নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ১৮
তিতলি তার ফুপা সাদাব সাহেবের বাড়ির বড়ো বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছে। শুধু সে না, সাদাব সাহেবদের আরো অনেক আত্মীয় একে একে এই বাড়িতে আসছেন। প্রায় এক বছর আগেও এই বাড়িতে এমন শ'খানেক লোকের আগমন ঘটেছিল। তখন এটা ছিল উৎসবের বাড়ি। তার ফুপাতো বোন শতাব্দীর বিয়ে উপলক্ষে । আর আজ...। তিতলি না তাকিয়েই বুঝতে পারল অন্তর তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সাথে সাথে তার চোখদুটো ছলছল করে উঠল। সে অন্তরের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল, আপনাদের সাথে এভাবে দেখা হবে কোনোদিন ভাবিনি ।
অন্তর এতক্ষণ একটু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিতলির শুকনো মুখ দেখে সেও নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলল, আমিও ভাবিনি । কেন এমন হল বলুন তো? আল্লাহ কিসের শাস্তি দিল? এই এক বছরে আপনার সাথে কতবার দেখা করতে চেয়েছি, কতবার আপনার সাথে কাছ থেকে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু কোনোদিন এভাবে কথা বলতে চাইনি । তিতলি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে সে অন্তরের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিল । সে তিতলির পিঠে আলতো করে হাত রাখল । আর মনে মনে বলল, আমি তো খুব করে চেয়েছিলাম আমার কাঁধটা আপনার মাথার জন্য হোক । কিন্তু এভাবে হোক তা তো চাইনি । কেন চাইবে অন্তর? কে চেয়েছিল এমন একটা দিন? আজ সহস্রাব্দীর স্মরণে দোয়া মাহফিল। উৎসবের দিনে বাড়ি মাতিয়ে রাখা যার সবচেয়ে বড় কাজ ছিল আজ সেই মানুষটার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় মিলাদ । আজও সে বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে। কিন্তু উৎসবে নয়, বরং শোকে ।
সে ওযূ সেরে নামাজে দাঁড়াল। যোহরের নামাজ পড়তে এমনিতেই একটু সময় বেশি লাগে। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও সে যখন দুপুরের খাবারের জন্য নিচে নামল না তখন লুতফা বেগম তাকে ডেকে আনার জন্য যুগকে পাঠালেন। যুগ তার ছোট বুবুর ঘরে গিয়ে দেখল বুবু সিজদাহয় ঝুকে আছে। সে ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই হঠাৎ তার মনে হল সে প্রায় আরো কিছুক্ষণ আগেও বুবুকে এভাবে সিজদাহয় থাকতে দেখেছে। হঠাৎ তার ছোট্ট বুকের ভেতর ভয়ের ঢেউ খেলে গেল। সে জলদি গিয়ে বোনের কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু ছোট বুবু টু শব্দটাও করল না। যুগ তাকে অস্থিরভাবে ডাকতে ডাকতে হঠাৎ হ্যাচকা টানে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করল। সাথে সাথেই সহস্রাব্দীর নীরব নিস্তব্ধ শরীরটা জায়নামাজের উপর এলিয়ে পড়ল। তার মুখটা রক্তশূন্য কিন্তু সেখানে অদ্ভুত একটা প্রশান্তির ছাপ । যুগান্তর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল, ছোটো বু! উৎপল ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে বসে ছিল।
সহস্রাব্দীকে মেসেজটা পাঠানোর পর থেকেই তার কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। বারবার সহস্রাব্দীর মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এটা নিছক প্রেমময় কল্পনা নয় ৷ এটা হ্যালুসিনেশন। তার চোখের সামনে সহস্রাব্দী হাসছে। তাকে কী যেন একটা বলতে চাইছে। উৎপলের মাথা ঘুরতে লাগল । সে স্যারকে ওয়াশরুমে যাবে বলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এল। চোখে মুখে অনেকক্ষণ ধরে পানি দিয়েও তার মাথা ঘোরা বন্ধ হল না। ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে পড়ল সে। এখন বুকের বাম পাশেও প্রচণ্ড ব্যথা করছে । তার তো কোনোকালেই হার্টের সমস্যা ছিল না। তাহলে আজ হঠাৎ এরকম জায়গায় ব্যাথা করছে কেন? আর মাথার মধ্যে ভেসে থাকা সহস্রাব্দীর মুখটা তাকে কী বলতে চাইছে? উৎপলের মাথায় একটা ভোতা যন্ত্রণা শুরু হল। তার মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। মাথার আর বুকের যন্ত্রণায় সে টের পেল না পকেটে তার সাইলেন্ট করে রাখা ফোনে কারো কল এসেছে। স্ক্রিনে ‘এক হাজার বছর' নামটা ভাসছে।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community