নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৯

in #new4 months ago

কোনোদিন রাতের বেলা সে লেখে, সহস্রাব্দী একটাবার জানালার পাশে গিয়ে দেখুন চাঁদটা কত সুন্দর। ঠিক আপনার মতো । সহস্রাব্দী এই মেসেজগুলো দেখার সাথে সাথেই আকাশের মেঘ দেখতে ছুটে যায়, জানালায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে শুরু করে। কেবল উৎপলের কথা রাখতে সময়ে অসময়ে সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কোনোদিনও সে একটা মেসেজেরও রিপ্লাই দেয় না ফোনে। কখনো কখনো উৎপলের এমন ছেলেমানুষি মেসেজ পেয়ে সে হেসে ওঠে। আর কখনো কখনো তার কান্না বাধ মানতে চায় না। তার খুব ইচ্ছে করে মেসেজগুলোর রিপ্লাই দিতে। কিন্তু মায়ার জাল যত বড় হবে তাকে গোটানো ততই কষ্ট হবে। তাই সে তার হাতে থাকা অবশিষ্ট সময়টায় আর কখনো উৎপলের সামনে যাবে না ভেবেই ঠিক করেছে। তার সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গা হল উৎপল তাকে বোঝে। তার কষ্টটা বোঝে। তাই তার সাথে কথা বলা কিংবা দেখা করার জন্য উৎপল এখন আর অনুরোধ করে না । সহস্রাব্দী উৎপলের প্রতিটা মেসেজের উত্তর তার ডায়েরিতে লিখে রাখে ।

এই ডায়েরি উৎপলের কাছে কোনো একদিন যাবে। তখন সেও জানতে পারবে যে তার এক হাজার বছর সত্যিকার অর্থে তাকে কতটা ভালোবেসেছিল। আজ সহস্রাব্দী সেই ডায়েরির এক পাতায় উৎপলকে একটা চিঠি লিখতে বসেছে। তার চোখ থেকে দুই ফোটা পানি ডায়েরির পাতার উপর পড়তেই সে সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠল, আমিও তোমাকে দূর থেকে ভালোবাসবো শতদল। আমিও দূর থেকেই ভালোবাসবো । সহস্রাব্দীর টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। প্রথম পাঁচটা পরীক্ষা তার ভালোই হইল। এখন সে পরীক্ষা দিয়েই আর কোনোদিক না গিয়ে সোজা বাড়ি আসে। আজও পরীক্ষা দিয়ে সে তাড়াতাড়ি ফিরে এল। উৎপল তাকে মেসেজ দিয়েছে, সহগ্রাব্দী আমি জানি আপনার আজকের পরীক্ষাটা আগেরগুলোর চেয়ে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়েছে। কী ঠিক বলেছি না? সহস্রাব্দী ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। আজ তার মনটা অনেক ভালো। কারণ আজ তার পরীক্ষা আসলেই সবগুলোর চেয়ে সবচেয়ে ভালো হয়েছে। সে যোহরের নামাজ পড়ে এসে ডায়েরিতে মেসেজের উত্তরটা দিবে তাই ঠিক করল ।

IMG_6597.jpg

শতাব্দী কিছুদিন হল বাড়িতে এসেছে। সহস্রাব্দীর সিদ্ধান্ত শুনে সে একদিন তাকে বলল, এখন এত পড়াশোনা করা, খাটাখাটনি করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার কি খুব বেশি দরকার? সহস্রাব্দী ম্লান হেসে বলল, কেন বু? মারা তো সবাই যাবে। তাও তো সবাই একদিন একদিন করে বাঁচে। বেঁচে থাকার সময়টা দুনিয়ার বুকে ভালো কিছু করে যায়। একদিন মারা যাবে জেনেও কেউ তো জীবনের হাল ছেড়ে দেয় না । শতাব্দী ইতস্তত করে বলল, না সহু। আমি সেভাবে বলিনি। তোর শরীরটা কদিন ধরে খুব বেশি খারাপ। এত চাপ নিলে শরীর আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে না? সহস্রাব্দী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি একজনকে কথা দিয়েছি যে আমি এইচএসসিতে গোল্ডেন পাবো। আল্লাহ আমাকে আগে আগে নিয়ে গেলে তো নিয়েই গেল। আর যদি নিয়ে না যায় আমি যেন বলতে পারি যে আমি আমার কথা রেখেছি। শতাব্দী এই কথার পর আর কিছু বলল না। সহস্রাব্দী বোনকে লুকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।

উৎপলের সাথে তার এখন কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু সহস্রাব্দী যদি চায় যেকোনো সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। উৎপলের ফোন তার জন্য সবসময় খোলা। কিন্তু সহস্রাব্দী ইচ্ছে করেই তাকে কখনো ফোন দেয় না । উৎপলও সহস্রাব্দীকে এখন আর ফোন দেয় না। কেবল রোজ কতগুলো করে মেসেজ পাঠায়। কখনো সে লেখে, এখন আপনার শরীর কেমন লাগছে সহস্রাব্দী? অস্থির লাগলে আপনাদের বড় বারান্দাটায় গিয়ে দাঁড়াবেন। দেখবেন আপনার বুবুর গায়ে হলুদের রাতের কথাটা মনে পড়ে যাবে। মনে হবে জীবন কত সুন্দর । কখনো উৎপল লেখে, সহস্রাব্দী আজকে কী দিয়ে ভাত খেয়েছেন? ভালো লেগেছে খেতে? আচ্ছা খেয়েছেন তো? শুনুন কারো রাগ কখনো খাবারের উপর দেখাবেন না । কখনো সে লেখে, সহস্রাব্দী দেখেছেন আকাশে কত মেঘ করেছে? আজকে নির্ঘাত বৃষ্টি নামবে। আপনার মন চাইলে ভিজবেন কিন্তু। কোনো বারণ নেই ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 64876.28
ETH 2650.41
USDT 1.00
SBD 2.81