Steemit Engagement Challenge S9-W3: "Kindness that changed my life
আসসালামুয়ালাইকুম বন্ধুরা
সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ, হত্যা, মন্দা, দুর্ভিক্ষ বিরাজমান যা আমাদের মনকে প্রতিনিয়ত দগ্ধ করছে সেখানে এমন একটি কন্টেস্ট আমাদের নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে শেখায়, আমাদের মনে করে দেয় যে এখনো সমাজে ভালো মানুষ আছে, এখনো আমাদের আশা ফুরিয়ে যায়নি। আমাদের এই সপ্তাহের টপিক আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে মানুষের মানবিকতা নিয়ে।
আমাদের কন্টেস্টের মিয়ম অনুযায়ী কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আমি সে বিষয়েই চলে যাচ্ছি।
সামাজিক জীব হিসেবে আমরা কখনোই একা বাস করতে পারিনা। আমাদের একে অন্যের সাহায্য নিয়েই চলতে হয়। আর যারা এই অমূল্য সাহায্য নিয়ে মানবতার খাতিরে এগিয়ে আসে তারাই মহান।
আমার জীবনের তেমনি একজন নিঃস্বার্থ, পরোপকারী ব্যক্তির কথা আজ আপনাদের শোনাবো। আমার এমবিএ ফার্স্ট সেমিস্টারের পর বিয়ে হয়ে যায় যার ফলে আমার কয়েক সেমিস্টার ব্রেক হয়ে যায়। আমি যখন সেকেন্ড সেমিস্টারে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করি আমার জন্য তা খুবি কঠিন হয়ে পরে। আমার সাথে যারা ক্লাস করছে তাদের কাউকেই আমি চিনিনা। ক্লাসের পর আমি তারাতাড়ি বাসায় চলে আসি কারন আমার চার মাসের বাচ্চাকে তার নানু আর খালার কাছে রেখে আমি ক্লাসে যাই। তাই নোটস গুলোও কালেক্ট করতে পারছিলাম না।
আমি কোন ভাবেই বাচ্চা, ক্লাস, পড়া ব্যালেন্স করতে পারছিলাম না। হতাসা পেয়ে বসছিলো আমাকে। এমন সময় সাহায্যের হাত নিয়ে এলো সোনিয়া, আমার সেমিস্টারের একজন সহপাঠি, যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে তার সাহায্যের হাত বারিয়ে দিলো। আমার ক্লাস বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত হতো, তাই সোনিয়া আমাকে বলতো তোমাকে নোট ফটো কপি করার জন্য ওয়েট করতে হবেনা। বাসায় বাবু অনেকক্ষণ একা আছে। তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার নোটস কালেক্ট করে রাখবো। আমার বাসা থেকে আমার ইউনিভার্সিটি ৫/৬ কিমি দূর, বাসায় পৌঁছাতে আমার প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট লেগে যেত। নোটসের জন্য ওয়েট করলে আমার আরো অনেক দেরী হয়ে যেত।
আমি ছোট বেবী নিয়ে স্টাডিতে বেশী সময় দিতে পারতাম না। আমি নোটস থেকে মেইন পয়েন্ট ও মেইন থিম গুলো মুখস্ত করতাম যাতে এক্সামের সময় বানিয়ে লিখতে পারি। সোনিয়া এটা জানতো তাই সে আমার সব নোটসের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট ও লাইন গুলো হাইলাইটার দিয়ে মার্ক করে দিত যাতে আমি সহজেই পড়তে পারি আমার সময় যাতে কম লাগে।
যারা এমবিএ করেছেন তারা জানেন এই কোর্সে প্রচুর প্রেজেন্টেশান দিতে হয়। সোনিয়া ইচ্ছে করে আমাকে ওর পার্টনার হিসেবে নিত। ও সারা রাত জেগে প্রেজেন্টেশান তৈরি করতো আমি শুধু ক্লাসে তা প্রেজেন্ট করতাম। একটা প্রেজেন্টেশান তৈরি করতে কত কষ্ট তা যারা প্রেজেন্টেশান তৈরি করেছেন তারা ভাল জানেন। পুরো দের বছর সে আমাকে এভাবেই সাহায্য করে গেছে। সোনিয়া আমাকে এতো সাহায্য করতো এতে ওর কোন স্বার্থ ছিল না, ছিল না বিনিময়য়ে কিছু পাওয়ার আশা। পুরোটাই ছিলো আমার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। ওর কারনেই আমি সিজিপিএ ৩.৯২ পাই আউট অফ ৪ থেকে। সোনিয়ার এই মহানুভবতা আমার জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। আমি মানুষের মানবিকতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখেছি। মানুষ কে কিভাবে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করা যায় তা শিখেছি।
আমার সবসময় মনে হতো আমি যদি ওর জন্য কিছু করতে পারতাম। সোনিয়া আমাকে ঋণের মাঝে জরিয়ে ফেলেছিলো যা আমি কোন দিনও শোধ করতে পারবোনা। আমি মন থেকে তার জন্য দোয়া করি। অন্যদের সামনে তার মানবিকতার উদাহরণ দেই। সাথে সাথে যে উপকার করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হতেও অনুরোধ করি।
আমি যখনি ওর এই নিঃস্বার্থ উপকারের কথা মনে করি আমি তার বিশাল হৃদয়ের কথা ভাবি। কত সুন্দর ও উদার ওর মন-মানসিকতা। এই ভাবনা আমাকে জীবন ও মানুষের পজিটিভ দিক গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
এমবিএ রেজাল্ট ভালো হবার কারনে আমাকে জব নিয়ে বেশী ভাবতে হয়নি যা আমাকে ফিনান্সিয়ালি সাপোর্ট দিয়েছে।
আমি সোনিয়ার কাছে চির কৃতজ্ঞ। ও আমাকে এই ভাবে সাহায্য না করলে ছোট বেবী নিয়ে আমার পক্ষে হয়তো এমবিএ শেষ করা সম্ভব হতোনা আর হলেও রেজাল্ট ভাল হতোনা। আমি সবসময় ভাবতাম যে আমার উপকার করবে আমি শুধু তার উপকারই করবো অন্য দের নয়। আমার সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে যে নেগেটিভ চিন্তা ধারা ছিল যে নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ কাউকে সাহায্য করেনা এই ঘটনার পরে আমি এই নেগেটিভ চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসেছি।
আমার জীবনে এই ঘটনার প্রভাব বিশাল। আমিও এরপর থেকে চেষ্টা করি অন্যকে সাহায্য করতে। যখনি মনে নেগেটিভ চিন্তা আসে আমি আমার মন কে বোঝাই যে অন্যকে সাহায্য করলে সেই সাহায্য কোন না কোন ভাবে আমার কাছে ফিরে আসবেই , হয়তো অন্য কোন মাধ্যমে। নিজেকে মনে করিয়ে দেই যে সোনিয়া আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেছিল। আমার্ব অন্যদের সাহায্য করা উচিৎ।
আমি এখন অন্যকে সাহায্য করে মনে অনাবিল আনন্দ পাই এই ভেবে যে আমি সোনিয়াকে সরাসরি কোন সাহায্য করতে পারিনি কিন্তু আমি ওর মতো করে নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যদের সাহায্য করতে শিখেছি।
এখানে ব্যবহৃত ইমেজ গুলো ক্যানভা দিয়ে তৈরি। সবাইকে আমার পোষ্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ |
---|
আমি আমার তিন জন বন্ধুকে এই কন্টেস্টে অংশ গ্রহন করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছিঃ
@enamul17
@mdkamran99
@mostofajaman
আপনার সহপাঠী সোনিয়া আপুর মহানুভবতা ও উদারতা দেখে আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত হলাম। আপনার জীবনের বড়ো একটা অধ্যায়ে আপনার পাশে দাড়িয়ে ছিলো এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছিলো। জীবনে চলার পথে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য কিছু মানুষরূপী ফেরেস্তা পাঠান, যা আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেন।
আজ যদি প্রতিটি ঘরে এমন মানুষের আঞ্জাম হতো, তাহলে হাজার হাজার নারী বা পুরুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে, স্বরনীয় সময়টাকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর করে কমেন্ট করার জন্য। আমাদের সমাজে এখনো কিছু ভাল মানুষ আছে বলেই সমাজ এখনো ঠিকে আছে। নাহলে কবেই আমাদের জীবন নরকে পরিনত হতো।
হুম, ঠিক কথা বলেছেন
hello my friend @hasina78
I think your kind post is really inspiring to everyone. Because if we get help or favor from such a classmate on the way in life then we have a lot to learn from him. And it is through education that we must exercise our liberal attitude.
Thank you very much for sharing your publication with us and I wish you success in the competition.
Thank you dear for your nice comment. I am really lucky enough to have such a friend like Sonia.