নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৬

in #newlast month

শতাব্দী ভাবী মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। বাড়ির মহিলারা মিলে তাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ চোখে মুখে পানি ছিটাচ্ছে। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এমন ঘটনা স্বাভাবিক। কিন্তু চিন্তা তো হয়ই। সবাই খুব করে তার হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগল। তখনই ভিড় ঠেলে তারেক ভাই কাছে এলেন। এসেই তিনি অস্থির হয়ে বললেন, সবাই সরুন এখান থেকে। ভিড় করবেন না । তিনি স্ত্রীর কাছে গিয়ে বসলেন। তার মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে চোখ মুখ দেখে তিনি বললেন, ওর তো জ্ঞান ফিরছে না। ওকে ঘরে নিয়ে যেতে হবে। সবাই তাড়াতাড়ি সরে গেল। উৎপলও দূরে গিয়ে দাঁড়াল । তারেক ভাই আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শতাব্দী ভাবীকে কোলে তুলে নিলেন। মুরব্বীদের লজ্জা না করে তিনি খুব যত্ন সহকারে স্ত্রীকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলেন । উৎপল এক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। তার মনে এখন একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। কে জানে?

IMG_6613.jpg

সৃষ্টিকর্তা হয়তো আর কয়েকটা বছর সময় দিলে আজকে যেই জায়গায় তারেক ভাই আর শতাব্দী ভাবী ছিল সেই জায়গায় হয়তো শতদল আর এক হাজার বছর থাকতে পারতো! উৎপল ম্লান হাসল। যাক, কেউ তো সুখে আছে! তাহলেই হবে। তার চোখে আবার পানি। কতবার মোছা যায়? চারপাশে এত মানুষ। উৎপল ভাবল বড়ো বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াবে । বড়ো বারান্দার সামনে গিয়ে সে দেখল তিতলি আপু আর অন্তর ভাই সেখানে। তিতলি আপু অন্তর ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে। আর অন্তর ভাই এক হাতে তাকে ধরে রেখেছে। উৎপলের চোখে পানি বাড়তে লাগল । কিন্তু মুখে হাসি লেগে রইল। যাক, কারো তো প্রেমটা হল ! উৎপল আর বারান্দায় গেল না। অন্তর ভাই আর তিতলি আপুর সাথে পরেও আলাপ করা যাবে। তারেক ভাইয়ের সাথে পরেও জরুরি কথা বলা যাবে। ভাবীর কাছে তার বোনের খবর পরেও জানতে চাওয়া যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো আর ফেরত আসবে না। ভালোবাসার মুহূর্ত এত সহজলভ্য নয়। যে পায় না সে খোঁজে। যে পায় সে ধরে রাখতে চায়।

না। মন যেখানে বাঁধা পড়ে হাত-পা সেখান থেকে ছুটে আসতে পারে না, পঙ্কজ। আমিও পারিনি। আমি বারবার তোমাকে ভালোবেসেছি। আমি বারবার তোমাকে চোখে হারিয়েছি। আমি বারবার তোমার কণ্ঠ শুনেছি।... আর সেটাই আমি সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছি। আমি জেনেশুনে ভুল করেছি। আর বারবার করেছি। শুধু ভালোবেসে করেছি। আচ্ছা পদ্মফুল, কেমন হতো যদি তোমার সাথে আমার দেখা না হতো? কেমন হতো যদি তোমাদের পরিবারে আমার বুবুর বিয়ে ঠিক না হতো? অথবা যদি অন্তর ভাইয়া তিতলি আপুকে ভালো না বাসতো? কিংবা তুমি যদি সেদিন খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি না পরতে? অন্তর ভাইয়া যদি সেদিন খয়েরি পাঞ্জাবি না পরতো? কী হতো তুমি যদি অসময়ে বড়ো বারান্দাটায় গিয়ে না দাঁড়াতে? সত্যিই! তোমাকে এই অবেলায় ভালোবেসে না ফেললে কি আজ আমার বিদায় বেলায় দুজনের এত কষ্ট হতো? ঠিকই জানো শতদল।

তোমার সাথে দেখা হওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল। ইতি তোমার এক সহস্র বছর উৎপলের চোখ পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে গেছে। চিঠিটা এই পর্যন্তই। কেউ দেখার আগেই সে দ্রুত পরনের সাদা পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছে নিল । ডায়েরিটা বন্ধ করে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে। সবাই আছে শুধু উৎসবের দিনে বাড়ি মাতিয়ে রাখা মানুষটা নেই। অন্তর ভাইয়ের ভাষায়, সবাই আছে কিন্তু কেউ যেন নেই ৷ খাঁ খাঁ করতে থাকা বাড়িটা যেন প্রতি মুহূর্তে বাড়ির ছোটো মেয়েটার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। প্রতিটা পদে পদে সে যেন জানান দিচ্ছে কেউ একজন নেই। উৎপলের চোখে শেষবার দেখা সহস্রাব্দীর মুখটা ভেসে উঠল। সেই রোগ ভারাক্রান্ত মুখটা। তার কানে বাজতে লাগল তাকে বলা সহস্রাব্দীর শেষ কথাটা। ‘আপনার ওই খয়েরি পাঞ্জাবিটা পরে আর কোনোদিন কোনো মেয়ের সামনে যাবেন না!' উৎপল যখন এসব পুরোনো দিনের স্মৃতি হাতড়াচ্ছে ঠিক সেই সময় রান্নাঘরের একটুর সামনের দিকে একটা হই হই পড়ে গেল । উৎপল ডায়েরি

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 65124.62
ETH 3554.39
USDT 1.00
SBD 2.46