Movie Review : Television Movie (2012)

in Steem Bangladesh4 years ago

টেলিভিশন এই মুভিটি আমি সিনেমা হলে নয় আমি এই মুভিটা ইউটিউবে দেখেছিলাম তবে বর্তমানে এটা ইউটিউব থেকে ব্যান করে দেয়া হয়েছে, যার জন্য ইউটিউবে এই মুভিটি নেই তবে হইচই এ্যাপের এর মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে মুভিটি। আশা করছি, আমার এই মুভি রিভিউ এই পোস্টটি দেখার এবং পড়ার পর যে কেউ মুভিটি একবার হলেও দেখবেন।

মুভি রিভিউঃ টেলিভিশন

IMG_20210304_194040.jpg

ইমেজ উৎস

জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত বাংলাদেশের আলোচিত টেলিভিশন সিনেমা। এই সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, তিশা। এই সিনেমাটি বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি নির্মাণাধীন থাকা কালে গুটেনবর্গ ফিল্ম ফেস্টিভালে চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার লাভ করে এবং মুক্তি আগেই জিতে নেয় ২০১২ সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন পুরস্কার। ৮৬ তম একাডেমী অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) এর বিদেশি ভাষার সিনেমা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য চলচ্চিত্রটিকে বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

images.jpeg

ইমেজ উৎস

এছাড়া ১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘এশিয়ান সিলেক্ট’ ক্যাটাগরিতে সেরা সিনেমা হিসেবে ‘নেটপ্যাক পুরস্কার’ পায়। অষ্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৩ এশিয়া-প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডে (অ্যাপসা) ফার্স্ট জুরি গ্র্যান্ড পুরস্কার অর্জন করে চলচ্চিত্রটি।

‘টেলিভিশন’ সিনেমার কাহিনী যৌথভাবে লিখেছেন আনিসুল হক ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ছবিয়াল, স্টার সিনেপ্লেক্স ও মোগাদর ফিল্ম (জার্মানি)।

শ্রেষ্ঠাংশে

  • মোশাররফ করিম - মজনু
  • চঞ্চল চৌধুরী - সোলাইমান
  • নুসরাত ইমরোজ তিশা - কোহিনূর
  • কাজী শাহীর হুদা রুমী
  • শামীম শাহেদ
  • মুকিত মজুমদার

Screenshot_2021-03-04-19-50-03-701_com.google.android.youtube.jpg

ইমেজ উৎস

কাহিনী সংক্ষেপ

resize.png

ইমেজ উৎস

সিনেমাটি শুরু হবে একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। 'বাংলাভিশন' এর এক মহিলা সাংবাদিক একজন গ্রামের চেয়ারম্যানকে তার ধর্মীয় বিধিনিষেধ নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছে। চেয়ারম্যান যতটুকু পারেন, উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমেই চেয়ারম্যানের নানা কীর্তি প্রকাশিত হয়। তিনি নাকি তার গ্রামের মানুষদের টিভি দেখতে দেন না, মোবাইল ব্যবহার করতে দেন না, জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে দেন না। এ সমস্তের পিছনে তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ 'কোরআন' এর যুক্তি দেখান। তাই তার গ্রামে পত্রিকা পড়া হলেও সেখানে প্রকাশিত ছবিগুলো ঢেকে রাখা হয়। এতে তার ঈমান অক্ষুণ্ন থাকে।

চেয়ারম্যানের ছেলে সোলাইমানের সাথে মালেশিয়া প্রবাসীর মেয়ে কোহিনূরের প্রেম। আবার সোলাইমানের তত্ত্বাবধানে চাকরি করা মজনু কোহিনূরকে পছন্দ করে; কিন্তু তাকে এখনো মনের কথাটা বলতে পারেনি। পরবর্তীতে সে বললেও কোহিনূর তাকে প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সে হাল ছাড়ে না। সে নানাভাবে কোহিনূরের সামনে হাজির হয়, বারবার তার মনের কথা বলার চেষ্টা করে। আবার এই মজনুর বুদ্ধির জোরেই সোলাইমান হাতে একটা মোবাইল পায় এবং সারা গ্রামের যুবকরা মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি পায়। সিনেমাতে এই 'মজনু' চরিত্রটি একদিক থেকে মনিবের প্রতি অনুগত থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে নিজের সুবিধার জন্য 'ভোল' পাল্টাতেও দ্বিধা করত না। একারণে তাকে খানিকটা 'রহস্যময়' বলেই মনে হয়।

Screenshot_2021-03-04-19-49-57-758_com.google.android.youtube.jpg

ইমেজ উৎস

গ্রামের এক হিন্দু, প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক কুমার বাবু একদিন গ্রামে একটি টিভি নিয়ে হাজির হয়। চেয়ারম্যান, নিষেধাজ্ঞা সত্ব্বেও কেন সে টেলিভিশন এনেছে - এই প্রশ্ন করলে কুমার বাবু বলে যে তার ধর্মে তো টেলিভিশন নিয়ে কোন কিছু লেখা নেই। তাই সে ইচ্ছে করলে তা ব্যবহার করতে পারে। চেয়ারম্যান তা মেনে নেন ঠিকই কিন্তু তৎক্ষনাত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। পরবর্তীতে মসজিদের ইমামের পরমার্শে ঠিক হয়, কুমার বাবু টিভি দেখতে পারবেন ঠিকই কিন্তু কোন মুসলমানকে তা দেখানো যাবে না। যদি মুসলমানেরা দেখে এবং তা চেয়ারম্যানের কান অবধি পৌঁছায়, তবে বিচার বসানো হবে। তাতে দর্শকের পাশাপাশি কুমার বাবুরও উপস্থিত থাকতে হবে। এই মর্মে সে টিভি নিয়ে বাসায় যায়। কিন্তু লোকেদের আটকানো যায় না। তারা বাসাr জানালা দিয়ে ভিড় করে টিভি দেখত। ছোট ছোট ছেলেরা 'প্রাইভেট' পড়ার নাম করে কুমার বাবুর বাসায় চলে আসত যাতে কোনভাবে টিভি দেখা যায়। একারণে পরে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান কুমার বাবুর বাসায় গিয়ে সব কিছু দেখেন এবং ঠিক করেন কুমার বাবুকে ক্ষতিপূরন দিয়ে টিভিটা নদীর পানিতে ফেলে দেওয়া হবে। সেখানে তিনি কোহিনূরেরও দেখা পান; যে কিনা টিভি দেখার জন্য সেখানে গিয়েছিল। এই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল চেয়ারম্যানেরই ছেলে সোলাইমান। কোহিনূরকে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান কানে ধরে সবার সামনে উঠ-বস করান। এতে সে প্রচণ্ড অপমানিত হয় এবং সোলাইমানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সোলাইমান বিচ্ছিন্ন হবার দুঃখে মদ ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। কাজেই সে সারাক্ষণ বিষণ্ন হয়ে থাকত। ঠিক এই সময়েই মজনু কৌশলের সাথে জানান দেয় যে সে কোহিনূরকেই ভালবাসে। কিন্তু সোলাইমান তা বুঝতে পারে না। মজনু তাকে পরামর্শ দেয় যাতে সে আরেকটা মেয়ে ধরে। কারণ জীবনে কত 'কোহিনূর' যাবে আসবে! কিন্তু সোলাইমান তা মানতে পারে না। তাই পরে মজনু নিজ উদ্যোগেই যায় কোহিনূরের কাছে যাতে সে সব ভুলে গিয়ে আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কোহিনূর এবার শর্ত দেয় যে তাকে বিয়ে করতে হলে সোলাইমানকে তার বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। গ্রামে টেলিভিশন আনতে হবে। তাদের বিয়েতে টেলিভিশন আনতে হবে। গ্রামের সবাই দেখবে। তবেই তার সুখ!

সোলাইমান প্রাথমিকভাবে তার প্রতিবাদ করলেও পরে ঠিকই বাবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। গ্রামের কিছু ছেলেপিলে নিয়ে সে মাইকিং করে বেড়ায় এই বলে যে সে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে কোহিনূরের সাথে এবং সেখানে একটি টেলিভিশন আনা হবে। তাতে যেন সব গ্রামবাসী যোগ দেয়। এখানে তার বাবা প্রতিবাদ করতে আসলে তার এক সহকারীকে সোলাইমানের নির্দেশে ছেলেপিলেরা মারধর করে। এতে তার বাবা মনে বেশ কষ্ট পান এবং রাত্রিবেলা কান্নাকাটি করেন। সোলাইমান পরে নিজের ভুল বুঝতে পারে। তাই সে কোহিনূরের কথানুযায়ী চেয়ারম্যানের পা ধরে মাফ চায়। বাবা ছেলেকে ক্ষমা করে দেন।

Screenshot_2021-03-04-19-50-30-266_com.google.android.youtube.jpg

ইমেজ উৎস

আবার চেয়ারম্যান ঠিক করেন যে এইবার তিনি হজ্বে যাবেন। আগে তিনি চাইলেও যেতে পারেননি কারণ তার প্লেনে চড়তে বেশ ভয় করে। কিন্তু এবার তিনি বুঝতে পেরেছেন যে এইটা আসলে 'শয়তান' এর চাল। কাজেই তিনি এই ভয়কে জয় করে হজ্জে যাবেন। কিন্তু এর জন্য তাকে ছবি তুলতে হবে। তাতে তিনি কোনভাবেই রাজি না। কারণ তিনি সারাজীবন ছবি তুললেন নি, দেখেনও নি। এমনকি আয়নায়ে নিজের মুখও না। সেখানে তিনি কিনা ক্যামেরার সামনে এসে এভাবে ছবি তুলবেন! ইসলামিক যে ধ্যানধারণা এতদিন তিনি পুষে রেখেছিলেন, সেটাই কিনা তাকে শেষ পর্যন্ত ভাঙতে হল ইসলামেরই একটি মহান কাজে যোগ দেবার জন্য। কোহিনূরের সাথে সোলাইমানের বিয়ে ঠিক করে তিনি একলা রওয়ানা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে তিনি প্লেনে করে যাবেন।

ঢাকায় আসার পর চেয়ারম্যান দেখতে পান এখানকার মানুষ অনেক উন্নত কিংবা 'অশ্লীল'! যেসব ছবি তিনি এতদিন পত্রিকাতে ঢেকে রাখতেন, সেই ছবিগুলোই ঢাকা শহরে আনাচে কানাচে ছড়ানো। তিনি খানিকটা অবাক কিংবা হতভম্ব হয়ে এসব দেখতে থাকেন। এয়ারপোর্টে আসবার পর তিনি দেখেন যে তাকে ঠকানো হয়েছে। টাকা পয়সা নিয়ে এজেন্ট পালিয়ে গেছে। তার মতই অনেক বৃদ্ধলোক এয়ারপোর্টে বসে কান্নাকাটি করতে থাকে। এখানে চেয়ারম্যানের কিছুই করার থাকে না। এখন তিনি যদি গ্রামে চলে যান, তবে তার অবস্থা দেখে লোকে নানা কথা বলবে। সেজন্য তিনি অত্যন্ত খারাপ মনে ঢাকার এক হোটেলে এসে উঠেন। খাওয়াদাওয়া পুরোপুরি ছেড়ে দেন। ঘরের বাইরে যান না।

Screenshot_2021-03-04-19-50-15-213_com.google.android.youtube.jpg

ইমেজ উৎস

এভাবে কিছুদিন যাবার পর হঠাৎ দিনের বেলা তিনি শুনতে পান "লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক" ধ্বনি। সেই সুমধুর ধ্বনি যেটা সুদূর মক্কাশরিফে বলা হচ্ছে। তিনি অত্যন্ত আগ্রহ ভরে বাইরে বের হয়ে আসেন এবং দেখতে পান পাশের এক রুমে টিভি চালানো আছে এবং সেখানেই হজ্ব দেখানো হচ্ছে। তিনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। এরপর নিজের ঘরে ঢুকে হোটেল বয়কে দিয়ে টিভিটা চালু করান এবং "লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক" শুনতে শুনতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটতে চলেছে। তিনি ভুল বুঝতে পেরেছেন। যে যন্ত্র এতদিন তিনি ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন, সেটাই তার মনে শান্তি এনে দিচ্ছে। কি অদ্ভুত জীবন! তিনি কাঁদছেন ... কেঁদেই চলেছেন।

সংগীত

  • হৃদয় খান
  • আইয়ুব বাচ্চু

মুভিটা আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি, সত্যি আমার মন কেড়েছে। গ্রাম্য চিত্র ফুটে উঠেছে এই মুভিটার মধ্যে এবং আমাদের সমাজে এখনো অনেকে এটা মানেন যে টেলিভিশন দেখা ঠিক নয়।

[বিঃদ্রঃ অধিকাংশ ছবি ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট নেয়া এবং উইকিপিডিয়া।]

Sort:  
 4 years ago 


Polish_20201009_015638739.jpg

Your post has been upvoted by @steem-bangladesh courtesy of @rex-sumon

JOIN WITH US ON DISCORD SERVER:

Support us by delegating STEEM POWER.
20 SP50 SP100 SP250 SP500 SP

Follow @steem-bangladesh & @steemitblog for last updates

 4 years ago 

Thank you.

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 63131.59
ETH 2586.04
USDT 1.00
SBD 2.78