ফিচার | গ্রামের বাড়িতে উঠানের কোণে সবজি চাষ | ১০% @btm-school

20220617_162336.jpg

গ্রামে প্রায় সবার বাড়িতেই ঘরের সামনে বা একপাশে একটা বড় বা ছোট উঠান থাকে। অনেকের আবার বাড়ির আশেপাশে কিছু খোলা জায়গা থাকে, সেখানে তারা নানা ধরনের বিশেষ করে ফলের গাছ-গাছালি লাগায়, যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, জামরুল, আতা, ছফেদা, বরই বা কুল, পেঁপেঁ, কলাগাছ ইত্যাদি। আর উঠানটা ব্যবহার করা হয় মূলত মাঠের ফসল কেটে এনে ঝাড়াই, মাড়াই করে শুকানোর জন্য। যেমন ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, তিল ইত্যাদি, এসব ফসল মাঠ থেকে বাড়িতে এনে উঠানে রেখেই যাবতীয় প্রসেস করতে হয়। অনেকে আবার উঠানের এক কোণে ছোট করে ফুলের বাগান করে, সবজি ক্ষেত করে, কিছু ফল গাছ লাগায়। সাধারণত গ্রামের কোন বাড়িতেই খালি জমি ফেলে রাখা হয়না, সেখানে কোন না কোন গাছের চারা লাগানো থাকবেই। প্রায় সব বাড়িতেই এই একই ধরনের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

20220617_162749.jpg

আমাদের বাড়ির সামনেও এমন বিশাল একটা উঠান রয়েছে। উঠানের একপাশে বাড়ির পুকুর, আরেকপাশে শেষপ্রান্তে পাঁচিল। উঠান এবং পাঁচিলের মাঝে বেশকিছুটা খালি জায়গা রয়েছে আমাদের। সেখানে পাঁচিলের গা ঘেঁষে বেশকিছু ফলের গাছ লাগানো রয়েছে, আর অনেক ধরনের সবজির চাষও করা হয় সেখানে। শীতকালে শীতকালীন শাক-সবজি, গ্রীষ্মকালে অন্যান্য সবজির চাষ হয়ে থাকে। সেজন্য সারাবছরই সেখানে কোন না কোন শাক-সবজি থাকবেই। তারফলে, নিজেদের সারা বছরের শাক-সবজি বাজার থেকে কেনা লাগেনা, প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন সময় নিজেদের বাগান থেকেই সংগ্রহ করা যায়। অনেক সময় বেশি পরিমাণে উৎপাদন হলে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদেরকেও দেয়া হয়, আবার অনেক সময় বাজারে বিক্রি করেও কিছু টাকা ইনকাম করা সম্ভব হয়। মোটকথা, সারাবছর ধরে নিজেদের উৎপাদিত অর্গানিক শাক-সবজি খাওয়া যায়।

20220617_162812.jpg

আমাদের বাড়ির উঠানের সবজি ক্ষেতে সাধারণত যেসব সবজি সারাবছর ধরেই থাকে তা হলো: বেগুন, টমেটো, উচ্চে বা করলা, ঢেঁড়স, ওল, মানকচু, মেটেআলু, কাঁচামরিচ, ঘ্যাটকোড়ল ইত্যাদি। শীতকালে নানা ধরণের কপি থাকবেই, এগুলো ছাড়াও উঠানের পাশে বাঁশ দিয়ে তৈরি বড় মাঁচায় পুইশাক, লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, ধুন্দল (পোল্লা) ইত্যাদি থাকে। আর শীতকালে এই একই মাঁচায় শিম, বরবটি, চিচিঙ্গা ইত্যাদি লাগানো হয়, যা প্রায় পুরো শীতকাল জুড়ে নানা শাক-সবজি দিতেই থাকে। বছরজুড়ে সেখানে কোন না কোন শাক-সবজি থাকবেই। এতে করে আমাদের পরিবারের একটা বড় খরচ বেঁচে যায়, যা বাজার থেকে কিনতে হলে বছরজুড়ে অনেক টাকা খরচ হতো। আর সবচেয়ে বড় কথা নিজেদের বাগানের বিষমুক্ত শাক-সবজি খেতে পারা, তাতে করে শারীরিক ফিটনেসটাও ঠিক থাকে।

20220711_112258~2.jpg

বাড়ির সবজি ক্ষেত দেখাশোনা ও পরিচর্যার প্রধান দায়িত্ব থাকে সাধারণত মায়ের উপর। দেখা যায় বাবা বাজার থেকে ভাল মানের শাক-সবজির বীজ ও চারা এনে বাগানে লাগিয়ে দেন, আর মা তাতে প্রতিদিন পানি দিয়ে পরিচর্যা করতে থাকেন। মাঝে মাঝে বাবাও গাছে পানি দিয়ে, গাছের গোড়ায় গোবর সার বা কম্পোষ্ট সার দিয়ে, আগাছা পরিষ্কার করে বাগানে সময় দেন। শাক-সবজি তোলার ব্যাপারটা সাধারণত মা'ই সামলান। প্রয়োজন মতো বাগান থেকে শাক-সবজি তুলে প্রতিদিনের রান্না সারেন, আবার মাঝেমাঝে পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে বাগান থেকে তাজা শাক-সবজি তুলে দেন।

20220617_162431.jpg

আমি যখন বাড়িতে যাই তখন আমিও মাঝেমাঝে বাগানে সময় দেই, সাধারণত বাড়িতে খুব কমই যাওয়া হয়, দেখা যায় বছরে ৩-৪ বার যাই বাড়িতে। চাকরি-ব্যবসা, সন্তানের পড়ালেখা ইত্যাদি প্রয়োজনে আমাদেরকে শহরে থাকতে হয়, সেজন্য বাড়ির ব্যাপারটা বাবা-মা'ই সামলান। বাড়ির উঠানে উৎপাদিত শাক-সবজি এবং পুকুরের মাছ -আর কি চাই? সারাবছর আমাদের তেমন বাজার খরচই হয় না, মাঠের ক্ষেত থেকে বছরে যা ধান পাওয়া যায় তা চাল বানিয়ে সারাবছরের খোরাকি হয়ে যায়। বাজার থেকে শুধুমাত্র মাংস কিনলেই চলে, তাও আবার মা বাড়িতে দেশী হাঁস-মুরগী পালেন। তারাও পর্যাপ্ত ডিম ও মাংসের যোগান দিয়ে থাকে।

20220617_162219.jpg

বাবা-মা মাঝেমাঝে শহরে আমার বাসায় বেড়াতে আসেন (আসলে আমার বাবা-মা শহরে এসে বেশিদিন থাকতে পারেন না, শহরের বাসায় চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে থাকার চেয়ে তারা গ্রামের মানুষ গ্রামে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন), তখন সাথে করে বাড়ির নানা শাক-সবজি, দেশী হাঁস-মুরগী ও ডিম, পুকুরের মাছ ইত্যাদি বস্তা ভরে নিয়ে আসেন, যা ফ্রিজে রেখে সবাই মিলে খেয়েও আমাদের প্রায় ২-৩ মাস অনায়াসেই চলে যায়।

20211220_120650~2.jpg

এভাবেই বাড়িতে শাক-সবজি চাষ করতে পারলে আমরা তার এত এত সুফল পেতে পারি। সেজন্য আমাদের সবারই বাড়িতে বা শহরে খালি জায়গায় শাক-সবজি, ফল-মূলের গাছ লাগিয়ে ইউটিলাইজ করা উচিত। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সবার জন্য শুভ কামনা।
অনেক ধন্যবাদ।

Sort:  

Cultivating some plant joy 💚🌱 with a resteemed!

Many thanks!

 2 years ago 

Very good.

Thanks Anik Phani!

 2 years ago 

অনেক সুন্দর লেখা। খুবই ভালো লেগেছে।

ধন্যবাদ ভাই, পাশে থাকবেন।

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো পোস্ট টা পড়ে ।
সব বাড়িতেই এমন ফল ও সবজির গাছ লাগানো অনেক প্রজন।

অবশ্যই দাদা, আমাদের উচিত বাড়ির আশেপাশে কোন পতিত জমি ফেলে না রাখা। তাতে কোন না কোন গাছ লাগিয়ে রাখলে একদিন সেই গাছ বহুগুন উপকার দিবে।

দারুন ! গাছ রোপণে আগ্রহ বেড়ে গেলো

অবশ্যই, সময় সুযোগ ও খালি জায়গা পেলে আমাদের সবারই গাছ লাগানো উচিত।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.19
JST 0.033
BTC 88985.87
ETH 3290.31
USDT 1.00
SBD 2.98