নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৭

in #new4 months ago

তোমাকে দেয়া সবচেয়ে বড়ো কথাটা আর আমার পক্ষে রাখা সম্ভব হল না। আমি আর পুলিশ অফিসার হতে পারলাম না। আর অন্য কথাগুলোও রাখতে পারব কিনা জানি না । পদ্মফুল জানো, আমি কেন পুলিশ অফিসার হতে চাইতাম? আইনের হাতে আমার বাবার বিচার করার জন্য। তার এই ব্যাবসায়িক জীবনে তিনি অনেক মানুষের জীবন নিয়েছেন। বেশি টাকা রোজগারের লোভে তিনি অনেক সময় অনেক জাল ব্যবসা করেছেন। আমি ছোটো থেকেই সব বুঝতাম। কিন্তু বাবাকে খুব ভয় পেতাম। কখনো প্রতিবাদ করার সাহস পেতাম না । এই বাড়িতে যেকোনো বিষয়ে তার কথাই ছিল শেষ কথা ।

পঙ্কজ, তুমি এতদিন ধরে খুব ভেবেছো তাই না যে আল্লাহ তোমাকে কেন এত বড়ো শাস্তি দিল? কেন তোমার ভালোবাসাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিল? উৎপল শাস্তি তোমার নয়। শাস্তি আমার বাবার। আমি ছোটো বেলা থেকেই দাদীমার অনেকগুলো আদর্শ ধারণ করেছিলাম নিজের মধ্যে। তার মধ্যে একটা ছিল ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আমি বড়ো হতে হতে যখন দেখলাম মানুষের আদালত বাবার বিচার করতে পারছে না তখন ঠিক বুঝে গিয়েছিলাম যে আল্লাহই এই দুনিয়ার বুকে তার বিচার করবে। আর তাই হল। বাড়িতে বুবুর বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় থেকেই আমার মাঝে মাঝে শরীর খারাপ করতে শুরু করল। আমি তখনই বুঝেছিলাম আমি এই পৃথিবীতে আর বেশিদিন নেই। আল্লাহ এই পাপের দুনিয়া থেকে আমাকে নিয়ে যাবেন ভেবে খুব শান্তি পেয়েছিলাম। সত্যি। বাবার কর্মফলের শাস্তি বাবা পেয়ে যাবেন আর আমি মরে পাবো শান্তি । সব ঠিকঠাক ছিল, শতদল। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখান দিয়ে অনেক বড়ো একটা ভুল হয়ে গেল। আমার তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল । প্ৰথমে আর দশটা সাধারণ মানুষের দলে তোমাকে ভিড়াবার চেষ্টা করলেও একসময় লক্ষ্য করলাম কখন যেন নিজের অজান্তেই তোমাকে মন দিয়ে বসেছি। এই প্রথম আমি কষ্ট পেলাম। এই প্রথম আমার মনে হল বিনাদোষে কেউ শাস্তি পাবে। বিনাদোষে কেউ কষ্ট পাবে। আমি তাই আপ্রাণ চেষ্টা করলাম তোমার থেকে ছুটে ছুটে পালানোর।

IMG_6615.jpg

বেলা বাড়তে বাড়তে আরো আত্মীয়রা আসতে লাগল। শতাব্দীর শ্বশুরবাড়ির সবাই চলে এল। উৎপলও তাদের সাথে সাথে বাড়িতে পা রাখল । শতাব্দী তাকে দেখেই কথা বলতে চলে এল । তার ছয় মাস চলছে। খুব ধীরে ধীরে সন্তর্পণে চলেফেরা করতে হয়। তার চেহারাও অনেক ক্লান্ত লাগছে। পরনে একটা পাতলা সুতির শাড়ি আর চুলগুলো হালকা উশকো খুশকো। তাকে দেখে কিছুটা উদ্ভ্রান্ত আর অসুস্থই লাগছে। ছোটো বোনের এভাবে চলে যাওয়ার ধকল সামলানো চাট্টিখানি কথা নয়। আবার নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে তাকে জোর করে শক্ত থাকতে হচ্ছে। জীবন অনেক কঠিন লড়াই দিয়েছে তাকে। সে কেবল লড়ে যাচ্ছে। খুব ধীরে ধীরে শতাব্দী উৎপলের কাছে এগিয়ে আসতেই উৎপল বলল, কেমন আছেন ভাবী? শরীর কেমন এখন? শতাব্দী উৎপলের চেয়ে বছর খানেকের ছোট।

কিন্তু কোনোদিন উৎপল তাকে আপনি আজ্ঞে ছাড়া কথা বলেনি। কারণ এই পৃথিবীতে বয়সের চেয়ে সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি। শতাব্দী একটু দম নিয়ে বলল, এইত ভাই। আছি ভালোই। তোমার ভাতিজি শুধু লাথি মারে। তাই কষ্ট হয়। শত মন খারাপের মধ্যেও উৎপল একটু হাসল। রিপোর্টে দেখা গেছে মেয়ে সন্তান হবে। দুই বাড়ির লোকেরাই কম বেশি খুশি। উৎপল নিশ্চিত সহস্রাব্দী জানতে পারলে আরো অনেকের চেয়ে অনেক বেশি খুশি হতো। কিন্তু সবার ভাগ্যে সব খুশি হয়তো আল্লাহ লেখেন না। বোনের আকস্মিক চলে যাওয়ার পর এটুকুই তো শতাব্দীর ভালো থাকার শেষ অবলম্বন। নিজের মেয়ের মধ্য দিয়ে সে তার হারানো ছোট্ট বোনটিকে ফিরে পেতে চায়। শতাব্দী আবার বলল, তোমাকে একটা কথা বলার আছে ভাই । জ্বি ভাবী বলুন । সেদিন দুপুরে আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম সহুর নম্বর থেকে। হ্যাঁ ভাবী আমি বুঝতে পেরেছিলাম আগেই । যাক ভালো। দাঁড়াও তোমার জন্য একটা জিনিস আছে। সহু রেখে গেছে। তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 58085.08
ETH 2337.41
USDT 1.00
SBD 2.37