TRAVEL THE WORLD-MY TRAVEL REVIW-TANGOAR HAOR TOUR
পুরো পৃথিবী একটি বই, এবং যারা ভ্রমণ করে না তারা কেবল এর একটি পৃষ্ঠা পড়ে .........
এই বিখ্যাত উক্তিটি করেছেন "সেন্ট অগাস্টাইন" ভ্রমন নিয়ে এমন হাজারো উক্তি রয়েছে ।একজন ভ্রমন প্রিয় মানুষ হিসেবে আজকের কনটেস্ট টি আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং। ধন্যবাদ @steem-bangladesh এবং @sohanurrahman ভাইকে এতো সুন্দর একটি কনটেস্ট আয়োজন করার জন্য।
আমি আজকে রিভিউ করব আমার অন্যতম একটি সেরা ভ্রমণ টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে।টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর।হাওরের সুন্দর্যের রানী বলা হয় তাকে।
যাত্রা শুরু:
গত বছরের জুন এ ২৫ জন টিম মেট নিয়ে আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওর যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার ফকিরাপুল থেকে।রাত ১১.৩০ মিনিটে শ্যামলী বসে করে যাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের।এই ভ্রমণে আমাদের একটি আলাদা মিউজিক্যাল টিম এর পাশাপাশি আরো অনেকে ছিল তাদের পরিবারের সাথে।
মিউজিক্যাল টিম
বাসের মধ্যে অর্ধেক রাত গান গেয়ে এবং বাকি অর্ধেক রাত ঘুমিয়ে আমরা পরদিন ভোরে পৌঁছে যাই সুনামগঞ্জ এর পানসি হোটেল এর সামনে।
প্রথম দিন:
পানসি তে নাস্তা সেরে আমরা হালকা বিশ্রাম নেই এবং আমাদের ফোন ,পাওয়ার ব্যাংক গুলো চার্জ করে নেই।তারপর পানসির সামনে থেকে লেগুনা করে আমরা চলে যাই টেকের ঘাট।টেকের ঘাট এ প্রবেশের সাথে সাথে আমার মনে প্রানে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করা শুরু করে ।প্রকৃতির অপরূপ সুন্দর্য আমাকে ভরিয়ে দিয়েছে অন্যরকম মুগ্ধতায়।
Location
টেকের ঘাটে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত নৌকা ঠিক করা ছিল।অবশ্যই ওখানে গেলে আগে থেকেই নৌকা ঠিক করে রাখা ভালো।নৌকার ছাদে বসে আমার হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করছি এবং আমরা যারা মিউজিক্যাল টিমের ছিলাম আমরা আবারো গান বাজনা শুরু করলাম।একটু পড়ে একটা বাজারের পাশে নৌকা থামিয়ে আমাদের ট্যুর এডমিন এবং নৌকার মাঝিরা মিলে বাজার করতে গেল।ওখানে আপনি যা খেতে চান,সেভাবে নিজের মত করে বাজার করে নিতে পারবেন।বাজার শেষে নৌকার মধ্যেই রান্না চলতে থাকে এবং গানের তালে তালে নৌকাও চলতে থাকে সামনের দিকে।রান্নার সব দায়িত্ব মাঝিদের ।ওখানের মাঝিদের রান্নার প্রশংসা আপনাকে করতেই হবে।এত অসাধারণ! চলতে চলতে আমরা ওয়াচ টাওয়ার এর সামনে পৌঁছাই।
ওয়াচ টাওয়ার
ওয়াচ টাওয়ার এর পাশেই নিরাপদ জায়গায় নৌকা থামিয়ে আপনি গোসল সেরে নিতে পারেন।অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট টেকের ঘাট থেকে ভাড়া নিয়ে যাবেন ।কারণ লাইফ জ্যাকেট ছাড়া আপনি গোসল এর আসল মজাটাই পাবেন না।টাঙ্গুয়ার হাওর এমন এক জায়গা যেখানে আপনি পানিতে ভেসে ভেসে প্রকৃতির সুন্দর্য উপভোগ করার সাথে চা খেতে পারবেন।
গোসলের স্থিরচিত্র
আপনি যেই নৌকা ভাড়া নিবেন সেই নৌকায় ছোট সাইজের একটি ওয়াশ রুম থাকবে যেখানে আপনারা জামা কাপড় পরিবর্তন করতে পারবেন।গোসল সেরে নৌকার ছাদে বসে চলবে দুপুরের খাওয়ার আয়োজন।আমাদের খাবারের আইটেম ছিল আলু ভর্তা ,ভাত ,মাছের তরকারি,ডাল।চারদিকে পানি আর দূরে সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে অসাধারণ খাবার খেলাম।এ খাবার এর তৃপ্তি বলে বোঝানো যাবেনা।
দুপুরের খাবার শেষ হওয়ার পর নৌকা চলতে শুরু করল নীলাদ্রি লেকের দিকে।আমরা তখন উদরপূর্তি করে ঘুমাচ্ছিলাম।ঘুম ভাঙল নীলাদ্রি লেকে পৌঁছে।চোখ মুছেই যে সুন্দর্য দেখলাম স্রষ্টা কে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।মেঘ পাহাড় পানি একসাথে মিশে এক অপরূপ সুন্দর্যের লীলাভূমি মনে হবে ।
Location
নৌকা থেকে বের হয়ে হাটতে থাকলাম নীলাদ্রি লেকের দিকে ।মজার বেপার হল এই লেকের একপাশে বাংলাদেশ অপর পাশে ভারত ।একটু পরেই সন্ধ্যে নেমে এলো আর সাথে সাথে জলে উঠল বর্ডারের সকল সোডিয়াম লাইট ।লাইটের আলো যখন লেকের পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছিল কি যে অপরূপ সুন্দর্যের সাক্ষী হয়ে গেল আমার এই দু চোখ।এই সুন্দর্য মুখে বলে বা ছবি দিয়ে প্রকাশ করার মত না।
নিলাদ্রিতে আমি
লেকের পাশে সবুজ ঘাসে আমাদের টিমের সকলে মিলে চলতে থাকল আমাদের গানের আসর।ঠান্ডা বাতাস এর সাথে গানের গলা মিশে এক মধুর পরিবেশ সৃষ্টি হল।রাত ১০ টার দিকে আমরা রাতের খাবার শেষ করলাম।আমাদের খাওয়ার সময় মাঝিরা আমাদের ঘুমানোর বিছানা রেডি করে দিল নৌকার ভিতরেই।নৌকার ভিতরে রাত যাপন এইটা অন্য রকম একটা ভালো লাগা ছিল।
বি.দ্র: যদি কেউ নৌকায় থাকতে না চান তাহলে মাঝিদের বললে তারা নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে হোটেল বা লেকের পাশে বাড়ি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে।
নীলাদ্রি লেক মেঘালয় এর পাশে হওয়াতে আবহাওয়া একটু পর পর চেঞ্জ হচ্ছিল।রাতে জুম বৃষ্টি শুরু হল।বৃষ্টির আওয়াজ মনের মধ্যে এক অন্য রকম আন্দোলন সৃষ্টি করল।হাওরে বৃষ্টি হওয়া মনে স্বর্গীয় সুখ।
দ্বিতীয় দিন:
পরদিন সকালে ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে লেকের পাড়ে সূর্যোদয় দেখলাম।তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে আমরা রওনা হলাম শিমুল বাগানের উদ্দেশ্যে।২ ঘন্টা টানা চলার পর আমরা পৌঁছে গেলাম শিমুল বাগানে ।
Location
শিমুল বাগানে গিয়ে আমাদের টিম মেম্বারদের ছুটো ছুটি এবং ফটোসেশন চলতে থাকল।আমরা কয়েকজন মিলে আলাদা গান গাচ্ছিলাম।একটা ভিডিও শেয়ার করছি নিচে
ওখান থেকে আবার ১ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে আমরা গেলাম বারিক্কা টিলা।নৌকার মাঝি আপনাকে সকল দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাবে ,তাই কোথায় যাবো বা কিভাবে ঘুরবো তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না ।
বারিক্কা টিলায় আমি
বারিক্কা টিলায় ঘুরে আমরা এরপর চলে যাই জাদু কাটা নদীর উদ্দেশ্যে।জাদু কাটা দেখতে অনেক সুন্দর হলেও তার পানি খুবই নোংরা ছিল।এবং ঐখান থেকে বালু তোলার কারনে ওখানে চোরাবালিও ছিল।নিরাপদ জায়গা দেখে আমার ওখানে আমাদের দুপুরের গোসল সারি।
জাদু কাটা নদী
গোসল সেরে জাদুকাটা নদীর উপরেই আমরা দুপুরের খাবার খাই।খাবার শেষ করে আমরা টেকের ঘাটের দিকে রওনা হই।পথেই শুরু হয় জুম বৃষ্টি।নৌকার চলার সাথে সাথে বৃষ্টির যে অনাবিল সুন্দর্য দেখলাম মনে থাকবে আজীবন ।আসার সময় সমস্ত রাস্তা মাঝিরা আমাদের গান শুনিয়েছে।আসলে তারা একদমই মাটির মানুষ।যেমন তাদের হাতের রান্না ,তেমন তাদের ব্যবহার,তেমন তাদের গানের গলা।আমরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাদের সাপোর্ট দিলাম।এমনি করে টেকের ঘাট এসে মাঝিদের থেকে বিদায় নিয়ে লেগুনা করে বিকালের মধ্যেই চলে আসলাম আবার পানসি তে।আমাদের ঢাকার ফিরতি বাস রাতে হওয়ায় আমরা ভালো সময় পেলাম বিশ্রাম এবং ফোন চার্জ দেওয়ার জন্য।তারপর পানসিতে রাতের খাবার খেয়ে বাসে উঠলাম এবং পরদিন ভোরে ঢাকায় নামলাম।
এই ছিল আমার টাঙ্গুয়ার ট্যুর বৃত্তান্ত।
দর্শনীয় স্থান :
- টেকের ঘাট
- তাহিরপুর বাজার
- নীলাদ্রি লেক
- বারিক্কা টিলা
- শিমুল বাগান
খরচ:
যেহেতু আমি ইস্টিশন ট্রাভেলস নামক একটি ট্রাভেল গ্রুপ এর সাথে গিয়েছি সেহেতু আমাকে তাদের নির্ধারিত টাকা আমাকে পে করতে হয়েছে।নির্ধারিত ফি ছিল ৪৫০০ টাকা।খরচ কমাতে চাইলে বেশি মানুষ ট্যুর দিতে হবে ।আর টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকার খরচ তা একটু বেশিই।উক্ত টাকায় তারা আমার সকল খরচ বহন করছে ।খুব একটা অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়নি আমার।
❤️
Regards,
@rajib833
প্রথম দিন এর প্রথম ছবিটি অস্থির ছিল। টাঙ্গুয়ার হাওর খুবই সুন্দর একটি জায়গা। শিমুল বাগানের প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। ভ্রমণের জন্য জায়গাগুলো ছিল অপূর্ব। ধন্যবাদ আপনার ভ্রমণের রিভিউ দেয়ার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই ।
রিভিউ খুব সুন্দর হয়েছে। আমার পছন্দের একটি যায়গা। আজকে ছবিগুলো দেখে আবার সেই হাওর ট্যুরের কথা মনে পড়ে গেল।
অনেক ধন্যবাদ ভাই ❤️