Contest:Book review||মৃত্যুক্ষুধা||by @ripon999||17 jun 2021
আসসালামুয়ালাইকুম সকলকে,
This is @ripon999 from 🇧🇩Bangladesh🇧🇩
আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে ভাল আছি।Steem-Bangladesh কতৃক আজকের কনটেস্ট "বইরিভিউ"নিচে আমার রিভিউটি তুলে ধরলাম আশা করি সকলের ভাল লাগবে।আমি আজকে যে বইটি রিভিউ করব সেটি হল বিদ্রহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুক্ষুধা"
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কন্টক-মুকুট শোভা।দিয়াছ,তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস।
উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি,বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ'ল তরবার।
-*কাজী নজরুল ইসলাম
"এদের অভাব অসীম,অপরিমেয় । দুঃখ, দারিদ্র ,রোগ-শোক ক্ষুধা,ও দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে রাখে সর্বক্ষণ।।এদের একদিকে মৃত্যু আর অন্যদিকে ক্ষুধা।
কাজী নজরুল ইসলামের একটি অনবদ্য সৃষ্টি হল "মৃত্যুক্ষুধা"উপন্যাসটি ।১৯৩০ সালে "সওগাত" পত্রিকায় এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়।উপন্যাসটি কবি তার বাস্তব অভিজ্ঞতা অবলম্বনে রচনা করেছেন।"
লেখক | কাজী নজরুল ইসলাম |
---|---|
ধরন | উপন্যাস |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ৮০টি |
"মৃত্যুক্ষুধা" উপন্যাসের পটভূমি
কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়কের একটি বস্তি এলাকা।এখানে বাস করে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবার।বৃদ্ধা মা,তিনটি বিধবা পুত্রবধূ ও তাদের কয়েকটি সন্তান।আবার ১৯ বছরের একটি ছেলে ,স্বামীর বাড়ি ফেরত একটি মেয়ে নিয়ে তার হতদরিদ্র সংসার।
বৃদ্ধার ছেলের নাম প্যাকালে।এই প্যাকালের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলেই সংসার টিকে আছে কোন ভাবে।সে ভালোবাসা কুশি নামের এক খ্রিস্টান মেয়েকে।কুশিও তাকে ভালবাসে।এই দরিদ্র পরিবারের সাথে আরেকটি কাহিনী এসে জুড়ে আছে।
প্রথম কাহিনীতে মৃত্যু আছে ক্ষুধা আছে কিন্তু দ্বিতীয় কাহিনীতে মৃত্যু আছে ক্ষুধা নেই।দ্বিতীয় ঘটনাটি সংসার বিবাগী বিপ্লবী দেশ প্রেমিক আনসারের।আনসার ভালোবাসতো ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কন্যা রুবিকে।রুবিও তাকে ভালোবাসতো।
কিন্তু মা-বাবা রুবিকে বিয়ে দেয় অর্থলোলুপ এক যুবকের সাথে।রুবি তাকে স্বামী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।অবশ্য অল্প কয়েকদিনের মধ্যে রুবীর স্বামী মারা যায়।আনসার রাজ বন্দী অবস্থায় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়।রুবি এ সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই আনসারের কাছে।আনসার মৃত্যুবরণ করে ক্ষয়রোগে।কাহিনী শেষ হয় এই রোগে রুবীর আসন্ন মৃত্যু দিয়ে।
মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের এক অনন্য অসাধারণ চরিত্র মেজবৌ।মেজবৌকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত উপন্যাসের কমললতার সাথে তুলনা করা যায়।সে ছেলে-মেয়ের খাওয়া পড়ার জন্য ধর্মান্তর হলেন খ্রিস্টান ধর্মে এবং তাদের রেখে চলে গেলেন অনেকদূরে বরিশালে।আবার ছেলের অসুখের কথা জেনে ফিরে এসেছিলেন বাড়িতে।
উপন্যাসটিতে প্রধানত দুঃখ-দুর্দশা, খুদা এসব ফুটে উঠেছে।প্রথম বিশ্বযুদ্ধত্তোর এসব দুঃখ যন্ত্রণা মানুষকে কিভাবে গ্রাস করেছিল তা উপন্যাসটি পড়লে চোখের সামনে ভেসে ওঠে।আর এ সবকিছু লেখকের খেয়ালী মনের সৃষ্ট কিছু নয় বরং লেখকের কাছ থেকে দেখা ঘটনাপ্রবাহ যেখানে লেখকের উপন্যাস এর স্বার্থে চরিত্রগুলো পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মাত্র।
চরিত্র সমূহ
রুবি :
শিক্ষিত মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে।পিতা ম্যাজিস্ট্রেট মেয়ের অমতে বিয়ে দিয়ে দেয়।তার মনের মনিকোঠায় একজনের বসবাস,তার নাম আনসার।
আনসার :
মূলত এই চরিত্রটিতে কাজী নজরুল ইসলামের নিজের বৈশিষ্ট্য গুলো ফুটে উঠেছে।আনসার বৈরি স্বভাবের।
মেজবৌ :
মেজবৌ অভাবি মুসলিম ঘরের বিধবা বৌ।একটি ছেলে একটি মেয়ের মা।বৈধব্য মাতৃত্ব আর অভাব কিছুই মেজ বউ এর রুপ আর হাসি কিছুই কম করতে পারেনি।
পকাল :
সম্পর্কে মেজবৌয়ের দেবর।তিন ছেলে হারিয়ে মায়ের একমাত্র অন্ধের যষ্টি আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
কুর্শি :
শ্যামলা বর্নের ১২,১৩ বছরের মেয়ে।কিন্তু বয়সের থেকে একটি বেশি বাড়ন্ত।কুর্শির বাবা ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান।খ্রিস্টান জেনেও প্যাকলে মেয়ের প্রেমে পড়ে।
প্যাকালে :
প্যাকালের বয়স ১৮ কি ১৯ বছর।টাউনের থিয়েটার দলে নাচে, সখি সাজে।বাবুদের সাথে মিশতে মিশতে চুলের টেরিকাটে চা, পান খায়।আবার কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করে।
রোমান্টিকতা
"পাশ ফিরে কাশতে থাকে সেজবৌ। মনে হয় ওর জানটা গলায় উঠে ঠেকেছে।কবর দেওয়ার জন্য বাঁশ কাটার শব্দ টা যেমন ভীষণ করুন শোনায় তেমনি তার কাশির শব্দ।"
"ভোর না হতেই সেজবৌয়ের ছেলেটা সেজবৌয়ের কাছে চলে গেল।বিভিন্ন রজনীতে মৃত প্রদীপ যেমন ক্ষণিকের তরে ক্ষীণ আলো দিয়ে নিভে যায় ঠিক তেমনি।"
প্রকাশনার বিভিন্ন তথ্য
মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে কৃষ্ণনগরের অবস্থানকালে কবি নজরুল এ উপন্যাসটি রচনা করেন।১৯২৭-১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ধারাবাহিকভাবে সওগাত পত্রিকায়।১৯২৭-১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়কের ধারে একতলা একবাংলা প্যাটার্নের বাড়িতে বাস করতেন।তার সুবিখ্যাত ও বহুপঠিত কবিতা "দারিদ্র্য" এই সময় রচিত।
ব্যক্তিগত মতামত
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একটি স্মরণীয় নাম।আমার মতে তিনি যেহেতু তার নিজ বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে তুলে ধরেছেন সে দিক থেকে তা অতুলনীয়।উপন্যাসটিতে কাজী নজরুল ইসলাম বিভিন্ন চরিত্রে বিভিন্ন দিক সুষ্ঠ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
রেটিং
আমার মতে বাংলা সাহিত্যের এই অমর উপন্যাসটি সেরা ৫০- এ তো বটেই সেরা ১৫ তেও রাখা যায়।
Good read.com -এ ৪.১/৫
Google play store :৪.৩/৫
ভালো হয়েছে অনেক
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ।
Okk...,ধন্যবাদ
অনেক সুন্দর হয়েছে ভাই
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই