যে কারণে গানের সুর স্মৃতিতে গেঁথে যায়

in #melody6 years ago

source
অনেক গান আসে যা শোনার পরই স্মৃতিতে গেঁথে যায়। হয়তো কোনো গান শুনেছেন, আর সেটি সারা দিন কানে বাজছে। নিজের অজান্তেই আপনি সেই গানটি গুণগুণ করে গাইতেই থাকেন। সেটি আর মগজ থেকে কিছুতেই বেরোতে চায় না।

এই গানের ধুন বা সুর এতটাই আকর্ষণীয় যে কখন ওই গানটি মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে সেটি আপনি খেয়ালও করেন না। এমন ঘটনা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটে। খবর বিবিসির।

আর এর মানে, আপনি কানের পোকার শিকার হয়েছেন। এই পোকা বলতে কোনো পরজীবী নয়, বরং ইঙ্গিত করেছে সেসব আকর্ষণীয় গান বা সুরকে, যেগুলো একবার শুনতেই মগজে গেঁথে যায়।

কেন এই গানগুলো আমাদের এতটা প্রভাবিত করে? এবং তার চাইতেও জরুরি, এ কানের পোকা তাড়ানোর সেরা উপায় কি?

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতবিষয়ক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লরেন স্টুয়ার্ট এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

আসুন সেগুলো জেনে নিই-

যেসব গানের মেলোডি বা সুরের গঠন খুব সহজ-সরল বা যে গানগুলোর তাল-লয় অথবা সুরের উত্থান-পতনের একটি সাধারণ প্যাটার্ন থাকে, সেগুলো আমাদের মস্তিষ্ক সহজেই গেঁথে নেয়। এ বিষয়টিকে সংগীতের ভাষায় বলা হয় ‘মেলোডিক আর্কস’।

শিশুদের নার্সারি রাইম বা ছড়া গানগুলো মেলোডিক আর্কসের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।

যেমন ‘টুইঙ্কল, টুইঙ্কল, লিটল স্টার’, এই রাইমটি ছেলে বুড়ো সবারই মনে আছে। কারণ এর সুরের গাঁথুনি খুব সাবলীল। একইভাবে বিভিন্ন পপ গান বা পুরনো কোনো ক্লাসিক্যাল গান এ মেলোডিক আর্কসের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হতে পারে।

আবার যে গানগুলোর সুরের উত্থান পতন বা মেলোডি লিপস অস্বাভাবিক বা অপ্রত্যাশিত সেগুলোও কানের পোকা হওয়ার আরেকটি বড় কারণ।

কোন গানগুলো আমাদের মগজে আটকে যায়?

যে গানটি বারবার আলোচনায় আসছে সেটি মাথায় আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া যারা গান করেন এবং শোনেন তাদের কানের পোকার শিকার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের চাইতে অনেক বেশি।

নিচে এমন কিছু ইংরেজি গানের তালিকা দেয়া হল, যেগুলো শুনলে কানের পোকা হামলা চালাতে পারে। এ গানগুলোর সুর আসলেও ভীষণ আকর্ষণীয়!

কান্ট গেট আউট অব মাই হেড-কাইলি মিনো

ডোন্ট স্টপ বিলিভিং-জার্নি

সামবডি আই ইউজড টু নো-গোটি

মুভস লাইক জ্যাগার- ম্যারুন ফাইভ

ক্যালিফোর্নিয়া গার্লস-কেটি পেরি

বোহেমিয়ান রাপসোডি-কুইন
গান (কানের পোকা) থেকে মুক্তি পাবেন কীভাবে?

কানের পোকা থেকে পরিত্রাণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল মনোযোগ অন্য কোনো দিকে সরিয়ে নেয়া। গবেষকরাও খুঁজে পেয়েছেন, মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার এমন নানা কৌশল-

রেডিওতে মানুষের কথাবার্তা অথবা নিরাময়কারী সুর শুনলে এই কানের পোকা সহজেই বেরিয়ে যাবে। নিরাময় সুর বা কিওর টিউনস বলতে এমন কোনো গান বোঝায় যেটি শুনলে আগের গানটি মাথা থেকে সহজেই বিদায় নেবে।

অনেক গানই কিওর টিউনসের কাজ করতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্প হতে পারে যার যার দেশের জাতীয় সংগীত শোনা।

  • কানে বাজতে থাকা গানটি তাড়ানোর চেষ্টা করুন। যে গানটি আটকে আছে, সেটিই বারবার বাজাতে থাকুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না গানটি আপনার মাথা থেকে বিদায় হয়।

  • চুইংগাম চাবাতে থাকুন। এটিকে ঘরোয়া সমাধানের মতো মনে হলেও চুইংগাম চাবানো সম্ভবত কানের পোকা দূর করার সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, যেটা কিনা মস্তিষ্কের প্রি মোটর এরিয়াতেও প্রভাব ফেলে। প্রি মোটর এরিয়া হল- মস্তিষ্কের যে অংশটা দিয়ে আমরা কোনো কাজের পরিকল্পনা করি। মুখ ও চোয়ালের সঙ্গে মস্তিষ্কের এই অংশটির সম্পর্ক রয়েছে।

এ কারণে আমাদের মাথায় যখন কোনো গান ঘুরপাক খায় তখন স্বাভাবিকভাবে সেটি আমাদের মুখে গুণগুণ সুরে বেজে ওঠে।

অর্থাৎ চুইংগাম চাবানোর মাধ্যমে আপনি মুখ ও চোয়ালকে অন্য একটি কাজে ব্যস্ত রাখছেন। এতে মস্তিষ্কের সেই স্বাভাবিক অনুশীলন প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি হয়।

গান (কানের পোকা) কি প্রয়োজনীয় হতে পারে?

আমাদের দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে লাখ লাখ সুর সুরক্ষিত রয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি সুর আমাদের জালাতে বারবার ফিরে আসে।

ডাক্তার লরেন স্টুয়ার্ট বলেন, যদি আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি সুর বারবার মনে করি। তা হলে আমাদের মস্তিষ্ক হয়তো আমাদের ধাক্কা দিতেই এমনটি করছে। এ ছাড়া আমাদের চেতনার মাত্রা কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত উদ্দীপনা সরবরাহ করতেই হয়তো মস্তিষ্ক গানের ধাক্কায় আমাদের জাগিয়ে রাখছে।

গান (কানের পোকা) কি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে?

বহু আগে পেরুর আন্দিজ পর্বতমালা আরোহণের সময় বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। পর্বতারোহী জো সিম্পসন ছিলেন সেই অভিযাত্রীদের একজন।

দুর্ঘটনায় তার সঙ্গীরা মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

তবে তার চেতনা ওলটপালট কাজ করতে থাকে। কখনও তিনি সচেতন ছিলেন, কখনও বা অচেতন। তবে এ কারণেই কষ্ট তুলনামূলক কম হয়েছিল বলে তার ধারণা।

অভিনেত্রী জো সিম্পসনসে জানান, দুর্ঘটনার সময় তার মাথায় ১৯৭০ দশকের একটি বিরক্তিকর সুর ঘুরপাক খেতে থাকে। কয়েক ঘণ্টা ধরে মাথার ভেতর বাজছিল গানটি।

তিনি বলেন, আমি খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। ভাবছিলাম, শেষমেশ আমাকে এই বিরক্তিকর গান শুনেই মরতে হবে! কিন্তু সে যাত্রায় আমি বেঁচে যাই।

সে ক্ষেত্রে অনেকটা সাহায্য করেছে এই কানের পোকা। কেননা এই বিরক্তিকর পোকাই তাকে সজাগ রেখেছিল।

Sort:  

Hello, as a member of @steemdunk you have received a free courtesy boost! Steemdunk is an automated curation platform that is easy to use and built for the community. Join us at https://steemdunk.xyz

Upvote this comment to support the bot and increase your future rewards!

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63818.94
ETH 2624.28
USDT 1.00
SBD 2.78