আদরের বউ (Part - 1)
- এই যে আমার আদুরের বউ কি করছো?
- রান্না করছি।
- ওহ !আমার শরীর খারাপ লাগছে রাতে আর কিছু
খাবো না। তাই ঘুমাতে গেলাম । - যতো যাই বলো। না খেয়ে তোমাকে আমি
ঘুমাতে দিবো না। - আমি খাবো না আজ।তুমি খেয়ে নিও।
- তোমাকে ছাড়া আমি কখনও খেয়েছি? আমিও খাবো না। বলে দিলাম ।
- জেদ করো কেন ?
- কই জেদ করলাম । আমার জায়গায় তুমি
হলে কী করতে শুনি? - তোমাকে খাবায়ে ঘুম পারাতাম ।
- আমিতো ঠিক সেটাই করছি।
-আচ্ছা তাহলে আমাকে খাইয়ে দিতে
হবে।[বউয়ের হাতে খাবার জন্য শরীর
খারাপের বাহানা] - বললেই হয় খাইয়ে দিতে হবে।এমন বাহানা করার কি দরকার।
যাহ ধরা খেয়ে গেলাম। - খাওয়ার টেবিলে গিয়ে বসো।আমি
একটুপর খাবার নিয়ে আসছি।
টেবিলে গিয়ে বসলাম। সময় যে
যাচ্ছেই না।
রোকসানার হাতে খাবার জন্য
মনটা ছটফট করছে।
(ঠিক ধরেছেন। রোকসানা আমার বউয়ের নাম)
যদিও মাঝে মধ্যে রোকসানার হাতে খায় তবুও বউয়ের সঙ্গে বাহানা করতে ভালোই লাগে। - কই হলো?
- এইতো আসছি। একটু চুপ করে বসে থাকতে পারো না?
কী আর করার চুপ করে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে খাবার নিয়ে আসল। আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে পরম আদরে ।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রোকসানার দিকে। স্পষ্ট বলতে পারবো না কি খাচ্ছি।কিন্তু খাবারটা খুবই সুস্বাদু লাগছিল । আসলে রোকসানার নরম হাতের স্পর্শে খাবার যেন নতুন স্বাদ য়েছে। এতো ভালো লাগছিলো এই মুহূর্ত বলে বুঝাতে পারবো না । মনটা সুন্দর মুহূর্তের মাঝে হারিয়ে গেছে । - ইসস!
- কি হলো?
- আঙুলে কামড় দিয়ে এখন বলছে কি হলো বদ কোথাকার। আরেকটু হলে মনে হয় আঙুলই খেয়ে ফেলতে।
- সরি বউ। সুস্বাদু খাবারে মাঝে হারিয়ে গেছিলাম ।তাই খেয়াল করিনি।
- ও তাই বুঝি?
- হুমম। আচ্ছা এই খাবারের নাম কী গো?
- সবজির তরকারী
- আবারও সবজি। তুমিতো জানোই আমি সবজি পছন্দ করি না।
- হিহিহি। এতক্ষণ পর বুঝলে? বেশি মাংস,পোলাও,বিরিয়ানি খাওয়া স্বাস্হ্যর জন্য ক্ষতিকর।তাই এখন তোমাকে সবজির তরকারীই খেতে হবে ।
- হু তাইইতো ।নিজে সবজি খাবে আমাকেও জোর করে খাওয়াবে। ঠিক আছে তুমি খাইয়ে দিচ্ছো বলে খাচ্ছি। রোকসানা সবজি দিয়ে সুন্দর করে ভাত মাখায়ে এমনভাবেই দেয় বুঝতেই পারি না যে আমি সবজি খাচ্ছি । আমার খাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে রোকসানার । মুখটা দেখে একটু মন খারাপও মনে চ্ছে ।বুঝেছি আমি রোকসানার হাতে এতো আরামে খাচ্ছি রোকসানার ও ইচ্ছা করছে নিশ্চয় আমার হাতে খেতে।
- এই তুমি খাবে না। দেখি তোমাকে খাইয়ে দি।হা করো। কথাটি শুনে আনন্দিত হয়েছে বুঝতেই পারছি।মনে হচ্ছে কথাটি শুনার অপেক্ষায় ছিলো। আমিও গালে তুলে রোকসানাকে খাইয়ে দিলাম।চোখে পানি টলমল করছে মেয়েটির খুশিতে
- জানো বউ রান্নাটা বেশিই টেস্টি হইছে।
- তাতো হবেই। আমি খাইয়ে দিলেতো তোমার কাছে প্রতিবারই টেস্টি হয়।
- এতোই যখন জানো তাহলে খাইয়ে দিতে পারো না?
- এহ! তুমি মনে হচ্ছে ছোট্ট বাবু যে খাইয়ে দিতে হবে সবসময়। (ভেনচি কেটে)
- আমিতো তোমার ছোট বাবু ই।জানো না?
- হইছে। এখন ঘুমাতে যাও।
- ঠিক আছে। কিন্তু তুমি?
- আমি কাজসেরে আসছি।
- তাড়াতাড়ি এসো।
বিছানার উপর হেলান দিয়ে ভাবছি বিয়েটা আমাদের পারিবারিক ভাবেই হয়েছিলো। খুব ইচ্ছা ছিলো বউয়ের সাথে প্রেম করার। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আমাদের বিয়ে করা মাত্র ৩মাস হলো। এরই মধ্যে আমরা একজন আরেকজনের এতোটাই আপন হয়ে গেছি যে এখন একে অপরকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারি না। বউ আমাকে খুব সহজেই আপন করে নিয়েছিলো। সবথেকে বড় বিষয় আমরা ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম। একে অপরের একটু ভালোবাসা থেকেই আমাদের মাঝে বৃহৎ ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। আমার বউয়ের মাঝে প্রায় সকল ভালো গুণই আছে।বিশেষ করে খুব আবেগী ও প্রচন্ড রাগী স্বভাবের এই গুণগুলো আমার খুব ভালো লাগে।আরো অনেক গুণ আছে যা বলে হয়তো শেষ হবে না। ও হ্যাঁ আমার বউয়ের নাম রোকসানা ।নিশ্চয় অনেক আগেই জানেন তবুও বললাম। আর আমার নাম নিলয় । প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। বাবা-মা আমি আর বউ মিলে এই সুখের সংসার। আমাদের নামের মতো আমাদের মাঝেও খুব মিল। একে অপরকে আমাদের থেকে ভালো কেউ বুঝে না। আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান এমন মনের মতো বউ পেয়ে।
- কি ব্যাপার ঘুমাও নাই কেন?কি ভাবছো এতো?
রোকসানার কথায় ভাবনায় ছেদ হলো। - তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে যে ঘুম আসে না। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছিলাম।
- এতো ভাবার কি আছে?
- যদি ভাবার কিছু না থাকে তাহলে অন্যকাউকে নিয়ে ভাবি?
- ভেবেই দেখ মেরে হাড় ভেঙে দিব হুহ।
- আমার বউকে ছাড়া অন্যকাউকে নিয়ে ভাবতেই পারি না। চলো আজ রাতে আকাশের চাঁদ দেখে রাত পার করি।
- কাল অনেক সকালে উঠতে হবে। এতো রাত জাগলে যদি শরীর খারাপ করে আর তাছাড়া ঘুম থেকে উঠতেও পারবে না।
- সেসবের জন্য তুমিতো আছোই। তুমি থাকতে চিন্তা নাই এসবের । এখন চলো।
- আমি যাবো না।
- ও তাই আচ্ছা আমিও দেখছি কীভাবে না যেয়ে থাকো। তোমাকে কী করে নিয়ে যেতে হবে তা ভালোই জানা আছে।
অতঃপর রোকসানাকে কোলে তুলে সাদে নিয়ে গেলাম। রোকসানা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে বুকে মুখ লুকিয়ে রাখছে। সাদে সুন্দর বসার জায়গা আছে সেখানে আমি বসে রোকসানাকে দেখছি আর রোকসানা আমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
- এই তুমি চাঁদ না দেখে আমাকে কী দেখছো? চাঁদ দেখার জন্যে সাদে নিয়ে আসছে।
- আমার আসল চাঁদটাই তুমি। চাঁদের আলোতে তোমাকে আরো ভীষণ সুন্দর লাগছে তাই তোমাকেই দেখছি।
- হইছে।আর মিথ্যা বলা লাগবে না।
- তোমার কাছে সত্যি বললেও মিথ্যা হয়ে যাই,না?
দুজন দুজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। যেন চোখের পলকই পড়ছে না। অনেকক্ষণ ধরে আমরা গল্পও করলাম। - এই আমার ঘুম আসছে। এখন ঘুমাব।
- তাহলে ঘুমাও।
রোকসানা আমার কোলেই চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুমন্ত অবস্থায় রোকসানাকে তুন রূপ ধারণ করছে। এই মেয়ের যে কত রূপ তার ঠিক নাই। একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। আমি রোকসানাকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম তখন রাত২টা বাজে।. - এই নিলয় উঠো। ভোর হয়ে গেছে। নামায পড়তে হবে।
- এতো তাড়াতাড়ি ভোর হয়ে গেল? আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।
- সেই জন্যেই এতো রাত জাগতে নিষেধ করেছিলাম। উঠো বলছি তাড়াতাড়ি।
- তাহলে আদর দিতে হবে।
- যাহ দুষ্টু ।দিতে পারবো না।
- আমিও উঠবো না।
বউটি আমার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো। আমিও দিলাম তবে কপালে নয় ঠোঁটে। হিহিহি।রোকসানা লজ্জায় মুখ লুকালো আমার বুকে জড়িয়ে ধরে। অনেকক্ষণ পর আজানের সুর শোনা গেল ।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৪:৩০টা বাজে । আমি অবাক হলাম।
- জানতাম তুমি সহজে উঠবে না তাইতো আধা ঘণ্টা আগে তোমায় ঘুম থেকে তুলেছি।
- বাব্বাহ !আমার বউয়ের দেখছি খুব বুদ্ধি।
- হুমম। নেও এখন চলো নামায পড়ি। দুজনে এক সাথে নামায পড়ে নিলাম।তারপর আবার কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকালে
- রোকসানা আজকে না অফিসে যেতে মন যাচ্ছে না। তোমার পাশে পাশে থাকতে মন যাচ্ছে।
- রোজইতো বলো।তাহলে অফিসে যাওয়ার দরকার নাই।
- সত্যি?(খানিকটা অবাক হয়ে)
- হুমম সত্যি।
- আমার বিশ্বাস হয় না।যে কোনদিন আমাকে অফিস কামায় দিতে দেয় না। আজ তার মুখে এমন কথা। সত্যি করে বলো?
- আরে বোকারাম আজ শুক্রবার এটাও
ভুলে গেছো? - ওহো ভুলেই গেছিলাম।তাই বলি তোমার মুখে এমন কথা। (মজা করে)
- তোমার কি মনে হয় আমি প্রতিদিন ইচ্ছা করে অফিসে পাঠায়? অফিসে না গেলে বকা খেতে হবে বসের কাছে বলেইতো অনিচ্ছা সত্বেও তোমাকে জোর করে পাঠায়। আমার বুঝি ইচ্ছা করে না তোমার সাথে সময় কাটাতে ? এই বলে কাঁদতে শুরু করে দিল।
- আরে আরে কাঁদছো কেনো? আমিতো মজা করে বললাম। কেঁদো না আমার লক্ষী মিষ্টি বউ। তোমার কান্না আমি যে সহ্য করতে পারি না। জড়িয়ে ধরলাম বউকে । কান্না থামানোর একমাত্র উপায় জড়িয়ে ধরা। মেয়েটাও না একটুতেই কেঁদে একাকার করে ফেলে।
This post has received a 0.78 % upvote from @drotto thanks to: @ohimahathir.