।

আল্লাহ তাকে সবকিছু দিয়েছিলেন আর আল্লাহই সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন। এক মাস আগেই একটা কল পেলাম আমি, আর জানলাম ভাইটা মারা গিয়েছেন। তার জানাজা আজকেই। আরও কিছু ভাইসহ আমি তার শেষ গোসল দিলাম; তার প্রাণহীন শরীরটা দেখলাম। তাকে কবর দিয়ে আমি ঘরে ফিরলাম।

পরদিন আমি একাকী বসে আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে ভাবছিলাম। আমার ভাইটার মৃত্যু আমাকে উপলব্ধি করাল, কেন আমরা এখানে এসেছি; শুধুই তাঁর ইবাদত করতে। আপনার সবকিছু থাকতে পারে। কারুনেরও ছিল। ফিরাউনেরও ছিল। ছিল নমরুদেরও। কী হলো তাদের সবার? এক জীবনের ৬টা বছর আমি এই ভাইটার সাথে কাটালাম। তাকে জানলাম, ভালোবাসলাম। সে বেঁচে থাকা অবস্থায় বা তার মৃত্যুর পরও আমি এক ফোঁটা অশ্রু ফেলিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর পরদিন; আমি কাঁদলাম। কাঁদলাম কারণ, আমি আমার রবের ক্ষমতা বুঝতে পারছিলাম। আমরা সব সময়ই বলি, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব। কথাটা খুব সাদামাটা হয়ে গিয়েছে। মুখে মুখেই বলে বসি। কখনও উপলব্ধি করি না, বিশ্বাসও করি না। যদি সত্যিই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আমরা কুরআন পড়ার জন্য বা সালাত পড়ার জন্য জানপ্রাণ এক করে দিতাম, যেমনটা শেষ সময়ে আমার ভাইটা করেছিল।

IMG_7503.jpg

For Photos I use:


Camera
Iphone 12 Mini
Lens
Wide 26 mm-Equivalent
Photographer
@fxsajol
Location
Mirpur 12 , Dhaka, Bangladesh
Processing photos
Outdoor

আমার ভাইটার দৃষ্টিশক্তি ছিল না। হাত ছিল প্যারালাইজড। স্মৃতিভ্রম হতো। তবুও ভাইটা প্রতি সকালে উঠে যেত আর আমাকে বার বার কুরআন তিলাওয়াত করতে বলত। আমি তিলাওয়াত করতাম, সে মুখে মুখে পড়ত। আর আমরা? আমাদের সব ঠিক আছে। তবুও কুরআন পড়ার জন্য ন্যূনতম কষ্ট স্বীকার করি না আমরা। আমরা যদি বিশ্বাস করতাম আমরা আমাদের রবের কাছে ফিরে যাব, তাহলে অবশ্যই আমরা আল্লাহর জন্য পরিশ্রম করতাম।

আমার ভাইটার দুনিয়াবি জিনিসের প্রতি আকর্ষণ ছিল ঠিকই; কিন্তু যখন মৃত্যু তার দুয়ারে কড়া নাড়ল তখন আর তার কাছে ওসব জিনিসের কোনো মূল্যই রইল না। কেননা সে জানত, তার ইমান ছাড়া এসবকিছু যে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে না। আল্লাহ আপনাকে যখন ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে সব দিতে পারেন, আবার নিয়েও নিতে পারেন। এটা তাঁর জন্য খুবই সহজ। আমি আমার ভাইটাকে ভালোবাসি আর দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাকে কবুল করে নেন। তার জন্য দোয়া করার অনুরোধ রইল। আর যদি আপনারা সত্যিই এটা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের সবাইকেই আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আপনার যদি সত্যিই এই ভয়টা থাকে, তবেই কেবল, তবেই আপনি নিজের দ্বীনের জন্য পরিশ্রম করতে পারবেন।

This is original content by @fxsajol . Stay with me and get more post about travel, photography, life, story, technology and motivation etc. Please upvote, comment and resteem my post. Again thank you so much 😊
সময় নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
Sort:  

Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 9.195393287711065 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68183.21
ETH 3545.21
USDT 1.00
SBD 2.82