Steem Bangladesh Contest - Book Review:- ||হুমায়ুন আহমেদের ১ম উপন্যাস "ময়ুরাক্ষী'||
হেলোও!আসসালামু আলাইকুম,ঈদ মুবারাক!
কেমন আছেন?ভালো আছেন তো?কেমন কাটলো সবার ঈদ?আশা করছি লকডাউন ঈদ খুব একটা ভালো না কাটলেও খুব একটা মন্দ ও কাটেনি।কি? তাই তো? জানাবেন নিশ্চয়।
আজ আমি একটি " বই রিভিউ" করছি।
নামঃ ময়ুরাক্ষী'
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ'
সামান্য আলাপচারিতা🔘
আমার প্রিয় লেখক "হুমায়ুন আহমেদ"।
আমি খুব ছোট্ট থেকেই তার বই পড়ি।এখন তো আমি নিজেই ভুলে যাই কোন বই পড়েছি আর কোন বই পড়িনি।যাক সেসব কথা,ময়ুরাক্ষী বইয়ের মাধ্যমেই হুমায়ুন আহমেদ "হিমু " চরিত্রটি প্রকাশ করেন
"ময়ুরাক্ষী" বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্য🔘
- ১/ লেখকঃহুমায়ুন আহমেদ
- ২/ শিরোনামঃময়ুরাক্ষী
- ৩/ দেশঃবাংলাদেশ
- ৪/ বইটির ভাষাঃবাংলা ভাষা
- ৫/ ধারাবাহিকঃহিমু
- ৬/ বিষয়াবলীঃহিমু ও মহাপুরুষ
- ৭/ ধরণঃ উপন্যাস
- ৮/ প্রকাশিতঃ১৯৯০ সাল
- ৯ প্রকাশকঃঅনন্যা পাবলিকেশন
- ১০/ বইটির মিডিয়া ধরণঃ ছাপা শক্তমলাট
- ১১/পরবর্তী লিখিত বইঃ "দরজার ওপাশে"
ময়ুরাক্ষীর উল্লেখ্যিত চরিত্রাবলি🔘
চরিত্রের পরিচয় ও চরিত্রের নাম
★হিমু - চৌধুরী ইমতিয়াজ টুটুল
★হিমুর ফুফাত ভাই - বাদল
★মীরা - জাস্টিস এম.সোবহান সাহেবের মেয়ে
★রিনকি - বাদলের বোন
★রূপা - হিমুর বান্ধবী
★মজিদ - হিমুর বন্ধু
ময়ুরাক্ষী র সংক্ষিপ্ত কাহিনী🔘
বইয়ের শুরুর লাইনটি হলো,"" এ্যাই ছেলে এ্যাই""।
শুরুর কাহিনী হলো, একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা হিমু কে ডাকছে, ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, সে টুটুল?
এরপর উত্তরে হিমু উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো এতে মহিলা ভেবে বসলো সে ই টুটুল।এতে মহিলাটি তার গাড়ির কাছে গিয়ে তার মেয়েকে বললো যে, সে ই টুটুল এবং হিমুকে টুটুল ভেবে গাড়িতে উঠালো।কিন্তু একটু পর মেয়েটি খেয়াল করলো-ছেলেটি টুটুল নয়।ফলে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলো এবং তাকে পুলিশে দেওয়া হলো।পুলিশের কাছে তাকে একটু উদ্ভট লাগাতে পুলিশ খুবই রেগে যায় এবং তাকে বসিয়ে রাখে একটি বেঞ্চিতে।সে বেঞ্চিতে বসেই ময়ুরাক্ষী নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পর মীরা ফোন দিয়ে বলে হিমুকে যেনো ছেড়ে দেওয়া হয়।
হিমুর বাবা ছিলেন বিকারগ্রস্ত মানুষ,তিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার এর মতন "মহাপুরুষ " তৈরি সম্ভব।
তিনি মহাপুরুষ তৈরির স্কুল খুলেছিলেন,যার একমাত্র ছাত্র হিমু।এই মহাপুরুষ সৃষ্টি করার জন্যই হিমুর মা কে হত্যা করেন তিনি।
তার মৃত্যুর পর এক সময় সে আসে তার ফুফুর বাড়ি।সেখানেও জটিলতার শেষ নেই, বড় জটিলতা হলো, বাদল তার সংস্পর্শে এসে তার মতো হয়ে যাচ্ছে কারণ হিমুর প্রতি বাদলের ভক্তি ও অগাধ বিশ্বাস।
একদিন পরিচয় হয় রূপার সাথে।রূপা হিমুকে ভালোবাসে কিন্তু হিমু তাকে ধরা দেয় না আবার দূরেও সরিয়ে দেয়না কারণ,
সে মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা আছে সে তো চাইলেই রূপার কাছে যেতে পারবেনা।
ময়ুরাক্ষী নদীর উৎপত্তির কাহিনী:🔘
হিমু তখন ক্লাস সিক্স এ। একদিন জিউগ্রাফির মজিদ স্যার ক্লাসে স্যার নদ-নদী নিয়ে পড়াচ্ছেন।হঠাৎ স্যার হিমুকে জিজ্ঞেস করলেন একটি নদীর নাম।হিমু উত্তর দিলো,"আড়িয়াল খাঁ"।
স্যার এগিয়ে এসে একটি চড় বসিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ পর স্যার অনেককথা বললো,এরপর নদীর নাম জিজ্ঞেস করাতে হিমু বললো 'ময়ুরাক্ষী '।স্যার জিজ্ঞেস করলেন এটি কোন নদী।হিমু বললো জানিনা এতে স্যার বললেন এটা আজ থেকে তোর নদী।এই ঘটনার তিন বছর পর মজিদ স্যার মারা গেলেন, সেই রাতেই হিমু স্বপ্ন দেখলো,ছোট্ট একটা নদী,পানি স্বচ্ছ কাচেঁর মতো,নিচের বালি পর্যন্ত স্পষ্ট।নদীটির দুপাশে সবুজ দুর্বাঘাস।নদীর অপর পাড়ে ছায়াময় একটি পাকুড় গাছ।গাছে ১টি ঘুঘু কান্না মিশ্রিত গলায় ডাকছে এবং নদীর পাশ ঘেঁষে পানি ছিটাতে ছিটাতে ডোরাকাটা সবুজ শাড়ি পরা ১ মেয়ে ছুটে যাচ্ছে।
- এই হলো কাহিনী।
সে একবারই এই স্বপ্ন দেখেছে কিন্তু সে এখন কোথাও একটু বসে চিন্তা করলেই নদীটি দেখতে পায়।ঘন্টার পর পর ঘন্টা সে তার মস্তিষ্কেই নদীর পাড়ে হাটে, পা ডুবিয়ে বসে।....।
"ময়ুরাক্ষী" নিয়ে নিজস্ব বর্ণনা🔘
এই কাহিনীর পর থেকেই পাঠকের আকর্ষণ দখল করতে থাকে "হিমু " চরিত্র।পাঠক হিমু চরিত্র কে ময়ুরাক্ষী নদীর তিরে কল্পনা করা শুরু করে এবং জনপ্রিয় হতে থাকে।
এরপরে লেখক পাঠকদের পরিচয় করায় হিমুর গন্ডির সাথে।
এরপরে হিমুর বাবার ছেলেকে মহাপুরুষ বানানোর পদ্ধতি যা অদ্ভুত।
এরপরে আসে রূপা নামক অসম্ভব সুন্দরী এক চরিত্র।হয়তো তাকে হিমু ভালোবাসে।যা লেখক কখনোই স্পষ্ট করে বলেনি।
বইয়ে এরপরের টুইস্ট হলো, হিমুর হাটা।
হিমু ঘন্টার পর ঘন্টা হাটতো,রোদে,বৃষ্টিতে -খালি পায়ে।হাটতো গন্তব্যহীন হয়ে।"ময়ুরাক্ষী নদী","হিমু চরিত্র" এসব সব কিছুর পথচলা এই বই থেকেই।
হিমুর বাবার দেওয়া ভালোনাম- হিমালয়।
বইটি কেও কয়েকপাতা পড়লেই বুঝবে যে বইটির মুল ফোকাস - "হিমু"।এই হিমু চরিত্রটি খুব ধীরে ধীরে পাঠকদের আকর্ষণ করেছে।
ময়ুরাক্ষী সম্পর্কে নিজস্ব রিভিউ🔘
আসলে এমন একজন লেখককের বই রিভিউ করতে অযোগ্য তাও আমি বিশ্লেষণ করেছি,
বইটি খুললেই প্রথম লাইনটি একটু উদ্ভট।যা সহজেই পাঠকদের বই পড়ার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়।বইয়ের প্রথম কাহিনীর অংশ পড়েই মনে হয়,এতো ঝামেলার পরেও মীরা হিমুর প্রেমে পড়ে।কয়েকপাতা পড়লেই আমরা দেখবো হিমু নামক এক অদ্ভুত চরিত্র।তার সাথে বাস্তবের জীবনের কাউকে কোনো ভাবেই মেলানো যাবেনা আবার তাকে মানুষের বাস্তব জীবন থেকে একেবারে আলাদাও করে দেওয়া যাবেনা।
হিমু বলতেই আমার চোখে ভেসে উঠে,হলুদ পাঞ্জাবীতে একটা খালি পায়ে থাকা মানুষ,মুখভর্তি দাড়ি,পান খাওয়া,চুল সামান্য বড় এক যুবক।
বইটি পড়লেই জানা যাবে তার বাবার লিখা উদ্ভট এক ডায়রি,মহাপুরুষ হওয়ার লেখা ডায়রি।যা মানুবজীবনের সাথে অনেকটাই বেমানান।যা চোখে পড়েনা,প্রচন্ড অদ্ভুত।
হিমুর "ময়ুরাক্ষী নদী"র কথাও জানতে পারা যাবে।সে আরো একজন কে ময়ুরাক্ষী বলে ডাকে,সে হলো "রূপা"।
কেও যদি ভেবে থাকেন এই বই পড়েই হিমুকে চেনা যাবে বা হিমু মানেই খালি পায়ে হাটা একজন তাহলে ভুল ভাবছেন।হিমু মানে হলো হিমালয়ের মতো বিশাল চিন্তাভাবনা,সবার সাথে থেকেও সবার থেকে আলাদা।হিমুকে চেনা খুব কঠিন,হিমু আসলে কি তা লেখক কখনই স্পষ্ট করেননি,পাঠকগণ ও এই চরিত্রের গভীরতা বা তার চরিত্রের সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি।
হিমুর মতো আমারও একটি ময়ুরাক্ষী দরকার ছিলো যেখানে আমি অল্প সময় কাটাতে পারতাম।বইয়ের শেষপাতা যখন আপনি পড়বেন তখন আপনি আরো বেশি আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন কারণ সেখানে সে তার নদীর তিরে কাওকে হাটতে দিয়েছে।রূপা চরিত্রটি কাকে কেমন আকর্ষণ করেছে আমি জানিনা তবে লেখক হয়তো বুঝালেন,ভালোবাসার মানুষটার খুব বেশি কাছে যেতে নেই,তারা একটু না হয় অপেক্ষা করুক।
আমার চোখে বইয়ের কিছু খুঁটিনাটি অবাস্তবতা ও অপকারিতা 🔘
- আমার কেনো যেনো মনে হয় এই বইয়ে পুলিশ সম্প্রদায়কে একটু ছোট করে দেখানো হয়েছে।
এরপরে,
এই বই বিশেষভাবে টিনএইজার রা পড়ে তাই এতো বেশি এলকোহল,ঘুমের ওষুধের নাম উল্লেখ্য করা ঠিক হয়নি।
এরপরে বাদল হিমুর মতো হয়ে গিয়ে ২ বার ইন্টার ফেইল।আমার মনে হয়,এই বাদলের দেখাদেখি কেও নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইলে তাহলে সর্বনাশের শেষ থাকবেনা।
কারণ,হিমু আকর্ষণীয়।তবে কিছু আকর্ষণ বইয়েই মানায়।
সমাপ্তিজ্ঞাপক 🔘
কেমন লাগলো?ভালো লেগেছে নাকি মন্দ?জানাবেন অবশ্যই।
আল্লাহ হাফেজ।
From,
@nusuranur
Take love,Love Steem💜💜
ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ
Thanks
[সুন্দর রিভিউ] আমি নিজেও হিমু সিরিজের ২৫ টি বই পড়েছি খুব ভালো লাগে হিমু ও মিসির আলি সমগ্রের বই পড়তে, আর আমি রিভিউ ও করেছি।
হুম আমার ও ভালো লাগে অনেক