Steemit Culture Contest ||Write a short creative story || by @pea07
সোহানুর রহমান অতি স্বল্পভাষী মানুষ। চোখে মোটা ফ্রেমের পাওয়ারফুল চশমা। সবাইকে চশমায় মানায় না তবে উনার চোখ -মুখ বলে দেয় উনি বেশ বিচক্ষণ একজন মানুষ। ঠোঁটে মৃদু হাসি লেগেই থাকে। বয়স খুব বেশী হবে না বড়জোর ৪০- ৪৫ বছর বয়স হবে।
সোহানুর রহমান একটি সনামধন্য প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করেন। পুরো বাংলাদেশে এই ফার্মের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। এই চাকুরীতে ভালো বেতনের সুবিধা থাকলেও অনেক পরিশ্রম করে হয় এবং কিছু দিন পর পরই তাকে নতুন নতুন শহরে চলে যেতে হয়। তিনি ৬ মাসের বেশী কোনো শহরে থাকতে পারেন না। আগে অবশ্য দীর্ঘদিন ঢাকায় মেইন ব্রাঞ্চে কাজ করেছেন কিন্তু ৪ বছর ধরে এমন ট্রান্সফারের উপর থাকেন। যদিও এতে তিনি মোটেও বিরক্ত নন। পরিবার নিয়ে নতুন নতুন শহর দেখতে তার নাকি বেশ ভালোই লাগে।
সোহানুর রহমানের ছোট পরিবার। তার পরিবার বলতে তার স্ত্রী এবং এক ছেলে। ছেলের বয়স খুব বেশী না ৭-৮ বছর হবে। ছেলের নাম "শাবাব রহমান"। অতি শান্ত ছেলে।
এবার উনার পোস্টিং হয়েছে সেতাবগঞ্জের একটি ফার্মে, আগে তিনি শেরপুরে ছিলেন। তাই তিনি শেরপুর থেকে সেতাবগঞ্জ পরিবার নিয়ে থাকতে চলে আসেন। তিনি তিন রুমের একতলা একটি বাসা ভাড়া নেন থাকার জন্য। এই বাসার মালিক দেশের বাইরে থাকে। সোহানুর রহমানের কপালটাই এমন, সে যে বাসা ভাড়া নেন সব বাসার মালিকরাই দেশের বাইরে থাকেন। এটাকে তিনি তার ভাগ্য হিসেবে মেনে নিয়েছেন। মালিক ছাড়া বাসার সুবিধাও অনেক। মাস শেষে কেয়ারটেকার এসে বাসা ভাড়া নিয়ে যায়। সারা মাসে আর কেয়ার টেকারের দেখা মেলে না এবং বাসা নিয়ে কোন রকম অভিযোগও হয় না। যেহেতু তার পরিবারের সদস্য কম তাই এই বাসাতেই তারা বেশ ভালো ভাবেই থাকতে পারবেন ভেবে বাসায় উঠে পরেন তারা।
সোহানুর রহমান সকাল ৯ টায় ফার্মে যান এবং সেখানকার কাজ শেষ করে একবারে সন্ধ্যার পর ফিরেন। ফিরার সময় প্রতিদিন দোকান থেকে একটি করে চিপস কিনে আনেন। কোনদিন চিপস আনতে ভুলেন না। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে দোকানদার তাকে দেখলেই চিপসের প্যাকেট হাতে দিয়ে দেন। মাঝে মাঝে দোকানদার তার ছেলেকে দোকানে নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু সোহানুর সাহেব বলেন, নিয়ে আসব একদিন সময় করে। দোকানদার উনার ছেলেকে কোন স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, বছরের মাঝামাঝিতে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছে তাই আপাতত কোন স্কুলে ভর্তি করায় নি। অবশ্য ছেলপর পড়াশোনায় মনোযোগ হচ্ছে না এজন্য এটা বলে আফসোসও করেন তার সাথে।
প্রায় ৩মাস হলো তারা সেতাবগঞ্জে এসেছে। মাঝে মাঝে তারা তিন জন বাইরে হাঁটতে বের হয়। দূর থেকে দেখেই বোঝা যায় তারা অনেক সুখী। তবে মাঝে মাঝে উনার বাসা থেকে চিল্লানোর আওয়াজ শোনা যায়। হয়তো ছেলেকে তার মা শাসন করলেই ছেলে চিৎকার করে কাঁদে তবে সোহানুর সাহেব বাসায় আসলেই সব শান্ত হয়ে যায়।
প্রতি শুক্রবার সকালে বাইরে টানানো রশি ভর্তি শাড়ি রোদে শুকাতে দেয় উনার স্ত্রী বিকেলে উনি সেগুলো ঘরে নিয়ে যায়। ছেলের সাইকেলের চাকায় হাওয়া ভরে আনা, গল্পের বই কিনে আনা, ছেলের জামা কাপড় দোকান থেকে ইস্ত্রী করে আনা, বাজার করা সবকিছুই তিনি একা হাতে করেন। তারপরেও কখনো উনার সাথে দেখা হলে মুখে হাসি ছাড়া দেখে নি কেউ।
এই তিন মাসে তার আশেপাশে বাস করা সবার কাছেই ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান।
গত ২ দিন ধরে উনাকে দেখা যাচ্ছে না, এত মাসে তাকে প্রতিদনই অফিসে -যেতে আসতে দেখে সবাই কিন্তু গত ২ দিন ধরে সে তার ছেলের জন্য চিপস আনতেও যায় নি।
পরে শোনা যায়, তার ফার্মে একটু দূর্ঘটনা ঘটেছে এবং সেইখানে উনি আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিন্তু ২ দিন কাটার পরও তার পরিবার থেকে কেউ তার খোজ নিতে আসে নি। উনার রক্তের গ্রুপ 'ও-নেগেটিভ' হওয়ায় উনার জন্য রক্তও পাওয়া যাচ্ছিল না তাই বাধ্য হয়ে ফার্মের দায়িত্বে থাকা একজনকে উনার পরিবারের খোঁজ করার জন্য পাঠানো হয়। দরজায় অনেকবার নক করলেও ভেতর থেকে কেই দরজা না খোলায় পুলিশকে জানানো হয়। দরজা ভেঙে পুলিশ ভিতরে ঢুকেও কাউকে খুঁজে পায় নি।
পুলিশের সদস্যরা যখন ফিরে আসার জন্য বের হতে যায় তখন স্টোররুম থেকে কিছু একটা আওয়াজ আসে। দ্রুত তারা সেখানে গিয়ে দেখে চেয়ারের সাথে হাত-পা, মুখ বাধা একজন লোক। লোকটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে সে এরকম বাধা অবস্থাতেই আছে। এর মাঝে ২ দিন ধরে খেতে পারে বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তারপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
৩ দিন পর সোহানুর রহমান আর সেই লোকটি দুজনেই মোটামুটি সুস্থ হয়। পুলিশ ঐ লোকটিকে বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের পর আসল ঘটনা জানতে পারে।
হাত-পা বাঁধা লোকটি আসলে একজন চোর। প্রায় চার বছর আগে সে একটি বাসায় চুরি করতে যায়। সেদিন বাসায় কোন পুরুষ মানুষ থাকবে না এটা ডাকাতটি জানত। টাকা-পয়সা, গয়না নিয়ে অন্ধকারে ফিরে আসার সময় বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি তাকে দেখে ফেলে এবং চিৎকার করতে শুরু করায়, উপায় খুজে না পেয়ে ডাকাতটি তার গলায় টিপে ধরলে ছেলেটি শান্ত হয়ে যায়। ততক্ষণে ছেলেটির মা ও সজাগ হয়ে যায়। এবং তাকেও তার ছেলের মত শান্ত করে দিয়ে চোরটি সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে যখন পুলিশের কাছে যায়, পুলিশ কিছুদিন চেষ্টা করেও চোরটিকে ধরতে পারে নি এবং পুলিশের কাছে কোনরকম সাহায্যও পায় নি পরিবার হারা মানুষটি।
তারপর সে নিজেই বছর চেষ্টা করে চোরটিকে ধরতে পারে এবং তারপরের ঘটনা সবাই বুঝে যায়।
আসলে সোহানুর রহমানের স্ত্রী কিংবা ছেলে কেউ-ঔ বেঁচে নেই কিন্তু সে সবার কাছে পরিবার আছে বলে অভিনয় করে। আর তার স্ত্রী-সন্তানের হত্যাকারীকে সে নিজের সাথেই রাখে। হত্যাকারীকে সে মারধর করে না বরং প্রতিদিন একটা করে চিপস এনে দিত কিন্তু এই ৩ বছরে তাকে ১ টা কথাও বলতে দেয় নি। খেতে দিয়েছে কিন্তু চেয়ারের বাধন খোলে নি।
আর সে ইচ্ছে করেই আশেপাশে মানুষবিহীন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত কারণ সে চায় নি তার বিষয়টা কেউ জেনে যাক।
সন্তানের এমন পরিনতি কোন বাবাই মেনে নিতে পারে না, হয়ত কেউ কেউ এমন আচরণ ও করে।
I am inviting my friend
@ayabajoe2
@blissuju
@@@maruff
Thanks for your participation. Best of luck for the contest
Thank you.
Curated By - @suboohi
Curation Team - The Efficient Seven
Join us on Discord