ভালোবাসার গল্প

in #love7 years ago

বিয়ের পিড়িতে বসে আছি আমি। নীল রংয়ের একটা
শাড়ী পড়ে। বরের ইচ্ছা,বিয়েতে অবশ্যই নীল রংয়ের
শাড়ী পড়তে হবে। নীল বেদনার রং। আজ শুভ এই দিনে এই
রংয়ের শাড়ী পড়ে তবুও আমি বসে আছি। চোখ জলে
টলমল করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি জলের স্রোত নামবো
দু'চোখ বেয়ে। কিন্তু কাঁন্না করা যাবে না। বরের কড়া
আদেশ। কান্না করে মেকাপ কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না।
.
বাড়ীতে অনেক লোক এসেছে।
আর আসবেই না কেন!
এত ঘটা করে বিয়ে হচ্ছে আমার।
ক'জনেরই বা এমন সৌভাগ্য হয়!
বাড়ীতে চারদিকে আলোর ছড়াছড়ি এত আলো যে চোখ
ঝলসে যাওয়ার উপক্রম।
কিন্তু মনের কোণে আমার একরাশ মেঘ।
ঘুটঘুটে অন্ধকার।
.
.
রাজপুত্রের মতই আমার বরটা দেখতে।
নীল পান্জাবীতে তাকে কয়েকশ গুন বেশি সুন্দর
দেখাচ্ছে।
হাস্য উজ্বল মুখে সবার সাথে কথাও বলছে।
আমি নির্বাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে দেখছি।
আর কয়েক সেকেন্ড পর পর চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে
আসতেছে।
না না আমার তো কাঁন্না করা যাবে না!
কাঁদতে যে বারণ আছে।
যেভাবেই হোক এই চোখের পানি গুলো আমাকে ধরে
রাখতেই হবে।
হ্যাঁ তারপর আমি আর কাঁদিনি।
.
.
রুমের লাইট অফ।
চারদিকে মোমবাতি জ্বলছে।
মাঝখানে আমাদের বেড।
মোমবাতির আলোয় নীল বেডটা কেমন যেন কালো
দেখাচ্ছে।
বেডের উপর কোন ফুল ছড়ানো নেই।
নীল রংয়ের কয়েক ডজন চুড়ি ওখানে ছড়ানো ছিটানো।
পাশের টেবিলে, ঠিক টেবিল ল্যাম্পের ওখানে একটা
ছবি।
হুমম ঠিক ধরেছেন আমার বরের ছবি।
আমি চুপচাপ বসে আছি।
রুমে আর কেউ নেই।
চারদিকে মোমবাতি গুলো জ্বলছে।
মাঝখানে আমি বসে আছি।
নীল শাড়ীটা এতক্ষনে মোমের আলোতে কালো হয়ে
গেছে।
নীলের এই রং বদলে
অন্তরটা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে।
.
.
একটু পর ও রুমে প্রবেশ করলো।
মোমবাতির আলোতে ওর পান্জাবীটাও কালো
দেখাচ্ছে।
মোমবাতির আলোতে ওর চোখ জোড়া স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছি। কেমন চিকচিক করছে।
এতক্ষনে আমার পাশে এসে বসেছে ও।
অয়ন অপলোক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওর যেন দেখার শেষ ই হচ্ছে না।
আমার চোখ জোড়া জলে ঝাপসা হয়ে আসছে বার বার।
"মেয়ে শোন তুমি কিন্তু কাঁদতে পারবেনা। তোমার কিন্তু
কাঁদতে মানা। এখন তুমি আমার বউ আর আমি তোমাকে যা
বলবো তাই তোমাকে শুনতে হবে। এ বাড়ীতে কেউ কাঁদতে
পারবে না।"
আমি মাথা নেড়ে শুধু সম্মতি দিলাম।
ও আমার হাতটা ধরে নীল চুড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো।
চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ওর।
"অবন্তী আজ তোমার স্বপ্ন পূরণ করে দিলাম। তোমার এই
হাত দু'টো আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল।তোমার কোল
আমার শত জনমের সাধনা ছিল।অবন্তী, একটু মাথা রাখতে
দিবে তোমার কোলে?"
জানিনা কারো এমন আবদারে কেউ কতটা স্হির থাকতে
পারে কিন্তু আমি আছি।
অয়ন আমার কোলে মাথা দিয়েছে আর আমি ওর কপালে
হাতটা রেখেছি।
টপটপ করে পানি পড়ছে দু'চোখ বেয়ে।
না এ জলকে বাঁধা দেয়ার শক্তি আর অয়নের নাই।
"অবন্তী তুমি আমাকে করুণা করেছো তাই না?"
আমি নিশ্চুপ।
মৃত্যু পথযাত্রা করা একটা মানুষকে কেউ করুণা করতে
পারে কি না তা আমার জানা নেই।কিন্তু অয়নকে আমি
খুব ভালবাসি আর আমি যে ওর হাতটা সহজে ছাড়ছি না
আমি শুধু এটা জানি।
.
.
দুদিন আগে অয়নের ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
ডাক্তার বলেছে ও ২ মাসের বেশি বাঁচবে না।
এরপর অয়ন আমাকে আর বিয়ে করতে চাইনি।
কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা।
আমি তো আর ওর হাতটা ছাড়বো না।
তাই ওর অনিচ্ছা শর্তেই আমাদের এই বিয়ের আয়োজন।
আমার একটাই কথা অয়নের হাত আমি ছাড়ছি না।
হ্যাঁ এই তো ওর হাতটা আমি ধরে আছি!
.
.
অয়ন কাঁদছে,
আমিও কাঁদছি।
বেদনার নীল রং টা ঘর জুড়ে শোকের কালো ছায়া হয়ে
নেমে এসেছে।
.
.
২ঘন্টা হয়ে গেলো।
না অয়ন আর কাঁদছে না।
"অয়ন তুমি ঘুমাও।
আমি তোমার পাশে আছি।
তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও"।
.
.
সকালে রুমে অনেক মানুষের সমাগম।
অবন্তী সবাই কে হাতের ইশারাতে বলছে কেউ যেন কোন
কথা না বলে।
কাঁন্না না করে।
অয়ন ঘুমাচ্ছে।
আর অয়নের কড়া আদেশ এই বাড়ীতে কেউ কাঁদতে পারবে
না।
অবন্তী অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
ও কিছুতেই বুঝতেছেনা তার অয়ন শুধু ঘুমাচ্ছে না,সারা
জীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।
ডাক্তারের রিপোর্ট ভুল ছিল।
অয়নের ২মাস না, হয়তো ওর কপালে আর দু'দিন লেখা
ছিল।
না!অবন্তী নাছোড়বান্দা।
ও অয়নের হাত আর ছাড়ছে না।
ও সবাইকে চুপ হতে বলছে।
আর বিরবির করে বলছে, "অয়ন তুমি ঘুমাও।
নিশ্চিন্তে ঘুমাও।
এই তো আমি তোমার হাত দু'টো ধরে আছি।
এ হাত আমি আর ছাড়ছি না।"
অবন্তী এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে গেছে যে ও বুঝতেই
পারছেনা ও অয়নের হাত না ছাড়লেও নিয়তি ওদের হাত
দু'টো ছাড়িয়ে নিয়েছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.25
JST 0.041
BTC 96936.19
ETH 3381.62
USDT 1.00
SBD 2.40