Travel Review | Week 1 | Sitakunda Travel | Chnadranath Pahar | Gulia Khali Sea Beach

in Steem Bangladesh3 years ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আমি @nishat-meraj। । আমি আজকে আপনাদের সাথে আমার সীতাকুণ্ড ভ্রমণ কাহিনির দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়া খালি সি বিচের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও ডিটেইলস ইনফরমেশন তুলে ধরবো। যাতে আপনারা সহজে ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির অসাধারন সৃষ্টি এই দুটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে। চলুন তাহলে শুরু করি।

IMG_20210827_210038.jpg
https://g.page/kamalapur-railway-station?share

কমলাপুর রেলোওয়ে স্টেশন


আমাদের যাত্রা শুরু হয় গত ২৭/০৮/২০২১ শুক্রবার রাত ১০ঃ৩০ মিনিটে কমলাপুর রেলোওয়ে স্টেশন থেকে। আমাদের গন্তব্য সীতাকুণ্ড এটি চট্টগ্রামে অবস্থিত । আমরা ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড ট্রেন ও বাস দু ভাবেই যেতে পারি। বাসে গেলে সায়দাবাদ/যাত্রাবাড়ি/আব্দুল্লাহপুর যে কোন বাস টার্মিনাল থেকে সীতাকুণ্ড গামি বাস পাব। সেক্ষেত্রে ভাড়া পরবে ৪০০/৪৫০ নন এসি ও ৬০০/৬৫০ এসি। আমারা ট্রেনে যার্নি বেছে নিয়েছি, কারন আমরা জার্নির আসল অ্যাডভেঞ্চার নিতে চেয়েছিলাম। আপানাদেরকে জানিয়ে দেই সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশনে শুধু একটি ট্রেন দাঁড়ায়। সেটি আমরা যে ট্রেনে যাচ্ছি সেটি। এটি একটি লোকাল ট্রেন, তাই আপনাকে মানষিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়েই যেতে হবে যে আপনার ট্রেনে ভালো ঘুম হবে না। এর কারন, ট্রেনে যারা যাবে তাদের বেশিরভাগি আপনার মত ভ্রমণে যাচ্ছে আর তাই তারা হই হুল্লর করবে যেটি স্বাভাবিক। ভ্রমণের মজাই তো এখানে। আর একটি কারনে ঘুম হবে না তা হলো হকার। এ ছাড়া আশা করছি আপনারা যাত্রাটি উপভোগ করবেন।


IMG_20210827_222246.jpg
https://g.page/kamalapur-railway-station?share

ট্রেনের ভিতরের দৃশ্য


ট্রেনে যাত্রার ক্ষেত্রে আপনার ভাড়া পরবে ১১০ টাকা করে। আর একটি ইনফরমেশন দিয়ে দেই যেহেতু এটি একটি লোকাল ট্রেন তাই এখানে টিকিটের সাথে সিট বুকিং পাবেন না। আপনাকে সিট দখল করে নিতে হবে। তাই একটু আগেই স্টেশনে পৌঁছানো ভালো। ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনের ১/২ নম্বর প্লাটর্ফম থেকে ছেড়ে যায়।


IMG_20210827_210153.jpg
https://g.page/kamalapur-railway-station?share

কমলাপুর স্টেশনের ১ নম্বর প্লাটর্ফম


আমাদের জার্নি ভালোই ছিলো। স্পেশালি ভোরের আলো ফুটার পর যখন ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকালাম চারপাশের দৃশ্য ছিলো স্বর্গীয়।


IMG_20210828_061128.jpg
https://goo.gl/maps/5SRVwLZPpXfoTTo89

ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য


যাই হোক, আমরা যখন সীতাকুণ্ড পৌঁছাই তখন সকাল ৭ঃ৩০ মিনিট। আমরা ট্রেন থেকে নেমে প্লাটর্ফমে দিয়ে হেটে স্টেশনের বাহিরে চলে আসি। একটি সতর্কবার্তা, আপনারা ট্রেন থেকে নামার সময় আশে পাশে দেখে সাবধানের সাথে নামবেন। অনেক সময় হঠাৎ করে ট্রেন চলে আসে। যাই হোক, আমরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে হেঁটে সীতাকুণ্ড বাজারে চলে আসি। হেঁটে আসতে ২-৩ মিনিটের মত সময় লাগে। তারপর আমরা ওখানের একটি রেস্তোরাঁ থেকে সকালের নাস্তা করে নেই। নরমাল খাবার রুটি, ডাল, ডিম এগুলিই পাওয়া যায় সাধারণত। নাস্তা শেষে আমরা একটি সিএনজি ঠিক করি চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার জন্য। আমরা ২ জন ছিলাম তাই ভাড়া ঠিক করি ৮০ টাকা। নরমালি লোকাল ভাড়া ৩০ করে। আমরা যেহেতু দুজনেই যাবো তাই ওনাকে কিছু বাড়িয়ে দেই।


IMG_20210828_084656.jpg
https://goo.gl/maps/5SRVwLZPpXfoTTo89

সিএনজিতে আমরা


সিএনজি ঠিক কারার পরে আমরা একটি জুতার দোকানে গিয়ে পাহাড়ে উঠার জন্য বার্মিজ জুতা কিনে নেই যাতে সহজে গ্রিপ পাই। এর পরে আমরা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমরা যখন পাহাড়ে পৌঁছাই তখন ৯ঃ৩০ এর মত । আমরা এর পরে আমাদের ব্যাগ একটি দোকানে জমা রেখে দেই ও অন্য একটি ব্যাগে কিছু প্রয়োজনিয় জিনিস নিয়ে নেই। পার ব্যাগ রাখতে খরচ হয় ২০ টাকা। এর পরে আমরা ওই দোকান থেকেই পাহাড়ে উঠার জন্যা লাঠি নেই ৩০ টাকা করে। লাঠিটি আবার ফেরত দিলে তারা ২০ টাকা ফেরত দিয়ে দেয়। এরপর আমাদের পাহাড়ে উঠার সকল প্রস্তুতি শেষ আমরা রওনা শুরু করি।


IMG_20210828_090525.jpg
https://goo.gl/maps/A27bxXQCwfBADshL7

ট্রাকিং এখান থেকেই শুরু হয়


কিছু দূরে আসার পরে যখন পাহাড়ে উঠার আসল রাস্তা শুরু হয় তখন দুটি রাস্তা দেখা যায়, একটি নরমাল পাহাড়ি রাস্তা অন্যটি সিড়ির রাস্তা। সিঁড়ির রাস্তাটি ডানে ও অন্য রাস্তাটি বামে। আমরা বামের রস্তাটি মানে নরমাল রাস্তা দিয়ে যাত্রা শুরু করি কারন এটি তুলানামূলক সহজ। মুল পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা সময় লাগে। পথে আপনারা অনেক দোকান দেখতে পাবেন যেখানে ডাব, পানি, শরবত সহ অন্যান্য খাবার পাবেন। তাই আমার সাজেশন থাকবে আপনারা আলাদা করে পানির বোতল নিয়ে উঠবেন না। তাহলে উঠা টা সহজ হবে কারন এস্কট্রা কোনো কিছু বহন করতে হবে না। উপরে উঠার সময় পাহাড়ের অসাধারন নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করতেছিলো। যত উপরে উঠতেছিলাম সৌন্দর্য যেন আমাদের নেশার মত টানতেছিলো। আমরা আমদের সকল ক্লান্তি ভূলে যাচ্ছিলাম সৌন্দর্য দেখে।


IMG_20210828_092750.jpg
https://goo.gl/maps/A27bxXQCwfBADshL7

পাহাড়ের উপরে উঠার সময়

IMG_20210828_093331.jpg
https://goo.gl/maps/A27bxXQCwfBADshL7

পাহাড়ের উপরে উঠার সময়



মূলত চন্দ্রনাথ পাহাড়টি হিন্দু ধর্মাবলম্বি দের জন্য একটি তীর্থ স্থান। এখানে দুটি পিক আছে ও দুটি পিকে দুটি আলাদা মন্দির আছে। প্রথম পিকের পরে সর্বশেষ বা সবচেয়ে উপরের পিকে আমরা যখন পৌঁছাই তখন মনে হচ্ছিল আমরা অপার সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে গেছি আর মেঘের দল আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। উপরে উঠার পরে আমরা অনেকক্ষণ বসে থাকি ও মেঘের খেলা দেখি। এর পরে বেলা ১২ঃ০০ টার দিকে আমরা নামতে শুরু করি অপর পাশের রাস্তা দিয়ে। অনেকে বলে নামার সময় পাহাড় অনেক বেশি সুন্দর লাগে, আসলেই তাই।


IMG_20210828_120413.jpg
https://goo.gl/maps/yibYd7g121eGJKNz9

পাহাড়ের সর্বোচ্চ উপরে মন্দির

IMG_20210828_115235.jpg
https://goo.gl/maps/yibYd7g121eGJKNz9

পাহাড়ের সর্বোচ্চ উপরের দৃশ্য

যেহেতু এই পাশের রাস্তাটি সিঁড়ির তাই এক্ষেত্রে লাঠি অনেক বেশি সাপোর্ট করে। নামার সময় খুব বেশি কস্ট হয় না উঠার তুলোনায়। আমরা নামার পরে আবার সেই দোকানে গিয়ে লাঠি ফেরত দেই ও টাকা ফেরত নেই এবং আমাদের ব্যাগ ও বুঝে নেই।


IMG_20210828_120900.jpg
https://goo.gl/maps/yibYd7g121eGJKNz9

পাহাড় থেকে নামার সময়

IMG_20210828_123354.jpg
https://goo.gl/maps/yibYd7g121eGJKNz9

পাহাড় থেকে নামার সময়

এরপরে আমরা আবার একটি সিএনজি ভাড়া করি সীতাকুণ্ড বাজারে যাবার জন্য। বাজারে পৌছানোর পরে আমরা আবার একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে ফ্রেশ হই ও দুপুরের খাবার গ্রহণ করি। এবার আমরা ভাত খাই মাছ দিয়ে। মূলত ১০০-১৫০ টাকায় আপনাদের দুপুরের খাবার হয়ে যাবে। খাবার শেষে আমরা কিছুক্ষণ রেস্ট নেই।


এরপর আমরা আমদের দ্বিতিয় গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করি মানে গুলিয়া-খলি সি বিচ। আমরা এবার একটি ব্যাটারি চালিত রিস্কা ভাড়া করি। নরমালি আপনি সেখানে রিস্কা, সিএনজি যে কোনো কিছুর মধ্যমেই যেতে পারবেন। সিএনজিতে লোকাল ভাড়া ৩৫ টাকা করে। যেহেতু আমরা দুইজন তাই রিস্কা ঠিক করলাম ৯০ টাকা দিয়ে। বেশি জনের গ্রুপ গেলে আপনারা সিএনজিতে যাবেন। আমরা যখন গুলিয়া-খলি পৌছাই তখন সবে মাত্র জোয়ার শুরু হয়েছে আর এই বিচের আসল সৌন্দর্য আমার মনে হয় জোয়ারের সময়। সবুজ বিছে সাগরের পানি আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখার মাঝে একটি অন্য রকম ভালো লাগা আছে। মেইন বিচে যাওয়ার জন্য আমরা একটি বোট এ উঠলাম। প্রতিজন ৩০ টাকা করে।

IMG_20210828_161913.jpg
https://goo.gl/maps/f5avL4oE4imtzGaEA

মেইন বিচে যাওয়ার জন্য বোট

IMG_20210828_162843.jpg
https://goo.gl/maps/f5avL4oE4imtzGaEA

গুলিয়া-খালি মেইন বিচে

আপনি চাইলে হেটেও যেতে পারেন তবে সে ক্ষেত্রে হয়তো কিছু কাদা মারাইতে হতে পারে। যাই হোক, খালের মধ্যে দিয়ে বোটে করে যাওয়ার মধ্যে অন্য রকম একটি ভালোলাগা আছে। পাশেই বনের মধ্যে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে সেটির সৌন্দর্য অসাধারন।

আমাদের বোট মেইন বিচে নামিয়ে দেয়। এরপরে সাগরের পানি, আকাশ, পাশের বন সব কিছু মিলিয়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশে হারিয়ে যাই। সবুজ ঘাসে পানির আছড়ে পরা , একটু পরে পরে আকাশের রুপের বদল আমাকে পুরোটা সময় বিমোহিত করে রাখে। পার্থিব দুনিয়ার সকল টেনশন থেকে আমরা হারিয়ে যাই প্রকৃতির মাঝে। বিচের চারপাশে ঘুরে আমরা বিচের সবুজ ঘাসে বসে সূর্যাস্ত দেখি। এরপরে আবার বোটে করে সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে ঘাটে ফিরে আসি।

IMG_20210828_170857.jpg
https://goo.gl/maps/f5avL4oE4imtzGaEA

বিচের সবুজ ঘাসে সাগরের জল আছরে পড়ছে



IMG_20210828_182200.jpg
https://goo.gl/maps/f5avL4oE4imtzGaEAয

বিচের সবুজ ঘাসে বসে সূর্যাস্ত

আমারা আবার সীতাকুণ্ড বাজারে ফিরার জন্য বাহন খুজতে থাকি, কিন্তু এখানে এক অজব সিন্ডিকেটের শিকার হই। এখানে তখন কোনো রিস্কা উপস্থিত ছিলো না। সব সিএনজি এবং তারা সবাই লোকাল ভাড়া বাদ দিয়ে সবার জন্য ফুল সিট বুকিং ভাড়া মানে ১৫০ টাকা করে রেখেছে। এবং কেউ এক টাকাও কমায় নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা দিয়েই আমরা ফিরে আসি সীতাকুণ্ড বাজারে অন্য কোনো উপায় না পেয়ে।

এরপরে আমরা একটি রেস্টুরেন্ট এ রাতের খাবার গ্রহণ করে বাজারের হাইওয়ে বাস কাউন্টার থেকে ঢাকা ফেরার বাসের টিকেট বুকিং করি। আমারা এবার ফেরার জন্য সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি টিকেট করি ৬০০ টাকা দিয়ে। আমাদের বাস ছাড়ার জন্য কিছু সময় হাতে ছিলো তাই আমরা লোকাল মার্কেট ঘুরলাম ও কিছু টুকটাক কেনাকাটা করলাম। এরপরে নির্ধারিত সময়ে আমরা কাউন্টারে পৌঁছাই ও বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।

এটিই ছিলো আমার সীতাকুণ্ড সফর। আমি এটা অনেক উপভোগ করেছি । আশা করেছি আপনারাও উপোভোগ করেছেন। আমি চেস্টা করেছি সকল ইনফরমেশন তুলে ধরতে। আশা করছি আপনাদের ভ্রমণ গাইড হিসাবে এটি কাজে দিবে। এর পরেও যদি কিছু মিসিং থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদ পোস্টটি পড়ার জন্য।

Sort:  
 3 years ago 

অনেক সুন্দর একটি ভ্রমণ ছিলো। সূর্য অস্তের ছবিটি অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি ভ্রমণ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

গুলিয়া খালি সি বিচের ছবিগুলো দেখে সেখানে ভ্রমণ করার ইচ্ছা জাগলো। ছবিগুলোর ক্যাপচার সত্যি অসাধারণ। অনেক সুন্দর ছিল আপনার ভ্রমণটি 🥰🥰🥰

 3 years ago 

thanks a lot, dear. it was really awesome

 3 years ago 

it's a beautiful trip friend, your city still looks clean and beautiful to see, it's an awesome trip, i can enjoy this

 3 years ago 

you are warmly welcome

 3 years ago 

আপনার ভ্রমন এর প্রতিটা মুহূর্ত শেয়ার করেছেন ।খুবই ভালো লেগেছে প্রতিটি ফটোদেখে ।সূর্যস্তের দৃশ্যটি খুব ভালো লেগেছে ।ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

thanks a lot brother

 3 years ago 

খুবই সুন্দর জায়গা এটি। সুন্দর পোস্ট।

 3 years ago 

Thank you brother

 3 years ago 

সুন্দর লিখেছেন ভাই।

 3 years ago 

thank you brother

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.12
JST 0.026
BTC 57387.61
ETH 2518.18
USDT 1.00
SBD 2.31