My favourite writer(Sarat Chandra Chattopadhyay)
আসসালামু আলাইকুম
I am @selimreza1 🇧🇩
ধন্যবাদ steem Bangladesh কমিউনিটিকে।
আমার প্রিয় লেখক হচ্ছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস জগতে প্রবেশ করলে প্রথমে শরৎচন্দ্রের নাম আমাদের মনে আসে। কারণ তাঁর রচনায় সমাজ জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাঞ্ছিত জনের একান্ত মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। তার কিছু বড় গল্প এবং প্রবন্ধ থাকলেও উপন্যাসিক হিসাবে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত।
- তিনি 15 সেপ্টেম্বর 1876 সালে হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে শরৎচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায়। তার পিতার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। দারিদ্র্যের প্রতিবন্ধকতায় শরৎচন্দ্রের শিক্ষা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। কিশোর বয়সে তিনি পড়াশোনা করতেন ভাগলপুর টি এল জুবিলী স্কুলে।এই স্কুল থেকে তিনি 18 বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে পরীক্ষার ফিসের টাকাও ঠিকমতো দিতে পারেনি। পরীক্ষার ফি র টাকা দিতে না পারার কারণে তিনি এ পরীক্ষা দিতে পারেনি। ফোনে এখানেই তার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। কাজের সন্ধানে তিনি নানা দেশ ঘুরে বেড়াতেন। তাই তার জীবনে গড়ে ওঠা দেশ ও জনগণ সম্পর্কে এক অভিজ্ঞতার পাহাড়, জাতার সাহিত্যজীবনের উপকরণ হিসেবে কাজে লেগেছে। তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন সেই অভিজ্ঞতা গুলো কাজে লাগিয়েছেন।তিনি কখনো খেয়ালের বশে, কখনো বা জীবিকার কারণে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়িয়েছেন। একসময় তিনি মোজাফফরপুর শহরে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে অবস্থান করার সময় তিনি তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সংবাদ পান। তার পিতার মৃত্যুর সংবাদে তিনি ভেঙে পড়েন এবং পুনরায় নিরুদ্দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন।
মোজাফফরপুর থেকে তিনি ভাগলপুরে আসেন। ভাগলপুর থেকে তিনি কলকাতায় আসেন। কিন্তু এখানেও তার মন টিকলো না। তিনি সেখান থেকে মায়ানমারে চলে যান। মায়ানমারের রেঙ্গুন শহরে তিনি অল্প বেতনের একটা চাকরি জোগাড় করে নেন। কিশোর বয়সের অনেকগুলো গল্প এবং উপন্যাস অপ্রকাশিত অবস্থায় এতদিন পরে ছিল। তার মধ্যে কয়েকটি রচনা ভারতী, যমুনা,সাহিত্য প্রভৃতি কয়েকটি প্রকৃত পত্রিকায় প্রকাশিত হলো। প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতবর্ষে তার পরিচিতি বাড়তে থাকল। গোটা ভারতবর্ষে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এবং তিনি বাঙালি সমাজে পরিচিত হয়ে পড়েন। এরপর তিনি উৎসাহিত হয়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সাহিত্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে শরৎচন্দ্রের ভাগ্য বদলে যায়। তার লেখার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তিনিও গভীরভাবে লেখায় মনোযোগ দেন। একের পর এক রচনা প্রকাশিত হতে থাকে আর বিনিময় আসতে থাকে অনেক অর্থ- যশ,খ্যাতি -সম্মান। যিনি একদিন কয়েকটি টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি,কাজের সন্ধানে দেশ-বিদেশে বেরিয়েছে। আজ তিনি একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি ও অঢেল সম্পত্তির মালিক। তার জীবন থেকেও অনেক কিছু শিখে নেওয়া যায়। পরিশ্রম করলে মানুষের ভাগ্য যে কোন সময় বদলে যেতে পারে। তার সামান্য কিছু লেখা পড়া দিয়ে, তিনি অনেক বড় মাপের একজন লেখক হয়েছেন। তাই জীবনে চলার পথে কখনো হতাশ হলে চলবে না। শরৎচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী।তার গল্পে এমন একটা আকর্ষণ ছিল,যে পাঠকরা অল্পতেই মুগ্ধ হয়ে পড়তো। তিনি তার বক্তব্যে এমন নৈপুণ্য ও হৃদয় অনুভূতির সাথে বর্ণনা করেছেন যে পাঠকের হৃদয়ে তাৎক্ষনিক সাড়া দেয়। তিনি বাঙ্গালীদের কাছে ওপন্যাসিক হিসাবে পরিচিত। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস গুলো বাঙালি হিন্দু সমাজে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তখনকার হিন্দু সমাজের সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। হিন্দু সমাজে লাঞ্ছিত, অপমানিত,অন্যায়-অত্যাচারে তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির চোখে অবস্থার প্রেক্ষাপটে যা ভালো, অন্যের বিচার ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তা ভালো নাও হতে পারে। সমাজে যে যত ভালো কাজ করুক না কেন তার সমালোচনা করার মতো লোক আছে। সেইসব সমালোচনায় কান না দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আর এই মতবাদের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে তাঁর উপন্যাসের মজবুত। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে বড়দিদি, দেবদাস, চরিত্রহীন, গৃহদাহ, পল্লীসমাজ, সতী প্রভৃতি উপন্যাস এ কারণেই এত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার বিভিন্ন উপন্যাসের মধ্যে আমার সেরা উপন্যাস হলো দেবদাস। দেবদাস উপন্যাস আমি অনেকবার পড়েছি। প্রতিবারই আমার খুব পড়তে ভালো লাগে।
দেবদাস উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত কাহিনী:
এই উপন্যাসে দেবদাস ছিল একজন ধনী যুবক বাঙালি ব্রাক্ষণ পরিবারের সন্তান। পার্বতী ছিল একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের যুবতী। তারা একই গ্রামে বাস করতেন দেবদাস এবং পার্বতী শৈশবের বন্ধু। দেবদাস-পার্বতীর চাইতে বয়সে বড় ছিল।
তাদের দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল সারাদিন তারা প্রায় এক সাথেই থাকতো। দেবদাস কে লেখাপড়ার জন্য শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর যখন দেবদাস গ্রামে ফিরে আসে তখন তারা বুঝতে পারে যে তাদের বন্ধুত্ব এখন আর বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।অন্য সম্পর্কের দিকে ধাবিত হচ্ছে এটা দ্বারা অনুভব করতে থাকে। পার্বতীর মা দেবদাস এর মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। দেবদাসের মা পার্বতী কে পছন্দ করে কিন্তু অ-জমিদার বলে বিয়েতে অসম্মতি জানায়। পার্বতীর বাবা দেবদাসের বাবা-মার কথায় নিজেকে অনেক অপমানিত বোধ করে। পার্বতীর জন্য তিনি অনেক ধনী ঘরে বিয়ে ঠিক করেন। পার্বতী রাতের অন্ধকারে দেবদাস এর সাথে দেখা করে তাকে সব ঘটনা খুলে বলে। পার্বতী দেবদাসকে বলে তার বাবাকে বোঝানোর জন্য। দেবদাস তার বাবাকে জানায় কিন্তু তার বাবার রাজি হয়না। দেবদাস কলকাতায় ফিরে যায়।পার্বতীর বিয়ে হয় এক জমিদার এর সাথে, সেই জমিদারের আগের স্ত্রী মারা গেছে এবং তিনটি সন্তান রয়েছে। কলকাতায় যেয়ে দেবদাস কোনভাবেই পার্বতী কে ভুলতে পারে না। পার্বতী দেবদাস কে বলেছিল যে মৃত্যুর আগে যেন একবার তাকে দেখতে পায়।
source
হতাশাগ্রস্ত দেবদাস মদ্যপান শুরু করে। অধিক মদ্যপানের কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তার অবস্থা এতটাই অবনতি হয়। তিনি বুঝতে পারেন যে মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই সে বেরিয়ে পড়ে পার্বতীর সাথে দেখা করার জন্য। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে এক অন্ধকার শীতের রাতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় তার মৃত্যু হয়। পার্বতী মৃত্যুসংবাদ শুনে সেখানে ছুটে যেতে চায় কিন্তু তার বাড়ির লোক সেখানে যেতে দেয় না। এই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা তৈরি করা হয়েছে।এমনই আরো অনেক হৃদয়বিদারক কাহিনী নিয়ে তিনি উপন্যাস লিখেছেন আর এ কারণে তাঁর উপন্যাস গুলো সবাই এত বেশি পছন্দ করে। 1913 সালে বার্মা থেকে ফিরে এসে শরৎচন্দ্র পানিত্রাস গ্রামে গৃহ নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ সমাজের চক্ষুশূল ছিলেন। সমাজের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরতে গিয়ে সমাজের কোপানলে পরতে হয় তাকে। তার বামুনের মেয়ে উপন্যাস প্রকাশ হওয়ার পর সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সবাই মিলে শরৎচন্দ্রকে খুন করার জন্য ষড়যন্ত্র করে। তিনি ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে কলম চালিয়ে গেছেন।
- 1938 সালের 16 জানুয়ারি এক নার্সিংহোমে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সুন্দর হয়েছে।
Thanks bro
ভালো লিখেছেন ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাই