ঐতিহ্যবাহী বাঁশের তৈরি টং

in STEEM FOR TRADITIONN9 months ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম,
কেমন আছেন সবাই? আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।আজ আমি গ্রামীণ ঐতিহ্য বাঁশের তৈরী টং নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আশা করি সবার ভাল লাগবে।

IMG-20230922-WA0004.jpg

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ।সুজলা- সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ।এই দেশে রয়েছে নানা ধরনের বৃক্ষরাজী।একেক বৃক্ষের একেক উপকারীতা রয়েছে। এগুলো আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগে। এগুলো থেকে আমরা কাঠ পাই যা জ্বালানিসহ আসবাবপত্র তৈরীতে ও কোনো কিছুর কাঠামো তৈরীতে প্রয়োজন পড়ে।কাঠের গাছ ছাড়াও আমাদের একটি প্রয়োজনীয় গাছ রয়েছে সেটি হল বাঁশ। বাঁশ হলো ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ হলেও এটি খুবই শক্ত ও বহুবর্ষজীবী।এটা দিয়ে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরী করা হয় যেগুলো বলে শেষ করা যাবে না। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাঁশের ডালা, কুলা, ডারকি,খাঁচা, টং,মই,ভার,বেড়া,চাটাই আরও কত কি।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাঁশের টং।

IMG-20230922-WA0003.jpg
IMG-20230922-WA0000.jpg

বাঁশের টং হল গ্রামীণ ঐতিহ্য। গ্রামের বিভিন্ন ছায়াযুক্ত খোলা জায়গায় খাটসদৃশ একটি বসার জায়গাকে টং বলে।এটি সাধারণত গ্রামেই লক্ষ্য করা যায়। গ্রামে সাধারণত খোলা জায়গায়, যে জায়গায় বাতাস সচারাচর আসে সেসব জায়গায় টং তৈরী করা হয়।তাছাড়া যে জায়গায় ছায়া থাকে সে জায়গায়ও টং তৈরী করা হয়। গ্রামে অনেকেই পুকুরপাড়ে টং তৈরী করেন।তাছাড়া বাড়ির বাইরের ফাঁকা জায়গায় টং বসানো হয়।টং মূলত বাঁশ ও লোহার পেরেক দিয়ে তৈরি হয়।এজন্য প্রথমে চারটি বা ছয়টি খুঁটি তৈরী করা হয়। এরপর বাঁশ ফাটিয়ে চ্যাপ্টা বাতা তৈরী করা হয়। অনেকেই বাঁশের বাতার পরিবর্তে সুপারি গাছের বাতাও ব্যবহার করেন।এরপর একটি ফ্রেম তৈরী করে নিয়ে খুঁটিতে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নেওয়া হয়। এরপর বাতাগুলো বিছিয়ে দিয়ে একটির পর আরেকটি পেরেক ঠুকিয়ে বসিয়ে দিতে হয়।এভাবে সবগুলো বাতা পেরেক দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। মূলত এই কাজটি করতে একটু সময় লাগে।এভাবে টং তৈরী করা হয়। অনেকেই আবার টং এর উপর টিন বা খড়ের চালের ছাইনি দেন।এতে করে বৃষ্টি বা রোদ হলেও বসে থাকা যায়।টং অনেকেই লোক লাগিয়ে পারিশ্রমিকের পরিবর্তে তৈরী করেন।আবার গ্রামের ছেলেরা সবাই দলবদ্ধ হয়েও টং তৈরী করে।এটা খুবই আনন্দের একটা কাজ।

IMG-20230922-WA0002.jpg
IMG-20230922-WA0001.jpg

টং সাধারণত অবসার সময় কাটানোর জন্য জন্য তৈরী করা হয়। গ্রামে সবাই টং এ বসে আড্ডা দেন। গরমের সময় টং এ বেশি সময় কাটানো হয়।ছেলেরা টং এ বসে বিভিন্ন ধরনের গল্পগুজব করে। টং আড্ডা দেওয়ার জন্যই তৈরি করা হয় না বরং কৃষিকাজের জন্যও তৈরী করা হয়। অনেকেই পুকুর পাহারা দেওয়ার জন্য টং বসিয়ে ঘর তৈরী করেও রাতে থাকেন।আবার লিচু বা আমের বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য টং তৈরী করা হয়। আমাদের পুকুরপাড়েও পুকুর পাহারা দেওয়ার জন্য একটি টং আছে।সেখানে আমরা দিনের বেলা বরশি দিয়ে মাছ ধরি।তাছাড়া অনেকদিন আগে আমাদের বাড়ির বাইরে ছাউনি বসানো একটি টং ছিল।ছাউনিটি ছিল চারচালা খড়ের।সেটির কাঠামোতে উঠে আমরা ঝুলাঝুলি খেলতাম।অনেকেই আবার উল্টো হয়ে ঝুলে থাকতে পারত।এখন সেসবকিছু স্মৃতির পাতায় থাকবে।গ্রামে টং বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয় বলে এই ঐতিহ্যটি এখনও টিকে আছে। আশা করি এটি আজীবন থাকবে।

IMG-20230922-WA0005.jpgIMG-20230922-WA0007.jpg
IMG-20230922-WA0006.jpg

ডিভাইস সংক্রান্ত তথ্যঃ
ডিভাইসরেডমি ১০ সি
ক্যামরা৫০ মেগাপিক্সেল
ফটোগ্রাফার@tamannafariah
লোকেশনভবের বাজার,পার্বতীপুর

পোস্টটি পড়ার জন্য সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Sort:  
 9 months ago 

বাঁশের তৈরি টং গ্রামের ঐতিহ্য, গ্রামের মানুষ আড্ডা দেওয়ার জন্য এই টং ব্যবহার করে। প্রায় প্রতিটি গ্রামে এই টং রয়েছে, গরমের সময় তৃপ্তির বাতাশ পাওয়া যায় এই টং এ। রাতে বসেও এ টং এ গল্প করা হয়। আমাদের বাড়ির সামনেও এমন টং রয়েছে। আপনি অনেক সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করছেন। ফটোগ্রাফি অসাধারণ হয়েছে, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 9 months ago 

গ্রামে বাঁশের টং বেশি দেখা যায়।গরমে বা যে কোনো সময় এলাকা বাসিরা এসে সেখানে বসে থাকে গল্প করে,সময় কাটায়।টং বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।ছাউনি দেয়া টং অনেক জায়গায় দেখা যায়।গ্রাম অঞ্চলে বেশির ভাগ ফাঁকা বা যে কোনো জায়গায় টং দেখা যায়।আপনি বাঁশের টং নিয়ে অনেক সুন্দর করে বিস্তারিত উপস্থাপন করেছেন।আপনি টংয়ে বসে মাছ ধরেন তাও উল্লেখ করেছেন।আপনার স্মৃতির কথা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।আপনার ছবি গুলো ভালো হয়েছে।ধন্যবাদ আপনাকে।

 9 months ago 

ধন্যবাদ।

 9 months ago 

বাঁশের টং বেশ চমৎকার একটি জিনিস। টং এ বসে থাকার মজাই আলাদা। টং এ বসে আমরা বেশ ভালো আড্ডা দিয়ে থাকি।আমাদের এলাকায় এমন টং রয়েছে। আমরা সবাই মিলে টং এ বসে বেশ মজা করি।আপনি বেশ চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।

 9 months ago 

ধন্যবাদ।

 9 months ago 
DescriptionInformation
plagiarism-free
#steemexclusive
Ai Content - free

We expected you to be friendly and active in the Steem For Tradition Community. We appreciate your effort. Thank you for sharing your beautiful content with us ❤️.

 9 months ago 

ধন্যবাদ।

 9 months ago 

খোলা স্থানে নির্মিত টঙ দেখলেই বসার ইচ্ছে করে। টঙ আমাদের গ্রামীন ঐতিহ্যের একটি প্রতিক। খোলা স্থান বা কোনো গাছের নিছে টঙ বসালে অনেক ভালো আড্ডা জমে উঠে। আমার এমন স্থান গুলো অনেক ভালো লাগে। বাঁশ দিয়ে বানানো অনেক কিছুর মধ্যে টঙ অন্যতম। এই সব টঙে বসলে পুরো এলাকার খবর পাওয়া যায়। সুন্দর ছবি তুলেছেন আপনি।

 9 months ago 

হুম।ধন্যবাদ।

 9 months ago 

গ্রাম বাংলার বেশ সুন্দর একটি দৃশ্য এটি। গ্রামের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে যুবক বয়সের সবাই কিন্তু এ ধরনের টং এর ঘর গুলোতে বসে আড্ডা দিতে বেশ পছন্দ করে।আর বাঁশ দিয়ে বানানো এই টং এর ঘরের মধ্যে বসে বসে পৃথিবীর সব আলোচনায় করে হি হি হি। এমন কি গ্রামের অনেক কিছু পাহাড়া দেওয়ার জন্যও এ ধরনের টং করা হয়ে থাকে। বেশ দারুন একটি পোস্ট করেছেন আজ।

 9 months ago 

ধন্যবাদ আপু।

 9 months ago 

বাঁশের তৈরি টং নিয়ে অনেক সুন্দর লিখেছেন আপু। আসলে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই টং গ্রামে যদি একটি টং থাকে তাহলে ওখানে বেশিরভাগ সময় প্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের বেশি দেখা যায় এবং তারা একসঙ্গে বসে ওখানে আড্ডা আড্ডা দিয়ে থাকে অথবা বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আপনাদের মত আমাদের এলাকায় ও একটি টং রয়েছে এবং ওই টংয়ের উপরে ছাউনি দেওয়া হয়েছে যাতে বৃষ্টির সময় পানি পড়তে না পারে। আমাদের এলাকার টংয়ে আমরা গিয়ে মাঝে মাঝে প্রায় আড্ডা দিয়ে থাকি অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি। ধন্যবাদ আপনাকে এরকম সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সকলের মাঝে শেয়ার করার জন্য

 9 months ago 

বাসে টং গুলোতো একটু বড় হয়ে থাকে আর মাটি থেকে কিছুটা উপরে থাকে কিন্তু এই টংটি এত নিছা কেন। এখানে সবাই ছোট বাচ্চারা বসে নাকি। আমাদের গ্রামে যে টং রয়েছে সেটা মাটি থেকে অনেক উপরে যাতে ছোট বাচ্চারা উঠতে না পারে। আর এই টঙ্গ গুলোতে গরমের দিনে অনেক ভালো লাগে অনেক সময় বসে আড্ডা দেওয়া যায়। টঙ্গের উপরে ছাউনি থাকলে বৃষ্টির সময়ও ভালো আড্ডা দেওয়া যায় সেখানে। অনেক সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 9 months ago 

ঐতিহ্যবাহী বাশের তৈরি টং নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন আপু। আসলে গ্রামের মানুষের খুবই একটি পরিচিত ও প্রশান্তির স্থান এটি। গ্রামের মহিলারা তাদের বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে এসে এই টং এ আড্ডা দেয়। আবার বাচ্চা বুড়ো ছেলে সবাই টং এ বসে আড্ডা দেয়। রাতের কারেন্ট গেলে টং এ গিয়ে সবাই আড্ডা দেয়। প্রতিটি গ্রামেই এই ধরনের বাশের টং দেখা যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66197.45
ETH 3522.75
USDT 1.00
SBD 3.14