Better life || The Diary Game - 08.04.2021 || আড্ডা মুখর দিন

in Steem Bangladesh3 years ago (edited)

তারিখ: আজ ৮ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার।
স্থান: বড়পুল, চট্টগ্রাম।

ডায়েরি গেমের আমার আজকের পর্ব: ডাইরি গেম খুব এনজয় করছি। মনে হচ্ছে- ছোটবেলায় যে প্রতিদিন ডায়েরি লিখতাম, সেটা আবার শুরু করেছি। এটার একটা সুবিধা হল- আমার দৈনন্দিন কার্যাবলী লিপিবদ্ধ থাকছে। ভবিষ্যতে যদি কখনো পৃষ্ঠা উল্টে দেখি, তখন খুব ভালো লাগবে পুরাতন দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে।


সকাল


আজ সকাল শুরু হয়েছে অন্যান্য দিনের মতো। যথারীতি ৯ টায় ঘুম থেকে উঠেছি, নাস্তা করেছি। তবে অন্যান্য দিনের মতো আজ সকাল সকাল মোবাইল নিয়ে বসি নি।

আজ আমার এক কলিগ আমাদের এলাকা এসেছিলেন, তিনি সদ্য বিবাহিত। শ্বশুর বাড়ীর আদর আপ্যায়ন পেতে পেতে ক্লান্ত হয়ে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচবার উদ্দেশ্যে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছেন। আমাকে ফোন দিলেন, আমিও গেলাম। একসাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।

যেহেতু লকডাউন চলছে। তাই বসার মত খুব একটা রেস্টুরেন্ট খোলা ছিলো না। আর আমরা যে জায়গায় থাকি, আশেপাশে কোন সেরকম বসার জায়গা না থাকায় রাস্তায় রাস্তায় অনেক সময় ধরে ঘোরাঘুরি করলাম। মজা পেলাম। তারপর একটা রেস্টুরেন্ট খুঁজে পেলাম। নাম খুব অদ্ভুত সুন্দর- ওই বাবু খাইছো!!

'ওই বাবু খাইছো'-তে বসে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম, সময় পাস করলাম.. ফাঁকে ফাঁকে কিছু নাস্তা করলাম।

অনেকদিন পর পরিচিত কারো সাথে আড্ডা দেওয়াতে মন একদম ফ্রেশ হয়ে গেল। সকাল আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কেটেছে।


দুপুর


আড্ডা শেষ করে বাসায় এসে গোসল করলাম। তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিলাম।

ইদানিং এক বাজে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, রাত জাগা। রাত জাগার কারণে দিনের বেলা ঘুম আসে, তাই দুপুর বেলায় ঘুমাই, আর দুপুর বেলা ঘুমালে আবার রাতে ঘুম আসে না। এক চক্রের মধ্যে মনে হয় পড়ে গিয়েছি। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। তবে পারছিনা।

আগামীকাল থেকে চেষ্টা আরো জোরদার করব ইনশাআল্লাহ। আজকে দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম। ঘুম বলতে সেই আগের মতই তন্দ্রা, আধো ঘুম আধো জাগরণ।


বিকাল


বিকালে ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারি করলাম। যেহেতু এখন লকডাউন চলছে, তাই বাহিরে বের হই নি। ঘরের মধ্যেই মর্নিং ওয়াক, ইভিনিং ওয়াক সেরে ফেলি। আজকে হাঁটলাম, কিছুক্ষণ বাসায় ছোট বাচ্চাদের সাথে কিছু দুষ্টামি করলাম।

20210226_182609.heic


সন্ধ্যা


সন্ধ্যাবেলা আবার বের হয়েছিলাম। কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা ছিল। পাশাপাশি একটু হাঁটাহাঁটি। পরিচিত একজনের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।

একটা দোকান আছে, ফার্মেসি।‌ যেহেতু লকডাউন এর মধ্যে ফার্মেসি খোলা রাখার অনুমতি আছে , তাই তিনি সেটি খোলা রেখেছেন। সন্ধ্যাবেলা গিয়ে সেখানে বসলাম। তার সাথে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে সময় পাস করলাম।

সবশেষে বলা যায়, আজকের দিনটা আমার বাহিরে হাঁটাহাঁটি, আড্ডা দিতে দিতেই কেটে গিয়েছে। যেহেতু আজকে অনেক বেশি আড্ডা দিয়েছি, তাই আড্ডা নিয়েই আজকের উপলব্ধি শেয়ার করব।


আজকের উপলব্ধি: আড্ডা মুখর জীবন


আড্ডা বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি খুব প্রিয় জিনিস।

আগের দিনে মানুষ এত বেশি আড্ডাপ্রবণ ছিল না, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত মানুষ আড্ডা পাগল হয়ে যাচ্ছে।

বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতে মানুষ খুব পছন্দ করে। এছাড়াও পরিচিত, কলিগ, প্রতিবেশীদের সাথে আড্ডা দেয়।

আড্ডা দেওয়ার বেশকিছু উপকারিতা আছে। আমি এটা নিয়ে শেয়ার করব আপনাদের সাথে।


১. মানসিক ফুর্তি: আড্ডা এক ধরনের মনের ব্যায়াম। শরীর যেমন একটানা বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন একটু হাঁটাচলা বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে ভালো লাগে, চনমনে হয়ে ওঠে... ঠিক তেমনি মনেরও এক্সারসাইজ দরকার হয়। না হয় মন মরা হয়ে যায়। তখন কোন কিছুই ভালো লাগেনা। তাই মনের এক্সারসাইজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মনে রেখো, প্রিয় মানুষদের সাথে আড্ডা দিলে মন ফ্রেশ হয়ে যায়। নতুন করে কর্ম উদ্দীপনা পায়। তার প্রধান উপকারিতা হচ্ছে মানসিক ফুর্তি‌।


২. বিষণ্নতা দূর করা: মানব জীবনের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিষন্ন হওয়া।

আমাদের মন খুব বেশি চনমনে, খুব বেশি গতিশীল। এজন্য গায়ক বলেছিলেন- পাগল মন মন রে.. মন কেন এত কথা বলে?

মনকে বেঁধে রাখা খুব কঠিন, তাই মন কখনো কখনো যেমন উদ্দীপ্ত হয়.. তিনি কখনও কখনও চুপসে যায়। মানসিক বিষন্নতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কখনো কখনো আমাদের কোন প্রিয়জনের মৃত্যু অথবা অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদ ইত্যাদি কারণে যেমন মানসিক বিষন্নতা আসে.. কখনও কখনও কোনও কারণ ব্যতিরেকেই বিষণ্নতা আসে।

বিষন্নতা দূর করার অনেকগুলো উপায়ের মধ্যে খুব কার্যকর একটা উপায় হলো আড্ডা। আপনি যখন আপনার প্রিয় মানুষদের সাথে আড্ডা দিবেন, তখন আপনার মানসিক বিষন্নতা দূর হয়ে যাবে।


৩. দক্ষতা বৃদ্ধি: আপনি যদি কোন দক্ষ মানুষের সাথে আড্ডা দেন, তবে আপনারও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এটা নির্ভর করে- আপনি কার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন, কোন বিষয় নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন.. তার উপর।

আপনি যদি ধর্মীয় বিষয়ে কোন ধার্মিক ও জ্ঞানী আলেম ব্যক্তির সাথে আড্ডা দেন, তাহলে ধর্মীয় অনেক রীতিনীতি সম্পর্কে আপনার অজ্ঞতা দূর হবে এবং নতুন অনেক কিছু জানতে পারবেন। ঠিক তেমনি কোনো রাজনৈতিক দূরদর্শি ব্যক্তির সঙ্গে যদি আপনি পলিটিক্যাল বিষয়ে আড্ডা দেন, তাহলে রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণ ক্ষমতা যেমন আপনার বৃদ্ধি পাবে, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি হবে।

আপনি যদি আপনার অফিসের কলিগের সাথে কর্মস্থল এবং কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে আড্ডা দেন, তাহলে আপনি যে কাজটি করেন.. সেই কাজ সম্পর্কে আপনার দক্ষতা ‌ও সচেতনতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে। সেটা আপনার কর্মক্ষেত্র এবং ক্যারিয়ারে সহায়তা করতে পারে।


৪. সামাজিকীকরণ: একটা মানুষের মানসিক বিকাশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে একটা মানুষ সমাজে বসবাসের যোগ্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে। এটা খুব অবচেতনভাবেই ঘটে।

একটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে সেই মানুষটির পরিবার, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ভূমিকা আছে তার নিয়মিত আড্ডার।

মানুষ যে বিষয়ে আড্ডা দিতে অভ্যস্ত, সেই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এজন্য কোনো মানুষকে জাস্টিফাই করতে হলে তার বন্ধুদের দিকে তাকালেই হয়। যে ব্যক্তি ভালো বন্ধুদের সাথে বেশি সময় পাস করে, সে তুলনামূলকভাবে ভালো হয়ে থাকে। আর যে ব্যক্তি খারাপ মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটায়, সে তুলনামূলকভাবে একটু খারাপ ও অপরাধপ্রবণ হয়ে থাকে। এটা সাইকোলজি বলে থাকে। এটা যদিও শাশ্বত সত্য নয়, তবে সাধারণত এমনটা হয়ে থাকে। কিছু ব্যাতিক্রম তো অবশ্যই আছে।



এতক্ষণ আড্ডার কিছু উপকারিতা আলোচনা করলাম, তবে আড্ডার কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। যদিও ক্ষতিকরটা নির্ভর করে- যে ব্যক্তি আড্ডা দিচ্ছে তার উপরে, এক্ষেত্রে যে সকল ক্ষতিকর বিষয়াবলী সামনে আসতে পারে সেগুলো হলো-


১. দায়িত্বহীনতা: কখনো কখনো মানুষ খুব বেশি আড্ডা প্রবণ হলে পারিবারিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব নিতে অনীহা বোধ করে.. এর ফলে সে দায়িত্বহীন এর মত আচরণ করে। সেটা পরিবারে, সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আমাদেরকে অবশ্যই আড্ডা দিতে হবে, তবে সেটা কখনোই আমাদের দায়িত্ব, কাজে ফাঁকি দিয়ে নয়। সবার আগে আমাদেরকে প্রায়োরিটি সেট করা উচিত। কোন কাজটা আমরা আগে করব, সেটা যদি আমরা না বুঝি, তাহলে আড্ডা কখনোই ফলপ্রসূ ও ইফেক্টিভ হবে না।


২. খারাপ আড্ডা: আগেই বলেছি- যে মানুষ খারাপ মানুষদের সাথে বেশি সময় কাটায়, সে খারাপ কাজের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে.. তাই আড্ডা দেওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধব নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কেউ যদি খারাপ বন্ধু নির্ধারণ করে, সে ক্ষেত্রে আড্ডাটা তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।


৩. সময়ের অপচয়: কোন কিছুই খুব বেশি মাত্রায় হলে সেটা ভালো হয় না.. সবকিছুর একটা পরিমিত মাত্রা থাকে। এই মাত্রা অতিক্রম করলে সেটা ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর আপনি পরিমিত মাত্রায় এবং পরিমিত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সেটি আপনার জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারেন।

ঠিক তেমনি আপনি যদি খারাপ মানুষ এবং অতিরিক্ত সময় আড্ডা দেন, আপনার জন্য খারাপ ফল বয়ে আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- অনেক সময় আমরা অনেককে দেখি, যারা আড্ডা দিয়ে সারা দিন পার করে, কিন্তু কাজ করে না। তারা মূল্যবান সময়কে অপচয় করছে।

আমরা জানি- সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না.. তাই সময়ের মূল্য যারা বুঝে, তারা অপ্রয়োজনীয় আড্ডায় সময় নষ্ট করে না।


যাই হোক, অনেক কথা বললাম। সবাই আড্ডা দিবেন, বন্ধুদের সাথে ভাল ভাল আড্ডা। যেন কোয়ালিটি সময় পাস হয় এবং সুখী সুন্দর জীবন গড়ে তুলবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63396.80
ETH 2615.51
USDT 1.00
SBD 2.86