"রক্তের নয় সম্পর্কটা ভালোবাসার"
প্রিয়,
পাঠকগণ,
কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশাকরি ভালোই আছেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো একটা অন্যরকম মা- ছেলের সম্পর্কের কথা। আসলে শুধু জন্ম দিলেই মা হয় না, কথাটা আমরা বহুবার শুনে থাকি, আমার নিজের চোখে এমন একটি সম্পর্ক আমি দেখেছি।
আমি কথা বলছি আমার মামী আর ইমনের।আপনাদের আগেও বলেছি আমার মামীর সম্পর্কে, মানুষটা সত্যিই অন্যরকম, কি যে ধৈর্য্য মানুষটার ভাবতে পারবেন না। আমরা ছোট থেকে এতো বড়ো হয়েছি কোনোদিন আমাদের সাথে জোরে কথা বলেছে বলে মনে পড়ে না। আর ইমন হলো মামীরা আগে যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই মালিকের ছেলের ছেলে। ওরা দুই ভাই। ইমনের দাদার নাম ঈশান।
(মেয়েদের মত সাঁজতে তার খুব ভালো লাগে)
মামীরা বহুবছর ওই বাড়িতে ভাড়া ছিল, দুইবছর আগে ছেড়ে দিতে হয়েছিল, বাড়ির কাজ হবে তাই। মামী ছোট্ট থেকে ইমনকে বড়ো করেছে। মামীরা যে ওদের বাড়ি ভাড়া থাকতো বোঝাই যেত না। একেবারে নিজেদের মত থাকতো। আমিও ইমনকে ছোট্ট থেকে দেখি। শ্বেতা আমাকে ছোটদী বলে ডাকে তাই ইমণও আমায় ছটদী বলে। আর শ্বেতাকে বলে টুনুভাই😁। কেন এই নামে ডাকে কেউই জানিনা তবে ওর মুখে ডাকটা শুনতে বেশ ভালো লাগে।
মামীর সাথে ওর একটা অদ্ভুত বন্ডিং আছে। ও মামীকে ভালো মা বলে ডাকে। ছোট থেকেই মামীর কাছে যত আবদার। ভীষণ জ্বালাতন করতো মামীকে। মাঝে মাঝে আমি, শ্বেতা মামীর উপর রেগে যেতাম, যে কেন তুমি এত জ্বালাতন সহ্য করো অন্যের ছেলের। মামীর একই কথা ও কি আপনপর বোঝে! ও তো ছোটো।ওর মা ওকে রেখে রেখে ঘুরতে চলে যেত, অথচ ওর কান্না নেই। আর মামী যদি আমাদের বাড়ি বা অন্য কোথাও যেত ব্যস ছেলের শরীর খারাপ হয়ে যেত। এতো টান ছিলো মামীর উপর।
অবশ্য ছিলো বলা ভুল হবে,এখনো আছে। মামী দুদিন না গেলেই সে চলে আসবে মামীকে দেখতে। ওদের বাড়ির কিছুটা দূরেই এখন মামীরা থাকে।শ্বেতা, মামা প্রায় রোজই যায়। এমনকি আমি গেলেও যাই। আমারও টান রয়ে গেছে। ফোনে কথা হলেই ওর কথা জিজ্ঞেস করি।
দেখতে দেখতে কতগুলো বছর হয়ে গেলো। এখন সে স্কুল যেতে শুরু করেছে। কাকী (ইমনের মা) ও ভীষণ ভালো। এখনো পর্যন্ত মামীদের সাথে একই রকম সম্পর্ক রয়ে গেছে। ভালো কিছু রান্না হলেই মামী যেমন ওদের দুই ভাইয়ের জন্য পাঠায়, তেমনই কাকিও পাঠিয়ে দেয় মামীদের জন্য। সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়,ভালোবাসার ও হয়, আর অনেক রক্তের সম্পর্কের থেকে অনেক বেশী গভীর হয়।
ইমণরা কোথাও বেড়াতে গেলেও মামীদের নিয়ে যায়, বিশেষ করে ইমন, ভালো মা কে না নিয়ে সে যাবে না। ওদের বাড়ি থেকে যখন মামীরা চলে আসে, ভীষণ কেঁদেছিল, অনেক বোঝানোর পর ও থামে না, ওদের যখন বাড়ি করা হয়ে গেছে, ও তখন মামীকে এসে বলেছে, মামীর জন্য একটা আলাদা রুম রেখেছে, ওই রুমে ইমন আর ইমনের ভালো মা থাকবে। ভাবুন একবার।
ছোটো মানুষ ওর মতো করেই ভেবেছে, বড়ো হলে কি হবে সেটা অন্য বিষয়, তবে এখনও মামীর সাথে ওর সম্পর্কটা দেখলে ভালো লাগে, ও যদি মামীকে ছেড়ে কোথাও যায় শুধু মামীর জন্য চকোলেট আনবে, মামীকে দেবে অন্য কাউকে নয়, কারণ এত বছরে ও বুঝে গেছে, অন্যরা খেয়ে নেবে, কিন্তু মামী খাবে না , মামী ওকেই দিয়ে দেবে। আসলে খাওয়াটা বড়ো কথা নয়, ও যে আনে সেটাই তো অনেক।
যাইহোক, ইমনের কিছু ছবি শেয়ার করছি দেখে নিশ্চয় ভালো লাগবে। ওকে আশীর্বাদ করবেন, বড়ো হয়ে যেন ভালো মানুষ হয়। আপনারা ভালো থাকবেন।