হারানো সুন্নাহ ফেরানো প্রয়োজন-

in #islam5 months ago

একদিকে বাড়ছে শপিংমল, মার্কেট অন্যদিকে বাড়ছে বস্ত্রহীন মানুষ। বিক্রি হচ্ছে দামী দামী জামা কাপড়। যাকাতের শাড়ীর জন্য কাউকে আঘাত পেতে হচ্ছে। একদিকে বাড়ছে রেস্টুরেন্টগুলো (চাইনিজ, দেশী, বিদেশী), বিক্রি হচ্ছে দামী দামী খাবার। অন্যদিকে বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তনাদ, ডাস্টবিনের পরিত্যক্ত খাদ্যে কুকুর ও মানুষের যুদ্ধ। কারো নতুন ব্যবসা চালু হচ্ছে চাঁদার টাকায়, কারো ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে চাঁদা না দেওয়ায়।
একদিকে চলছে ভেজাল বিরোধী অভিযান অন্যদিকে বাড়ছে সিগারেট, বিদেশী মদের আমদানী, হচ্ছে লাইসেন্সকৃত মদের দোকান। কারণ হালাল হারাম (বৈধ, অবৈধ) বিধান এখন আর কুরআন হতে মানা হয় না, হচ্ছে মানবরচিত সংবিধান হতে। বাড়ছে মসজিদ, মাদ্রাসা আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বহুগুণে বাড়ছে পাপ, শিরক, বিদআত, কমছে মুসল্লি ও দ্বীনদার মুমিনের অভাব।
বাড়ছে ওয়াজ, বাড়ছে টাকার পরিমাণ। একটু জনপ্রিয় হলেও বছরখানেকের মধ্যে লাখ লাখ টাকা আয় করে যাচ্ছে। কেউ ওয়াজে পুলিশের নিরাপত্তায় বহুবিবাহের ফজিলতের মধুর ওয়াজ করছে, কারো সদ্যবিবাহ হয়েছে অথচ বাসর না হয়ে দিন কাটছে কারাগারে। কত যুবক মিথ্যা মামলায় স্বজন ছেড়ে প্রবাসে দিন কাটছে, অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা দেশে ফিরবে মায়ের বুকে।
প্রায় অনেকের ইফতারীর ছবি দেখলে বিস্মিত হই আসলে আমরা কত বেশি খাই।
শুধু গম বা আটার তৈরি কত প্রকার খাবার ও চিকেন/ সবজি/ গোশতকে কত নামে কত ভাবে খাওয়া হয় অথচ রসুল (সাঃ) কখনও গমের রুটি খেতে পারেন নি!!
আহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যবের রুটি, খেজুর আর পানি ছিল তার খাওয়া। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত- মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার পরিবার তার ইন্তেকাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে তিনদিন পরিতৃপ্তির সহিত আহার করতে পারেনি (সহীহ মুসলিম -২৯৭৬)।
আহ!! একরাতে রসুল (সাঃ), আবু বকর(রাঃ), উমর (রাঃ) ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় বের হয়েছিলেন খাদ্যের সন্ধানে আর আজ তার গর্বিত উম্মত দাবিদাররা দামী রেস্টুরেন্টে অতিভোজনে টাকা অপচয় করে। নিল্লর্জের মত আবার ছবি তুলে প্রচার করে। খন্দকের পরিখা খননের সময় রসুল (সাঃ) পেটে পাথর বেধেছিলেন। পাথরের উপর আঘাত করেছেন তখন তার বয়স ৫৮ বছর, তবু কত ঈমানের দৃঢ়তা নিয়ে বলেছিলেন- মুসলিমরা রোম, পারস্য বিজয় করবে। তখন মুনাফেকরা উপহাস করেছিল। আর আমাদের পেট ভর্তি খাওয়া, ফ্রীজ ভর্তি জমাকৃত খাদ্য অথচ ঈমান নড়বড়ে, রিযিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করি।
সামান্য সমৃদ্ধির জন্য হারামে লিপ্ত হই। যখন রসুল (সাঃ) হিজরত করছিলেন তখন সুরাকা (রাঃ) (তখন তিনি কাফের ছিলেন) বলেছিলেন- আল্লাহর কসম! হে মুহাম্মদ, আমি নিশ্চিতভাবে জানি শিগগিরই আপনার দ্বীন বিজয়ী হবে। আমার সাথে আপনি ওয়াদা করুন, আমি যখন আপনার সাম্রাজ্যে যাব, আপনি আমাকে সম্মান দিবেন। আর একথাটি লিখে দিন। রসুল (সাঃ) আবুবকর (রাঃ) কে লিখতে বললেন, একখন্ড হাড়ের উপর কথাগুলো লিখে তার হাতে দিলেন। সুরাকা ফিরে যাওয়ার সময় রসুলকে (সাঃ) বলেছিলেন- সুরাকা তুমি যখন কিসরার (পারস্য) রাজকীয় পোশাক পরবে তখন কেমন হবে? সুরাকা (রাঃ) বিস্মিত হয়ে বলেছিল- কিসরা ইবনে হুরমুয? রসুল (সাঃ) বলেছিলেন – হ্যা, কিসরা ইবনে হুরমুজ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)। তৎকালীন সবচেয়ে বড় পরাশক্তি ছিল কিসরা আর তার রাজা ছিল কিসরা ইবনে হুরমুজ। সুরাকা (রাঃ) রসুলের (সাঃ) কথা বিশ্বাস করেছিলো বিনা দ্বিধায় এবং উমর (রাঃ) এর খেলাফতকালে এই পোষাক পরেছিলেন।
আসলে কাফের অবস্থায় সুরাকা (রাঃ) রসুলের (সাঃ) কথার প্রতি যতটুকু বিশ্বাস ছিলো, মুসলিম হয়েও আমাদের ততটা নেই। রসুল (সাঃ) বলেছিলেন- দুজনের খাদ্য তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাদ্য চার জনের জন্য যথেষ্ট (মুসলিম- ২০৫৮, ৭৩২৪)। জীবনে বহু আলেম দেখেছি, তাদের হতে বহুকিছু শিখেছি কিন্তু এই সুন্নত পালন করতে দেখেনি। এই সুন্নত পালন করতে ফুটপাতের শিশুদের দেখেছি, ১০ টাকার ভাত কিনে তিনজনে হাসিমুখে খেতে। চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতিতে কত মানুষ অনাহারে কষ্ট পাচ্ছে।
আসুন হারানো সুন্নাত ফিরিয়ে আনি বিলাসী আহার,পোশাকে অতিবাহিত না করে অন্যদের সাহায্য করি আর ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্হা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করি যেখানে যাকাত, দান, সদকা প্রতিষ্ঠা হবে।
দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ হবে, থাকবে না মজুতদারি, অভিশপ্ত সুদ, খাদ্যে ভেজাল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61038.67
ETH 2626.98
USDT 1.00
SBD 2.62