একদিন তিতাস নদী দেখতে বেড়িয়ে পড়লাম। ১০% @btm-school
ঢাকা গিয়েছিলাম।
তো ঢাকা থেকে কুমিল্লা গেলাম, কুমিল্লাতে আমার পরিচিত এক দাদা থাকে, দাদা বৌদি প্রায় যাওয়ার কথা বলে সেখানে, কিন্তু সময় করে উঠতে পারি না। তো একদিন সময় করে বেড়িয়ে পড়লাম।
এর আগেও ২০১৮ সালে একবার গিয়েছিলাম। তো এবার তিতাস নদী দেখার উদ্দেশ্য গিয়েছিলাম, যেদিন যাই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন। খুব অল্প সময় হাতে নিয়ে তিতাস নদী দেখতে বেড়িয়ে পড়লাম আমি আর দাদা মটর সাইকেল নিয়ে।
তিতাস নদীর নামের মহিমা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিতাস পারের সন্তান অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তিতাস একটি নদীর নাম, এটা তাঁর লিখা একটা উপন্যাস, আমারা সবাই হয়তো জানি। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়ির তিতাস পারের গোকর্ণ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গোকর্ণ গ্রামের অন্য নাম ছিল গাবরপাড়া, অদ্বৈত সেই গোকর্ণ তথা গাবরপাড়ায় জন্ম নিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলেন নানা ধরনের কৃত্য, গান, উৎসব ইত্যাদি এবং সেই সঙ্গে নিম্নবর্গের মানুষের জীবনসংগ্রাম।
তিতাস পারের জনমানুষের সংস্কৃতি ও সংগ্রামের গভীর পর্যবেক্ষক হয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের ভাবসলিলের দার্শনিক বনে গিয়েছিলেন বৈকি, তাহলে তিনি কী করে এক সাদামাটা তিতাস নদীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বললেন, তিতাস নদীটি 'সত্যের মতো গোপন হইয়াও বাতাসের মতো স্পর্শপ্রবণ।' অদ্বৈতের এই ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্য পাঠের মধ্যে আমরা যখন ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চের ১০ তারিখের এক সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার আরেক কৃতী সন্তান সর্বধর্ম সমন্বয় মতবাদী মহাত্মা মনোমোহন দত্তের স্মরণোৎসব উপলক্ষে পুনর্বার তিতাসের পাড়ে গিয়ে দাঁড়াই, তখন আরেক নতুন সত্যের মুখোমুখি হই।
তিতাস বুক শুকিয়ে কৃশকায় হয়ে গেছে আর টলটলে জলের ওপর দিয়ে চলছে ইঞ্জিনচালিত গতিশীল নৌকার বহর, এমনকি তিতাসের ম্রিয়মান কূলজুড়ে দ্রুতগামী স্পিড বোটের অপেক্ষা, মাছের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবসার প্রসার। এসব দৃশ্য নিশ্চিতভাবেই অদ্বৈত মল্লবর্মণের বাস্তব চোখে দৃশ্যমান ছিল না, হয়তো কল্পনার চোখেও ভিড় করেনি কোনো দিন; কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে তিতাস নদীর যে ইতিহাস 'তিতাস একটি নদীর নামে' লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তা ছিল তৎকালের বাস্তব চিত্র অর্থাৎ অদ্বৈত তাঁর প্রত্যক্ষ নিজের কালের প্রবাহিত তিতাস পারের মানুষের কথামালা অকৃত্রিম আবেগে উপস্থাপন করেছিলেন। তিতাসের পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যার মৃদু আলোয় দূরের সেই কুপিবাতির ঘোরলাগা মাধুর্য হয়তো চোখে পাওয়া দুর্লভ।
আমরা দেখেছি, তিতাসের পাড় ধরে বৈদ্যুতিক আলোর প্রসার, কুপিবাতি তো দূরের কথা, গ্রামীণ মানুষ এখন বাড়িতে হারিকেন রাখতে নারাজ! অদ্বৈত বলেছিলেন, 'কিন্তু তিতাসে কত জল! কত স্রোত! কত নৌকা! সব দিক দিয়াই সে অকৃপণ।' বর্তমানে তিতাসের দিকে তাকালে এই বর্ণনার সঙ্গে তেমন ঐক্য প্রত্যক্ষ করা খুবই বিরল হবে। কেননা তিতাস এখন জল, স্রোতধারা, নৌকার পরিবর্তে বুকে ধান চাষের আবাদেই অধিক অকৃপণ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে প্রবাহমান নদী হল তিতাস। এটি বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমানা সংশ্লিষ্ট নদী হিসেবে পরিচিত। নদীটির উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানে বাংলা ভাষায় একে হাওড়া নদী বলা হয় এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় সাঈদ্রা নদী বলা হয়। তবে বাংলাদেশে এসে এর নাম তিতাস নদী।
ভারতীয় অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়েছে। সেখা্ন থেকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
আখাউড়ার শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে এটি আরো দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহৎ নদী মেঘনার সাথে একীভূত হয়েছে। এটা তারই একটা অংশ।
তিতাসের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।
তিতাস ও মেঘনা নদীকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাষ্ট্র বাংলাদেশে অনেক উপকথা প্রচলিত আছে। তার মধ্যে একটি উপকথায় বলা হয়েছে যে, তিতাস নদী মেঘনার কন্যা বা মেয়ে।
কেমন লাগলো জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
বেশ তথ্যবহুল পোস্ট।
ধন্যবাদ, অনেক কিছু জানতে পারলাম।
ধন্যবাদ সম্পূর্ণ পড়ার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
এমন সুন্দর সুন্দর তথ্যবহুল আরও লেখা চাই!
অনেক কিছু জানতে পারলাম
ধন্যবাদ আপনাকে।