মায়াবতী
- মনে করে নিয়ে এসো কিন্তু
. - আচ্ছা, আমার ভুল হবে না
সাদিয়ার মুখ থেকে বের হওয়া কোনো কথায় নূর ফেলতে পারেনা। সবার সম্মতিতে বিয়ে তাদের, প্রথম যেদিন দেখতে গিয়েছিল সেদিন অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর জুতার খটখট আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিল নূর। মনে হচ্ছিল, ছোট বাচ্চা প্রথম উচু জুতা পড়ে হাটছে। যখন সামনে এলো, নতুন বউয়ের মত ঘোমটায় কপাল ঢেকে রেখেছে মেয়েটা। ঠোটে হালকা লিপস্টিক, মনে হচ্ছে তার তেমন অভ্যাস নেই লিপস্টিক পড়ে। তবে কাজল যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। এই অগোছালো মেয়েটা চোখ সাজিয়েছে খুব সুন্দর করে।
বাবা-মা চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন তাদের মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে।
আলাদা রুমে পাঠানো হলো তাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য। মেয়ে অনবরত ঘামছে, নাক বেয়ে ঘাম পড়বে পড়বে করছে... - নিন ( টিস্যু এগিয়ে দিয়ে )
ঘাম মুছে মাথা তুলে একবার দেখল নূরকে... - আপনার কোনো প্রশ্ন আছে?
- না নেই...
- আমার কোনো খারাপ অভ্যাস আছে কি না সে নিয়ে কোনো প্রশ্ন?
- না
ওখান থেকে বেরিয়ে পথে নূর তার মাকে বলল, - মা, আমার মনে হয় আমাদের আরো কয়েকবার দেখা করা উচিত
আড়চোখে তাকিয়ে নূরের মা হাসলেন।
ধুমধাম করে বিয়ে হলো, বিয়ের পরেও যে প্রেম হয় তার দৃষ্টান্ত এরা। কেউ দেখে বলবে না এদের এরেঞ্জ মেরেজ। সাদিয়া যখন যা বলেছে নূর তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। কখনো মাঝরাতে ছাদে উঠে চাঁদ দেখতে দেখতে বেনী করে দিয়েছে নূর।
কিন্তু বলা হয়ে থাকে সুখ-দুঃখ ক্রমান্বয়ে আসে।
অতিরিক্ত সুখের পর এমন কোনো একটা পরিস্থিতি আসবে তা নূর-সাদিয়া কেউই ভাবে নি।
সেদিন রান্না করছিল সাদিয়া, অন্য কাজের তাড়া থাকায় দুটো চুলাই দাওদাও করে জ্বলছিল। সবেমাত্র এক চুলা থেকে রান্না নামিয়ে অন্য চুলায় ভাত চাপাতে যেতে শাড়ির আঁচলে আগুন ধরে গেল। হঠাৎ অস্বাভাবিক গরম লাগতেই সাদিয়া খেয়াল করল আগুন লেগেছে তার শাড়িতে। শাড়ি গা থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে... - নূর নূর... তাড়াতাড়ি এসো। আগুন আগুন আগুন!!!!
নূর এসে দেখে চুলার আগুনের সাথে তার সাদিয়াও জ্বলছে। তাড়াতাড়ি ওর গায়ের শাড়ি ফেলে , হাসপাতালে নিয়ে গেল।
ডাক্তার বললেন, খুব গুরুতর অবস্থা। অনেকাংশ পুড়ে গেছে ; বিশেষ করে মুখে।
দীর্ঘ ১ মাস চিকিৎসার পর, ডাক্তার বললেন... - আপনি ওনাকে নিতে পারেন তবে খুব যত্নে রাখতে হবে আর ড্রেসিং এর ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা কথা, ওর শরীরের কিছু জায়গার ক্ষত থেকেই যাবে। ও কোনোদিন আয়নায় নিজেকে দেখার সাহস করবে না। আপনার চোখেই ও নিজেকে দেখবে।
সাদিয়ার মুখের ক্ষত এখনো আছে, শুধু মুখ নয় পায়ের ক্ষতটা এখনো মাঝে মাঝে ব্যাথা করে ওঠে। নূরের কোনো অভিযোগ নেই, সাদিয়ার আয়নার খুব শখ ছিল। নূর ওর জন্য প্রাচীন কারুকাজের একটা আয়না নিয়ে এসেছে। সাদিয়া যখন নিজেকে ঐ আয়নায় দেখে তখন নূরের মাথায় শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরে, " এই মেয়ের চেহারায় এত মায়া কেন? "
" মায়াবতী "