Astraphobia
আস্ সালাম আলাইকুম। প্রিয় বন্ধুগণ আশা করি সবাই অনেক বেশি ভালো আছেন। শুরু থেকেই যারা আমার সাথে আছেন বা আমরা যারা প্রায় একসাথেই শুরু করেছি আপনারা দেখবেন আমার অধিকাংশ লেখাই একটা বিষয়কে নিয়ে আর তা হল ফোবিয়া। এটির পিছনে কারণ আমি অনেকবার বলেছি আজ আবারো বলছি সমাজে অনেকগুলো মানসিক সমস্যা মানুষের মধ্যে বিদ্যমান যা সহজে প্রকাশ পায় না, এই সমস্যা গুলো আমাদের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, আমরা জানি না বলেই এই সমস্যাগুলোকে অতটা গুরুত্ব সহকারে দেখি না কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে মরণাত্মক। তাই এই ছোট ছোট বিষয়গুলোকে তুলে ধরে শুধুমাত্র কিছু সামাজিক সচেতনতা তৈরি করার প্রচেষ্টায়। আজ অন্যদের ফোবিয়া বা অন্য কোন ফোবিয়া নিয়ে লিখব না আমি একটি ফকিরায় আক্রান্ত আর তা নিয়ে আজ আমরা গল্প করব
আজ নিজেকে ঘাটতে ঘাটতে দেখলাম আমি এই পৃথিবীতে অনেক কিছুর মধ্যে বজ্রপাত জিনিসটা প্রচন্ড পরিমাণ ভয় পাই এবং কোন কারণ ছাড়া।
কেননা আমার দশ তলা বিল্ডিং এর ছয় তলাতে আমি থাকি। বাসায় বসেও যখন বজ্রপাতের আওয়াজ শুনে তখনই আমি বিছানায় গিয়ে কোল বালিশের মাথা দুটো হেডফোনের মত করে দিয়ে যেকোনোভাবে বজ্রপাতের শব্দ এড়ানোর চেষ্টা করি এবং আমার বাসার সদস্যরা বজ্রপাতের সময় আমাকে হালকা দেখাশোনাও করে থাকে। তবে আমি একা নই, এই বিশ্বের অনেক মানুষই বজ্রপাত ভীতিতে আক্রান্ত যা শতকরা হিসেবে আট ভাগ। মূলত ছোটবেলা থেকেই মানুষের এই বজ্রপাতের ভয় দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে খুব অল্প কিছু মানুষেরই বয়স বাড়ার সাথে সাথে এভীতি নিজের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে তাদের মধ্যে একজন আমি। ছোটবেলার খবর জানিনা তবে গত কয়েক বছর ধরে আমি বজ্রপাতের শব্দ একেবারেই সহ্য করতে পারিনা এবং এই যে বললাম আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে বাড়ির ছাদ আর আরো উপরের চারতলা ভেদ করে ছয় তলায় এসে এই বজ্রপাতটি আমার উপরেই পড়বে, মাঝে মাঝে মনে হয় বজ্রপাতের আলোয় আমার দুই চোখ ব্লাস্ট হয়ে যাবে। আপনি আমাকে সামনাসামনিনা দেখলে কখনোই বুঝবেন না যে আমি আসলে কি পরিমাণ বজ্রপাত ভয় পাই। এই বজ্রপাতের সমস্যা সমাধানের জন্য আমি সাইকোলজিস্ট এর কাছেও শরণাপন্ন হয়েছি উনি আমাকে বেশ কিছু থেরাপি দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত ভয়ের জন্য একটি এনজাইটি দূর করার ওষুধ দিয়েছেন তবে শুধুমাত্র বজ্রপাতের আগে খেতে বলেছেন। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে প্রচন্ড পরিমাণ ভালোবাসি। এমন কোন দিন ছিল না যে সময় বৃষ্টি হতো কিন্তু আমি বাইরে নেই। জানিনা এই ভয়টা কখন আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে। বেশ কিছু ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম মূলত আমার এই ভীতির কারণ আপনার আপনি তৈরি হয়েছে। আমার পরিবারের কেউ এই ভীতিতে আক্রান্ত নয় অথবা জেনেটিক্যালি আমি অন্য কোন ভীতিতে আক্রান্ত নই বরং যেটা বলা হয়েছিল সবশেষ কারণ হিসেবে "যেকোনো কারণ ছাড়া আক্রান্ত হওয়া" সেই কারণে আমি আক্রান্ত। কিছুদিন আগের একটা ঘটনা বলি, কাপ্তাই বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর যতবারই কাপ্তাই যাই কাপ্তাই লেকের নৌকা ভ্রমণ অবশ্যই করে থাকি।
শেষ বার নৌকা ভ্রমণের সময় হঠাৎ বজ্রপাত মেঘলা আকাশ আর আলোর ঝলকানি। শুরুর ১০-১৫ মিনিট ছাড়া বাকি সময়টা আমি মনে করেছিলাম আমার জীবনের শেষ সময়। এর আগে প্রতি মাসে একবার কাপ্তাই বেড়াতে যেতাম, তবে বজ্রপাতের ঘটনার পর থেকে ওটাই ছিল আমার কাপ্তাই শেষ যাওয়া। আসলে ভয়টা নিজের মধ্যে একটি ব্যাপার 'ভয় পেলেই ভয় আর ভয় না পেলে কিছুই নয়'।
এই বজ্রপাতে কত মানুষ বাইরে ঘোরাফেরা করছে শ্রম দিচ্ছে বিভিন্ন কাজে অথচ যেদিন বজ্রপাত হয় সেদিন আমি ভয়ে আধ্ মরা, কোন কাজই করতে পারি না। আমার মত যারা এ বজ্রপাতকে ভয়ে পেয়ে বসে আছেন তাদের জন্য একটাই কথা "যত না বেশি বনের বাঘে খায়, তার চেয়ে বেশী মনের বাঘে খায়।" সুতরাং ভয় না পেয়ে নেমে পড়ুন। তবে বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে ইলেকট্রিক খুটি নিচে হাঁটাচলা করা থেকে বিরত থাকুন আর যথা সম্ভব যাও নি বা কোন ছাদের বা বিল্ডিংয়ের নিচে অবস্থান করুন। ধন্যবাদ
Image source
https://pixabay.com/illustrations/thunder-lightning-nature-storm-7131444/
https://pixabay.com/photos/boats-sea-water-sky-fishing-4472503/
https://pixabay.com/photos/city-people-crowd-men-women-rainy-2601561/