নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ২২

in #newlast month

সহস্রাব্দীর কী এমন হয়েছে যা জানতে পারলে সে ভেঙে পড়তে পারে? আর সে ভেঙে পড়বে এমন কেন মনে হচ্ছে সবার? উৎপল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, হে আমার এক হাজার বছর, সবাই জেনে গেল আমি তোমাকে ভালোবাসি । কেবল তুমি জানলে না! আজকে শেষ ক্লাসের সময় থেকেই সহস্রাব্দীর শরীর অনেক বেশি খারাপ লাগছে। ছুটির সাথে সাথেই সে রাদিয়াকে অনুরোধ করল তাকে একটু কষ্ট করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসতে। রাদিয়া বিনাবাক্য ব্যয়ে রাজী হল । কাছের বন্ধুর এমন কষ্ট দেখা নিজের জন্য কম কষ্টের না । রাদিয়া সহস্রাব্দীকে ধরে ধরে কলেজ গেট পর্যন্ত নিয়ে এল। কিন্তু গেটের সামনে এসে যা দেখল তা দেখার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। উৎপল দাঁড়িয়ে আছে। তাকে অনেক উদ্ভান্ত দেখাচ্ছে। সহস্রাব্দীকে দেখেই সে কথা বলার জন্য এগিয়ে এল। সহস্রাব্দী তাকে না দেখতে পাওয়ার ভান করে রাদিয়ার হাত ধরে বলল, বাড়ি চল ৷ রাদিয়া আস্তে করে সহস্রাব্দীর হাতটা ছাড়িয়ে ধরা গলায় বলল, উনি তোকে বাড়ি নিয়ে যাবে সহু। প্লিজ একটু কথা বল উনার সাথে। উনার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না ।

IMG_6595.jpg

রাদি আমার কথাটা শোন! কিন্তু রাদিয়া সেখানে নেই। সে চলে গেছে। সহস্রাব্দী এখন একা উৎপলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। এই মুখটা সে আর কোনোদিনও দেখতে চায়নি। সাথে না চেয়েছে নিজের এরকম মুখ তাকে দেখাতে। উৎপল উৎকণ্ঠিত গলায় বলল, আপনার এই কী চেহারা হয়েছে সহস্রাব্দী? কী হয়েছে আপনার? আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না কেন? সহস্রাব্দীর গা গুলাতে শুরু করল। তার মনে হচ্ছে সে এখনি পড়ে যাবে। উৎপল আবার বলল, আপনি আমার ফোন ধরছেন না কেন? মেসেজেরও রিপ্লাই দিচ্ছেন না। আপনি তো কখনো এমন ছিলেন না! সহস্রাব্দীর দম আটকে আসছে। অনেক কষ্টে সে গলা দিয়ে স্বর বের করল। ধীরে ধীরে বলল, যার উপরে যাওয়ার ডাক চলে এসেছে সে কি আর অন্য কারো ডাক শুনতে পায়? কী বলছেন এসব? আপনার কিচ্ছু হবে না । আমি আছি তো! বড়ো বড়ো ডাক্তাররা আমার কিছু করতে পারল না সেখানে আপনি আর কে মশাই?

সহস্রাব্দীর জেদের কাছে সবাইকে হার মানতে হল। ডাক্তারের নির্দেশ আছে তাকে জীবনের শেষ মানসিকভাবে উত্তেজিত না করা। সবাই তাই তাকে তার দিনগুলো নিজের মতো চলতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল । সহস্রাব্দী আগের মতো কলেজে যায়। পড়াশোনা করে, পরীক্ষাও দিয়েছে। খুব বেশি মানুষ জানে না তার অসুস্থতার কথা। যারা জানে তারাও প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অভিনয় করে যায়। সহস্রাব্দীর চেহারা অনেক বদলে গেছে। চোখের নিচে কালশিটে পড়ে চোখ গর্তে ঢুকে গেছে। তার শ্যামলা মুখেও র‍্যাশের দাগ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ওজন কমে গেছে। শরীর শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। আর তার সেই লম্বা ঘন কালো চুল পড়তে পড়তে এখন আর অল্প কিছুই অবশিষ্ট আছে। সেই চুলে এখন আর বেনী হয় না। কলেজে যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ একটা পাতলা ঝুঁটি করা যায়।

সহস্রাব্দী রোজ তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসে। ড্রেসিং টেবিল ভর্তি কত সাজগোজের সুন্দর সুন্দর জিনিস। কিসের অভাব ছিল তার? কোনোদিন একটা লিপস্টিকও কারো কাছ থেকে চেয়ে পরতে হয়নি। দুইদিনের এই দুনিয়ার জীবনে মানুষের কত প্রচেষ্টা নিজেকে রাঙিয়ে রাখার। অথচ এই সবই একসময় মূল্যহীন হয়ে পড়ে। এত সুন্দর শরীর মাটির সাথে মিশিয়ে মানুষকে ফিরে যেতে হয় সৃষ্টিকর্তার ডাকে। সেই ডাকেই সহস্রাব্দী এখন ফিরে চলছে। সে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আগেও পড়তো। কিন্তু এখন একনিষ্ঠতা বেশি। ইহকালে শান্তি পায়নি তাই পরকালে সেই শান্তি খুঁজে পেতে চায়। তার সবই আগের মতো চলছিল। কেবল একটা জিনিস বদলে গেছে যেটা কেউ জানে না। সহস্রাব্দী এখন আর উৎপলের ফোন ধরে না। যখন ফোন খোলা থাকে তখনও না। আগে সে প্রতিদিন ফোন না ধরলেও যখন মেসেজ দেখতো তখন একটা রিপ্লাই দিত। এখন সে সেটুকুও করে না। এদিকে উৎপল পাগলপ্রায়। প্রায় এক মাস হতে চলল সহস্রাব্দীর সাথে সে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছে না। সে নিরুপায় হয়ে তারেক ভাই, শতাব্দী ভাবী, অন্তর ভাইয়ের কাছে পর্যন্ত খোঁজ নিল। কিন্তু সে খুব অবাক হল যখন দেখল সবাই তার কথা এড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ তাকে সহস্রাব্দীর কোনো খবর দিতে পারছে না অথবা দিতে চাইছে না। কিন্তু কেন?

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 57297.27
ETH 3101.41
USDT 1.00
SBD 2.41